কবিতা যখন শরীর খোঁজে

Daily Inqilab উত্তম কুমার দাস

০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:১০ এএম

কবিতা হোক বা মানুষ সবটাই সাজানোর দায়িত্ব থাকে স্রষ্টার ওপর। বসন ভূষণ ছাড়া বাহ্যিক আবরণ খুঁজে বের করা কঠিন, পোশাকেই সৌন্দর্য তাৎক্ষণিক তবুও একই রাস্তায় অযথা যানজট। পোশাক জরুরি কিন্তু তা স্বাভাবিক ও শোভনীয় হওয়া চাই। ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়টা অবশ্য আলাদা। বক্তব্য বিষয়ের সঙ্গে পোশাকি আবরণ ব্যক্তিগত পছন্দের সঙ্গে সাহিত্যের যাত্রাপথ বিষয়টা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। প্রশ্ন থেকেই যায় তাহলে কাব্য বা সাহিত্যের বিষয় কি হবে... কেমন হবে? বক্তব্য প্রধান, রূপক ,কল্পনাময় নাকি বিষয়গত। তবে প্রত্যেককেই একটা পৃথক রাস্তা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে আমরা প্রায় সকলেই একই পথে যাত্রা করেছি শতবর্ষ পূর্বেও ঠিক এমনটাই হয়েছিল। বেশ কিছু কবি রবীন্দ্র আবর্তে হারিয়ে গেল, রবীন্দ্র বিমুখ নতুন পথে হাঁটলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্র জীবনানন্দ দাশ ,বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত, বিষ্ণুদে, সমর সেন প্রমুখ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নজরুল তার জীবন দর্শনকে কাজে লাগালেন কবিতার ক্ষেত্রে। তবে পশ্চিম বাংলার পঞ্চাশের দশক মানে আধুনিক কবিতার বিকাশ কাল। বুদ্ধদেবের ‘কবিতা’ পত্রিকা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কৃত্তিবাস’ আলোক সরকারেরশত ভাষা উল্লেখযোগ্য।
আমরা সমীক্ষা করার কেউ নই একটা যুগ সমীক্ষা করবে পূর্ববর্তী যুগকে। যেই কারণে জীবনানন্দ দাশের কবিতাগুলোর মূল্যায়ন সমকালে হয়নি। পাঠকের মধ্যেই কবি বা সাহিত্যিক বেঁচে থাকেন। তবে পাঠকের ও কয়েকটি ভাগ আছে। বোদ্ধা পাঠক, যোদ্ধা পাঠক, এবং নিষ্ক্রিয় পাঠক।
বর্তমানে নিষ্ক্রিয় পাঠকের সংখ্যা সব থেকে বেশি। তারা সব পড়ে তারা এত বেশি পরে যে কিছুই মনে রাখতে পারে না। বোদ্ধা পাঠকের সংখ্যা কম তারা নিঃশব্দে পরে। আর আমরা সকলেই হচ্ছি যোদ্ধা পাঠক। যতটা বুঝি তার চেয়ে বেশি বিচার করতে বসি। শরীরের আরাম আয়েস খুঁজি কবিতায়, সম্পর্কের টানাপোড়েন খুঁজি কবিতায়, কিন্তু কবিকে তার সৃষ্টির মধ্যে খুঁজে পাই না।
কবিতা বোঝার আগে কবিকে বোঝা চাই। একটি বা দুটি কবিতা দিয়ে একজন কবির মূল্যায়ন করা যায় না। বাস্তবটা বড় কঠিন। সাজানো শরীরের ভেতর যেমন একটা শরীর থাকে ঠিক তেমন সাজানো কবিতার ভিতরেও একটা কবিতা থাকে। আর সেখানেই কবির মূল্যায়ন হয়। তাই যোদ্ধা পাঠকের কাছে এটা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমানে কবিতার বিষয়গত ভাবনাকে অক্ষত রেখে সহজ সরল ভাষায় বক্তব্য বিষয় পরিবেশিত হচ্ছে। দুর্বোধ্য ভাষা ক্লাসিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গির বদলে একটা সহজ সরল চিত্র কবিতায় পাঠক প্রত্যাশা করছেন। এখন ব্যস্ততার মাঝে ইন্টারনেটে যুগে মানুষ এমন লেখা পড়তে চান যা সহজ সরল, সহজে বোধগম্য হয়। বর্তমানে সম্ভ্রান্ত উচ্চশিক্ষিত পরিবারের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। বাংলা ভাষার প্রতি তাদের টানটাও কমে গেছে। তাই কবিতাকে সর্বজন স্বীকৃত হতে হবে। সমাজে শিক্ষার উপযোগী হতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে ব্যক্তিগত ভাব কবিতার মধ্যে দিয়ে যখন সর্বজনীন হয় তখন তা গীতি কবিতা হয়ে ওঠে। তাই বর্তমানে যুগের প্রেক্ষাপটে কাব্য,সাহিত্য ,নাটক প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটা নতুন পথ খুলে গেছে। যাকে আমরা বলতে পারি একটা সহজ সরল নতুন পথ বা নতুন ধারা। ভাব গভীরতা থাক কিন্তু পরিবেশনা হবে সর সহজ সরল। জটিলতা থাকবে না, সম্পর্কগুলো হবে মানবিক বা আত্মীয় বাচক, একটা গতি থাকবে পরিণতি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত সমস্যা রাজনীতি ,ধর্ম, শিক্ষা ,মূল্যবোধ, প্রেম সকল উপাদানই সমৃদ্ধ হবে এই নতুন পথ বা নতুন ধারা। আঞ্চলিক ভাষা কবিতা বা গদ্যে প্রাধান্য পাবে। কবিতা উপন্যাস বা নাটকের চরিত্রগুলি নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখবে।
গতি নদীর পরিচয় আর কাজে মানুষের পরিচয় তাই সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে যদি এগিয়ে চলার গতি না থাকে তাহলে কিন্তু একটা সময় পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সময় এসে গেছে সহজ সরল ভাবে কবিতা,গল্প প্রবন্ধ, নাটক লেখার যা সাধারন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করতে পারে। আর তবেই সৃষ্টির পথে বাংলা সাহিত্যের উন্নতির পথ সুগম হবে।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কুমিল্লায় ভিন্ন ধর্মের দুই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ৩৯ বছর

কুমিল্লায় ভিন্ন ধর্মের দুই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ৩৯ বছর

সিএনজি চালিত অটো রিক্সাভর্তী ভারতীয় মদসহ গ্রেপ্তার ৪

সিএনজি চালিত অটো রিক্সাভর্তী ভারতীয় মদসহ গ্রেপ্তার ৪

বিএমআই নয়, স্থূলতার জন্য চাই নতুন মানদণ্ড ,প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের

বিএমআই নয়, স্থূলতার জন্য চাই নতুন মানদণ্ড ,প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের

শিল্পকলার জমজমাট আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল 'সাধুমেলা'

শিল্পকলার জমজমাট আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল 'সাধুমেলা'

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের কাজে যোগ দিতে না দেওয়া ১২০ শ্রমিকদের চাকরী বহাল

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের কাজে যোগ দিতে না দেওয়া ১২০ শ্রমিকদের চাকরী বহাল

হুথি লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন হামলার ফুটেজ প্রকাশ

হুথি লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন হামলার ফুটেজ প্রকাশ

লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে

লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে মৌখিক হস্তান্তর,দুটি হল পরিদর্শন রবিবার

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে মৌখিক হস্তান্তর,দুটি হল পরিদর্শন রবিবার

কোটচাঁদপুরে পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার আসামি কটাকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা

কোটচাঁদপুরে পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার আসামি কটাকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা

শুল্ক বৃদ্ধি প্রমাণ করে সরকার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে উদাসীন : বাংলাদেশ ন্যাপ

শুল্ক বৃদ্ধি প্রমাণ করে সরকার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে উদাসীন : বাংলাদেশ ন্যাপ

কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

কালীগঞ্জের পল্লীতে টমেটো, বেগুন ও সবজিসহ বিভিন্ন গাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা

কালীগঞ্জের পল্লীতে টমেটো, বেগুন ও সবজিসহ বিভিন্ন গাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা

অধিক গাড়িতে সারচার্জ খড়গ

অধিক গাড়িতে সারচার্জ খড়গ

সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ

সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় অলিম্পিক সোনাজয়ীর

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় অলিম্পিক সোনাজয়ীর

সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পতিত স্বৈরাচারের ৯ দোসর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পতিত স্বৈরাচারের ৯ দোসর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও

সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি

রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান

রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান