প্রশ্ন: যুগে যুগে কাবা শরিফ নির্মাণ, পুনর্নিমাণ, সংস্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস কি?
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
উত্তর: পৃথিবীর প্রথম ঘর কাবা : পৃথিবীর প্রথম ঘর কাবা। হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টির ২ হাজার বছর আগে কাবা নির্মাণ করা হয়। আল্লাহর নির্দেশে কাবা ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ফেরেশতারা। এ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এই ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা নগরীতে) অবস্থিত এবং বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াত ও বরকতময়।’ (সুরা আলে-ইমরান : ৯৬)
কাবা শরিফ নির্মাণ, পুনর্র্নিমাণ, সংস্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : সাইয়িদুনা হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টির ২ হাজার বছর আগে আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতারা এই ঘর প্রথম নির্মাণ করেন। আদম (আ.) পৃথিবীতে আসার পর আল্লাহ তায়ালার হুকুমে পুনরায় কাবাগৃহ নির্মাণ করেন এবং কাবাকেন্দ্রিক বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির নির্দেশ পান। এরপর হযরত নূহ (আ.)-এর যুগে মহাপ্লাবনে এই ঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে কাবাঘর পুনর্র্নিমাণ করেন হযরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর ছেলে হযরত ইসমাইল (আ.)। নির্মাণের পর আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহিম (আ.)-কে বিশ্ববাসীকে এই ঘর জিয়ারতের আহ্বান জানানোর নির্দেশ দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও। তারা দূরদূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটে সওয়ার হয়ে তোমার কাছে আসবে।’ (সুরা হজ : ২৭)। সাইয়িদুনা ইবরাহিম (আ.)-এর আহ্বানের পর থেকে আজ পর্যন্ত কাবা কেন্দ্রিক ইবাদত ও জিয়ারত বন্ধ হয়নি। সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য মতে, কাবাকে এ পর্যন্ত ১২ বার পুনর্র্নিমাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও শত্রুদের আক্রমণের কারণে বিভিন্ন সময় সংস্কার করার প্রয়োজন দেখা দেয়। যারা এই মহান কাজে অংশগ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন- সাইয়িদুনা হযরত আদম (আ.), হযরত ইবরাহিম (আ.) ও সহযোগী হিসেবে হযরত ইসমাইল (আ.),শিশ (আ.),আমালিক গোত্র, জুরহুম গোত্র, কুসাই ইবনে কিলাব, বিখ্যাত কুরাইশ বংশ যারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধর ছিলেন। নবুয়তপ্রাপ্তির ৫ বছর আগে এই পুনর্র্নিমাণ করা হয়। এ কাজে হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে সবার সম্মতিক্রমে নবীজি (সা.) কাবাগৃহে তা স্থাপন করেন। এরপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা., হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এবং ওসমানিয়া খিলাফতের বাদশা মুরাদ। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে কাবায় বিভিন্ন ইবাদত ও তাওয়াফ আরামদায়ক করার লক্ষ্যে আধুনিক ও উন্নত পাথরের ব্যবহারে কাবা চত্বরসহ বেশ কিছু উন্নয়নের কাজ করা হয়।
কাবাঘরের আয়তন : কাবাঘর বর্গাকৃতির। কাবাঘরের উচ্চতা ৪৫ ফুট। পূর্ব দেয়াল ৪৮ ফুট ৬ ইঞ্চি, পশ্চিম দেয়াল ৪৬ ফুট ৫ ইঞ্চি, উত্তর দেয়াল (হাতিমের পাশ) ৩৩ ফুট এবং দক্ষিণ দেওয়ালে (কালো পাথর কর্নার থেকে ইয়েমেনি কর্নার) ৩০ ফুট। কাবাঘরের দুটি দরজা ও একটি জানালা ছিল। বর্তমানে শুধু একটি দরজা রাখা হয়েছে। ভূমি থেকে ২.৫ মিটার (৪.২ ফুট) উচ্চতায় যার দৈর্ঘ্য ৩.৬ মিটার (১১.৮ ফুট) ও প্রস্থ ১.৬৮ মিটার (৫.৫ ফুট)। দরজাটি বাদশা খালিদ ২৮০ কেজি স্বর্ণ দ্বারা তৈরি করেন।
কাবার চাবির বাহক : মক্কা বিজয়ের পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবাঘরের চাবি বনি শায়বাহ গোত্রের ওসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর কাছে হস্তান্তর করেন। বংশপরম্পরায় এখনও তারাই কাবাঘরের চাবির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বছরে দুবার এই ঘর খোলা হয় পরিষ্কার করার জন্য। একবার রমজান মাসে, অন্যবার ঈদুল আজহার ১৫ দিন আগে।
কাবাঘরের অনন্য বৈশিষ্ট্য : কাবাকেন্দ্রিক ইসলামের অনেক ইবাদতের বিধান দেওয়া হয়েছে। নামাজ, হজ, কোরবানি, পশু জবাই ও মৃত ব্যক্তির দাফনসহ অনেক ইবাদত আদায় করতে হয় কাবার দিকে ফিরে। হাদিসে এসেছে, হযরত আবু দারদা (রা.) ও হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মাসজিদুল হারামে (কাবা চত্বরে) নামাজ আদায় করলে এক রাকাতে ১ লাখ রাকাত নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়।’ (সুনানে বায়হাকি: ১৮২১)। কাবা চত্বরে রয়েছে বরকতময় বহু নিদর্শন। মাকামে ইবরাহিম, মুলতাজিম, হাজরে আসওয়াদ, মিজাবে রহমত, হাতিম, মাতাফ, রুকনে ইয়েমেনি; প্রত্যেকটি বরকতের আধার। এগুলোর কাছে গিয়ে দোয়া করলে তা কবুল হয়। কাবা শরিফের উত্তর পাশের অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থানকে ‘হাতিম’ বলা হয়। এই স্থানটুকু আগে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে নামাজ পড়া মানে কাবাঘরের ভেতরে নামাজ পড়া। দোয়া কবুলের জন্য হাতিম উত্তম স্থান। হাতিমের ঠিক ওপরে কাবা শরিফে ঘরের ছাদের সঙ্গে একটি স্বর্ণের পরনালা আছে। বৃষ্টির সময় এই পরনালা দিয়ে ছাদের পানি পড়ে। সেজন্য এর নাম মিজাবে রহমত। মিজাবে রহমতের নিচে বসে দোয়া করলে কবুল হয়। বর্তমানে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি বাদশাহ কাবা শরিফের মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করেন। [তথ্যসূত্র: মুসলিম শরিফ ১/৪২৯-৪৩১; আখবারু মক্কা, আযরাকী ;হাশিয়াতুল জামাল, ১/৩১৩, ২/৪২০]
উত্তর দিচ্ছেন: মুফতী পিয়ার মাহমুদ, ইমাম ও খতীব, মসজিদুল আমান, গাঙ্গিনারপাড়, মোমেনশাহী
বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী
মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ
‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি
বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন
বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম