হিজরী সন মুসলিম ঐতিহ্যের উত্তম নিদর্শন জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
০৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাতা সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ১৪৪৫ হিজরী সনের আজ শেষ জুমা। আগামী জুমা হবে হিজরী নতুন বছরে ১৪৪৬ হিজরীতে ইনশআল্লাহ। হিজরী সন মুসলিম ঐতিহ্যের উত্তম নিদর্শন। খতিব বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয় মাসের সংখ্যা আল্লাহ তায়ালার নিকট বারটি, যা লৌহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে ঐদিন থেকে যে দিন আল্লাহ তায়ালা আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। (সূরা তাওবাহ-৩৬) সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তায়ালা বছরের হিসেবের ব্যবস্থা রেখেছেন। এর এই দিন তারিখ হিসেব করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সূর্য্য ও চন্দ্রের চক্র দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন: আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটি নিদর্শন। রাতের নিদর্শনকে অপসারিত করেছি এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকপ্রদ। যাতে করে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার। এবং যাতে করে তোমরা বছরের হিসাব (সন) ও হিসাব জানতে পার। হিজরী সনের প্রবর্তন হয় হযরত ওমর (রা.) এর যুগ থেকে। হযরত আবু মুসা আল আশয়ারী (রাদি.) ওমর (রাদি.) এর নিকট পত্র প্রেরণ করলেন এই মর্মে যে, আপনার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে পত্র আসে। কিন্তু তাতে কোন তারিখ থাকে না। তাই আপনি তারিখ লিখুন যাতে বছরটা স্থির হয়। ওমর (রাদি.) এর নিকটে একটা চুক্তি নামা আনা হল। তাতে শাবান মাসের উল্লেখ ছিল। কিন্তু কোন সন লেখা ছিল না। তখন ওমর (রাদি.) বললেন এটা কোন সন? এটা কি বর্তমান সন? নাকি আগের সন? নাকি আগামী সন?
এরপর হযরত ওমর (রাদি.) সাহাবাদেরকে একত্রিত করে তাঁদের সাথে পরামর্শ করেন। হযরত আলী (রাদি.) এর পরামর্শে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতকে কেন্দ্র করে হিজরী সন প্রবর্তন করা হয়। পৃথিবীতে হিজরী সন-ই হল সবচেয়ে প্রাচীন সন। ইতোপূর্বে মানুষ কোন এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারিখ হিসাব করত। এর অনেক ৯৯২ হিজরীতে বাংলা সন প্রবর্তণ করেন সম্রাট আকবর। এই চন্দ্রবর্ষের ও চন্দ্র মাসের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত ইবাদতের তারিখ, ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরী সনের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণে হিজরী সনের হিসাব স্মরণ রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরি। যেমন রমজানের রোজা, দুই ঈদ, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে চন্দ্রবর্ষ বা হিজরী সন ধরেই আমল করতে হয়। রোজা রাখতে হয় চাঁদ দেখে, ঈদ করতে হয় চাঁদ দেখে।
এভাবে অন্যান্য আমলও। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলাদের ইদ্দতের ক্ষেত্রগুলোতেও চন্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী গণনা করা যেতে পারে।অর্থাৎ মুসলমানদের ধর্মীয় কতগুলো দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্র রয়েছে, সেগুলোতে চাঁদের হিসাবে দিন, তারিখ, মাস ও বছর হিসাব করা আবশ্যকীয়। আল্লাহ সবাইকে আরবী নববর্ষে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন। গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন , জিলহজ্ব মাস গত হয়ে শুরু হতে যাচ্ছে মাহে মুহররম। হতে যাচ্ছে একটি নতুন বছরের সূচনা। আমরা প্রত্যয় গ্রহণ করি নতুন বছরে পরকালীন সফলতা ও কামিয়াবির পাথেয় সংগ্রহ করার। হিজরী বর্ষের সর্বপ্রথম মাস- মুহাররামুল হারাম তথা মুহাররম মাস। হাদীসের ভাষায়- শাহরুল্লাহ আলমুহাররাম। আল্লাহ তায়ালা বছরের যে ক’টি মাসকে বিশেষ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন মুহাররম তার অন্যতম। পবিত্র কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন- ইরশাদ হচ্ছে:নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি,আসমান সমূহ ও জমিন সমূহ সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সন্মানিত। এটিই সুপ্রসিদ্ধ বিধান। সুতরাং তোমরা এর মধ্যে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করোনা। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যায় সমবেতভাবে। আর মনে রেখ আল্লাহ মুত্তাকী দের সঙ্গে রয়েছেন। সূরা তাওবা আয়াত -৩৬। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল। (কারণ, জাহেলী যুগে আরবরা নিজেদের স্বার্থ ও মর্জিমতো মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে রেখেছিল।) বার মাসে এক বছর । এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক- যিলকদ, যিলহজ্ব ও মুহাররম। আরেকটি হল রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৬৬২। হাদীসে এ মাসকে শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-হাদীসে এ মাসকে শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-রমযানের পর সবচে উত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সবচে উত্তম নামায হল রাতের নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩। আরো ইরশাদ হয়েছে-রমযানের পর শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে আল্লাহর মাস, যাকে তোমরা মুহাররম বলে থাক। -সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ৪২১৬। প্রকৃতপক্ষে সকল মাসই তো আল্লাহর মাস। তথাপি এ মাসকে বিশেষভাবে ‘আল্লাহর মাস’ বলে ব্যক্ত করার মাঝে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। যেমন পৃথিবীর সকল মসজিদই আল্লাহর ঘর। কিন্তু কাবা শরীফকে বিশেষভাবে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর বলার হেকমত কী? কারণ এর রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। তেমনি বছরের অন্যান্য মাস অপেক্ষা মুহাররমের রয়েছে বিশেষ গুরুত্বআল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদে হিজরী সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন-লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি তাদেরকে বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজ-কর্মের) হিসাব এবং হজ্বের সময় নির্ধারণ করার জন্য। -সূরা বাকারা : ১৮৯।
নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন: রমযানের পর সবচেয়ে উত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সবচে উত্তম নামায হল রাতের নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩। এ হাদীস থেকে মুহাররমের ব্যাপারে দুটি কথা পাওয়া যায় : এক. মুহাররম মাস আল্লাহর মাস। সম্মানিত ও মহিমান্বিত মাস। দুই. এর সম্মান রক্ষা এবং এ থেকে যথাযথ উপকৃত হওয়ার একটি মাধ্যম হচ্ছে, এ মাসে রোযা রাখার প্রতি যতœবান হওয়া। কাজেই মুহাররম মাসে রোযা রাখার প্রতি আমরা মনোযোগী হতে পারি। বিশেষ করে দশ মুহাররম আশুরার রোযার কথা তো হাদীসে গুরুত্বের সাথেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর প্রতিও আমরা বিশেষভাবে খেয়াল রাখব।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে চায় পাকিস্তান
দুর্গাপুরে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার।
রাজশাহী মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু ছুরিকাঘাত
নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত
আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে
মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা
শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস
চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স
৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু, কমেনি যানজট
খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত
ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া
সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২
সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা
শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য
নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী
পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার
সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন
বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া