মুমিনের শপথনামা-১
১৯ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আল্লাহ তাআলা যখন মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তখন সর্বপ্রথম মানুষের কাছ তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছেন। সূরা আ‘রাফে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব বনী আদমের পৃষ্ঠ থেকে তাদের সন্তানদের বের করলেন এবং তাদের ব্যাপারে এই মর্মে তাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা সাক্ষ্য দিলাম।
(তা এ কারণে যে) যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, আমরা তো বেখবর ছিলাম। অথবা এ-ও না বলতে পার যে, ইঃপূর্বে আমাদের বাপ-দাদারা শিরক করেছিল, আমরা ছিলাম তাদের উত্তরসূরী। ফলে আপনি কি আমাদের পথভ্রষ্টদের কর্মের কারণে ধ্বংস করবেন? এভাবেই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আ‘রাফ : ১৭২-১৭৪)।
এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন : আল্লাহ তাআলা ‘না‘মান’ তথা আরাফায় হযরত আদম আ.-এর পৃষ্ঠ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তিনি আদমের পৃষ্ঠ থেকে প্রতিটি আদম সন্তানকে বের করে, তার সামনে শষ্যদানার মতো ছড়িয়ে দেন। এর পর তিনি তাদের সাথে সামনাসামনি কথা বলেন; তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলল, অবশ্যই।...’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৫৫)।
আল্লাহ তাআলার সামনে এই শপথবাক্যের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ অঙ্গীকার করেছিল। এটি ছিল মানুষের প্রথম অঙ্গীকার। এরপর আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির পর থেকে কয়েকটি ধাপে কয়েকবার এই শপথ ও অঙ্গীকার নবায়ন করেন। তিনি যুগে যুগে নবী প্রেরণ করে তাদের মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতি নবায়ন করেছেন। সূরা আহযাবে ইরশাদ হয়েছে : স্মরণ করুন, যখন আমি নবীদের থেকে তাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম এবং অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম আপনি, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা ইবনে মারিয়ামের কাছ থেকে। আর আমি তাদের থেকে গ্রহণ করেছি দৃঢ় অঙ্গীকার। যাতে তিনি সত্যবাদীদের তাদের সততা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আর তিনি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আহযাব : ৭-৮)।
আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে নবীদের মাধ্যমে তাদের উম্মতের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন, তা পূর্বের অঙ্গীকারের চেয়ে সুদৃঢ় ও বিস্তারিত। এ অঙ্গীকার শুধু আল্লাহ তাআলাকে রব এবং একমাত্র রব বলে স্বীকার করার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এ অঙ্গীকার হলো, সমগ্র জীবন আল্লাহ তাআলার বিধান অনুসারে পরিচালনার অঙ্গীকার। সকল নবীই তাঁর উম্মতের কাছ থেকে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন।
বনী ইসরাইল থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে : স্মরণ করো, যখন আমি এই মর্মে বনী ইসরাইলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত করো না। অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম পিতা-মাতা, নিকটজন, এতিম ও সহায়হীন মানুষের প্রতি ইহসানের। আর মানুষকে ভালো কথা বলো, নামায কায়েম করো, জাকাত আদায় করো। এর পর স্বল্পসংখ্যক লোক ব্যতীত তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে এবং উপেক্ষা করলে। আর এ-ও স্মরণ করো, যখন আমি এই মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা নিজেদের রক্ত প্রবাহিত করো না, নিজেদের ঘর থেকে বিতাড়িত করো না। এরপর তোমরা তা মেনে নিলে আর তোমরাই এর সাক্ষী। (সূরা বাকারা : ৮৩-৮৪)।
এই আয়াতসমূহের প্রথম ভাগে ‘তাওহীদ’, দ্বিতীয় ভাগে ‘আদাবুল মুআশারাহ’ বা ‘সামাজিক আচরণ’, তৃতীয় ভাগে ‘ইবাদত’ এবং চতুর্থ ভাগে ‘উম্মাহর ঐক্যে’র অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছে। এই আয়াতগুলো বনী ইসরাইলের ব্যাপারে অবতীর্ণ হলেও এ অঙ্গীকারগুলো সকল নবীর উম্মতের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাইআতের মাধ্যমে অঙ্গীকার গ্রহণবিষয়ক আয়াত ও হাদিসসমূহ লক্ষ করলে, এই আয়াতে উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও বহু বিষয় পাওয়া যায়। উবাদাহ ইবনুস সামিত রা. বর্ণিত হাদিসে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে : আমরা কোনো এক মজলিসে ছিলাম।
এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, তোমরা এই মর্মে আমার হাতে বাইআত হও যে, আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, যেনা করবে না, সন্তানকে হত্যা করবে না, জেনেশুনে অপবাদ আরোপ করবে না এবং ন্যায়সঙ্গত ও ভালো কাজে অবাধ্য হবে না। যে অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে। আর যে এ বিষয়গুলো থেকে কোনোটিতে লিপ্ত হয় এবং দুনিয়ায় শাস্তি পায়, তা হলে এটি তার জন্য কাফফারাহ। আর যে এমন কাজে লিপ্ত হয় আর আল্লাহ তা গোপন করেন, তার হিসাব আল্লাহ তাআলার কাছে; তিনি চাইলে শাস্তি প্রদান করবেন, অথবা ক্ষমা করে দেবেন। এরপর আমরা এই মর্মে বাইআত হই। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় আরো এসেছে- আর আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা হারাম করেছেন, তোমরা ন্যায়সঙ্গত অধিকার (হক) ছাড়া তা হত্যা করো না। (সহীহ মুসলিম : ১৭০৯)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি