আল-কুরআনে মানবহত্যার শাস্তি-১

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আনোয়ার হুসাইন

১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

মানবহত্যা কতটা ভয়াবহ অপরাধ ও মহাপাপ সে বিষয়ে আমাদের এই ফিচারে ‘কুরআনের ভাষায় মানবহত্যার ভয়াবহতা’ শীর্ষক লেখায় আলোচনা করা হয়েছে। এ অপরাধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের আয়াতসমূহ থেকে একটি আয়াতের দিকে পুনরায় নজর বুলানো যাক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনÑ ‘কেউ যদি হত্যা অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল।’ (সূরা মায়িদা-৩২)

এ বার্তা থেকেই উপলব্ধি করা যায়, এ মহাপাপের শাস্তি কতটা ভয়াবহ ও কঠিন হতে পারে। কুরআন কারিম এ অপরাধের কঠিন বিচার ও শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে। দুনিয়াতেও হত্যাকারীর জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে, আর আখিরাতে তো আরো কঠিন, আরো ভয়াবহ শাস্তি রয়েছেই।

কুরআন কারিম অন্যায় হত্যার শাস্তিস্বরূপ কিসাসের বিধান আরোপ করেছে। কিসাস হলোÑ জখমের বদলে অনুরূপ জখম এবং হত্যার বদলে হত্যা। কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে কিসাসের বিধান হিসেবে এ অপরাধের বদলে তাকেও হত্যা করা হবে। এটি কুরআন কারিমের সুস্পষ্ট বিধান। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ ‘হে মুমিনগণ! যাদেরকে (ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে) হত্যা করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কিসাস (-এর বিধান) ফরজ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, গোলামের বদলে গোলাম, নারীর বদলে নারী (-কেই হত্যা করা হবে)।’ (সূরা বাকারা-১৭৮)

আরো ইরশাদ হয়েছেÑ ‘এবং আমি তাতে (তাওরাতে) তাদের জন্য বিধান লিখে দিয়েছিলাম, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান ও দাঁতের বদলে দাঁত। আর জখমেও (অনুরূপ) বদলা নেয়া হবে। অবশ্য যে ব্যক্তি তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা জালেম।’ (সূরা মায়িদা-৪৫)

সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে শরয়ি সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা বা খুনির স্বীকারোক্তি দ্বারা হত্যার অপরাধ প্রমাণিত হয় এবং নিহতের পরিবার কিসাস দাবি করে, তাহলে বিচারকের জন্য আবশ্যক দ্রæত এ শাস্তি কার্যকর করা। বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতে হত্যার অপরাধ প্রমাণিত হলে এবং নিহতের পরিবার কিসাস দাবি করলে তাকে রেহাই দেয়ার ক্ষমতা বা অধিকার কোনো ব্যক্তিরই নেই।

ইসলাম ইনসাফ ও ন্যায়ের ধর্ম। ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, ঊর্ধ্বতন-অধঃস্তন সব নাগরিকই ইসলামের চোখে সমান। পদ-পদবি, বংশ-মর্যাদা, বিত্ত-বৈভব দ্বারা ইসলাম কাউকে বিচার করে না। অপরাধী যেই হোক অপরাধ প্রমাণিত হলে সাজা তাকে পেতেই হবে। হোক সে রাজা কিংবা প্রজা, ধনী বা গরিব, সমাজপতি বা সমাজচ্যুত। রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিও যদি অতি সাধারণ কাউকে হত্যা করে, তবে তার থেকেও কিসাস নেয়া হবে। রাষ্ট্রপ্রধান বা সমাজের উচ্চমর্যাদাসীন হওয়ার কারণে কেউ ছাড় পাবে না।

জাহেলি যুগে বংশ মর্যাদা, জাতি, ধর্ম বা শ্রেণিবৈষম্যের কারণে দুর্বলরা বরাবরই জুলুম ও অবিচারের শিকার ছিল। কিসাসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। উঁচু বংশ ও বিত্তবানের কৃতদাসকে হত্যার বিনিময়ে দুর্বলদের আযাদ ব্যক্তিকেও হত্যা করা হতো। একজনের বিনিময়ে তাদের একাধিককে হত্যা করা হতো। আল কুরআন জুলুমের এ ধারাকে চিরতরে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। ঘোষণা দিয়েছে কিসাস হত্যাকারী থেকেই গ্রহণ করা হবে, অন্য কারো থেকে নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ ‘হে মুমিনগণ! যাদেরকে (ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে) হত্যা করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কিসাস (-এর বিধান) ফরজ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, গোলামের বদলে গোলাম, নারীর বদলে নারী (-কেই হত্যা করা হবে)।’ (সূরা বাকারা-১৭৮)

কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে এবং নিহতের পরিবার কিসাস দাবি করে, তাহলে মুসলিম বিচারকের কর্তব্য কুরআনের বিধান অনুযায়ী কিসাস কার্যকর করা। এক্ষেত্রে অন্য কোনো শাস্তি যেমনÑ যাবজ্জীবন কারাদÐ, আমৃত্যু কারাদÐ ইত্যাদি শাস্তি দেয়ার কোনো এখতিয়ারই তার নেই। কেননা, আল্লাহ তাআলা কিসাসের বিধানকেই ফরজ করেছেন। কিসাসের বিধান বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা বলেনÑ ‘আর যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা জালেম।’ (সূরা মায়িদা-৪৫)


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নিরাশা নয়, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-১
পিতার কর্তব্য সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-৩
পিতার কর্তব্য সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-২
পিতার কর্তব্য : সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-১
ইসলামে সহমর্মিতা ও সমাজসেবা
আরও
X

আরও পড়ুন

ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ৫ আহত ৩৫

ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ৫ আহত ৩৫

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ৯ মাসে ৩০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ৯ মাসে ৩০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে

শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা: ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিলো চীন

শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা: ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিলো চীন

কারিনা সুবিধার মেয়ে নয়,যা করবে, ভেবেচিন্তে কোরো

কারিনা সুবিধার মেয়ে নয়,যা করবে, ভেবেচিন্তে কোরো

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি

কঙ্গোর উত্তেজনার মধ্যে রুয়ান্ডায় গণহত্যার ৩১তম বার্ষিকী পালিত

কঙ্গোর উত্তেজনার মধ্যে রুয়ান্ডায় গণহত্যার ৩১তম বার্ষিকী পালিত

কিশোরগঞ্জে ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

কিশোরগঞ্জে ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

আড়াইহাজারে সুইডিশ কোম্পানির কারখানা স্থাপনে সমঝোতা সই

আড়াইহাজারে সুইডিশ কোম্পানির কারখানা স্থাপনে সমঝোতা সই

ফেসবুকে লুট করা জুতা বিক্রির পোস্ট, সিলেটে আটক ১৪

ফেসবুকে লুট করা জুতা বিক্রির পোস্ট, সিলেটে আটক ১৪

নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিনিয়োগকারীরা

নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিনিয়োগকারীরা

সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯

সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯

প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ খুব সহজ নয় : সিইসি

প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ খুব সহজ নয় : সিইসি

তেল আবিব-লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহরে হামলার দাবি হুথিদের

তেল আবিব-লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহরে হামলার দাবি হুথিদের

বিচ্ছেদকে প্রাঙ্ক বলে ঢাকার চেষ্টা,প্রাক্তনের সম্মান রক্ষার্থে অভিনেতার মিথ্যার আশ্রয়

বিচ্ছেদকে প্রাঙ্ক বলে ঢাকার চেষ্টা,প্রাক্তনের সম্মান রক্ষার্থে অভিনেতার মিথ্যার আশ্রয়

গাজাবাসীকে অন্য দেশে পাঠাতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক

গাজাবাসীকে অন্য দেশে পাঠাতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক

আপাতত স্বাধীনতা কনসার্ট হচ্ছে না

আপাতত স্বাধীনতা কনসার্ট হচ্ছে না