অপরের হক্ব ক্ষুণ্ন করে অনাকাক্সিক্ষত দখলদারিত্ব সমীচীন নয়
২৯ জুন ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০২ এএম
সীমালংঘন করার নাম জুলুম। সীমালংঘনের এ বিষয়টি হক্বুল্লাহর ক্ষেত্রে হলে সেটা তো অবশ্যই বড় জুলুম। কিন্তু বান্দার সঙ্গে বান্দার, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও সীমালংঘন বা জুলুমের বিষয়টি কম পীড়াদায়ক ও কম বিড়ম্বনাকর নয়। আমরা স্পষ্টতই লক্ষ্য করি, দেশ সমাজ নির্বিশেষে এ জুলুমের বিস্তার এখন ব্যাপক। এ ক্ষেত্রেও বড় ও মোটা দাগের জুলুমের ঘটনাগুলো আমাদের চোখে সহজে ধরা পড়ে। বড় রাষ্ট্র ছোট রাষ্ট্রের প্রতি, বড় পদাধিকারী ছোট পদাধিকারীর প্রতি, শক্তিমান শক্তিহীনের প্রতি জুলুমের যে আচরণ করে থাকে সেটা চিহ্নিত করা দুরূহ হয় না।
এসব ক্ষেত্রে যেহেতু বড়র পক্ষ থেকে ছোটর প্রতি অধিকার প্রয়োগ ও চাপ সৃষ্টির কোনো নৈতিক ও বাস্তব সুযোগ থাকে না তাই শিক্ষিত-অশিক্ষিত সাধারণ দ্বীনদার ও দ্বীন অনুসরণে নিয়মিত নন এমন সব শ্রেণির মানুষই এ পর্যায়ের পরিষ্কার জুলুমের বিষয়টিকে বুঝতে পারেন। জুলুম করা থেকে বাঁচতে চাইলে বুঝে-শুনে এ গুনাহ থেকেও বাঁচতে পারেন। কিন্তু সীমালংঘন বা জুলুমের এমন একটি পর্যায়ও রয়েছে যেখানে একজনের প্রতি অপরজনের অধিকার ও সম্পর্কের একটি মাত্রা ও সীমা পর্যন্ত দখল থাকার বিষয়টি সহজেই অনুধাবনযোগ্য।
সর্বস্বীকৃত যে, জামাতার প্রতি শ্বশুরের, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর, মুরীদের প্রতি পীরের একটি বিশেষ প্রয়োজনীয়, নৈতিক ও বাস্তব দখল ও কর্তৃত্ব বিদ্যমান। এটা নিয়ে কারো মাঝেই কোনো সংশয় নেই। কিন্তু এ কর্তৃত্বের মাত্রা ও সীমা কতটুকু এ বিষয়টি স্পষ্ট না থাকা কিংবা স্পষ্ট করতে না চাওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রেও যে সীমালংঘন করার ঘটনা ঘটতে পারে এটা যেন আমরা ভুলতেই বসেছি। সে কারণে এসব ক্ষেত্রে যেমন ঘটে চলেছে পারস্পরিক সীমালংঘনের বহু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তেমনি জুলুম ও বিড়ম্বনার নানামুখি আচরণে তিক্ত হয়ে চলেছে বহু মধুর সম্পর্ক, ভেঙ্গে পড়ছে বহু আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যরে ভিত।
হযরত রাসূলে কারীম (সা.)-এর একটি হাদিসের তরজমা হলো- কোনো মানুষের ইসলাম অনুসরণের একটি সৌন্দর্য হচ্ছে অর্থহীন ব্যাপারগুলো বর্জন করা।’ হাদিসে বর্ণিত এই অর্থহীন ব্যাপারগুলো বা ‘মা লা ইয়ানী’-এর মর্ম আসলে কতটুকু? এর প্রথম তাৎপর্য হচ্ছে অনর্থক কথা ও কাজ বর্জন করা। কিন্তু এর সঙ্গে অর্থহীনতা বা অনর্থকতার আরো কিছু তাৎপর্যের দিকেও আমাদের মনোযোগ আকর্ষিত হয়। এর আরেকটি মর্ম হচ্ছে যে বিষয়ে আমার কোনো সামর্থ্য বা ক্ষমতা নেই, যে বিষয়ে আমার কোনো অবগতি ও অভিজ্ঞতা নেই সে বিষয় নিয়েও দখলদারিত্ব দেয়া, কর্তৃত্ব এবং অধিকার প্রয়োগ করা।
এর তৃতীয় আরেকটি মর্ম হচ্ছে, যে বিষয়ে আমার অধিকার ও কর্তৃত্ব সীমিত সেখানেও আমার সম্পৃক্ততা বা অধিকার পুরো মাত্রায় রয়েছে ধরে নিয়ে সীমা পার হয়ে অধিকার ও কর্তৃত্বের চর্চা করে যাওয়া। এ সবই হচ্ছে পরিত্যাজ্য অর্থহীনতা বা অনর্থকতা। একজন মানুষের জীবনে ইসলামের সৌন্দর্য ধারণ করতে যে যে বিষয় ও কারণগুলোকে অবলম্বন করতে হয় সে সবের মধ্যে উপরোক্ত বিষয়গুলোর বর্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
এখানে তৃতীয় পর্যায়ে উল্লিখিত অধিকার ও কর্তৃত্বমুক্ত বিষয়গুলোকে আমরা লক্ষ্য করলেই দেখবো অধিকার তো আছে, কিন্তু তার যে একটি সীমা ও মাত্রাও আছে সেটা ভুলে যাওয়া। এখানে আমার সম্পৃক্ততা বা অধিকার আছে ধরে নিয়ে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে যাওয়া, অধিকার ও কর্তৃত্বের প্রয়োগকে ব্যাপক ও অপরের জন্য বিড়ম্বনাকর করে তোলা হয়। এটা অনর্থক কাজগুলোর মধ্যে এমন যে, জুলুম বা সীমালংঘন হিসেবে অনুধাবন করতেও অনেকের সমস্যা হয়। স্নেহ-শাসন কিংবা অধিকারের বন্ধনের নামে চোরা স্রোতের মতো নীরব জুলুমের একটি অনাকাক্সিক্ষত ধারার সৃষ্টি হচ্ছে এভাবে।
জুলুমের নীরব ও অপ্রকাশ্য এই দিকটি সম্পর্কে ভাবলে দেখা যায়, এখানে মন্দ ও গুনাহর কারণ অনেক ক’টি বিদ্যমান। অধিকারের সীমালঙ্ঘন করে কর্তৃত্ব করার ফলে ‘ঈযায়ে মুসলিম’ বা মুসলমানদের দুর্ভোগ পৌঁছানোর একটি গুনাহ এখানে পাওয়া যায়। আর এটাতো সচেতন সবারই জানা যে, কোনো মুসলিমকে দুর্ভোগ পৌঁছানো কত মারাত্মক গুনাহ।
দ্বিতীয়ত : এ ধরনের ভুল অধিকার চর্চার কারণে হযরত রাসূলে কারীম (সা.)-এর পক্ষ থেকে উম্মাহর কাছ থেকে নেয়া সাধারণ অঙ্গীকারের খেলাফ আমল করার গুনাহও এর দ্বারা সংঘটিত হয়। সে অঙ্গীকারের একটি বাক্য ছিল-(আমরা কোনো বিষয়ে তার উপযুক্ত পাত্রের সঙ্গে বিবাদ করব না) অধিকার প্রয়োগের নামে কর্তৃত্ব করতে গিয়ে যার সঙ্গে সীমা পার করার ঘটনা ঘটে থাকে, বাস্তবে দেখা যায় ওই বিষয়ে সে-ই অধিক হকদার ও দায় গ্রহণকারী। সুতরাং তার ওপর মাত্রাহীন অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে তাকে বিব্রত করার মানে হচ্ছে কাজের উপযুক্ত পাত্রের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে যাওয়া।
তৃতীয়ত : অনাকাক্সিক্ষত এই সীমা অতিক্রম, এই অনধিকার চর্চার দ্বারা যে ক্ষতিটি সাধিত হয় সেটি হচ্ছে এতে অনেকের বৈধ স্বাধীনতা নষ্ট হয়। শরীয়ত তাকে কোনো কাজ করতে যে স্বাধীনতা দিয়েছে সেখানে অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপ করে তাকে বিব্রত করা হয়। কারো বৈধ স্বাধীনতা ও এক্তিয়ার বা ক্ষমতা নষ্ট করাও গুনাহ। সর্বোপরি এ ধরনের সীমাবহির্ভূত অধিকার চর্চার বিষয়টি এক প্রকার জুলুম নিঃসন্দেহে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করেছিল -আ ন ম বজলুর রশীদ
বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে চায় পাকিস্তান
দুর্গাপুরে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার।
রাজশাহী মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু ছুরিকাঘাত
নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত
আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে
মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা
শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস
চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স
৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু, কমেনি যানজট
খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত
ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া
সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২
সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা
শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য
নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী
পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার
সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন