নতুন ধারার ও আধুনিক কবিতা
২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১১ এএম
আধুনিকের খেতা পুড়ি
নতুন ধারায় পঙক্তি গড়ি!
আধুনিক কবিতা আন্দোলনের কবিগণ গত হৈছেন।
হ্যাঁ, শত বছরের পালাবদলে কবিতা, গল্প, গদ্য, স্থাপত্য কলা সবকিছুতেই আসবে পরিবর্তন । পৃথিবীর কফিন বক্স এখন লাশেদের দখলে। এইসব সত্য জেনেও বহু লেখক হুদামিছা আধুনিক কবিতার শিকড়ে ঝুলন্ত। এরা হৈছে ধইঞ্চা। আমড়ার কাঠের ঢেঁকিরা ধান বুনতে পারে না বলেই খালি ঢেঁকুর তুলে, জায়গায় -অজায়গায় হেঁচকি মারে। তুলছে ধান শুরুতে। পাঁচ-ছজন আছিলো, তাগোরো স্যালুট। জীবনানন্দ, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, কবি আবুল হাসান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ একেকজনের একেকটা বিখ্যাত কবিতা আছে। আপনাগোর আছে? বেবাক জল এক ঘাটেই। যারা ১৯৩০ এবং তৎপরবর্তীকালের আধুনিক কবিতার মধ্যে ডুইবে আপনাদের কবিতাতো আলাদা করা যায়না। ছেঁড়া তবনের সেলাই কিচ্ছা বাদ দিয়া নতুন ধারা ধরেন। চর্চা করেন। শুরুটা কবি ফাহিম ফিরোজের ভাতঘুম কাব্যগ্রন্থে আছে। সেরা সেরা সব কবিতা। গলাকাটা কথা, নতুন ধারা ছাড়া বাংলা কবিতা বাঁচবে না কেননা ইতিহাস তা-ই বলে।
নতুন ধারা কঠিন এই কথার লেজে পারাথথ কঠিন যদি সাধনার অংশ না হইত যদি সহজই এর মূখ্যত হত তবে রবীন্দ্রনাথ বলতেন না, ‘সত্য যে কঠিন, তাই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’। সত্য সবসময়ই কঠিন। কবির সাহিত্য সাধনার ধরন ও সৃজনশৈলীর পথরেখার মুখোমুখি কবির সত্য অবস্থান। সত্য যত হিমালয়ই হোক না কেন তাকে তপস্যায়- পরিচর্যায় সহজগম করা উচিত। কঠোর পরিশ্রমী রবীন্দ্রনাথ যেমন সাহিত্য জীবনশিল্পী তেমনি হুইটম্যান, নেরুদা, নজরুলও। শেক্সপিয়র, গোর্কি, বায়রন। নতুন ধারার স্রষ্টাও তাদের উত্তরসূরী। নতুন ধারার কবিতা তার প্রকোষ্ঠ উদাহরণ। শব্দ দিয়ে তৈরি হয়েও যখন শব্দকে অতিক্রম করে তখন কবিতা হয়ে উঠে। ক্রমপরিবর্তনশীল শিল্প-প্রপঞ্চ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ, কারো মুখাপেক্ষী কেউ নয়। আবেগ এখানে দলিল নয়। খোঁড়া যুক্তিও সবল। যুক্তিহীনতার উশৃংখলা প্রজ্ঞাশাসিত পথে না হেঁটে গেলেও তা কবিতা হয়। যেখানে ভাঙচুর, চেতনায় বিস্ময়কর অনুভূতি জাগায় সাথে দর্শনের প্রলেপ সেখানে রস উপলব্ধ। শব্দের বাঁকে স্বতঃসিদ্ধ জীবনের বিজ্ঞানময় যাত্রা কেবলি নতুনত্বের দাবী রাখে। তাই সত্য যা তা চির কঠিন। এরচে কঠিন সত্য এক নাম ‘নতুন ধারা’। শতবর্ষের পালাবদলে কবিতার অঙ্গসুষমায় নতুন আঙ্গিক তো সময়ের দাবি। তাইতো নতুন ধারার প্রবক্তা কবি ফাহিম ফিরোজ দীর্ঘকাল ধরে এই নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত ছিলেন। অবশেষে হলেন স্থির, বাংলাদেশে এই প্রথম নতুন ধারার ইস্তেহার প্রকাশ।
