অন্যের সাথে ওই আচরণ করি যা পেলে আমি খুশি হই-২
০৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:১০ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
আদাবুল মুআশারা রক্ষা করা নফল আমল ও নফল ইবাদত যেমন, নফল নামাজ নফল রোজা ইত্যাদির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর দলিল হলো, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে দু’জন মহিলার কথা আলোচনা করা হলো। একজন রাতভর ইবাদত করে আর দিনের বেলা রোজা রাখে। কিন্তু প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, সে জাহান্নামে যাবে। আরেকজন বেশি নফল নামাজ পড়ে না, বেশি নফল রোজা রাখে না। শুধু দ্বীনের ফরজ-ওয়াজিবগুলো আদায় করে। দিনভর রোজা রাখার এবং রাতভর নামাজ পড়ার সুযোগ তার হয় না। কিন্তু সে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জান্নাতে যাবে। তাহলে বোঝা গেল, নফল ইবাদতের চেয়ে অন্য মানুষকে কষ্ট না দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া, জাহান্নাম থেকে বাঁচা বেশি সহজ হবে।
আদাবুল মুআশারা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরেক কারণ হলো, শরিয়তের এই মূলনীতি যে, দ্বীনের কোনো বিষয় যখন সাধারণভাবে অবহেলিত হয়ে পড়ে তখন চর্চা ও আলোচনার মাধ্যমে এর প্রচার-প্রসার বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। যা সকলে জানে ও মানে, তার চেয়ে যা মানুষ ছেড়ে দিয়েছে, যাকে মানুষ এখন দ্বীনের অংশ মনে করে না তা প্রতিষ্ঠা করা, আমল করা, ওই বিষয়টির শিক্ষা গ্রহণ করা এবং শিক্ষাদান করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ এখন এ বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া না হলে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ইসলামের একটি বিধানকে বাঁচিয়ে রাখা অনেক নফল ইবাদতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর আদাবুল মুআশারা তো একটি বিধানমাত্র নয়, একটি বিভাগ। দ্বীনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তৃত শাখা। এ সকল কারণে আলোকে আলিমগণ বলেন, হুসনে আখলাক ও হুসনুল ‘ইশরা তথা সুন্দর স্বভাব-চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক বেশি গুরুতবপূর্ণ।
আল্লাহর রাসূল (সা.) যা বলেছেন, তিনি নিজে ছিলেন তার সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি নামাজের কথা বলেছেন আর তার নামাজ ছিল সবচেয়ে সুন্দর। তিনি রোজার কথা বলেছেন, আর তার রোযা ছিল সবচেয়ে সুন্দর। তিনি হজের কথা বলেছেন তার হজই ছিল সবচেয়ে সুন্দর। তিনি দান-সদকার কথা বলেছেন দান-সাদকার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে অগ্রগামী।
তিনি সুন্দর আচরণের কথা বলেছেন, আপনি হাদিসের গ্রন্থ পাঠ করুন, ইতিহাসের গ্রন্থ পাঠ করুন, দেখবেনÑ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আচরণই ছিল সবচেয়ে সুন্দর। এর দলিল হলো, তার নিকটজনদের সাক্ষ্য যারা তার সাথে জীবন অতিবাহিত করেছেন। তার ভেতর-বাহির যাদের সামনে ছিল, তাদের সাক্ষ্য এবং আল্লাহর সাক্ষ্য। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার রাসূল সম্পর্কে বলেন : ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাব-চরিত্র কেমন ছিল? তিনি বললেন, ‘তার চরিত্র ছিল কুরআন’। তিনি ছিলেন কুরআনের বাস্তব রূপ।
সহিহ মুসলিমে হযরত মিকদাদ (রা.) থেকে দীর্ঘ এক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তারা কয়েকজন ব্যক্তি রাসূললুল্লাহ (সা.) এর নিকট এসেছিলেন। রাতে মসজিদে অবস্থান করতেন। রাতে যখন আল্লাহর রসূল মসজিদে আসতেন তখন এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে কোনো ঘুমন্ত মানুষের ঘুম না ভাঙে এবং জাগ্রত মানুষ শুনতে পারে।
মানুষের ঘুমের দিকে রাসূল (সা.) কত লক্ষ্য করতেন! আমরা আমাদের নিজেদের সম্পর্কে একটু চিন্তা করে দেখি, আমরা কি অন্যদের ঘুমের বেলায় ততটা লক্ষ্য রাখি? কত সময় এমন হয়, একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে, আমি ঠাস করে দরজা খুললাম। ড্রয়ার খুলে জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতে থাকলাম। আর ওই বেচারার ঘুম ভেঙে গেলো। অথচ আমাদের একটু অনুভূতিও হলো না। আমরা মনে করছি, এই তো স্বাভাবিক।
তো আদাবুল মুআশারার মূল কথা হচ্ছে, মানুষকে শান্তি দেয়া, কষ্ট না দেয়া। আমার আচরণে কেউ যেন বিরক্ত না হয়। অপ্রসন্ন না হয়। আমার প্রতি কারো মনে যেন ঘৃণা না জাগে। আলিমগণ আদাবুল মোয়াশারা বিষয়ে যা লিখেছেন, তার মূল কথা এটাই।
একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার খুৎবা দিচ্ছিলেন। এক লোক সবার ঘাড় ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে সামনে আসছিল। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, ‘বস! তুমি মানুষকে কষ্ট দিলে’। ঘাড়ের উপর দিয়ে আসার দ্বারা কি শারীরিক কষ্ট হয়? হয় না। তবে অন্তরে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। এই বিরক্তিকর কাজ সম্পর্কেই বলছেন, ‘তুমি কষ্ট দিলে।’
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিএনপির দু গ্রুপের সভা হয়নি গোটা উপজেলার পরিবেশ শান্ত
সংস্কারের ৩১দফায় তারেক রহমান শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন - ডা. মাজহার
৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম জয়ন্ত ও মধুমেলা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা
পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
রেকর্ড ও পরিসংখ্যানের আয়নায় তামিম
আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি- মাওলানা এ টি এম মা’ছুম
টঙ্গীতে নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ
দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ
ক্যাম্পাস সমূহ র্যাগিং ও মাদকমুক্ত রাখতে হবে: প্রফেসর ড. মাছুমা
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবীনদের বরণ করে নিলো শহীদ নূর আলী কলেজ
ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তা
ডনবাসের তিনটি এলাকা মুক্ত করেছে রাশিয়া
মার্চের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে: পরিবহন উপদেষ্টা
খনন ফিল্ডে প্রত্নতাত্ত্বিক তারিখ নির্ধারন সংক্রান্ত মাঠ কর্মশালা
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফরিদপুরে যুব সমাবেশ
ফ্যাসিস্ট দোসর তাপসকে হঠাৎ হিরো বানানোর চেষ্টা!
আ’লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না সময় বলে দিবে: সিইসি
সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৪ নিহত ১
দিনাজপুরের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও সাঁওতাল লোকসংস্কৃতিবিদ গণেশ সরেন আর নেই