মুমিনের শপথনামা-২
২০ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম
কুরআনে কারীমে বর্ণিত নারীদের বাইআতের বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে : হে নবী, যখন মুমিন নারীরা আপনার কাছে এই মর্মে বাইআত হওয়ার জন্য আসে যে, তারা আল্লাহ তাআলার সাথে কোনো কিছু শরিক করবে না, চুরি করবে না, যেনা করবে না, সন্তানদের হত্যা করবে না, জেনেশুনে কোনো অপবাদ আরোপ করবে না এবং ভালো কাজে আপনার অবাধ্য হবে না, তাহলে তাদের বাইআত গ্রহণ করুন এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তাদের জন্য ইসতিগফার করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান। (সূরা মুমতাহিনাহ : ১২)। জাবের রা. আকাবায় মদিনার লোকদের বাইআতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বাইআত হও উদ্যম ও আলস্যে শোনা ও মানার, সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতায় দান করার, ভালো কাজে আদেশ, মন্দ কাজে নিষেধ এবং আল্লাহ তাআলার জন্য হক কথা বলার ওপর; তোমরা আল্লাহর জন্য হক কথা বলতে নিন্দুকের নিন্দার ভয় করো না। আর বাইআত হও আমাকে সাহায্য করার ওপর। ফলে যখন আমি তোমাদের কাছে আসব, তখন তোমরা সে সকল বিপদ থেকে নিরাপত্তা দেবে, যা থেকে তোমরা নিজকে, স্ত্রীকে এবং সন্তানদের রক্ষা করো। বিনিময়ে তোমাদের জন্য হবে জান্নাত। (মুসনাদে আহমাদ :১৪৪৫৬, ১৪৬৫৩)।
৫ম হিজরিতে যখন আরবের সকল মুশরিকগোষ্ঠী একসাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কেন্দ্রভূমি মদিনায় হামলা করার উদ্দেশ্যে এলো তখন তাদের প্রতিরোধে মুসলিমরা খন্দক খনন করছিলেন। খনন কাজে সাহাবীদের মেহনত ও পরিশ্রম দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন : (হে আল্লাহ! জীবন তো হলো আখেরাতের জীবন, ক্ষমা করুন আনসার ও মুহাজিরদের)। উত্তরে সাহাবা রা. বলেছিলেন : (আমরা সেই সে জাতি, বাইআত হয়েছে যারা মুহাম্মাদের হাতে, জিহাদের বাইআত, রবো যতদিন পৃথিবীতে। (সহীহ বুখারী : ২৮৩৪)।
এসকল বাইআতে উল্লেখিত অঙ্গীকারের সবগুলো ইসলামের অপরিহার্য অংশ হওয়ার কারণেই এগুলোর ব্যাপারে মৌখিক স্বীকৃতি গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বাইআতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.) যেসকল অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন, তা পূর্ণ করা আবশ্যক। এ বাইআত ও অঙ্গীকারসমূহের সারকথা হলো, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অনুসারে পরিচালিত করার জন্য একজন মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে : হে আদম সন্তানেরা! আমি কি তোমাদের গুরুত্ব দিয়ে বলিনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং তোমরা আমার ইবাদত করো। এটাই সরল পথ। (সূরা ইয়াসীন : ৬০-৬১)।
কেউ আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত এই অঙ্গীকার গ্রহণের পর ভুল করতে পারে; কিন্তু যে ব্যক্তি অঙ্গীকার গ্রহণ করে না, বরং অস্বীকার করে, সে মুমিন নয়। কারণ অঙ্গীকার অস্বীকার করা হলো ইসলামকে অস্বীকার করা আর অঙ্গীকার পূরণে অবহেলা ও ব্যর্থতা হলো অপরাধ। অবশ্য মুখে অস্বীকারই অস্বীকারের একমাত্র পন্থা নয়; বরং অস্বীকার হতে পারে কর্মের মাধ্যমেও। যেমন কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতে বনী ইরসাঈলকে অঙ্গীকার ভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বনী ইসরাঈল আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত অঙ্গীকার স্বীকার করে নেয়ার পর বার বার তারা নিষিদ্ধ অপকর্মে লিপ্ত হয়ে অঙ্গীকার অস্বীকার করেছে। এক্ষেত্রে তারা তাওরাতকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তাদের কর্মকাণ্ড বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে। মূলত কোনো বক্তব্যের সম্ভাব্য বিভিন্ন অর্থ থাকলেও, বক্তব্যকে সেই অর্থেই প্রয়োগ করা আবশ্যক, যা বক্তার উদ্দেশ্য। বক্তব্যকে অন্যান্য সম্ভাব্য অর্থে প্রয়োগ করা গর্হিত বিকৃতি। এই বিকৃতি অস্বীকারের চেয়েও জঘন্য। কুরআনে ইহুদিদের এই স্বভাবের সমালোচনা করে বলা হয়েছে : কতক ইহুদি রয়েছে, যারা শব্দকে তার স্থানচ্যুত করে। (সূরা নিসা : ৪৬)।
আল্লাহ তাআলার সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার পর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের নামে এজাতীয় প্রতারণা জাতিগতভাবে বনী ইসরাঈলের স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। তবে বনী ইসরাঈল ব্যতীত যারা এ অপরাধে লিপ্ত হয়, তারাও সমান অপরাধী। কুরআন কারীমে বনী ইসরাঈলের শাস্তির উদাহরণ টেনে আমাদের এজাতীয় অপরাধে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
মোটকথা, আমরা যথাযথভাবে ইসলামের প্রতিটি বিধান পালনে আল্লাহ তাআলার সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাওহীদ, আল্লাহ তাআলার রবুবিয়াত, উলুহিয়াত, যাবতীয় বিশ্বাস, আমল ও আহকাম কেবলমাত্র শব্দ ও বাক্য নয়; বরং নবীদের মাধ্যমে যুগে যুগে সেই শব্দ ও বাক্যসমূহের মর্ম মানুষকে শিখিয়ে তা যথাযথভাবে পালনের জন্য মৌখিক স্বীকৃতি ও অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। এই অঙ্গীকার একবার নেয়া হয়নি; বরং বার বার নেয়া হয়েছে।
ফলে একজন মানুষ যখন ইসলামের প্রতি ঈমান আনে, তিনি এই অঙ্গীকার করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে ইসলাম শিখিয়েছেন, সেভাবেই ইসলামের যাবতীয় বিষয় স্বীকার করেছেন এবং তা যথাযথভাবে পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদি কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে ইসলাম শিখিয়েছেন, সেভাবে ইসলামকে স্বীকার না করে, সে মুসলিম নয়। ফলে যারা মুসলিম তাদের আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত অঙ্গীকার রক্ষায় নফসের ডাক উপেক্ষা করে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গীতপ্রাণ হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের তাওফিক দান করুন- আমীন!
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি