আমরা কি আল্লাহর প্রকৃত বান্দা

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৬ এএম

মানুষের জীবনে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বলা যেতে পারে, সময়ই জীবন। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী (রাহ.) বলেছেন- ‘হে আদমের বেটা! তুমি তো কিছু দিবসের সমষ্টি। একটি দিন গত হওয়া মানে তোমার কিছু অংশ চলে যাওয়া।’ এভাবে এক দিন এক দিন করে আমাদের জীবনের দিনগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কর্তব্য, এই অমোঘ বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

দিন-রাতের বিবর্তন আমাদেরকে এই বাস্তবতা সম্পর্কে সতর্ক করে এবং আমাদেরকে কর্মমুখর হওয়ার পয়গাম শোনায়। যারা দিন-রাতের গমনাগমনের এই নীরব বাণী শ্রবণ করে সময়কে কাজে লাগাতে পারেন পরিণামে তারাই সাফল্য অর্জন করেন। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে এ বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে।
কোরআন মাজীদ কি শুধু সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কেই সচেতন করে? না। কোরআন শুধু সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কেই সচেতন করে না, তা ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কেও স্পষ্ট পথনির্দেশ দান করে। যে নির্দেশনা অনুসরণ করে মানুষ নাজাত ও মুক্তির পরম গন্তব্যে উপনীত হতে পারে। হাদিস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : ‘প্রত্যেকেই প্রত্যুষে উপনীত হয়ে নিজ সত্তাকে বিক্রি করে। হয়তো আল্লাহর কাছে বিক্রি করে আল্লাহর বান্দা হয়ে দিনযাপন করে। এই ব্যক্তি নিজেকে মুক্ত করে। অথবা নফস ও শয়তানের কাছে বিক্রি করে তাদের বান্দা হয়ে দিনযাপন করে। এই ব্যক্তি নিজেকে ধ্বংস করে। (সহীহ মুসলিম : হাদিস ২২৩)।

মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- সে কি আল্লাহর বান্দা হবে, না নফস ও শয়তানের বান্দা হবে। আল্লাহর বান্দা হওয়ার অর্থ, আল্লাহ তাআলার বিধিবিধান অনুসারে জীবন-যাপন করা। সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে সকাল- চব্বিশ ঘণ্টা যে নিজেকে আল্লাহ তাআলার অনুগত রাখে, তাঁর বিধান মত চলে সে-ই সত্যিকারের আল্লাহর বান্দা। আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ ও শান্তি। পক্ষান্তরে, জীবনের দিবস-রজনীগুলোতে যে আল্লাহর আনুগত্য বর্জন করে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, সে নফস ও শয়তানের বান্দা। নফস-শয়তান তাকে অশান্তি-অকল্যাণের পথে নিয়ে যাবে।

কারো মনে হতে পারে, যারা দ্বীন মোতাবেক চলে তাদের জীবনটা আবদ্ধ জীবন। নানা ধরনের বিধি-নিষেধের বেড়াজালে তারা আবদ্ধ। পক্ষান্তরে, বেদ্বীনী জীবন হচ্ছে মুক্ত-স্বাধীন জীবন। সেখানে এতসব বিধি-নিষেধের বালাই নেই। কিন্তু এই চিন্তাটা গোড়া থেকেই ভুল। প্রথমত, এই কারণে যে, যারা বেদ্বীনী জীবন যাপন করে তারা বাস্তবে মুক্ত-স্বাধীন নয়, বাস্তবে তারা নফস ও শয়তানের দাস। নফস-শয়তান তাদেরকে অনাচার-উচ্ছৃঙ্খলার আদেশ করে। আর তারা সে আদেশ পালন করে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করে। তাদের কর্তব্য ছিল এ আদেশ অমান্য করা। কিন্তু তারা তা না করে নফস ও শয়তানের ক্ষতিকর বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। এই বশ্যতা স্বীকার করার পর কীভাবে তারা নিজেদের মুক্ত-স্বাধীন মনে করতে পারে?

দ্বিতীয়ত, যারা দ্বীনের বিধি-নিষেধ মেনে চলে, নিঃসন্দেহে তারাও মান্যতা ও আনুগত্য অবলম্বন করে, কিন্তু সে আনুগত্য আল্লাহর, যিনি তাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। এ আনুগত্য বান্দার নিজের জন্যই কল্যাণকর। এ হচ্ছে শৃঙ্খলা। আল্লাহ তাআলার বিধান পালনের মাধ্যমে মানুষের জীবন সংযত ও সুশৃঙ্খল হয়। ফলে তার দুনিয়ার জীবনও সুন্দর হয়, আখেরাতের জীবনও সুন্দর হয়। এই এক জায়গায় যে নিজেকে নত করে অন্য সকল জায়গার নতজানুতা থেকে সে মুক্তি পেয়ে যায়। কবি সত্য বলেছেন : ‘যে একটি সিজদা তোমার কাছে অতি কঠিন, সেটিই তোমাকে মুক্তি দেয় হাজার সিজদা থেকে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেতুর পাশ থেকে নারীর লাশ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেতুর পাশ থেকে নারীর লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ২ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ২ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জোরালো ভূমিকা রাখার আশ্বাস মালয়েশিয়া স্পীকারের

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জোরালো ভূমিকা রাখার আশ্বাস মালয়েশিয়া স্পীকারের

শুরু হচ্ছে ভারত-জিম্বাবুয়ে সিরিজ

শুরু হচ্ছে ভারত-জিম্বাবুয়ে সিরিজ

সদস্য প্রার্থীদের নিয়ে খেলাফত মজলিসের দিনব্যাপী তরবিয়তী মজলিস অনুষ্ঠিত

সদস্য প্রার্থীদের নিয়ে খেলাফত মজলিসের দিনব্যাপী তরবিয়তী মজলিস অনুষ্ঠিত

স্পেন-জার্মানি মহারণ : পরিসংখ্যানে কে এগিয়ে?

স্পেন-জার্মানি মহারণ : পরিসংখ্যানে কে এগিয়ে?

কুমিল্লায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের দায়ের কোপে বয়োবৃদ্ধ মা নিহত

কুমিল্লায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের দায়ের কোপে বয়োবৃদ্ধ মা নিহত

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পানিবন্দী মানুষ

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পানিবন্দী মানুষ

ইউনানী ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতিকে "অল্টারনেটিভ মেডিসিন" এর পরিবর্তে " ট্রাডিশনাল মেডিসিন"

ইউনানী ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতিকে "অল্টারনেটিভ মেডিসিন" এর পরিবর্তে " ট্রাডিশনাল মেডিসিন"

ব্রিটেনে গাজাপন্থীদের কাছে হেরেছেন লেবার প্রার্থীরাও

ব্রিটেনে গাজাপন্থীদের কাছে হেরেছেন লেবার প্রার্থীরাও

রাস্তার বেহাল দশা, ভোগান্তিতে হাজারও মানুষ

রাস্তার বেহাল দশা, ভোগান্তিতে হাজারও মানুষ

ঝিনাইদহ কেসি কলেজের সাবেক জিএস সবুজ আর নেই

ঝিনাইদহ কেসি কলেজের সাবেক জিএস সবুজ আর নেই

দিল্লির অনাপত্তিপত্র নিয়ে চীন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : রিজভী

দিল্লির অনাপত্তিপত্র নিয়ে চীন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : রিজভী

নোয়াখালীতে কাভার্ডভ্যান চাপায় ভাইসহ-অন্ত:স্বত্তা বোনের মৃত্যু

নোয়াখালীতে কাভার্ডভ্যান চাপায় ভাইসহ-অন্ত:স্বত্তা বোনের মৃত্যু

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে ঢাবি শিক্ষকদের সংগঠন 'সাদা দল'র বিবৃতি

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে ঢাবি শিক্ষকদের সংগঠন 'সাদা দল'র বিবৃতি

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ

পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে করতে চেয়েছিলাম : ওবায়দুল কাদের

পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে করতে চেয়েছিলাম : ওবায়দুল কাদের