নতুন ধারার কবিতার ভাষা
১৪ জুন ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:২৯ এএম
পৃথিবীর সবকিছুরই নির্দিষ্ট কিছু পরিচয় থাকে। থাকে চিহ্নিত করার মতো কিছু সহজবোধ্য বৈশিষ্ট্য। যেমনটি রৈছে নতুন ধারার কবিতায়।
কবিতায় লোকাল ভাষা
হুমায়ুন আজাদ বলেছেন; ( মানুষ ভাষা ব্যবহারের সহজাত শক্তি নিয়ে জন্ম নেয়, তবে পৃথিবীর সব ভাষা সে আয়ত্ত করে ফেলে না, সে আয়ত্ত করে সেই ভাষাটি, যে ভাষাসমাজে সে জন্ম নেয় এবং বেড়ে উঠে। )
উপভাষা অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হয়। যে যে অঞ্চলে জন্ম নেয় সে সেই অঞ্চলের উপভাষায় পটু হয়।
ব্লক ও ট্র্যাগার, ভাষার সমাজিক ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন; [ ভাষা হচ্ছে স্বেচ্ছাচারী (অৎনরঃৎধৎ) বাকপ্রতীকের সংশ্রয়, যার সাহায্যে কোনো সমাজিক গোত্র পারস্পরিক সহযোগিতা করে ]
নতুন ধারায় যেকোনো উপভাষা গ্রহণযোগ্য। আর প্রমিত ভাষার লগে এই উপভাষা অর্থাৎ লোকাল ভাষার কোমল মিশ্রণই নতুন ধারার প্রধান বৈশিষ্ট্য। লোকাল বলতে দৈশিক ( দেশীয় বা দেশে উৎপন্ন ), স্থানীয় অথবা আঞ্চলিক। নতুন ধারা দৈবিক, না কোনো ধার করা রীতি। তাই নতুন ধারায় স্ব-দেশীয় / আঞ্চলিক শব্দ রৈবে। ৭০-৮০% প্রমিত ভাষার লগে ৩০-২০% লোকাল ভাষার কোমল মিশ্রণ আবশ্যক। নয়তো নতুন ধারা হইবে না।
মূল ভাষা/লোকাল ভাষা
শুধু ভাষাতাত্ত্বিকরাই নন, চিহ্নতত্ত্বের অগ্রণী পুরুষ, সাহিত্য সমালোচক রোঁলা বার্থ লক্ষ্য করেছেন ভাষার শুরু কথোপকথন থেকে। অর্থাৎ বলা যায়, কথ্য বা আঞ্চলিক ভাষাই হচ্ছে ভাষার মূল কাঠামো। বস্তুত ভাষা ও উপভাষার মধ্যে কোনো আন্তর সহজাত পার্থক্য নেই।
প্রাচীন বাংলা ভাষার প্রচলন ছিলো ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তারপর মধ্যযুগের বাংলা ভাষা ১৩৫০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় আধুনিক বাংলা ভাষার। তারপর ভাষার গতিশীলতা এবং সময়ের স্রোতে তৈরি হচ্ছে পাঁচমিশালি ভাষার। আধুনিকতার ছোঁয়া বাঙালিকে অজান্তে তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। বাংলা শব্দ ব্যবহারে নিজেকে অশোভন মনে করে। মুখে নিতে অসন্তোষ। গর্ব করে ইংরেজি লইয়া গর্ব করে বাংলিশ লইয়া। যেটাকে সবাই সরেস বইলা মনে করে। যেমনটা মুসলমানদের একদল, বাংলাদেশে থেকে বাংলাদেশের মাছভাত খেয়েও গর্ব করতো এবং বলতো; তারা এদেশের নয়, তারা আরবইরানের। তাই মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম রেগে গিয়ে বলেছিলেন; (যারা বাংলায় জন্মে বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে তারা কেনো এদেশ ছেড়ে চলে যায় না? তারা চলে যাক। আজকের আধুনিক নগরীর লোকেরা বাংলা ভাষাকে জগাখিচুড়ি বানাইতেছে। মুখের উপর বইয়া যায় অনর্গল বাংলিশ শব্দ। আমরা ইহা মানতে নারাজ, তাই সৃষ্টি হৈছে নতুন ধারার। যা ফাহিমীয় ঢং নামে পরিচিত । নতুন ধারা আমাদের মূল ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমাদের ভাষায় বিদেশি শব্দের ব্যবহার চাই না। আমরা আমাদের ভাষা লইয়াই থাকতে চাই। তাই নতুন ধারায় অযথা ইংরেজী শব্দ বেমানান এবং লোকাল শব্দের ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন ধারায় আমাদের লোকাল শব্দের ব্যবহার আবশ্যক। প্রতিটা মানুষ তার মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মাতৃভাষা নিয়ে গর্ববোধ করে। প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাই একেকটি মাতৃভাষা। যার প্রতি আমাদের সবারই শ্রদ্ধা থাকা উচিত। এই আঞ্চলিক ভাষাকে সংরক্ষণ / রক্ষা করতে নতুন ধারা একটি অনন্য মাধ্যম, যার জুড়ি নাই
মুকারোফস্কি বলেন, ( কবিতার ভাষার কাজই আলাদা। কবিতার ভাষার কাজ হলো, অর্থের দিকে পাঠককে সোজাসুজি ঠেলে না দিয়ে, তার নিজের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা । তিনি এর নাম দিয়েছেন ধশঃঁধষরংধপব বা ভড়ৎবমৎড়ঁহফরহম। )
এবং ড. হায়াৎ মামুদ বলেন; ( শুধু যান্ত্রিক কৌশলেই কি হবে কবিতা ? তা নয়। নির্মাণ ও অর্থের শক্তি সৌন্দর্য দুইই পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি হবে, তবেই গড়ে উঠবে কবিতা ----- ভাষার কাব্যময় শরীর। )
মানুষের চাওয়া পাওয়া আজীবন এক থাকে না। মানুষ সবসময় ভিন্ন স্বাদের সন্ধান খুঁইজা লয়। গতকালের অনুভব আজকের মতো নয়। আজকের প্রকাশ পূর্বে যা প্রকাশ করেছি তার থেকে ভিন্ন। যুগ বদলেছে, সাহিত্যে জন্ম লয় নতুন সৃষ্টি। তাই হয়তো হুমায়ুন আজাদ বলেছেন; (কবিরা চিরকাল একই বাঁশি বাজান না। প্রতিটি নতুন সময় তাঁদের হাতে তুলে দেয় নতুন বাঁশরি।) সৃষ্টির নতুন ধারায় লোকাল শব্দ হিয়া টানে। অনুভবে আন্তরিকতা বাড়িয়ে দেয়। প্রমিত ভাষার লগে লোকাল ভাষার মিশ্রণ যেন শ্যামের হাতে বাঁশরি। যে বা যারা এই আঞ্চলিক ভাষা বিরোধী তাঁদের মুখে চপেটাঘাত। আসুন দেইখা লই লোকাল ভাষার মিশ্রণ কতটা স্পর্শী কতটা ছোঁয়াচে। নতুন ধারার জনক ফাহিম ফিরোজ সহ কয়েকজন লেখকদের কিছু কাব্যাংশ উল্লেখ করা হলোঃ
পান খায়। সর্বদায়ই/
আখের বচন! কিছু মানুষ সকাল-বিয়াল গিলে আর মরে
মিয়াভাই, আমি কিন্তু দৌড়ে পলাই।/
সমূহ ধারণা দিছে শিলবাড়ির তুলসী বৌদি।
ভাঁজ কথন / ফাহিম ফিরোজ
আমি তো যাইনি ভুলে/ শইল্লের রক্ত ঢাইলা যে স্বাধীনতা আনছি /
তার দামের পরিমাণ ছিল ঠিক কত!
ঘাগীর বিয়ে /রেশম লতা
গম্ভীর থুত্থুরে হিজল গাছের নিচে / একটু খাঁড়ায় উদ্বাস্তু ভাসমান জীবন /
তিলোত্তমা শহরের জমকালো ছদ্মবেশে/ লাঞ্ছিত হয় নারী ও ফুলের পাঁপড়ি /
আহা! ভিত্রে ভিত্রে কান্দে নাগরিক প্রেমিকের মন /
লেখা হয় সুন্দরের প্রতি নিষেধাজ্ঞা মর্মস্পর্শী বিবরণ!
তিলোত্তমা শহর/ কবির আহাম্মদ রুমী ;
যখন আমরা দলবেঁধে নেমে পড়ি হাঁটুজলে / সর্বনাশ হয় আলতা বর; / পানি কামড়ায়- পানি কামড়ানোর জ্বলনে জ্বলতে থাকে / হাত পা সহ বেবাক শরীল। / জ্বলন আর জ্বলন।
পানি কামড়ায় / চাষা হাবিব
ভাই সব! কও দেহি / আর কত মিথুন ডলাডলি ভ্রুন দংশন / প্রাসাদ চত্তরে, মলির খোয়াড়ে / প্লাস্টিক সার্জারি কইরা আর কত খেইল দেখাইবা ময়নার মা? / চামড়ার ভাঁজে দ্যাহো কত নিবন্ত বেলা / জৈন পাতা ডইলা দিছে / ভিতরে নির্মম বেদনা, / ডানা ঝাপটায় বিহঙ্গ পরাণ।
(অসমাপ্ত)
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তিলক ভর্মার বীরত্বে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়
তিলক ভর্মার বীরত্বে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়
সিটি অধিনায়কের নতুন ঠিকানা এখন এসি মিলান
ছাগলনাইয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত
মতলবে আদিবা হত্যা মামলার আসামী ইমনের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা
গাজাকে বাসোপযোগী করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসেই জনগণের আস্থা
টি-টোয়েন্টির বর্ষসেরা আর্শদিপ
দ্বিতীয় বছরের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানোর ঘোষণা কানাডার
এ দেশকে নিয়ে আমরা আর কাউকে খেলতে দেব না - মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান
গ্রামীণ ট্রাস্টের মালিকানায় আসছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
সৈয়দপুরে শ্যাইলার মোড় জামে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরন
জেলা বিএনপির আমৃত্যু সভাপতি খোরশেদ আলমের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা
সৌদির নতুন জাতীয় সংগীতের সুর করবেন মার্কিন তারকা
প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন : লুৎফর রহমান খান আজাদ
শেরপুরে আন্তঃউপজেলা ভলিবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে সদর উপজেলা চ্যাম্পিয়ন
সৈয়দপুরে শ্যাইলার মোড় জামে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ
আছরের নামাজে বিলম্ব হয়ে মাগরিবের নামাজ শুরু হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।
আ.লীগ সরকার জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের গল্প
বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত