ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

কেমন হবে নবীজীর প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা

Daily Inqilab মুহাম্মাদ ত্বহা হুসাইন

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম

নবীর প্রতি ভালবাসা এবং নবী-আদর্শের প্রতি আস্থার সবক নিতে আমাদেরকে হাজির হতে হবে সাহাবীগণের দরবারে। কেননা তাঁদের এই প্রেম ও আস্থার আর কোনো নজির নেই। রোম সম্রাটের হাতে বন্দী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা (রা.)। একান্তে ডেকে সম্রাট এ প্রলোভন দিল যে, ‘খৃস্টান হয়ে যাও। প্রতিদানে আমার এ বিশাল ভূখণ্ডের অর্ধেক তুমি পাবে।’ ইবনে হুযাফার মনে সামান্য চাঞ্চল্যও সৃষ্টি হল না। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিলেন : অর্ধেক রাজত্ব নয়, তোমার পুরো রাজত্ব এবং তার সাথে বিশাল আরব সাম্রাজ্যও যদি আমার হাতের মুঠোয় ভরে দেওয়া হয় তবুও এক পলকের জন্য মুহাম্মাদ (সা.) এর আনীত দ্বীন হতে বিচ্যুত হব না। অতঃপর একটি বিশাল পাত্রে প্রচণ্ডভাবে পানি ফুটানো হল। ইবনে হুযাফার চোখের সামনে একে একে দুজন মুসলিম কয়েদীকে নির্মমভাবে পানিতে নিক্ষেপ করে শহীদ করা হল। তাদের পরিণতি দেখিয়ে পুনরায় তাকে খৃস্টধর্ম কবুলের ফুরসত দেওয়া হল। আগের মতোই তা প্রত্যাখ্যান করলেন।

এবার তাকে ফুটন্ত পানিতে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হল। ডেগচির সামনে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি মৃদু কাঁদলেন। সম্রাট ভাবল, সে হয়তো দুর্বল হয়েছে। কাছে ডেকে আবারও খৃস্টধর্ম পেশ করা হল। কিন্তু এবারও তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। সম্রাট প্রশ্ন করল, তাহলে তুমি কাঁদলে কেন? ইবনে হুযাফা (রা.) বললেন, ডেগের কাছাকাছি যাওয়ার পর আমি ভাবলাম, হায়! কিছুক্ষণ পরই আমার প্রাণপাখি উড়ে যাবে। হায়! আমার শরীরে যতগুলো লোম আছে সে পরিমাণ প্রাণ যদি আমার থাকত তবে একে একে সবগুলোই আমি আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করতাম। এ ভাবনা আসতেই আমার দুচোখ ভিজে উঠেছিল। (ইসাবা ৪/৫৯)।

এক সাহাবী নবীজীর দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে আমি নিজের চেয়ে এবং নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি ভালবাসি। বাড়িতে গেলে আপনার কথা মনে পড়লে সহ্য করতে পারি না। বেচাইন হয়ে পড়ি। এসে আপনাকে এক পলক দেখে যাই। কিন্তু মৃত্যুর কথা মনে হলে আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। আমি ভাবি, জান্নাতের অত্যুচ্চ মাকামে নবীদের সাথে আপনি থাকবেন। তখন কি আপনাকে এভাবে এক পলক দেখে যাওয়ার সুযোগ পাব? শুনে নবীজী চুপ করে রইলেন।

ইতিমধ্যে আসমানী বার্তা নিয়ে জিবরাঈল আমীন উপস্থিত হলেন : যে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্ম পরায়ণদের সঙ্গে থাকবে। (তবারানী, আওসাত : ৪৬০)। এক আগন্তুক এসে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? নবীজী বললেন, তুমি তার জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? আগন্তুক বলল, কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসি। নবীজী বললেন : তুমি তোমার প্রেমাস্পদের সাথেই থাকবে। হযরত আনাস (রা.) বলেন, এ কথা শুনে আমরা এত বেশি আনন্দিত হয়েছি, যা ইতিপূর্বে আর কোনোদিন হইনি। (সহীহ বুখারী : ৩৬৮৮)।

প্রশ্ন জাগে, কীসের লোভে আশিটিরও বেশি তীর তার তরবারির আঘাত নিয়ে উহুদের মাঠে কাতরাচ্ছিলেন হযরত আনাস বিন নযর (রা.)। কার প্রেমের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে শত্রুর হাতে কুচি কুচি হওয়া হযরত হামযা (রা.) এর দেহটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল উহুদ প্রান্তরে? কত ইতিহাস লেখা হল, কত উপাখ্যান রচিত হল, কিন্তু আনুগত্যের এ ইতিহাস এবং ভালবাসার এ উপাখ্যান আজও অতুলনীয়ই থেকে গেল। তাদের এ বাস্তব কাহিনী রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। মক্কার কাফেরদের হাতে বন্দী হলেন সাহাবী হযরত খুবাইব (রা.)।

বদর যুদ্ধে নিহতদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তারা তাকে শূলিতে চড়াল। কাফেরদের নিক্ষিপ্ত তীরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার শরীর। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার স্থানে আজ মুহাম্মাদকে এনে দিলে কি তুমি খুশি হবে? শুনে হযরত খুবাইব (রা.) এর রক্ত কণিকায় শিহরণ জেগে উঠে। শূলিকাষ্ঠে আবদ্ধ অবস্থায় তিনি বলে উঠলেন, খোদার কসম! কক্ষনো নয়। তাঁর গায়ে একটি কাঁটার আঁচড় লাগুক তাও আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। অতঃপর তার গলে যখন ফাঁসির দড়ি পরানো হচ্ছিল তিনি কবিতা বললেন।

যার অর্থ হল- প্রভু হে আমার, তোমাকেই বলি আমার দুঃখ জ্বালা/ তুমিই দেখছ মুশরিকদের এই মিলিত তাণ্ডবলীলা। তোমার পথে নিজেকে আমি করে দিলাম কুরবান, ছিন্ন দেহের প্রতিটি অঙ্গের তুমি দিও প্রতিদান। যেখানেই মরি, যেভাবেই মরি, চিন্তা কীসের আমার/ আমি মুসলিম, সৈনিক আমি শুধু এক আল্লাহর। (তবারানী, কাবীর ৫/২৫৯-২৬৬)।

এমন অকৃত্রিম ভালবাসা আর অসীম আত্মত্যাগ দেখে তৎকালীন মুশরিকদের সর্দার আবু সুফিয়ান স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন : মুহাম্মাদের সাহাবীরা তাকে যত ভালবাসে, কেউ কাউকে এত বেশি ভালবাসতে আমি দেখিনি। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/২০৬)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা