কেমন হবে নবীজীর প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম
নবীর প্রতি ভালবাসা এবং নবী-আদর্শের প্রতি আস্থার সবক নিতে আমাদেরকে হাজির হতে হবে সাহাবীগণের দরবারে। কেননা তাঁদের এই প্রেম ও আস্থার আর কোনো নজির নেই। রোম সম্রাটের হাতে বন্দী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা (রা.)। একান্তে ডেকে সম্রাট এ প্রলোভন দিল যে, ‘খৃস্টান হয়ে যাও। প্রতিদানে আমার এ বিশাল ভূখণ্ডের অর্ধেক তুমি পাবে।’ ইবনে হুযাফার মনে সামান্য চাঞ্চল্যও সৃষ্টি হল না। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিলেন : অর্ধেক রাজত্ব নয়, তোমার পুরো রাজত্ব এবং তার সাথে বিশাল আরব সাম্রাজ্যও যদি আমার হাতের মুঠোয় ভরে দেওয়া হয় তবুও এক পলকের জন্য মুহাম্মাদ (সা.) এর আনীত দ্বীন হতে বিচ্যুত হব না। অতঃপর একটি বিশাল পাত্রে প্রচণ্ডভাবে পানি ফুটানো হল। ইবনে হুযাফার চোখের সামনে একে একে দুজন মুসলিম কয়েদীকে নির্মমভাবে পানিতে নিক্ষেপ করে শহীদ করা হল। তাদের পরিণতি দেখিয়ে পুনরায় তাকে খৃস্টধর্ম কবুলের ফুরসত দেওয়া হল। আগের মতোই তা প্রত্যাখ্যান করলেন।
এবার তাকে ফুটন্ত পানিতে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হল। ডেগচির সামনে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি মৃদু কাঁদলেন। সম্রাট ভাবল, সে হয়তো দুর্বল হয়েছে। কাছে ডেকে আবারও খৃস্টধর্ম পেশ করা হল। কিন্তু এবারও তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। সম্রাট প্রশ্ন করল, তাহলে তুমি কাঁদলে কেন? ইবনে হুযাফা (রা.) বললেন, ডেগের কাছাকাছি যাওয়ার পর আমি ভাবলাম, হায়! কিছুক্ষণ পরই আমার প্রাণপাখি উড়ে যাবে। হায়! আমার শরীরে যতগুলো লোম আছে সে পরিমাণ প্রাণ যদি আমার থাকত তবে একে একে সবগুলোই আমি আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করতাম। এ ভাবনা আসতেই আমার দুচোখ ভিজে উঠেছিল। (ইসাবা ৪/৫৯)।
এক সাহাবী নবীজীর দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে আমি নিজের চেয়ে এবং নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি ভালবাসি। বাড়িতে গেলে আপনার কথা মনে পড়লে সহ্য করতে পারি না। বেচাইন হয়ে পড়ি। এসে আপনাকে এক পলক দেখে যাই। কিন্তু মৃত্যুর কথা মনে হলে আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। আমি ভাবি, জান্নাতের অত্যুচ্চ মাকামে নবীদের সাথে আপনি থাকবেন। তখন কি আপনাকে এভাবে এক পলক দেখে যাওয়ার সুযোগ পাব? শুনে নবীজী চুপ করে রইলেন।
ইতিমধ্যে আসমানী বার্তা নিয়ে জিবরাঈল আমীন উপস্থিত হলেন : যে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্ম পরায়ণদের সঙ্গে থাকবে। (তবারানী, আওসাত : ৪৬০)। এক আগন্তুক এসে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? নবীজী বললেন, তুমি তার জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? আগন্তুক বলল, কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসি। নবীজী বললেন : তুমি তোমার প্রেমাস্পদের সাথেই থাকবে। হযরত আনাস (রা.) বলেন, এ কথা শুনে আমরা এত বেশি আনন্দিত হয়েছি, যা ইতিপূর্বে আর কোনোদিন হইনি। (সহীহ বুখারী : ৩৬৮৮)।
প্রশ্ন জাগে, কীসের লোভে আশিটিরও বেশি তীর তার তরবারির আঘাত নিয়ে উহুদের মাঠে কাতরাচ্ছিলেন হযরত আনাস বিন নযর (রা.)। কার প্রেমের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে শত্রুর হাতে কুচি কুচি হওয়া হযরত হামযা (রা.) এর দেহটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল উহুদ প্রান্তরে? কত ইতিহাস লেখা হল, কত উপাখ্যান রচিত হল, কিন্তু আনুগত্যের এ ইতিহাস এবং ভালবাসার এ উপাখ্যান আজও অতুলনীয়ই থেকে গেল। তাদের এ বাস্তব কাহিনী রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। মক্কার কাফেরদের হাতে বন্দী হলেন সাহাবী হযরত খুবাইব (রা.)।
বদর যুদ্ধে নিহতদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তারা তাকে শূলিতে চড়াল। কাফেরদের নিক্ষিপ্ত তীরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার শরীর। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার স্থানে আজ মুহাম্মাদকে এনে দিলে কি তুমি খুশি হবে? শুনে হযরত খুবাইব (রা.) এর রক্ত কণিকায় শিহরণ জেগে উঠে। শূলিকাষ্ঠে আবদ্ধ অবস্থায় তিনি বলে উঠলেন, খোদার কসম! কক্ষনো নয়। তাঁর গায়ে একটি কাঁটার আঁচড় লাগুক তাও আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। অতঃপর তার গলে যখন ফাঁসির দড়ি পরানো হচ্ছিল তিনি কবিতা বললেন।
যার অর্থ হল- প্রভু হে আমার, তোমাকেই বলি আমার দুঃখ জ্বালা/ তুমিই দেখছ মুশরিকদের এই মিলিত তাণ্ডবলীলা। তোমার পথে নিজেকে আমি করে দিলাম কুরবান, ছিন্ন দেহের প্রতিটি অঙ্গের তুমি দিও প্রতিদান। যেখানেই মরি, যেভাবেই মরি, চিন্তা কীসের আমার/ আমি মুসলিম, সৈনিক আমি শুধু এক আল্লাহর। (তবারানী, কাবীর ৫/২৫৯-২৬৬)।
এমন অকৃত্রিম ভালবাসা আর অসীম আত্মত্যাগ দেখে তৎকালীন মুশরিকদের সর্দার আবু সুফিয়ান স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন : মুহাম্মাদের সাহাবীরা তাকে যত ভালবাসে, কেউ কাউকে এত বেশি ভালবাসতে আমি দেখিনি। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/২০৬)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিএনপি নির্বাচনের জন্য ‘অস্থির’ কেন?
বরিশালে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকগন মুনফা সহ বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ তুলতে পারছেন না
মানিকগঞ্জে ক্যান্সার আক্রান্ত দুই সন্তানের জননীকে জবাই করে হত্যা
ভারত কেন এখন তালিবানকে কাছে টানছে ?
মুরাদনগরে ভূমিদস্যুদের আতঙ্ক এসিল্যান্ড
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ : ফিলেমন ইয়াং
গুরুদাসপুরে একই গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী ও কলেজ ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু
মতলবে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন
দেশের সর্বাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হোটেলিয়ার-শাখাওয়াত হোসেন
যুদ্ধবিরতি চুক্তি : প্রথম পর্যায়ে মুক্তি পাবেন এক হাজার ফিলিস্তিনি
কালবিলম্ব না করে অবাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করুন- এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে চার কমিশন
ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রামে আমান গ্রুপের শীতবস্ত্র বিতরণ
গাজার 'মানবিক অঞ্চল' নিয়ে উদ্বেগ ,ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত
সারজিসসহ ৪৫ জনের পাসপোর্ট জব্দের তথ্যটি ভুয়া
রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিল অস্ট্রেলিয়া ,নাগরিক নিহত হলে শাস্তি হবে কঠিন
বাংলাদেশ পুলিশের অত্যাচারী আচরণের নতুন ভিডিও ফাঁস
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা
আজ ছোট পর্দায় মুক্তি পাবে নাটক 'হোয়াট এ বৌ'
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি সরিয়ে ফেললেন ভারতের সেনাপ্রধান