স্বদেশপ্রেম ও বিদ্রোহী নজরুল
৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
আসে নাই ফিরে ভারত-ভারতী?
মার কতদিন দীপান্তর?
পূণ্য বেদীর শূন্যে ধ্বনিল
ক্রন্দন-দেড় শত বছর।..
যুগশ্রেষ্ট, যুগ-মানস এবং যুগ-চেতনা আর জাতীয় চাহিদার রূপকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম(১৮৯৯-১৯৭৬), স্বদেশ ও সমকালের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তাঁর অনুভূতিতে লালন করেছিলেন, স্বজাতি ও বিশ্বমানবের আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বরুপ। তাঁর সংগ্রামশীল জীবন ও বৈচিত্র্যময় রচনাবলীর দিকে তাকালে কবির বিদ্রোহী চেতনা, মানবতাবাদ, জাতীয়তাবোধ, ও স্বদেশ প্রেমের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়।তিনি একাধারে সব্যসাচী লেখক, কবি, কথাশিল্পী,নাট্যকার,গীতিকার, প্রবন্ধকার,সুরকার ও সংগীত- স্রষ্টা।
বিশ শতকের বিশের দশকে সাহিত্য ক্ষেত্রে আবির্ভাবের স্বল্পকালের মধ্যে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা সাহিত্যে তৃতীয় যুগ-শ্রষ্টা কবি হিসেবে ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হন কাজী নজরুল ইসলাম। রোমান্টিক মানসপ্রবণতা এবং স্বপ্ন ও সৌন্দর্যবোধের রূপকার-নজরুল স্বদেশপ্রেমকে বুকে ধারণ করে,পরাধীন স্বদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক মুক্তি-আন্দোলনের তথা ব্রিটিশ শাসনের শৃঙখল মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, বিদ্রোহী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেছিলেন অসামান্য কবিতা বিদ্রোহী। বলেছিলেন-
বল বীর /
বল উন্নত মম শির!/
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই/ শিখর হিমাদ্রির!/ বল বীর –/ বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’/ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’/ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/ খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,/ উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!...
বিদ্রোহী কবিতার মধ্যদিয়ে নজরুল একজন অত্যন্ত পরাক্রম এবং বিশাল ব্যক্তিত্ব ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় লাভ করেছিলেন।সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জেল-জুলুম, নির্যাতন তাঁকে পিছু হঠাতে পারেনি। হরদম গেয়েছেন মুক্তির গান, শিকল ভাঙার গান।বিদ্রোহী কবিতা রচনার পূর্বে খেয়া পারের তরণী, শাত-ইল আরব, কুরবানী,মহররম, ফাতেহা-ই দোয়াজদহকামাল পাশা ইত্যাদি সাড়া-জাগানো কবিতা লিখলেও বিদ্রোহী কবিতায়ই আগ্নেয়গিরির প্রচন্ড উত্তাপে অকস্মাৎ বোমা বিস্ফোরিত হয়ে দেখা দিলেন তিনি।যুগ যুগ ধরে বাংলার সঞ্চিত অভিমান, ক্রোধ আর দুঃসহ বেদনা নজরুলের কণ্ঠে মূর্ত হয়ে বেজেছিল। সমালোচকের বক্তব্য হচ্ছে-- ওটা কবিতা তো নয় --ওটা আগুনের গোল্লা-পরাধীন মানুষের অন্তর্বেদনার এক জলন্ত প্রকাশ। (লক্ষ্মণ কুমার,বিদ্রোহী কবি নজরুল)
নজরুল তাঁর আত্মোপলব্দিকে কখনো বিক্রি করেন নি অন্যায়ের কাছে।তাই তাঁর সকল সৃষ্টিতে নিজস্ব ভাবের চিহ্ন পাওয়া যায়।সমকালীন বিশ্বে তাঁর স্থানকে নিরূপণ করতে পেরেছিলেন নিজ অবলোকনের মাধ্যমে।নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে,একদম কাছ থেকে মানুষকে পড়তে পেরেছিলেন।তাই একজন শৌর্যবীর্য পৌরুষকে আহবান করে বলেছিলেন—
বিশ্বগ্রাসীর ত্রাস নাশি আজ আসবে কে বীর এসো/ ঝুট শাসনে করতে শাসন,শ্বাস যদি হয় শেষও!/ কে আছে বীর এসো! / নজরুলের কবিতা শোষিত মানুষের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। পরাধীনতার বন্ধন থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য তাঁর কলম ও প্রয়াস যেমন সক্রিয় ছিলো তেমনি শ্রমজীবী মানুষ --কৃষক,শ্রমিক,মেহনতী জনতার প্রিয় নির্ভরযোগ্য মুখপাত্র তিনি কবি নজরুল। প্রলয়শিখা, অগ্নিবীণা, বাঁধনহারা,বিষের বাঁশি,ফণী মনসা, ভাঙার গান্থের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিক-লেখক। লাঙ্গল, ধূমকেতু, নবযুগ,সেবক পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে সমাজ যখন ভঙ্গুর,ধর্মীয় গোড়ামী জাতিকে পশ্চাৎপদ করে রেখেছিল, তখন ইসলামী মূল্যবোধ এবং বিশালতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, ঐক্যের ডাক দিতে গেয়েছেন সাম্যে-মৈত্রীর গান মানুষকে ভালোবেসে। নজরুলের মতবাদ ছিল জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সমান অধিকার। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরান, হিন্দুদের বেদ, খ্রিস্টানদের বাইবেল,এভাবে পৃথিবীর নানা জাতির নানা ধর্মগ্রন্থ। নজরুলের ভাবনায় সকল ধর্মগ্রন্থের মূলমন্ত্র মানুষের হৃদয়ের মধ্যেই সংকলিত আছে তা হচ্ছে মানবতাবোধ,সমতার দৃষ্টিভঙ্গি।কবির সাম্যবাদী কবিতায় লিখেছিলেন-গাই সাম্যের গান--/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,/যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম ক্রিশ্চান।/গাহি সাম্যের গান!/কে তুমি? পার্সি? জৈন? ইহুদি? সাঁওতাল, ভীল, গারো? কন্ফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বল আরও! /
বন্ধু, যা খুশি হও,...
কণ্ঠে তাঁহার মূর্ত হয়ে বেজেছিল- শতাব্দীর সঞ্চিত বেদনা-ক্রোধ যেনো অস্থির হৃদয়ের মহাকল্লোল,ক্ষুব্ধ প্রাণের মর্মর ধ্বনি, প্রচ- অগ্নিস্রাব রচনায়-- দিশেহারা মানুষ পেয়েছিল সম্বিত । দ্রোহ ও প্রেম ছিলো অনুভূতিতে ঋদ্ধ, সম্পূরক।নজরুলের বলিষ্ঠ কণ্ঠের উচ্চারণ; মম একহাতে বাঁকা বাঁশের/ বাঁশরী,আর হাতে রণতূর্য। কবির সৃষ্টি -সুখের আনন্দ অসাধারণ আবেগ ও উচ্ছ্বাসের মধ্যে ব্যক্ত হয়েছে।জাগতিক নিয়মে কবির ভাবনায় এতদিন যা ছিল রুদ্ধ আজ তা যে শতধারায় উন্মুক্ত। সৃষ্টির কোলাহল, গতির উন্মাদনা, প্রাণের উচ্ছ্বাস আর মুক্তির আনন্দ তিনি সর্বত্রই অনুভব করেন। কবির বলিষ্ঠ কন্ঠের উচ্চারণ --
আজ সৃষ্টি -সুখের উল্লাসে /
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে টগবগিয়ে খুন হাসে/
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