কল্লোল যুগের পরে অগ্রগতি’-র কথা
০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
এই রচনাটির শিরোনাম হতে পারত‘ত্রিশের দশকের সাহিত্যান্দোলন ও সাপ্তাহিক অগ্রগতি (১৯৩৫-৩৯)’। কিন্ত তার দরকার নেই । ‘অগ্রগতির কাহিনী নামে গল্পটা বলি।
ঊনিশ শতকে বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণ ও বাঙালির ভাবনা চিন্তায় যুগান্তর সাধনের ক্ষেত্রে বঙ্গদর্শন-সাধনা পরে বিশ শতকে সবুজপত্র প্রথম আলোড়ন তোলে। শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসেই নয়, উড়িষ্যা, কেরালা, কন্নড় প্রভৃতি অঞ্চলের ভাষা-সাহিত্যেও সবুজপত্রের প্রভাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বিরুদ্ধভাব, প্রতিবাদ, বিপ্রতীপ ছিল এঁদের মূল প্রেরণা।
বিশ শতকের প্রথম দু-তিন দশকের মধ্যেই সাহিত্য ও চিন্তার প্রচলিত ধারাকে পঙ্গুতা ও খর্ব মানসিকতা দ্বারা গ্রাসকারী প্রবণতাকে সরবে অস্বীকার করে নতুন কালের নান্দীপাঠ করেছিলেন রবীন্দ্র সমকালীন ও তাঁর পরবর্তী যেসব কবি ও শিল্পী-- তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ সৃষ্টিতে স্বকীয় প্রতিভা ও অভীপ্সার মুক্তি ঘটিয়েছিলেন। এর ফলেই ভাব, বিষয়বস্তু, মনন-প্রকৃতি ও প্রকাশভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল।
বাংলা সাহিত্যের এই সমস্ত নব্য ‘কালাপাহাড়’দের বিশ-ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে পালন করেছিল সবুজপত্র-কল্লোল-কালিকলম-সত্তগাত-শিখা-প্রগতি-বুলবুল-কবিতা-চতুরঙ্গ এবং ‘অগ্রগতি (১৯৩৫)-র মতো একগুচ্ছ সাময়িক পত্র।
এর মধ্যে কোনো কোনো পত্রিকার যথার্থ মূল্য ও গুরুত্ব অনুধাবনের প্রয়াস এবং ইতিহাসের কোনো না কোনো আলোচনায় যথার্থ গুরুত্বে স্থান লাভ করলেও কিছু কিছু পত্রিকা অখ- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এখনও অন্তর্ভুক্তি পায়নি।
এটা বোঝা যায়, কোনো কোনো পত্রিকার গুরুত্ব কোনো কোনো কারণে কমে গেছে বা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ‘অগ্রগতি-র ক্ষেত্রে ঘটেছে হয়তো অনেক কারণ। প্রধানত এই পত্রিকার কোনো নমুনা কপি পাওয়া যায় নি বলেই এর ইতিহাস-ঐতিহ্য-গুরুত্ব— সবই বিস্মৃতির কালো অতলে হারিয়ে গেছে।
এর সম্পাদক ছিলেন আশু চট্টোপাধ্যায়। তিনি সুভো ঠাকুরের হরিহরআত্মা বন্ধু ছিলেন। দুজনের চরিত্রেই ছিল প্রায় একই বৈশিষ্ট্য। ত্রিশ-চল্লিশের দশকে কলকাতা কেন্দ্রিক সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
সবুজপত্রের ধারায় কল্লোল কালিকলম-প্রগতি-দেশ-
কবিতা-চতুরঙ্গ ও অপরাপর সাহিত্যপত্রকে ঘিরে বিশ-ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে ঢাকা ও কলকাতা কেন্দ্রিক যে সাহিত্যিক আড্ডা ও সাহিত্যান্দোলন গড়ে ওঠে, তার ইতিহাসের সঙ্গে সমান্তরালে ‘অগ্রগতি পত্রিকা ও এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গোষ্ঠীর আড্ডা-আন্দোলন-স্ফূর্তি-বিদ্রোহের ইতিহাসও লিপিবন্ধ হওয়া উচিত। এঁদের গোষ্ঠীবদ্ধ কর্মকা- কল্লোলের কালের সাহিত্য-সমাজকে প্রাণ-সঞ্চারকারী অনেক খোরাক সরবরাহ করেছিল। এঁরা সাহিত্যক্ষেত্রে অনেক নতুন ও কালোপযোগী