ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সুখের বেলা

Daily Inqilab জোবায়ের রাজু

১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম

বাহিরে একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই কখন থেকে রান্নার কাজে ব্যস্ত পপি। বিরাম নেই একফোঁটাও। আজকে তানি আসবে। ভালো ভালো কয়েক পদের খাবারের পাশাপাশি থাকবে তানির প্রিয় টমেটো ভর্তা। এই খাবারের প্রতি তানির আগ্রহ বেশি। আজ তানি আসবে, একথা পরশুদিন সুমনকে জানাতেই সুমন বাজার সদাই করেছে। মাছ, মোরগ সহ নানান জাতের সবজি কিনলেও গরুর গোশত কেনার সামর্থ্য হয়নি সুমনের। পপিও স্বামীকে আর জোর করেনি। টমেটো ভর্তা তৈরী করতে করতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। তানির ফোন ভেবে পপি দৌড়ে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সুমনের কল। ওপাশ থেকে সুমন জানায় দুপুরে সে আজ বাসায় আসতে পারবে না। মালিক তাকে নিয়ে কুমিল্লা যাবে ব্যবসার কাজে। ফিরতে রাত হবে। শুনে পপির মনটাই খারাপ হয়ে গেল। মন খারাপ নিয়ে টমেটো ভর্তা প্রস্তুতে মনোযোগী হতে গিয়ে অতীতের অনেক স্মৃতি মনে পড়ল। বনেদি ঘরের মেয়ে সে। অথচ সুমনের মত দরিদ্র ঘরের ছেলেকে ভালোবেসে এক কাপড়ে চলে এল দুই বছর আগে। বাবা-মা জানিয়ে দিয়েছেন সুমন তাদের যোগ্য নয়। তাকে ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু পপির পক্ষে সুমনকে ত্যাগ করা সম্ভব নয় বলে একদিন সুমনের ঘরে চলে আসতে বাধ্য হয়। এখানে এসে পপি দেখে সুমনদের মানবতার জীবন যাপনের নমুনা। বেশ দরিদ্র তারা। যদিও সুমনের বাবা-মা প্রথমেই মেনে নিয়েছেন পপিকে। কিন্তু পপির পরিবারের কেউ একবারের জন্যও তার খবর নেয়াটা জরুরি মনে করেনি। ফেসবুকে পপি ছোট বোন তানির সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তানি যে তাকে খুব একটা পছন্দ করে না, পপি এসব বুঝত তানির মেসেজের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কিন্তু পরিবারের জন্য সব সময় তার বুকে জ্বলত বলে তানির একধরনের অবহেলাকে গায়ে না মেখে বরং যোগাযোগটা রাখত। প্রায় সে তানিকে এখানে আসার অনুরোধ করত আর তানির একধরনের অনীহা টের পেত।

অবশেষে অনেক আবদারের পর তানিকে রাজি করানো গেছে। শনিবার সে পপির শ্বশুরবাড়িতে আসবে বলে কথা দিয়েছে। তবে বাবা-মা সেটা জানবে না, জানলে তার এখানে আসা হবে না।

আজ সেই শনিবার। দুপুরে তানি এল। বৃষ্টিতে বেশ সমস্যা হয়েছে বটে। অনেকদিন পরে বোনকে দেখে অঘোরে কাঁদে পপি। এতে অবশ্য তানির মন গলল না। সে বরং বড় বড় চোখে পুরো ঘরের আনাচ কানাচ দেখছে। ঘরের পুরনো আসবাবপত্রের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোদের সোফা নেই? ফ্রিজটাও এত পুরনো। সব রুমে সিলিংফ্যান নেই কেন? এ কোন জায়গায় এসেছিস আপা? তানির প্রশ্নে পপি চুপ হয়ে গেল। তানি হয়ত অপমানের ছলে প্রশ্নগুলো করেনি, কিন্তু পপির কাছে এসব প্রশ্ন শুনতে ভালো লাগছে না। দুপুরে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে যখন তানিকে ভাত খেতে বসতে বলে পপি, তানি অবাক হয়ে বলল, মানে কি? আমি নিচে বসে খেতে পারিনা যে তুই তো জানিস। তোদের ডাইনিং টেবিলও নেই? এ কোন পরিবারে এসেছিসরে? পপি ফিসফিস করে বলল, আস্তে বল, সবাই শুনতে পাবে। তানি বিরক্ত চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর কোনোরকম কষ্ট করে মেঝেতে বসে ভাতের লোকমা মুখে দিতে দিতে বলল, ‘এখানে আর কোনোদিন ডাকিস না আমায়। এমন পরিবেশ জানলে আসতাম না।’ বিকেলে যখন বোনের হাতের চা খাচ্ছিল তানি, হঠাৎ পপির রুমের এক কোণের টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়তে শুরু করে দেখে তানি বলল, ‘তুই আমাদের রাজমহল ছেড়ে এই কুঁড়েঘরে এসে এসব সমস্যার সঙ্গে যুদ্ধ করছিস? মাথায় তো এত গোবর দিন দিন কোথা থেকে আসছে?’ তানির তিরস্কারময় কথাগুলো শুনে চোখে পানি চলে এল পপির। কাঁপা গলায় বলল, ‘তবু আমি এখানে সুখে আছিরে। আমাদের বাবার হয়ত রাজপ্রাসাদ আছে, কিন্তু সুখ নেই। বাবা-মায়ের রোজদিনের ঝগড়াঝাঁটি। আমাদের জয় ভাইয়া মদ খেয়ে প্রতি রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরে। ছোট ভাই অপূর্ব মার্ডার কেসের আসামি বলে প্রায়ই রাতে বাড়িতে পুলিশ এলে প্রতিবেশীদের কাছে আমরা আরো বেশি সমালোচিত হই। তোর মেজাজ খারাপ হলে শোকেস থেকে থালা বাসন বের করে একনাগাড়ে ভাঙতে থাকিস। কিন্তু এখানে এসব নোংরা কেলেঙ্কারি নেইরে। এখানে হয়তো অভাব আছে, কিন্তু দিনশেষে সুখ পাওয়া যায়। যেটা আমাদের বাবার রাজপ্রাসাদে পাওয়া যায় না।’

পপির কথা শুনে তানি তাচ্ছিল্যে বলে, ‘আর জ্ঞান দিতে হবে না। চালের ফুটো দিয়ে এখন সুখের ঘরে যে বৃষ্টির পানি পড়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল আছে? আগে ওটা সামাল দে, তারপর এত বড় বড় লেকচার দিস।

তানির কথা শুনে পপির চোখ ভিজে গেল। ভেজা চোখ মুছে সে একটা বালতি এনে টিনের ফুটো ভেদ করে নামা বৃষ্টির পানি জমা রাখতে বালতিটা সেই জলধারার নিচে রাখতেই টের পেল বালতির তলানিতে ছিদ্র। সেটি দেখে তানি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, কত বড় ঘরে পালিয়ে এসেছিস। দেখ, এদের বালতির তলাটাও ফুটা! তানির কথায় আন্দোলিত হয়ে উঠতে চেয়েও চুপসে গেল পপি। আজ তানি এখান থেকে চলে যাবার পর সে তানিকে সোজা ব্লক করে দেবে।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা