লেপ কাঁথার কাহানি
০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:১০ এএম
সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে লেপ। লেপ রাজকীয় বিত্ত বৈভবের সাথে বড় হয়েছে। তার বেগ পেতে অর্থের সংযোজন দরকার পরে খুব। সাধারণ আদমিরা তাকে ছুঁতে বেশ হিমশিম খায়। আর বস্তির লোকেরা তো লেপকে দেখেইনি। লেপও তাদের দেখা দিতে অনিচ্ছুক কেননা তার মান সম্মান আর ফ্যামিলি স্ট্যাটাস বলে একটা কথা আছে। তাই নয় কি! সামর্থ্যবান লোকেরাই কেবল তার সান্নিধ্য পাওয়ার যোগ্য। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা কন্যা কাঁথা। তবে তার অস্তিত্ব কিন্তু বেশ সম্মানীয়। এককালে রানী রাজকন্যাদের গায়ের কাপড় থেকেও তার জীবনের সূত্র নিহিত ছিল। কাঁথার জীবনটা বেশ শৈল্পিক। তার জন্ম পুরোনো শাড়ি কাপড় থেকে। সে বেড়ে উঠেছে গ্রাম্য প্রকৃতি মায়ের হাত ফোঁড়নে ফোঁড়নে। তাকে পূর্ণ যৌবনের রূপ দিতে তার মা চাচীদের মেহনতের কথা না বললেই নয়। দিনরাত শত কষ্টের ঘামে বা সুঁই লাগা দু’য়েক ফোঁটা রক্তে তার রূপায়ণ। কখনোবা শৌখিন নারীদের বিলাসিতায় তার কাঁথা শরীর। বর্ষণমুখর দিনে বারান্দায় পাটির উপর ছড়িয়ে তার মেরামত। কাঁথার জন্ম বর্ষাকালে হওয়ায় তার জীবনটাও যেন অশ্রুর বারিধারা। এটা বিশ্বাস করি আসছে সে। কিন্তু একদিন সে যখন খড়ের উপরে রোদ পোহাচ্ছিল তখনই তার চোখে পড়ে লাল টুকটুকে চেহারার শুভ্র বর্ণের এক যুবককে। তার মনে হল সে যেন অনেক সুখী। তবে তার সাথে ভাব জমাতে পারলে তার জীবনে আর কিছুই চাওয়ার থাকবে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে যখন আসছে তখন সে লক্ষ্য করে তাদের বিছানা বাড়িতেই এই যুবকটি এসেছে। ভীষণ অবাক তার দৃষ্টি । কাঁথা কিছুটা লাজুক স্বভাবের মেয়ে। সে শহরের ভদ্র মানুষের মত কথা বলতে পারে না। তার একদম পাশেই যখন ওই যুবকটির থাকার ব্যবস্থা করা হল তখন তার হৃদ কুটিরে আনন্দের শতদল নেচে উঠল। সাথে সাথে প্রচন্ড ভয়ও। কিন্তু ভয় আর বেশিক্ষণ রইল না কেননা যুবকটি যখন শুদ্ধস্বরে নম্র কন্ঠে বলে আমি লেপ। ভাগ্যচক্রে আমি আমার জন্মভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তোমাদের বাড়িতে এসে গেছি। আমাদের লেপ বংশের প্রত্যেককেই তাদের জন্মভূমি থেকে আলাদা হতে হয়। এটা প্রকৃতিগত নিয়ম এবং যেখানে তার দ্বিতীয় বাস হয় সেটাই তার আসল ঠিকানা হয়ে যায়। আর সে অনুযায়ী আজ থেকে এটা আমার আসল ঠিকানা। এখানেই থেকে যাব আমার জীবনের বাকিটা সময়। কাঁথার মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি দোল খাচ্ছে। তার বুক ধুঁকাচ্ছে। হাত-পা কাঁপছে। কাঁথার এহেন অবস্থা দেখে লেপ বলেথ ভয় নেই তোমার। আমি সভ্য, ভদ্র ঘরের ছেলে তোমার কোন ক্ষতি করব না। আমাকে বিশ্বাস করতে পারো মিস,,,,। আমার নাম কাঁথা। ওকে মিস কাঁথারানী। লেপের মুখে কাঁথারানী ডাকটা শুনে তার অন্তর জুড়িয়ে গেল। তার চোখে পানি এসে যায়, মনে পড়ে তার মা-বাবার কথা। তার বাবা যে তাকে কাঁথারানী বলে ডাকতো। কিন্তু তার বাবা হারিয়ে গেছে। কি হল কাঁথারানী কাঁদছো কেন? বন্ধু ভেবে বলতে পারো যদি তোমার আপত্তি না থাকে। না মানে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। কেন তোমার বাবা কোথায়? জানো বাবাও আমাকে কাঁথারানী বলে ডাকতো। শরীরে আগুন লেগেছিল বাবার। বাবা আমাকে খুব ভালোবাসতো গো। ওকে ওকে এখন থামো। সবার বাবা তো আর চিরদিন বেঁচে থাকে না, তাই না। তোমার বাবা না হয় একটু আগেই বিদায় নিয়েছে। এত ভেঙে পড়লে চলে বোকা মেয়ে! রাত অনেক হলো এখন ঘুমাও, গুড নাইট। এমনিভাবে আদরের শাসনে তার মন খারাপের দিনে শাসন করতো তার বাবা। আজ শুধুই দীর্ঘশ্বাস! সে রাতে আর কিছু কথা হয়নি তাদের মধ্যে। দুজন দুজনের মতো ঘুমিয়ে পড়ে। কথায় আছে, ইস্পাত আর চুম্বক যদি একসাথে থাকে তবে কিছু একটা হবেই। মানে চুম্বক ইস্পাতকে আলিঙ্গন করবেই। এটাই নিয়ম। আর এটাই বাস্তবতা। আর এ বাস্তবতাকে লেপ কাঁথা কেউ উপেক্ষা করতে পারেনি। চুম্বকের মতো লেপ কাঁথাকে তার বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়। তারা দুজন দুজনকে পাগলের মত ভালবেসে ফেলে। ঝিরিঝিরি বাতাস আর কুয়াশাঘন শীতের বৈরী আবহাওয়ায় তাদের প্রেম যেন আরো মাখোমাখো হয়ে ওঠে। ভালোই যাচ্ছিল তাদের ভালোবাসাময় দিনগুলি। কিন্তু প্রকৃতিগত নিয়ম অনুসারে শীতের প্রকোপ চলে যাওয়ার সাথে সাথে লেপের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। সে তার কর্মজীবন স্থগিত দিয়ে বিশ্রামে চলে যায় সিলিং এ। ফেলে যায় কাঁথাকে। কাঁথা লেপ বিরহ কিছুতেই সইতে পারে না। তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। কাঁথা অপেক্ষা করে শীতের জন্য। তার প্রিয় মানুষটির বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর প্রতীক্ষায়। দিন, সপ্তাহ, মাসের পর মাস যাওয়ার পরে অবশেষে নামে শীত। চারিদিকে কনকনে শীত ঝিরিঝিরি বাতাস আর কুয়াশা ঘন শীতের বৈরি আবহাওয়া যেন তাদের মিলনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাঁথার মনে লাড্ডু ফুটছে। বাজছে আতশবাজির শব্দ। সে ভাবে লেপের মনেও নিশ্চয়ই তার মতই মিলনের আকাঙ্খা চলছে অহর্নিশ। অবশেষে আজ সেই প্রথম দিনের মতো সেই খড়ের উপর বসে আছে কাঁথা। লেপ ফিরে এসেছে। দুজন দুজনকে দেখছে আর তাদের মনে হচ্ছে তাদের যেন শত সহস্র শতাব্দী পরে দেখা হল। চোখে মুখে দুজনেরই খুশির রেশ। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেথথ
কিন্তু সন্ধা ঘনিয়ে এলে প্রথম দিনের মতো আর তারা পাশাপাশি থাকতে পারল না। কেননা তাদের মাঝে প্রাচীর হয়ে জায়গা নিল কম্বল। দুজনেই হতবাক! কম্বল খুব রূপবতী কাঁথার বিপরীত। শহরের ভদ্র ঘরের মেয়ে কম্বল। বাড়ির কর্তার নির্দেশেই সে এখানে এসেছে। দুজনে পাশাপাশি কিন্তু তবু যেন কত শত মহাপ্রাচীর! সে রাতে দুজনেরই ঘুম হয়নি কিন্তু একজনের ঠিকই ঘুম হয়েছে। সে হলো কম্বল। কম্বল এক দেখাতেই লেপকে ভালোবেসে ফেলে। যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইড। যেকোনো মূল্যে লেপকে চাই-ই চাই। লেপ কাঁথার কাহানিতে শুরু হলো নতুন অধ্যায়। রূপের মোহনিতে লেপকে ভুলাতে চায় যে তার জীবনে কাঁথা নামের কোন আনকালচার কোনো গেঁয়ো মেয়ে ছিল। লেপ কম্বলকে যতই দূরে ঠেলে দিতে চায় কম্বল যেন ততই আরো গায়ে পড়তে চায় লেপের। ওই দিকে কাঁথার চোখের পানি কে দেখে! মিলনের শোকে মলিন শুষ্ক হয়ে গেছে। নিজের ভালোবাসাকে অন্যের সাথে দেখলে কার না কষ্ট লাগে! কম্বল লেপকে কাঁথার কাছে আসতেই দেয় না। কাঁদতে কাঁদতে কাঁথা অসুস্থ হয়ে পড়ে। লেপ অনেক সহ্য করেছে দুষ্ট, কুচক্রী, শয়তান কম্বলের। এখন আর পারছে না, এর একটা বিহিত চায়।
লেপ অনেক সহ্য করেছে দুষ্ট, কুচক্রী, শয়তান কম্বলের। এখন আর পারছে না, এর একটা বিহিত চায় সে। আর তাই লেপ কম্বলের বিরুদ্ধে নালিশ করে রাজার কাছে। বিচারের দিন ধার্য করা হয়। বিচার মজলিসে উপস্থিত হয় বিছানা রাজ্যের রাজা খাট, সেনাপতি তোষক, মন্ত্রী চাদর, উজির বালিশ, নাজির কোলবালিশ। খাটরাজা বলে লেপ তুমি তোমার বক্তব্য পেশ করোথ আমি কাঁথাকে ভালোবাসি। আমি কাঁথাকে ছাড়া বাঁচবো না। কিন্তু এই বজ্জাত নারীকম্বল আমাকে কাঁথা থেকে আলাদা করে দিতে চায়। তার রূপ যৌবনে আমাকে আটকে রাখতে চায়। মাননীয় রাজা খাট আমাকে এই কুচক্রী রমণী কম্বলের হাত থেকে রক্ষা করুন।” কম্বলের জবানবন্দী অনুসারেথ আমি কম্বল।
আমার পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব বিদেশেও খুব নামের সাথে সমাদৃত। আমার শান শওকত লেপের চেয়ে বেশি। আমি শিক্ষিতা এবং সুন্দরী, লেপের আমাকে গ্রহণ করতে অসুবিধা কোথায়? আমি লেপকে ভালোবাসি আর তাকেই চাই। কাঁথার না আছে রূপ না আছে মান মর্যাদা তার কাছে গেলে লেপ ভালো থাকবে না। আর তাই আমি লেপকে আমার কাছাকাছিই রাখবো।
অবশেষে জবান দেয় কাঁথাথ আমি কাঁথা। আমার কোন শান শওকত নেই। আমি হয়ত অতটা দামীও না। কিন্তু আমার অস্তিত্ব সবচেয়ে পুরনো। এই এখানে আপনারা যারা যারা আছেন তাদের চেয়ে সবচেয়ে আদি গোষ্টি হচ্ছে আমার পূর্বপুরুষ। আমি লেপকে প্রচন্ড ভালোবাসি। লেপছাড়া আমার জীবন অর্থহীন। আপনারা দয়া করে আমার লেপকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, ফিরিয়ে দিন, ফিরিয়ে দিন।
কাঁথার কান্নায় সমস্ত মজলিস অশ্রুর মাতমে ডুবে যায়।
সেনাপতি, উজির, নাজির সবাই লেপ কাঁথাকে একসাথে থাকতে মত প্রকাশ করে। অতঃপর রাজাও মত দেয়। এই মজলিসেই লেপ কাঁথার বিয়ে হয়। তারা দুজন নতুন করে জীবন শুরু করে। তাদের সংসার হয়ে ওঠে প্রেমে প্রেমময়।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি
‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন
বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী
আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান
সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম
সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল
বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!
আওয়ামী শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট: মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা
লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী
বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান
আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ
অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন
নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান
‘ফিফা ছিল খুবই দুর্বল, আমিই একে বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছি’
ফ্যাসিস্ট হাসিনা কাউকে রেহাই দেয়নি, জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে গেছেন: রিজভী
স্বৈরাচার সরকারের দোষররা এখনো মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে: রফিকুল ইসলাম খান