বিষয়বস্তুর অবতারণা করেছিলেন। গরম করে রেখেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভকালীন কলকাতার সংস্কৃতি-অঙ্গনকে। তখন ছিলেন এঁরা সকলেই উজ্জ্বল তরুণ। প্রতিভাধর তরুণ শিল্পী সুভো ঠাকুর, মেধাবী ছাত্র ও গবেষক লেখক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, নির্মল ঘোষদস্তিদার, হীরালাল দাশগুপ্ত, শৈল চক্রবর্তী, বিমল মিত্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মণি বাগচি, নন্দগোপাল সেনগুপ্ত, দিনেশ দাস প্রমুখ ঐ কালের লেখক গোষ্ঠীর একাংশ ছিলেন পত্রিকা ও সাহিত্যিক আড্ডায় সক্রিয় অংশ গ্রহণকারী। অন্নদাশংকর রায়, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, অজিত দত্ত, বিষ্ণু দে প্রমুখের লেখাও এতে ছাপা হয়েছে। লিখেছেন আরও অনেকে যাঁদের নাম এখানে লেখার জায়গা নয়।
তবে সকলের বিবরণ থেকে বোঝা যায়– বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য প্রগতিশীল পত্রিকাবলীর মধ্যে অগ্রগতি ছিল সবুজপত্র-কল্লোল প্রভৃতির সার্থক উত্তরসূরী।
অগ্রগতি পত্রিকার কী ছিল না? এর যে কোনো একটি অংশ দিয়েই একটি সফল ‘আধুনিক পত্রিকা হিসেবে ‘অগ্রগতি’ মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, শিল্প ও সাহিত্য সংস্কৃতির আলোচনা, প্রচ্ছদ, অঙ্গসজ্জা, কাগজ, মুদ্রণ পারিপাট্য বিজ্ঞাপনের রুচি—সবদিক থেকেই অগ্রগতি বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে একক ও বিরল এক উদাহরণ হয়ে আছে।
সাদা আর্ট পেপারে বারো বাই সাড়ে নয় ইঞ্চি সাইজে গল্প-কবিতা-উপন্যাস ও বিজ্ঞানের আলোচনায় সমৃদ্ধ হয়ে ২৪, ৩২, ৬৮, ৭২ কিংবা আরও বেশি পৃষ্ঠার (সাধারণ মাপ ২৪ পৃষ্ঠা) বিশেষ সংখ্যা দু কলামে অত্যাধুনিক অথচ পরিচ্ছন্ন চিত্রাবলী (চারু, কারু, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, ফটোগ্রাফিক (অতিপ্রাকৃত ও প্রাকৃত) শোভিত হয়ে অগ্রগতি প্রকাশিত হওয়া মাত্রই বাজার দখলকরে নিয়েছিল। পশ্চিম বাংলার (তথা কলকাতার) বাইরে পূর্ববঙ্গে এবং ভারতের বাঙালি- অধ্যুষিত অপরাপর অঞ্চলসমূহে অগ্রগতির জনপ্রিয়তা এবং কাটতি ছিল। প্রথম বর্ষের একটি সংখ্যার একাধিক সংস্করণও হয়েছিল। কিন্তু এর কোনো ইতিহাস কেউ-ই ইতিপূর্বে লেখেননি।
উপর্যুক্ত পরিস্থিতির আলোকে, ঘটনাক্রমে অগ্রগতির সম্পাদক আশু চট্টোপাধ্যায় স্মৃতিকথার ঢংয়ে ‘কল্লোল যুগের পরে’ শিরোনামে জন্ম-ইতিহাস ইত্যাদি লিখলে (প্যাপিরাস প্রকাশিত,১৯৯৩)তা পড়বার সুযোগ হয় এবং পত্রিকাটি সম্বন্ধে বিশেষ কৌতূহলী হয়ে উঠি। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ‘হারিয়ে যাওয়া রতœ’ ভেবে আমি দেশে বিদেশে অনুসন্ধান করে সৌভাগ্যক্রমে এর তৃতীয় বর্ষের একটি ফাইল প্রায় অক্ষত অবস্থায় দেখতে পাই (১৯৯৪ সালে)।
সম্পাদক জানিয়েছেন, অগ্রগতি চতুর্থ বর্ষ প্রথম সংখ্যায় (শরৎ সংখ্যা, ১৩৪৫) প্রকাশিত হবার পর পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। কিন্তু পত্রিকাটি তৃতীয় বর্ষেই শেষ হয়। ১৩৪৫ সালে আশ্বিন মাসে যে সংখ্যায় তাঁর উপন্যাস ‘ভালো নয় মন্দ নয় বের হবার পর পত্রিকা বন্ধের কথা অন্যত্র বলেছেন সম্পাদক সে-সংখ্যাটি হচ্ছে তৃতীয় বর্ষের ৩৪ সংখ্যা। প্রকাশকাল ৭ই আশ্বিন ১৩৪৫। এই সংখ্যা শেষ সংখ্যা হলে তৃতীয় বর্ষের সমস্ত সংখ্যাই দেখার সুযোগ আমাদের হয়েছে। প্রথম দুই বছরের দুটি ভলিউম এখনও অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। হয়ত ঐ দু’ বছরে আরও প্রায় ৭০টি সংখ্যা বের হয়ে থাকবে। এবং একশোর সামান্য কমবেশি সংখ্যা এর প্রকাশিত হয়েছিল। (কবিতার ১০৪ ? ) যদিও সম্পাদক শদেড়েক সংখ্যা বের হয় বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এ তথ্যে স্মৃতিবিভ্রমের আশংকা সত্য হয়েছে। সম্পাদক পত্রিকার জন্ম ইতিহাস যেমন লিখেছেন, তেমনি বন্ধের কারণও বিবৃত করেছেন। আগে মৃত্যুর কারণটিই তাঁর কাছ থেকে শুনি “অগ্রগতির আসর যখন জমজমাট তখনই বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ আরম্ভ হয়ে গেল। এই সংঘর্ষ যত বাড়তে থাকল, ‘অগ্রগতি’র প্রচারও তত বাড়তে থাকলো। ভারতের সব বড় শহর ছাড়াও লন্ডনে গাওয়ার স্ট্রিটে ডকটর সচ্চিদানন্দ সিংহ ‘বিব্লিওফাইল নামে একটি পুস্তকালয়ের জন্য সপ্তাহে তিনশ করে কপি বিক্রি করতেন। তখনো লন্ডনে বহু বাঙালি বাস করতেন।
“চতুর্থ বর্ষের প্রথম সংখ্যা অর্থাৎ পূজা বা শরৎকালীন বিশেষ সংখ্যা বের করার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য তখন পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ করলাম।...পত্রিকাটি বন্ধের প্রধান কারণ ছিল এই যে কাগজের কন্ট্রোল হওয়ায় বরাদ্দমতো যে পরিমাণ কাগজ পেতাম তাতে আমাদের অগণিত পাঠকদের সকলের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিতে পারতাম না। মাত্র অল্পসংখ্যক পাঠকের জন্যে পত্রিকা বের করে কি লাভ হত, তাছাড়া একথাও অনেকে বলেছিলেন যে, জাপান জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেওয়ায় অবিলম্বে ইংরাজ-শাসিত ভারতে বিমান আক্রমণ বা বোমাবর্ষণের ভয় দেখা দিতে পারে। তখন প্রেস চালাবার লোকজন পাওয়া যাবেনা। তবু পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া আমার পক্ষে নির্বুদ্ধিতার কাজ হয়েছিল। অন্যান্য পত্রিকাগুলি সেই দুর্যোগের পটভূমিকাতেও বেশ বেঁচে ছিল। অথচ তখনকার বাঙলা পত্রিকাগুলির মধ্যে ‘অগ্রগতির প্রচার ছিল সবচেয়ে বেশি।”
প্রাপ্ত সংখ্যাসমূহের পৃষ্ঠার সঙ্গে এবং হয়ত অপরাপর বর্ণনার মধ্যে আশু চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি কিছু প্রতারণা করতে পারে। তবু তাঁর কথাই আমাদের প্রধান দিগদর্শন। পত্রিকার প্রাপ্ত সংখ্যাসমূহের রচনাবলীর এবং এতে বিধৃত তথ্যের সঙ্গে সম্পাদকের স্মৃতিকথার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করা হলো ত্রিশ দশকের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রিকা অগ্রগতির ইতিহাস। ঐ সময়ের একজন সক্রিয় সাহিত্যকর্মী এবং অগ্রগতির কর্ণধার আশু চট্টোপাধ্যায়ের অনেক কথাই মনে আছে।
আবার দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে, বিশেষ করে পত্রিকার ফাইল তাঁর নিজের কাছেও ছিল না বলে তথ্যবিভ্রান্তি ঘটেছে অনেক ক্ষেত্রে। বিস্মৃতিই বড় দায়। তাতে কিছু এসে যায় না। যদি না এই পত্রিকার এক তৃতীয়াংশও দেখা না যেতো, তাহলে সম্পাদক আশু চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথাই ছিল অগ্রগতির ইতিবৃত্ত। কিন্তু এখন কেবল স্মৃতি ভরসা নয়, সংগ্রহও গবেষকের সম্বল হয়েছে।
অধ্যাপক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অগ্রগতির’ সম্পাদকের স্মৃতিকথার ভূমিকা লিখতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন : “আশু চট্টোপাধ্যায় এমন এক ব্যক্তি যিনি আমাদের স্মৃতিলোকে স্থায়ী আসন পেতেছেন। কী তিনি ছিলেন না, সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁর ছিল অবাধ বিহার, সাবলীল পদচারণা। যাঁরা নিকট-সান্নিধ্যে এসেছিলেন তাঁরা তাঁর মধ্যে উত্তপ্ত প্রাণের অফুরন্ত লীলা প্রত্যক্ষ করে বিস্মিত হতেন।”
বৈশাখ ১৩৬৯ বঙ্গাব্দের জলসা পত্রিকার এক বিশেষ সংখ্যায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অগ্রগতির লেখক গোষ্ঠীর ইতিহাসের তথ্য উপস্থাপন করেছেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সম্পাদক শ্রী সাগরময় ঘোষ। সম্পাদকের বৈঠকে লিখেছিলেন: “ত্রিশ বছর আগের কথা বলছি। যে কোনো দিন সন্ধ্যায় চৌরঙ্গীর বেঙ্গল রেস্তোরাঁর সামনে গেলে দেখতে পেতেন চারজন তরুণ সুপুরুষ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করছে। গল্প বললে ভুল হবে। আসলে রেস্তোরাঁয় চায়ের কাপে যে তর্কের ঝড় উঠেছিল তারি রেশ চলছে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। ডবল-ডেকার ফাঁকা বাস এলে যে-যার পথে যাবার কথা, যাওয়া আর হয় না। তর্কের বিষয় হয়ত জমস জয়েস অথবা রিলকে, নয়তো বন্দীর বন্দনা অথবা শেষের কবিতা। কত বাস এল আর গেল, চতুর্মুখ তখনো মুখর। চারজনেরই বেশভূষা প্রায় একই ধরনের। ঢিলে হাতা আদ্দির পাঞ্জাবী জানু ছাড়িয়ে বিঘৎখানেক নেমে এসেছে, শান্তিপুরী ধুতির কোঁচা মাটিতে লুটানো। এঁরা কারা? এঁরাই সাপ্তাহিক ‘অগ্রগতি’ পত্রিকার সম্পাদক লেখক পরিচালকবৃন্দ–আশু চট্টোপাধ্যায়, বিরাম মুখোপাধ্যায়, নির্মল ঘোষ ও হীরালাল দাশগুপ্ত।
‘অগ্রগতি’ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “কল্লোল” ও “কালিকলম”-এর পর এই চটকদার সাপ্তাহিক পত্রিকাটি ধুমকেতুর মতো বাঙলা সাহিত্যের আকাশে সহসা আবির্ভূত হয়ে আবার মিলিয়ে গেছে। যতদিন ছিল, চমক ছিল। আর ছিল তার সাজসজ্জায়, রচনাভঙ্গিতে, বিষয় নির্বাচনে এমনই এক বেপরোয়া ভাব যে সম্পাদককে বার দু-তিন লালবাজারের খপ্পরে পড়তে হয়েছিল নিষিদ্ধ রচনা প্রকাশের মামলায়। পত্রিকার নাম-মাহাত্ম্য বজায় রাখবার জন্যে সম্পাদকম-লী সময় ও কালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে ছিলেন। সেই সময়ে আজকের দিনের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিকের দলের প্রায় সবাই ছিলেন অগ্রগতির লেখক। মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জীবনানন্দ দাশ, অচিন্ত্যকুমার প্রভৃতি এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন, এই পত্রিকা মারফত আমাদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন দুই কবি, একজন দিনেশ দাস, অপরজন হীরালাল দাশগুপ্ত।
অগ্রগতির আড্ডা সম্পর্কে আশু চট্টোপাধ্যায়সংযোজন করে বলেছেন, “সাগরবাবু আর কয়েকজনের কথা বলতে ভুলে গেছলেন। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন বিমল মিত্র। তিনি আমাদের বিশেষ বন্ধু ও দলের একজন ছিলেন। অগ্রগতি তে তাঁর অজস্র গল্প প্রকাশিত হয়েছে। সন্ধ্যায় ‘অগ্রগতির আসরে যোগ না দিলে হয়ত সন্ধ্যাটা বৃথা যাচ্ছে বলে তাঁর মনে হত। তাঁর সুমিষ্ট হাসি, কথা ও ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করেছিল। আর দলে ছিল মণি বাগচী, সুভো ঠাকুর, নিয়মিত আসত আর লিখত নন্দগোপাল সেনগুপ্ত। দূর থেকে নিয়মিত লেখা পাঠাতেন প্রসিদ্ধ গল্পলেখক জগদীশ গুপ্ত। বুদ্ধদেব বসু গল্প ও কবিতা লিখেছিলেন।’’
অগ্রগতির লক্ষ্য-আদর্শ সম্পর্কে পত্রিকার পাতায় বিধৃত রচনাবলীর চরিত্র লক্ষ্য করেই মন্তব্য করা চলে। তবু প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় পত্রিকার মুখবন্ধ বা সম্পাদকীয় পড়বার সুযোগ না পাওয়াটা দুঃখজনক। এক্ষেত্রেও সম্পাদকের ভাষ্যই অবলম্বন করা শ্রেয়। তিনি লিখেছেন,---
“.....‘জীবন্ত’ পত্রিকা গড়ে তোলাই ছিল আমাদের লক্ষ্য এবং সেজন্য আঘাত আমাদের অনেককে দিতেও হয়েছে, অনেকের কাছ থেকে খেতেও হয়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের যুদ্ধ ছাড়িনি। ...... আমরা তো হাঙ্গামা এড়িয়ে চলতে চাইনি, আমরা কয়েকজন যুবক তখন নতুন সাহিত্য রচনা করে কীর্তি স্থাপনের স্বপ্নে অন্য সব কিছুকেই তুচ্ছ জ্ঞান করছি। অন্নদাশংকর রায়ের কাছে কোনো বিশেষ সংখ্যার জন্যে লেখা চেয়ে চিঠি লিখেছিলাম, তিনি উত্তরে লিখেছিলেন, ‘একেবারেই এখন হাতে সময় নেই। তবু ‘অগ্রগতিতে লিখতে ইচ্ছা করে, কারণ এখন জীবন্ত পত্রিকা বলতে একমাত্র অগ্রগতিকেই বুঝায়। আপনারা অন্তত একটি কবিতা লিখে দিতে বলেছেন, কিন্তু আমার মতে উপন্যাস লেখা সবচেয়ে সহজ। তার চেয়ে কঠিন প্রবন্ধ লেখা এবং তার চেয়ে কঠিন গল্প লেখা। সবচেয়ে কঠিন একটি ভাল কবিতা লেখা। - ১৯৩৫ সনের পর লেখা অন্নদাশংকর রায়ের পত্রের ভাষ্যে তখনকার পত্রিকাবলীর মধ্যে একমাত্র জীবন্ত পত্রিকা বলতে তিনি ‘অগ্রগতিকে বুঝেছেন বলে উপর্যুক্ত সূত্র মোতাবেক জানতে পারা যায়।
আশু চট্টোপাধ্যায় এই জীবন্থ পত্রিকার জন্ম-ইতিহাস বিবৃত করেছেন, তাতে দেখা যায় ‘ভবিষ্যৎ’ পত্রিকার সম্পাদক, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সন্তান ঋতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুর অর্থাৎ প্রখ্যাত শিল্পী ও সাহিত্যিক বলে খ্যাত সুভো ঠাকুরই এর প্রধান উদ্যোক্তা। তাঁর ‘ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সাহিত্য পত্রিকায় লেখা দেবার অনুরোধের সূত্রে আশু চট্টো -পাধ্যায়ের সঙ্গে এই পত্রিকা সম্পাদনা বা প্রকাশনার সংযোগ স্থাপিত হয়। ‘ভবিষ্যৎ’ পত্রিকায় বহু নতুন ধরনের লেখা প্রকাশিত হলেও পত্রিকার নিজের একটি লেখকগোষ্ঠী তৈরি হয়নি। তা হয়েছিল সাপ্তাহিক ‘অগ্রগতি পত্রিকাকে আশ্রয় করে।
‘সুভো যখন প্রথম এই সাপ্তাহিক বের করবার প্রস্তাব করল, তখন আমি তাঁকে বারণ করেছিলাম। (অসমাপ্ত, ভিন্ন সূত্রে পাপ্ত)
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান