একটি হাদীস : জীবন পরিবর্তনকারী চারটি কথা-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম

গত আলোচনায় আমরা একটি হাদিস নিয়ে আলোচনা করছিলাম। যেই হাদিসে জীবন পরিবর্তন করার জন্য চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেখান থেকে আমরা দু’টি বিষয়ে আলোকপাত করেছিলাম। আজ আরো দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

দুনিয়ার জীবনে আমরা শান্তি পাই না। আমাদের জীবনে শান্তি আসে না। শান্তি না আসার বড় কারণ কী? শান্তি না আসার বড় একটি কারণ হলোÑ আমাদের প্রয়োজন বাড়িয়ে ফেলা। জরুরি নয় এমন অনেক কিছুকে আমরা জরুরি মনে করি। তাই আমাদের কর্তব্য হলোÑ আমি কী কী ছাড়া চলতে পারি আর কী কী ছাড়া চলতে পারি না, সেটি শনাক্ত করা। কোনো খরচ বাড়ানোর আগে আমাকে চিন্তা করতে হবে খরচ কমানোর। এটি জিন্দেগির গুরুত্বপূর্ণ ফালসাফা এবং অনেক হাদিসের নির্যাস এই চিন্তাটা। ভাষাটা প্রফেসর হামীদুর রহমান ছাহেব রাহ.-সহ আরো অনেক বুজুর্গের। প্রফেসর হজরত রাহ. বলতেন, খরচ বাড়ানোর চিন্তা করবে না; বরং যা এখন খরচ হচ্ছে, সেটি কমানোর চিন্তা করো! আমরা তো মনে করি, এখন যেভাবে খরচ বাড়ছে, আমাদের আয় বাড়ানো দরকার।
হজরত বলতেন, আয় বাড়ানো তো তোমার হাতে নয়; এটি কি মানুষ চাইলে বা ইচ্ছা করলেই পারে? বরং এটি তো সময়সাপেক্ষ ও তাকদিরের বিষয়। চেষ্টা করলে হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। হলেও সেটি নগদ পারব কিনা নিশ্চিত নয়। কিন্তু নগদ যে কাজটা আমি করতে পারি তা হলোÑ খরচ কমিয়ে দেয়া। আমি দেখি, যে যে খাতে আমি খরচ করছি, ওই খাতগুলোর মধ্যে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বা ‘কম প্রয়োজনীয়’ কোনো খাত আছে কি-না!
আমাদের নিজেদের মধ্যে এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যদি এ কথার ওপর আমল এসে যায়, জিন্দেগি অনেক সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং অপ্রয়োজনীয় এবং কম প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পরিহার করি। এটাই নবী কারিম (সা.) শিখিয়েছেন। কিন্তু আমি যদি ভাবতে থাকি, অমুকের ওটা আছে, আমারও সেটি দরকার। তাহলে জীবন কঠিন হয়ে যাবে। আর যদি লোভ করা হয়, তবে তো আরো মুশকিল! খোদ লোভটাই এক বড় মুসিবত। বড় এক অশান্তি।

তিন. নামাজ আদায় করবে এমনভাবে, যেন তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছ! এই নামাজই হয়তো আমার জীবনের শেষ নামাজ, এমন অনুভ‚তি নিয়ে নামাজ আদায় করো। নামাজে এমনভাবে মন লাগাও, যেন জীবনের শেষ নামাজ পড়ছ। এমনভাবে নামাজ পড়লে নামাজে এমনিতেই খুশু-খুজু আসবে, ইনশাআল্লাহ।

চার. এমন কথা ও এমন কাজ থেকে বিরত থাকো, যার জন্য পরে তোমাকে ক্ষমা চাইতে হয়। এমন কথা বলবেই না। এমন কথা বা কাজ করবেই কেন যে, পরে আবার ওজরখাহি করতে হয়? ‘সরি’ বা ‘দুঃখিত’ বলতে হয়? হ্যাঁ, অনিচ্ছাকৃত কখনো হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেবে; এটি ভালো গুণ। কিন্তু তোমাকে তো সতর্ক থাকতে হবে, যেন এমন কাজ না হয়। আর বুঝে-শুনে এমন কাজ করার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। উপরোক্ত হাদিসে এ চারটি নসিহত করা হয়েছে।

আমাদের জিন্দেগি ঠিক হওয়ার জন্য অনেক বেশি নসিহতের প্রয়োজন আছে কি? এই চারটি জিনিসের প্রতি লক্ষ রাখলে দ্বীন-দুনিয়া সবই ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন, তাওফিক দান করুন, আমিন!


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নিরাশা নয়, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-১
পিতার কর্তব্য সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-৩
পিতার কর্তব্য সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-২
পিতার কর্তব্য : সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-১
ইসলামে সহমর্মিতা ও সমাজসেবা
আরও
X

আরও পড়ুন

ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ৫ আহত ৩৫

ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ৫ আহত ৩৫

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ৯ মাসে ৩০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ৯ মাসে ৩০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে

শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা: ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিলো চীন

শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা: ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিলো চীন

কারিনা সুবিধার মেয়ে নয়,যা করবে, ভেবেচিন্তে কোরো

কারিনা সুবিধার মেয়ে নয়,যা করবে, ভেবেচিন্তে কোরো

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি

কঙ্গোর উত্তেজনার মধ্যে রুয়ান্ডায় গণহত্যার ৩১তম বার্ষিকী পালিত

কঙ্গোর উত্তেজনার মধ্যে রুয়ান্ডায় গণহত্যার ৩১তম বার্ষিকী পালিত

কিশোরগঞ্জে ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

কিশোরগঞ্জে ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

আড়াইহাজারে সুইডিশ কোম্পানির কারখানা স্থাপনে সমঝোতা সই

আড়াইহাজারে সুইডিশ কোম্পানির কারখানা স্থাপনে সমঝোতা সই

ফেসবুকে লুট করা জুতা বিক্রির পোস্ট, সিলেটে আটক ১৪

ফেসবুকে লুট করা জুতা বিক্রির পোস্ট, সিলেটে আটক ১৪

নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিনিয়োগকারীরা

নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিনিয়োগকারীরা

সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯

সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯

প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ খুব সহজ নয় : সিইসি

প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ খুব সহজ নয় : সিইসি

তেল আবিব-লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহরে হামলার দাবি হুথিদের

তেল আবিব-লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহরে হামলার দাবি হুথিদের

বিচ্ছেদকে প্রাঙ্ক বলে ঢাকার চেষ্টা,প্রাক্তনের সম্মান রক্ষার্থে অভিনেতার মিথ্যার আশ্রয়

বিচ্ছেদকে প্রাঙ্ক বলে ঢাকার চেষ্টা,প্রাক্তনের সম্মান রক্ষার্থে অভিনেতার মিথ্যার আশ্রয়

গাজাবাসীকে অন্য দেশে পাঠাতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক

গাজাবাসীকে অন্য দেশে পাঠাতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক

আপাতত স্বাধীনতা কনসার্ট হচ্ছে না

আপাতত স্বাধীনতা কনসার্ট হচ্ছে না