শতাব্দীর দূরবীণ
২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম
নিস্তব্ধতা ভেঙেচুরে তারপর শব্দের জন্ম। শব্দগুচ্ছের একত্রে বাক্য, এরপর বাক্য থেকে হয় অর্থবহ কথার উদয়। এসবের মাঝে কবিতাই হলো দীর্ঘ কথার সংক্ষিপ্ত রূপ। কবিতার শাখা প্রশাখারও বিবর্তন হয়েছে সময়ের সাথে সাথে। কখনো নির্দিষ্ট গদবাঁধা নিয়মের আঙ্গিকে, আবার কখনো সেটা ভাঙা হয়েছে সময়ের প্রয়োজনে। কবিতার ইতিহাস নিয়ে কম রচনা হয়নি। মানুষ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দর ইতিহাস জানে, কমবেশি সবাই পাঠ করেছে তাদের কবিতা। একটা সময় মানুষ এসে কবিতাকে দুর্বোধ্য আর জটিল ভাবতে শুরু করেছে। মানুষ সমস্ত জটিলতা ছাপিয়ে হয়ে উঠতে চায় কিছুটা সহজতর। যুক্তিও তাই বলে। অভিধান দেখে দেখে শব্দের দুর্বোধ্যতা আর থম মেরে বসে কবির উদ্দেশ্য অনুভব করা মানুষ পাওয়া দুর্লভ হয়ে পড়েছে। যুগোপযোগী হওয়া, পাঠক ধরে রাখার যৌক্তিকতা। যান্ত্রিকতা এসে মানুষকে বিমুখ করে ফেলছে মগজের যুদ্ধ থেকে। অবশেষে পাঠক ঝুঁকে পড়েছে গদ্য কবিতার প্রতি। এগুলো বিবর্তন হতে সময় লেগেছে অনেক। কেউ তুমুল প্রতিবাদ করেছেন। কবিতার স্বকীয়তা ক্ষুণœ করার অভিযোগ তুলে ধরেছেন কবিতার ভাষায়। একটা সময় সবাই মেনে নেয় এই গদ্য কবিতার ধারা। এখন অনেক সময় গদ্য কবিতার নামে স্রেফ গদ্য কিংবা কবিতা নামক কথপোকথন গিলানো হয়। সমাচার বাদ থাক আজ। একটু গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনা হোক।
বিস্ফোরণে নতুন গ্রহ সৃষ্টির মতো উদ্ভব হয় এই নতুন ধারার। অতীতের সমস্ত নিয়ম-কানুনের প্রাচীর ভেঙে, সূচনা হয় এই যাত্রার। মানুষ নতুনত্বের প্রতি আগ্রহী ভীষণ। নতুনত্বমুখী চিন্তা চেতনাকে কেন্দ্র করে নতুন ধারার সৃষ্টি।
কোভিড ১৯ —এর জরাজীর্ণ দুঃসময় আর পৃথিবীর মারমুখী যুদ্ধকালে এই ভাবনার উদ্রেক হয়। এ এক সময়ের দেয়ালভাঙা বিপ্লব। সাহিত্যের মিনারে একটা নতুন আহ্বান। দাঁড়িকমারও বিবর্তন আসবে বলে ধারনা করা হয়। কবিতার অর্থ বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন। যেমন জীবনানন্দ দাশ বলেছেন “উপমাই কবিতা”। আরো অনেকে নিজের মতো করে কবিতার প্রতি নিজের অনুভূতির জানান দিয়েছেন। কবিতা মূলত হৃদয়ের খানিকটা স্পষ্ট উচ্চারণ। কবিতার আত্মকথন রকমারী, বিভিন্ন। সেদিক থেকে নতুন ধারা আরো বৈচিত্র্যময়। এতে উপমার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে ১) রহস্যময়তা, ২) প্রমীত বাংলার সাথে আঞ্চলিকতার মিশ্রণ, ৩) আত্মিক বা সম্পর্ক বাচক শব্দের সঠিক প্রয়োগ। প্রথমটি আবশ্যক নয়। দ্বিতীয় দু’টো অনিবার্য এবং আবশ্যক। যা ইতিপূর্বে এতোটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি। নতুন ধারায় এগুলোকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক কবিতায় কিছু ভিন্ন রকম পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা একটি ভেঙে ভেঙে হাতে কলমে বুঝে নিতে পারি
ভিকটিম/ রেশম লতা
ভিকটিম, হোগলাপাতা!
গাছ সামলান জরুরি ছাদ থেইকে!
এপার ওপার এক সূতার দুই মাথা
গুরুত্বরা সাঁকো
নড়ে আর লাফায়
মুদি দোকানের সদাই বান্ধনের গেরান শুঁইকেই
খালুর শুক্রবার অতিবাহিত।
বেবাকতের অজানা নাওরন্দী খালের কাহিনী।
প্রথমে কবি সম্বোধন সূচক শব্দ “ভিকটিম” দ্বারা কবিতার সূচনা করেছেন। তা স্বাভাবিক আধুনিক কবিতার মতোই। পরের লাইনের শেষে তিনি একটি লোকাল ভাষা ব্যবহার করেছেন। যাতে করে কবিতার কাঠামো পুরোপুরিভাবে অন্যরকম নতুনত্ব এনে দিয়েছে। সেই শব্দ হলো, “থেইকে”। এরপর “খালু” একটি আত্মীক বাচক শব্দ। এখানে কবি মামা সম্বোধনও দিতে পারতেন। আমরা অন্য কিছুও দিতে পারি। এই যেমন, রিকশাওয়ালা মামা, চায়ের দোকানী, ড্রাইভার, খালা, খালু, দাদা, দাদী, নানা, নানী, দুলাভাই, আপা, বৌদি, গিন্নি, আরো ইত্যাদি ইত্যাদি। এ দু’টি বিষয় একদম অপরিহার্য নতুন ধারার কবিতায়। থাকতেই হবে। আবশ্যক, অনিবার্য। এ দু’টো নতুন ধারার কবিতার চৌহদ্দি। এটা এড়িয়ে গেলে আপনি সীমালঙ্ঘন করে ফেললেন, ভেবে নিন। এ জাতীয় শব্দ একটা কবিতায় কয়েকটি থাকলেও সমস্যা নেই। আর কিছু লোকাল ভাষার সংমিশ্রণ। যারা লেখালেখি করে, তাদের জন্য অতোটা কঠিন বা দুর্বোধ্য বলে আমি মনে করি না। এখানে কয়েকটি কবিতা উল্লেখ করা হলো। আপনি খুঁজে দেখুন, কবিতায় কোনটি উপস্থিত এবং অনুপস্থিত। এতোটুকু পড়ায় আমি মনে করি আপনার মাঝে নতুন ধারার সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান চলে এসেছে। আপনি এখন বিচারক।
ও ফুল ও নিষাদ / মুকুল ম্রিয়মাণ
ও ফুল ও নিষাদ,
হরহামেশা জাগিয়ে তুলছো লালিত মেলানিন;
বিপন্ন বালিহাঁসের মিথুন দৃশ্য থেকে
দূরে সরে যাচ্ছে গাঁয়েরী প্রেমিক।
আর আমার গল্পটাও জমজমাট!
গাঁ-গামালের রেশমী মেয়ে রেশমা
এহোন তোমাগোর মন কাইড়া লয়,
শোনো সুদর্শন ছোকরা হাচা কইতাছি-
একদিন আমারও মন কাইড়া নিছিলো-
সে ঘোলাটে চোখের বরকন্দাজ,
ঢুইকা পড়ছিলো এই বুকের জিরাতে
বিষণœতা / আবির হাসান
কতটুকু অবশিষ্ট আছে স্বপ্নের শরীর!
দীর্ঘ ক্লান্তিতে শুধু শুইয়া থাকে দৃষ্টিরা...তারপর
আরো বিশূন্যতা নিয়া হঠাৎই গলে গলে যায়
পুরানা মোমের জীবন যেভাবে শান্তি খালার শরীর
ক্ষয়ে পড়েছে কামনায়! বইসা বইসা শুধু
স্বামীরে কল্পনা করে...মৃত কল্পনা..কল্পনার শরীর নাই।
তবুও সাথে করে করে সে এহন
মৃত্যুর লগে কথা কয়..মৃত্যু তারে মায়েদের মতো
জড়াইয়া ধরে..ঠোঁটে চুমু খায়.. কী মায়ারে!
অথচ একদিন তীব্র হতাশায় জীবন
সুইসাইড করার ওয়াদা করেছিলো! জীবনের মূল্য নাই,
দুই টাকার দীর্ঘশ্বাস...
তবুও প্রতিদিন ফাতেমা খালা মৃত্যুর লগে পাঞ্জা লড়ে।
বাঁইচা থাকতে চায় একেকটা দিন স্মৃতির বাদামী হাওয়ায়..! কিন্তু একদিন মৃত্যুর ক্লান্ত বিকেলে সে ডুবে গেছে
শূন্যতার গুমোট অন্ধকারে! সেই অন্ধকারের ভিতর
জীবন ফুঁপাইয়া ফুঁপাইয়া
কাঁদতেছে!
দীর্ঘ বিষণœতা ছাড়া কেউ নাই পাশে।
(অসমাপ্ত)
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যতবার বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, ততবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে: এবিএম মোশাররফ
সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্র আছে – সারজিস আলম
শীর্ষ ফুটবলে নিজেকে আরও কয়েক বছর দেখেন ফন ডাইক
কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ
কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
মির্জাপুরে বনের ভেতর গড়ে উঠা ৯টি ঘর উচ্ছেদ
সচিবালয়ে আগুন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা দায় এড়াতে পারেনা - এবি পার্টি
পথশিশুদের মাঝে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক সংগঠন আলোকিত নরসিংদী
কুলাউড়ায় বিসিএস ডাক্তারদের মানববন্ধন
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাত
ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সিলেট সীমান্তে নিহত এক তরুন : বিজিবির প্রতিবাদ
যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছেন তাদের বিচার হওয়া উচিত.রাজশাহীতে বদিউল আলম মজুমদার
ট্রাকচাপায় ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় মামলা
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় বাড়ল
মেহেরপুর জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে কেএমপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে; কেএমপি কমিশনার
মির্জাপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত
বাগেরহাটে ষড়যন্দ্রমূলক মিথ্যা মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে প্রবাসীর সংবাদ সম্মেলন
পদবঞ্চিতদের আড়ালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, জবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতায় বিবৃতি
টিকেটে ছাড়াই তারকা খেলোয়াড়দের খেলা দেখার সুযোগ পাবে সিলেটবাসী