সার্কাসের হাতি
২৭ জুলাই ২০২৩, ০৯:০০ পিএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০২ এএম
বনের নাম দোলপোড়া। কয়েকবার দাবানল হয়ে বন প্রায় সাবাড় হয়ে গেছে । খালি পড়ে আছে মাঠের পর মাঠ। তবুও বনের একপাশে কিছু গাছপালা রয়ে গেছে। সেই অংশটুকুতে অন্যান্য প্রাণীদের সাথে এক জোড়া হাতিরও বসবাস, তাদের সঙ্গে আছে ছয় মাস বয়সের এক শাবক। পুরুষ হাতিটির নাম বলংবাহাদুর, তার স্ত্রীর নাম বিলাসুমা এবং ছোট বাচ্চাটির নাম জলিরাজ। দাবানলে পুড়ে যাওয়া বনে নেই উপযুক্ত সব খাবার; না খেয়ে খেয়ে সবার অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে। কী করবে হাতি দম্পতি! চিন্তা করে করে তাদের দেহ শুকিয়ে যাচ্ছে, বাচ্চাটাও ঠিকমত মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে কঙ্কালসার অবস্থা। ক্ষুধার্ত মায়ের বুকেও কি আর দুধ থাকে! একদিন শাবকসহ হাতি দম্পতি বনের পাশ দিয়ে হাঁটছে আর দেখছে, কোথাও কোনো কলাগাছ বা অন্য কোনো গাছের পাতা পাওয়া যায় কিনা। হঠাৎ তাদের চোখে পড়লো বনের পাশ দিয়েই কাঁচা রাস্তা দিয়ে প্রাতভ্রমণ করছে এক লোক। লোকটি ছিলো মূলত এক সার্কাস দলের মালিক। তাকে দেখে ভয়ে ভয়ে হাতি দুটি তার দিকেই এগিয়ে এসেই শুর উচিয়ে যেনো কিছু একটা ইঙ্গিত করছে ৷ সার্কাসের মালিক অপেরাসোম দীর্ঘদিন বিভিন্ন প্রাণীকে ছোট থেকে ট্রেনিং দিয়ে সার্কাসের খেলা দেখানোর উপযুক্ত করে তাদের দ্বারা বিভিন ধরণের খেলা দেখিয়ে অনেক সুনাম অর্জন করেছে । অপোরাসোম নিজেও প্রাণীদের ভাব ভাষা বুঝার ক্ষমতা রপ্ত করেছে। তাই অপেরাসোমের বুঝতে বাকি রইলো না যে হাতিরা কি বলার চেষ্টা করছে এবং তার দিকে কেনো শুর উঁচু করেছে। সেই মুহুর্তেই সে বাড়ি গিয়ে বেশকটি কলাগাছ পাতাসহ কেটে ফেলে। তারপর বাড়ির কাজের লোক দিনেশসহ একটি ঠেলাগাড়ি করে বনের ধারে সেই হাতিদের কাছে যায়। হাতিগুলিও বুঝতে পেরেছিলো যে অপেরাসোম তাদের কষ্টের কথা বুঝতে পেরেছে এবং তাদের প্রতি দয়া করেই কলাগাছ নিয়ে এসেছে । অপেরাসোম দিনেশকে কলাগাছগুলি রাস্তার নিচে রাখতে হবে বলে নিজেও সাথে ধরাধরি করে সবগুলি কলাগাছ রাস্তার পাশে রেখে একটু দূরে গিয়ে দিনেশকে বলে তুমি বাড়ি চলে যাও আমি পরে আসছি । হাতিরা একপা দু›পা করে কলাগাছের নিকট চলে এসে খাওয়া শুরু করে দেয় এবং শাবকটিকেও কলাগাছ খাওয়ানো শেখায়।
এভাবে ক›দিন অপেরাসোম হাতিদের খাওয়ানো শুরু করে। কয়েকদিন যেতে না যেতেই হাতিরা আপেরাসোমের খুব আপন কেউ যায়। শাবকটিকেও অপেরাসোম ধরে ধরে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়। শাবকটার ভয় ভেঙ্গে গিয়ে অপেরাসোমের আপন বাচ্চার মতো হয়ে যায়।
একদিন বলংবাহাদুর ও তার সঙ্গী ও শাবক জলিরাজের কানে কী যেনো চিপে চুপে বলে দিয়ে তারা দুজন বনের ভিতরে চলে যাচ্ছিলো, তখন শাবক জলিরাজ চুপ করে সেখানেই বসে রয়।
এই অবাক করা কা- দেখে অপেরাসোম বুঝে ফেলে যে বাচ্চাটিকে মনে হয় ওদের বাবা মা আমাকে দত্তক দিয়ে চলে যাচ্ছে। বাচ্চাটিও মনে হয় আমার কাছে থাকার জন্য খুবই আগ্রহী। অপেরাসোমও বুঝতে পারে দাবানলে পুড়ে যাওয়া বনে ক্ষুধার্ত হাতি দুটো নিরুপায় হয়ে শাবকটিলে রেখে যায়।
এই ভেবে অপেরাসোম শাবকটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, চল চল আমার সাথে।এখন থেকে তুই আমার বাড়িতেই থাকবি৷ এই বলে অপেরাসোম বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলে শাবকটিও তার পিছে পিছে রওনা দেয়। শাবকটিকে বাড়িতে নিয়ে এনে অপেরাসোম ভালো করে গোসল করিয়ে দিয়ে বেশ কিছু কচি কচি কলাগাছ খেতে দেয়। জলিরাজ মহাখুশিতে কলাগাছ খায়। এদিকে অপেরাসোম দিনেশকে বলে দেয় প্রতিদিন সকালে বনের সেই বড় হাতি দুটিকে কিছু কিছু কলাগাছ দিয়ে আসতে৷ দিনেশ মালিকের কথামতো কাজ করতে থাকে। হাতি দুটি শাবক দত্তক দেওয়ার বিনিময়ে নিয়মিত খাবার পেয়ে অনেক খুশি। তারা বুঝতে পারে বাচ্চাটার দিন ভালোই কাটছে। শাবকটি দিনদিন নাদুসনুদুস হয়ে উঠছে, সেই সাথে তাকে বিভিন্ন সার্কাস প্রতিযোগিতায় খেলা দেখানোর জন্য প্রশিক্ষণও দিচ্ছে অপেরাসোম। এইভাবে অপেরাসোমের প্রশিক্ষণ নিয়ে একদিন জলিরাজ সার্কাসের এক শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে উঠে। দিকবিদিগ তার সুনামের খ্যাতি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সার্কাসে খেলা দেখাতে দেখাতে জলিরাজ অপেরাসোমের সার্কাস দলকে উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। অপেরাসোম সার্কাসের আয় দিয়ে রাতারাতি বিত্তশালী হয়ে যায় এবং তার ভিতরে আর পাওয়ার নেশা পেয়ে বসে। সার্কাসের পাশাপাশি বাড়তি টাকার লোভে জলিরাজকে দিয়ে অপেরাসোম অনেক কাজ করিয়ে নিতে শুরু করে৷ একদিন চিনি ভর্তি এক ট্রাক ভাঙ্গা রাস্তায় চলতে উল্টে খাদে পড়ে যায়। ট্রাক ড্রাইভার অপেরাসোমের কাছে গিয়ে জলির সাহায্যে ট্রাকটি তুলে দিতে চুক্তি করে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে।
লোভী অপেরাসোম জলিকে নিয়ে লোহার শিকল দিয়ে ট্রাকের এক পাশে বেধে জলির গলায় শিকল পরিয়ে দেয়।জলি তার মনিবের মন রক্ষার জন্য জানে প্রাণে ট্রাকটি খাল থেকে উপরে তুলে আনার পরেই গলার শিকল ছিঁড়ে গিয়ে পা ফসকে সহসা রাস্তার ভিন্ন প্রান্তের খাদে গিয়ে পড়ে এবং পা ভেঙ্গে যায়। ট্রাক তুলে দিয়ে জলি নিজেই পঙ্গুত্ব বরণ করে খাদে পরে থাকে। এবার হৃষ্টপুষ্ট জলিকে কে তুলবে?
জলিকে আর সেখান থেকে তুলতে না পেরে অপেরাসোম তার কাজের লোক দিনেশকে বলে প্রতিদিন জলিকে কিছু কিছু কলাগাছ এনে দিতে খাওয়ার জন্য। এই ভাবে কিছুদিন জলিরাজ মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে ওপারে চলে যায়। জলিরাজবিহীন সার্কাস আর আগের জমেনা। লোকও আগের মতো সার্কাস দেখতে ভীড় করে না। ধীরে ধীরে অপেরাসোম লোকসান গুনতে গুনতে পথে বসে যায়। এক পর্যায়ে জমাজমি সব বিক্রি করে বৃদ্ধ বয়সে রাস্তার ভিখারি হয়ে যায়।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা
পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