৫ বাই ৭

রেশম লতা

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম

আমি কোনো মাইনসেরে ছিল্লা লবণ দিতে চাই নাই। মৃত মানুষ তা পারে না। এককালে একটা সাহস কবি আলাউলের নগর কবিতায় পাইতাম। ভ্রিত্রে খালি লাফাইতো। কানহনার মতো শহরে গেরামে চরকি কাটতাম। এখন উনি উচাদের কথা লিখেন আমার তাই লিকলিকে শরীর। তিনগাঁয়ের বাতাস অনায়াসেই ভেদ করে চলে যাবে। বিকেলে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বস্তা পঁচা জার্নি শ্যাষে আড়াই তলা বাড়িটার মখমলে কালার যেন অবসের গোবরে পদ্ম ফোঁটায়। আমার কইলজ্জা কইলাম বরাবরই ফোটা। টপটপ কইরা আজীবন দুঃক্কের রস বাই-রই-ছে। এহন প্রত্যেক রাইত জ্বলজ্বলায়া উঠে ৫ বাই ৭ এর দক্ষিণ গেইট। মোড়লগো বাড়ির নেমপ্লেট বাড়ুয্যে দোকানির ধুতির বাতাস খায়। জংগল ঘিরে ধরেছে সময়। এক মাঘে আমি ভেতরে ঢুকছিলাম। ফিরা আইয়া ঘরের মাল রাস্তার উপ্রে পাই। টানা তিন মাসের ভাড়া বাড়িওয়ালার পকেটে ঢুকে নাই! আমারে তাও ঢুকতে দিত যদি আমি সিগ্রেটের লগে বোতল না খাইতাম। ভয়ংকর কষ্ট পাইলাম। সে যাগ্গে।
ঘুষে যে তার হাত কম লম্বা নয় সেকথা আমি ছাড়া এই গলির কারোরি অজানা না। তবে উনি কিন্তু আমাকে শত্রুর কাতারে ফেলেন নাই। আমি বলছিলাম স্বর্গের আবাসে একটা বেশ্যা চাই। এতেই তিনি নিজেরে ক্যামেরা করে নিছেন। আকাশ এখনো গুম করেনি আমাকে। এই অধমের ছেঁড়া থলে আর তিনটে কলম ছাড়া আছেই বা আর কি! ছিল, ৫ বাই ৭ নম্বরের একটা নেমপ্লেট। আড়াই তলার পুরো নিচটাই ইংরেজ ঘরানার। আমার দাদা মোটা দাগের আমলা আছিলো। বাবা ফৌজদারি মামলায় কীভাবে ঢুকে ওপারে পাচার হয়ে গেল তা মোড়ল গোষ্ঠী উদ্ধার করতে পারে নাই। বিধবা মা যে ক্যামনে পারছে চারটে ছেলেমেয়েরে মানুষের অবয়ব দিতে তার অঙ্কে এখনো আমি কাঁচা। তবে আমার হিসেব আলাদা। আটকোর খালার প্রথম পাকা সন্তান। যখন উনি দেখলো টাইফয়েড আমার মাথার চুল হতে পায়ের নখ সব গিইলা নিতাছে তখন কোত্থেকে যে আরেকটা জোগাড় করলো আজও জানলাম না। কিন্তু এটা জানি এখন সে ইমারত। খালাখালু দুজনেই কবর আর সে মালিক।
আমার পরিচয় যে ঠিক কোনটা তাতে আমিও মাঝেমধ্যে দ্বিধায় পড়ে যাই। সেফালি এজন্যই প্রেমের চিঠিটা ছিঁড়ে এই যে গায়েব হলো আর দেখি নাই পুরান পল্টনের মোড়ে। বুড়িগঙ্গার কসম দিয়া এক ফুঁ ভালোবাসার সুহাওয়া দিছিলো মরিয়ম। সেও কখন যে বেহাওয়ায় মিলিয়া গেল তারও টের পাইলাম না। ধরছিলাম খামচি দিয়া শিমুলতলীর মল্লিকারে সেও মিছা বান দিলো। তয় শালী কিন্তুক অন্যরকম। শ্রী শালিনী রহমান। সে হিন্দু নাকি মুসলিম তা সে নিজেও জানে না। আমিও জানতে চাই নাই। শহরে প্রপার্টি। রহমান এন্ড কোং এর ২য় উত্তরাধিকারী। ঘেঁষি নাই। টেকায় তো আমার এলার্জি। তাও কোন চিপায় চাপায় ফুসুরি গলায়া দিছিলো তা টাহর করতে পারি নাই। যা, খুইলাই দিলাম। জানালা। ভালোবাসার জানালা। বুকের লোম তুইলা জায়গা দিছি। হাতের পরে শালিনী আমার বউ। আমার নির্লোভ আত্মায় য্যামনে হুমড়ি খায়া পড়ছিলো এ¤েœই বুকে পারা মাইরা দিছে। ব্যবহার। ব্যবসা। শহরে টাকাওয়ালা নারী এমনি হয়। জানছি। পরে। আগে জানলে নিজের দেহ দরজায় পিষতাম। নয় বাড়িওয়ালার দুর্গন্ধ জিহ্বায় ব্রাশ করার মতো নিজেরেও ব্রাশ মাইরা দিতাম। দু একটা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসলেও গলির মুখে আটকায়তো না।
যাইহোক তিনডা প্রোডাশন ক্যামনে আইলো আমার মতো শালীনিও এর সঠিক উত্তর দিতে পারে নাই। আমিও আর জিগায় নাই, ফুটবলওয়ালারা এগারো জনেই আছিলো। শেষ দিন রেফারিরেও দেখছি তয় ঠোঁট খুলি নাই।
রঞ্জনদা ছেঁড়া প্যান্টের তালিমারা সেলাইয়ে আঙুল ঢুকাইয়া কইছিলো তোমার ভাগ্য কখনোই খুলে নাই মতি। গতি করার কেউ না থাকলেও হুন্ডার গতিতে জীবন আমার ঠিকি চলছে। খ্যাতি আর যশ ওরা তালি দেওয়া ছাইড়া দিলেও দুঃখ সুপারম্যানের মতো সুপারগ্লু হইয়া রৈইয়াই গেছে।
আজ আর নেমপ্লেট পড়া যায়না। আমিও যাইনা। দয়ালু ভক্তের বাগান ঘরে কাজের লোক সমেত ফ্রি থাকার ব্যবস্থা। দু’তিন রাত পর পর ঘুম থেকে উঠি যমে নিয়া আবার ফিরায়া দিয়া যায়। জানিনা কি রহস্য। আমার তো ফলপাকড়ে হাসতে হাসতে দিনকাটে। চোক্কোর রস কষ হয়ে রক্তের হিমোগ্লোবিনে যৌবনের শেষ ধাক্কাতেই আৎকা কাইত হইয়া গেছিল। ভালই হইছে হের পরে আর ট্যিসু কেনা লাগে নাই।

বিভাগ : সাহিত্য