নতুন ধারা কেন প্রচলিত সাহিত্য ধারা থেকে আলাদা এবং এর মধ্যে কি এমন নতুনত্ব, বিষয়, উপাদান, উপকরণ আছে যার জন্য আধুনিক কবিতা বাদ দিয়ে নতুন ধারার চর্চা করতে হবে? দেখুন, সম্পূর্ণতই ভিন্ন তথা নতুনভাবে, নতুন কিছু ভাব বৈশিষ্ট্য উপবৈশিষ্ট্য নিয়ে কবিতার মোড় ঘুড়ানো সময়ের দাবি। তথাকথিত আধুনিক চর্চাকে বাদ দিয়ে শতাব্দীর পালাবদলে বাংলা কবিতাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রমিত শব্দের সাথে লোকজ শব্দের সংমিশ্রণ ঘটানো অত্যাবশ্যকীয়। আত্মীয় ও সম্বন্ধ বাচক শব্দের প্রয়োগ, শব্দ নিয়ে খেলা অর্থাৎ নতুন শব্দ তৈরি করা যা বাংলা শব্দ ভান্ডারের সহায়ক। এবং বহুরৈখিককতা সংযোজিত করা।
তারপর নন্দন তত্ত্বের প্রতি সমর্থন তবে আংশিক। আধুনিক গঁদবাধা গদ্য কবিতার বিপরীতে কাঠামোর শৈথিল্যতা আনায়ন। বিয়ং তথা রহস্যময়তায় যা বাস্তব কিংবা অলৌকিকতায় দুটোই বিশ্বাসী হয়ে লেখা। ধর্ম ও অধর্ম দুটোকেই গ্রহণযোগ্যতায় রাখা। এবং ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রগতি, দর্শন এর উপর নির্ভরশীলও। সুতরাং নিঃসন্দেহে এ এক অভিনব সাহিত্যধারা যার মধ্যে শতাব্দীর পালাবদলসহ বাংলা সাহিত্যধারাকে টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ সার্বজনীন বিজ্ঞানসম্মত গ্রহণযোগ্যের নির্ভরশীল তথা উত্তম যোগ্যতা রাখে। নতুন ধারার কবিতা বাঁক বদলের কবিতা। আধুনিক কবিতার দিন শেষ। সুধীন্দ্রনাথ, অমিয়,জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব, বিষ্ণু এইসব সংগ্রামী কবিদের ভাঙিয়ে খেয়েছে বিংশ শতাব্দী তা কী এখনও চলবে? এই মিলেনিয়াম বা শূন্য শতকে বা একবিংশ শতাব্দীতে? এখন চলছে পালাবদলের কিস্তি এইরূপ নতুন ধারার কবিতা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কবিতার কালিক বিচার খুব নির্মম। কিছু দশকের কবিতা লইয়া লম্ফ-জম্ফ দেয়ন বোকামি। নতুন ধারার কবিতা দেইখে পাঠক গলিয়া যায়। পাঠক তো তাদেরই মনে রাখে, যাদের কবিতায় নতুনত্ব রৈছে। যাদের নাম ঢাইকা রাখলেও বলা যায় এটা কার কবিতা। আপনাদের কবিতা কি এভাবে চেনা যায়? যায় না। কারণ,অনুসরণ ও অনুকরণ। চিরকালীন সাহিত্যে বাঁকের লেখকরাই শেষেবধি টিকিয়া গেছেন। সেই বাঁক বিট ও হ্যাংরির মতো নিস্ফলা ও স্বল্পায়ূ ছিলনা। এদের হোতারা তো আজ অন্ধকারে। টর্স মারলেও খোঁজ পাওয়া যায়না। ফাঁকা জাহানরেও পাওয়া যাইবো না। নাকি করছিল জড়ো একদল তরুণ। হুদামিছা, ওদের কোনো ইস্তেহার নাই, নাই কোনো রূপরেখা। বলি, ভাবনা ভুল, স্বীকার করতে না পারাটা আপনাদের সমস্যা। ১৯৩০-২০৩০ সময়টা এহন মানে সামনে । তহনের চিল্লাচিল্লি তো মিছা কামড়াকামড়ি।
করোনাকালীন বিশ্বে সৃষ্ট নতুন বাঁকই ‘নতুন ধারা’।
সব কালের তরুণরাই নতুনত্বে কাতর। হাইব্রিড নতুনে কাতর হলে আবার নির্ঘাত বিপদ। কারণ, এখানে এ কালে রেডিমেড কবিতার ছড়াছড়ি; কবিতা। মোজার্ট, বিটোফেন, রবীন্দ্র - নজরুলে ঢুঁ মারলে মনে হইবে, তাদের কিছু সৃষ্টি মানুষের নয়, ঐশ্বরিক। এখানেই তাদের বড়ত্ব!
এটা সত্য সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম খাটেনা। আধুনিকতার সূতিকাগার বিনির্মাণে টি এস এলিয়টের অবদান অনস্বীকার্য। সবাই প্রথা তো ভাঙবার পারেনা। যেমন প্রথা ভেঙে ওয়ার্ডস ওয়ার্থ, কোলেরিজ রোমান্টিসিজমতার জগত সৃষ্টি করছেন। আবার রোমান্টিকতার শেকল ভেইঙে শুরু হইছিল আধুনিকতা। সেই আধুনিকতার শেকল ছিঁড়ে মিশেল ফুকো প্রমুখেরা সাহিত্যে আনলেন উত্তরাধুনিকতা। শত বছরের পালাবদলে কবিতা, গল্প, গদ্য, স্থাপত্য কলা সবকিছুতেই আসবে পরিবর্তন । ক্রমাগত একই আঙ্গিক, ধরন, শৈলী কখনোই শতাব্দীর সীমা অতিক্রম করে নাই। আর সেই কাঙ্খিত পরিবর্তনের সময় মারীচক্র তাই জানান দিয়া গেছে। আধুনিক থেকে উত্তরাধুনিকতা হয়ে এখন নতুন ধারার আগমন।
মান্ধাতার আমলের ওই শীর্ণ ঘর-দুয়ার, গামছা-তবন, সায়া-ব্লাউজ আর কত? এহন নতুনের জয়গান। নতুন ধারার বাড়িটা ঠিক এমন আধুনিক আর উত্তরাধুনিক থেইকে ভিন্নতর। সাদামাটা তবে আধুনিকের থেইকে খরচাভার না হৈয়ে গাছপালায় থাকবে আবৃত। নির্জনতা, উন্মুক্ততা আর কোলাহলমুক্ততা। বাড়ির ফটক তুলনামূলক আধুনিক থেকে বৃহৎ। মানুষ চলাচলে একে অন্যের লগে যাতে হাতের কোনো স্পর্শ না লাগে। মোদ্দা কথা মহামারী বাধাগ্রস্ত হয়। স্পর্শ আশংকায় বেডরুমও হৈবে বড়। জরুরি না হইলে এসির দরকার নাই। ফ্যান বা প্রকৃতির বাতাসই যথেষ্ট। আধুনিকের মত কম জানালা নয়, বাতাস চলাচলের জন্যে বেশি সংখ্যক জানালা রৈবে। রৈবে ঝর্ণা, কিচেন ও বাথরুম আধুনিক স্টাইলে। গৃহের রংগে থাকবে অন্য চড়া রং থেকে সবুজের আধিপত্য। যাহা শান্তির প্রতীক। স্বাস্থ্যকর। ধূসর রঙও চলবে। গৃহের নকশা হবে প্রকৃতি বান্ধব। আধুনিক লেখকরা পরের ধানে মই চেলে একশো বছর রাজত্ব কইরেছে কিন্তু করোনা পরিবর্তিত পৃথিবীর সাহিত্য হবে এর বিপরীত। মারীচক্র সিড়ি বেয়ে করোনা ও প্রকৃতির অভিশাপে পৃথিবী যে তার চিত্র পালটাচ্ছ, জরাজীর্ণ আধুনিক মার্কা গতানুগতিক লেখকদের দৃষ্টি সেখানে ছানিকাতর। আধুনিকবাদীরা ভাবিতেছেন, নতুন ধারায় তাহারা আরও পরে করিবে। নতুন ধারার সফলতা দেখার জন্যে আর কত ঘাপটি মাইরে বইসে থাকবেন? লেট লতিফ হইয়া কিন্তু শিরোপা জেতা যাইবো না। তাতে কোনোভাবেই সেরা হওয়ার সম্ভব নয়। চতুর পাঠকের চোখে তাহারা আটকা পরতেছে। মাঠ ছাইড়া পলায়ন করিতেছে। কাজেই নতুন ধারা অদম্য এর শক্তি শেকড় দুর্বল নয়।
কবিতা কেবল ভাষাসর্বস্ব কঙ্কালমাত্র নয়। অনেকটা আপন অস্তিত্বকে খুঁড়ে তুলে আবিস্কার করে নেবার মতো এক মনোভাষা, মানগঠন, রুচিগঠন ও বাচনসৌন্দর্য সৃজন। শৈলীদক্ষতা ও গুনাবলি নতুন এবং সপ্রাণ। নতুন ধারার কবি অজ্ঞাত ফলের কাঁদি কাঁধে নিয়ে নুয়ে পড়ে। বস্তু ও বর্তমান লয়ে কবির খেলা প্রেম, দ্রোহ, দুঃখ, বেদনা, সুখবোধ, বিরহ এবং অভিমান। ধর্ম-অধর্ম এবং উৎসব ও অভিসার ফুটিয়ে তুলতে পারা যায় কবিতায়। কবি ফাহিম ফিরোজ এর ভাতঘুম নতুন ধারার প্রথম সোপান, অনবদ্য।পুরাতত্ত্ব, দর্শন, ঐতিহ্য আর বাংলা জাতির শেকড় তথা লোকজ ভাষার মিশেলে প্রাচুর্যময় এক শতাব্দীর বাঁক। কোথাও কোনো ঘাটতি নেই, বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত এই নতুন ধারার ইস্তেহার। আগামী একশ বছর সাহিত্যে টিকে থাকার মতে মহত্ত্বময়। বাংলা সাহিত্য জগত এখন লেজুড়বৃত্তির লেবাসে আটকা। ফলে অভাগা এই জাতির সাংস্কৃতিক মুক্তি রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে পদদলিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পরিবর্তনের স্বতঃস্ফূর্ততাকে যারা স্বীকার না করে নির্দিষ্ট তথা আধুনিক ছকের বা গন্ডির মধ্যে কবিতা লিখে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে কালের অতল গর্ভে।
নতুন ধারা দিছে তাই আধুনিকের মুখে ছাই!
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ
খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু
বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর
কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন
আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে বিক্ষোভ
নগর ভবনের দায়িত্বশীলদের অবহেলায় নগরবাসীর দূর্ভোগসহ ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে
গ্যাস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টা থাকবে না যেসব এলাকায়
চিন্ময় দাস ইস্যুতে উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নে মামলার তথ্য নেই বলে জানালো যুক্তরাষ্ট্র