‘‘পরিবর্তনের এই পৃথিবী”
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১৩ পিএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
১.পরিবর্তনের এই পৃথিবী’ -- নামে আকৃষ্ট হয়ে সম্ভবত কোনো লাইব্রেরি থেকে রচনাটি লিখে এনেছিলাম।
কিন্তু মূল রচয়িতার নাম উদ্ধার করা গেলেও পত্রিকা ও এর অনুবাদকের নামটি উদ্ধার করা যায় নি।
২. স্যার ফ্রান্সিস বেকন (২২ শে জানুয়ারি ১৫৬১–৯ এপ্রিল ১৬২৬) একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কূটনীতিক ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক লেখক ছিলেন। আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের প্রবক্তা এবং জ্ঞানান্ধতা ও গোঁড়ামি-বিরোধী চিন্তাবিদ লেখক হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন।
উনিশ ও বিশ শতকে বাংলা ভাষার সেরা সাহিত্যিকদের ওপর ফ্রান্সিস্ বেকনের প্রচন্ড প্রভাব পড়েছিল।
বাংলা ভাষায় মনে হয়, শেক্সপিয়ারের পরেই সেরা বিশজন সাহিত্যিক-দার্শনিকের অন্যতম তিনি। --
যাঁর চিন্তাচর্চার মধ্যদিয়ে বাঙালি সেরা লেখকেরাও বিশেষ জ্ঞান ও আনন্দ লাভ করে আসছেন বহুযুগ ধরে। বর্তমান প্রজন্মের পাঠক-লেখকেরাও তাঁর জ্ঞান সম্প্রসারণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।)
‘পরিবর্তনের এই পৃথিবী” / স্যার ফ্রান্সিস্ বেকন (ঋৎধহপরং ইধপড়হ)
‘‘সলোমন বলে গেছেন, এই পৃথিবীর বুকে নতুন বলতে কিছু নেই। এ ব্যাপারে প্লেটোর চিন্তা আর সলোমনের চিন্তা একই খাতে প্রবহমান। প্লেটো বলেন, জ্ঞান স্মৃতিচারণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সলোমন বলেন, যা আমাদের চোখে নতুন, তা পূর্বে কোন সময় বিসৃতির তলে তলিয়ে গিয়েছিল। মনে হয়, বিস্মৃতির নদী লেথ (খবঃযব) যুগোপৎ মাটির উপরে ও নিচে বয়ে চলেছে। কোন মহাজ্ঞানী জ্যোতিষী বলেছিলেন, দুটি নিয়ম পরিবর্তনের ধর্মের অধীন নয়। এবং তাদের জন্যে না হলে কোন কিছুই মুহূর্তের জন্যেও স্থায়ী হতে পারত না। একটি হলো, আকাশের নক্ষত্রগুলি। যারা যার যার কক্ষপথে চলেছে। তারা কখনো একে অপরের দিকে এগিয়ে আসে না অথবা যে যেখানে আছে সেখান থেকে উৎক্ষিপ্ত বা নিক্ষিপ্ত হয় না। অপর নিয়মটি হলো পৃথিবীর আহ্নিক গতি।
এ সত্য সন্দেহাতীত যে, সমগ্র বস্তুজগত চির-প্রবহমান। কখনো গতিহীন নয়। দুটি বিরাট চাদর সব জিনিসকে বিস্মৃতির অন্তরালে নিয়ে যায়। তার একটি হলো প্লাবন আর একটি ভূকম্পন। দাবানল ও অজান্মাজনিত দুর্ভিক্ষ দেশকে জনশূন্য এবং ধ্বংস করলেও তারা সর্বগ্রাসী আকারে আসে না। ফ্যাতনের (চযধবঃড়হ) রথ চালনার ফলে ধ্বংস, সেও মাত্র একদিনের জন্যে স্থায়ী হয়েছিল। আর পয়গম্বর ইলিয়াস আলাইসাল্লাম-এর সময়ে যে তিন বছর স্থায়ী দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাও ছিল একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা। তার ফলে ব্যাপক জীবন ধ্বংস ঘটে নাই।
বজ্রপাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (ডবংঃ ওহফরবং) ভূ-ভাগে যে বিরাট ধ্বংস সাধিত হয় তার ফল সংকীর্ণ অংশবিশেষে সীমিত থাকে। কিন্তু মহাপ্লাবন ও দুর্ভিক্ষের ধ্বংসলীলার পরে যে মুষ্টিমেয় মানুষ জীবিত থাকে তারা সাধারণত পাহাড়-পর্বতের অধিবাসী এবং নিরক্ষর। অতীতের বর্ণনা দেওয়ার ব্যাপারে তাদের অক্ষমতার পরিণতি সত্যিকারের সর্বাত্মক ধ্বংসের রূপ গ্রহণ করে। এইভাবে অতীত সম্পূর্ণভাবে বিস্মৃত হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিবাসীদের কথা চিন্তা করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যেন প্রাচীন পৃথিবীর লোকদের তুলনায় তারা তরুণ একটি জাতি। খুবই সম্ভব যে সেই দেশে অতীতে কোন সময় প্রলয় ঘটেছিল। এবং তা ভূ-কম্পনের দ্বারা নয় বরং মহাপ্লাবনের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল।
ভূ-কম্পন গোটা ভূ-ভাগকেই গ্রাস করে ফেলে। যেমন মিশর দেশীয় কোন ধর্মযাজক সোলনকে (ঝড়ষড়হ) বলেছিলেন যে, অতলান্তিকের কোন দ্বীপের সম্পূর্ণটাই ভূ-কম্পনের ফলে চিরতরে তলিয়ে গিয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অঞ্চলে ভূ-কম্পন বিরল।
কিন্তু, অপরদিকে সেখানকার নদীসমূহ এত বিরাট ও বিশাল যে তাদের তুলনায় এশিয়া আফ্রিকা এবং ইউরোপের নদীসমূহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনী মাত্র। আবার সে দেশের পর্বতসমূহ ইউরোপের পর্বতসমূহের চেয়ে অনেক উচ্চতর। তাই অনুমান হয় যে, মানব সমাজের যে ক্ষুদ্র অংশ য়্যানডেস (অহফবং) অথবা ওই ধরনের পর্বতসমূহে বাস করতেন তারাই শুধু মহাপ্লাবনের ধস থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এক সম্প্রদায়ের প্রতি অপর সম্প্রদায়ের হিংসার কারণে বহু জিনিসের স্মৃতি বিলুপ্ত হয়ে যায় বলে ম্যাকিয়াভেলির (গধপযরধাবষ) মত। তিনি বলেছিলেন যে, রোমের গ্রেগরি দ্য গ্রেট (এৎবমড়ৎু ঃযব এৎবধঃ) নিজশক্তিতে যতটা সম্ভব বিধর্মীদের সকল স্মৃতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। কিন্তু এই প্রকারের গোঁড়ামির ফলে বড় রকমের কোন কাজ হয় না। যাও হয় তা আবার তেমন স্থায়ী হয় না। গ্রেগরী দ্য গ্রেটের পরবর্তী পোপ স্যাবিনিয়ান তার একটি প্রমাণ। প্রাচীন কালের সব কিছুকেই তিনি আবার পুনর্বহাল করেছিলেন।
আকাশের গ্রহ-উপগ্রহ প্রভৃতির উত্থান-পতন এবং স্থান পরিবর্তন আমাদের বর্তমান আলোচনার আওতায় আসে না। হতে পারে, এই পৃথিবী যদি ততদিন টিকে থাকে তাহলে প্লেটোর (চষধঃড়) মহাবর্ষ (এৎবধঃ ুধধৎ)এর প্রভাব পৃথিবীর উপরেও পড়বে। ব্যক্তি বা বস্তুবিশেষের পুনরুজ্জীবনে নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর উপরেও পড়বে। ব্যক্তি বা বস্তুবিশেষের পুনরুদ্ধ জীবনে নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর পরিবর্তনে আকাশের কোন জ্যোতিষ্ক পৃথিবীর সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, এই ধরনের বাজে চিন্তা যারা পোষণ করেন তারা সেরকম ভাবতে পারেন। নিঃসন্দেহে ধূমকেতু একই সাথে এবং একই সময়ে পার্থিব জগতের একটা বিরাট অংশের উপর একটা সামগ্রিক শক্তি ও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে মানুষ তাদের তাকিয়ে দেখে এবং লক্ষ্য করে। কিভাবে তারা তাদের কক্ষপথে চলবে তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। ফলশ্রুতিতে কি প্রতিষ্ঠিত হল, সে সম্পর্কে কেউ বড় একটা মাথা ঘামায় না– যেমন কোন্ ধরনের ধূমকেতু, তা কত বিরাট, কোন্ রঙের, কি প্রকারের রশ্মি বিকিরণ করে, আকাশের কোন্ অংশে তার অবস্থান অথবা দীর্ঘকাল অবস্থান করে কিনা এবং তার পরিণতি কি।
একটি ক্ষুদ্র ব্যাপার সম্পর্কে আমি শুনেছি, সে সম্পর্কে আমি বলতে না চাইলেও ভেবে দেখতে ভালো লাগে। লোকে বলে যে, নি¤œভূমির দেশসমূহে (পৃথিবীর কোন ভাগে তা জানি না) প্রতি ৩৫ বছর অন্তর একবার করে একই ধরনের আবহাওয়া ঘুরে আসে। যেমন, বড় রকমের কুজ্ঝটিকা, ভিজে হাওয়া, বড় রকমের অজন্মা, শীতের দিনে গরম অথবা নামমাত্র উষ্ণতা নিয়ে গ্রীষ্ম ইত্যাদি। লোকের বিশ্বাস, আদি থেকেই প্রকৃতি এই বিধান করে রেখে দিয়েছে। কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করছি এই জন্য যে, প্রশ্চাৎগতিতে গণিতের হিসাবে আমি এর ভিতরে অনেকটা সংগতির সন্ধান পেয়েছি।
কিন্তু প্রকৃতির কথা বাদ দিয়ে আবার মানুষের কথায় ফিরে আসা যাক।
মানুষের সমাজে যত পরিবর্তন হয়েছে তার মাঝে সর্বাপেক্ষা বেশি হয়েছে সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে এবং ধর্মের নামে। এই সকল পথেই মানুষের মন সর্বাপেক্ষা বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে। প্রকৃত ধর্মের ভিত্তি হলো পর্বতগাত্রে। অপরাপর সব ধর্মই সময়ের প্রবাহের সাথে উত্থিত এবং অবনমিত হয় অনুধাবন না করার ফলেই ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
মহাকালের পরিক্রমায় একসময়ের ধর্মবিশ্বাস অন্য সময়ে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে পড়ে।
ধর্ম-প্রচারকদের চরিত্র এবং আচরণ যখন অধঃপতিত হয়ে নিন্দনীয় পর্যায়ে চলে যায় এবং যুবপৎ সমাজে নির্বুদ্ধিতা অজ্ঞানতা এবং বর্বরতা প্রকট হয়ে ওঠে, তখনই আবার নতুন ধর্ম-সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের সম্ভাবনা দেখা যায়।
এই প্রেক্ষাপটে এমন কোন অচিন্ত্যনীয় মানুষের আবির্ভাব ঘটে যিনি নিজেকে সেই সম্প্রদায়ের ত্রাণকর্তা বলে ঘোষণা করেন। (হযরত) মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম) যখন তার নববিধান প্রবর্তন করেছিলেন তখন অনুকূল সবকটি বিশেষ অবস্থাই বর্তমান ছিল। তবে দুটি জিনিস না থাকলে নতুন ধর্মকে ভয় করার কিছুই নেই। কারণ, তাহলে সে ধর্ম প্রসার লাভ করতে পারবে না। (ভিন্ন সূত্রে পাওয়া, অসমাপ্ত)
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন
আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত
ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে
ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি
ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা