জাদুর দেশ

Daily Inqilab ফাত্তাহ তানভীর রানা

৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪০ এএম | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪০ এএম

মিরাটের রাজা নবুচন্দ্র সৌখিন মানুষ। তিনি নৃত্যকলা, সংগীত, জাদুবিদ্যা, ক্রীড়া খুব পছন্দ করতেন। বিশেষ কারণ বশত: তাঁর মনে হল হরিণের মাংস খাবেন। কারণ, কাউকে আপাতত বললেন না। কিন্তু, রাজ্যময় হরিণ নেই। হরিণ গেল কোথায়? অনেক খোঁজাখুজি করা হলেও হরিণ পাওয়া গেল না। শিকারীরা বলছেন বনে হরিণ কম।
দায়িত্ব দেয়া হল কোতোয়ালকে। কিছুদিন পরে কোতোয়াল একটা ভেড়া ধরে নিয়ে এল। ভেড়া দেখে তো রাজামশাই তো রেগেই আগুন!
: কি নিয়ে এলি গাধা?
: এটা হল আসল হরিণ হুজুর। জাদুকর এটাকে ভেড়ি বানিয়ে রেখেছে। জাদুকর নিজেই শুধু হরিণের মাংস খাবে। আর কাউকে খেতে দেবে না। তাই তো সে!
: জাদুকর কোথায়? নিয়ে আয় তাকে।
: মহারাজ জাদুকর পলাতক। আমরা তাকে খুঁজে বের করার কাজ শুরু করেছি। তাকে পেলেই আমরা হরিণ পেয়ে যাব। মানে ভেড়াকে হরিণ বানিয়ে দেবে।

: রাজ্যময় এত জাদুকরের মধ্যে একে কেমনে খুঁজে পাবি?
: মহারাজ জাদুকরদের ধরে ধরে জিজ্ঞেস করতে হবে কারা আসলে হরিণ নিয়ে খেলছে। আর, আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। চিন্তা করবেন না হুজুর, আমাদের ওরা বোকা বানাতে পারবে না; যতই জাদু জানুক।

রাজামশাই বড্ড চিন্তায় পড়ে গেল। রাজহেকিমকে খবর দেয়া হল হরিণের মাংস ছাড়া অন্য পশুর মাংস দিয়ে চিকিৎসা চলবে কি না জানার জন্য। বিধিবাম! রাজহেকিম যা বললেন, তা শোনার জন্য রাজামশাই প্রস্তুত ছিলেন না। শুধুমাত্র মায়া হরিণের মাংসই চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যাবে।

রাজ্যময় সবাই জাদুকরকে খোঁজ করতে লাগলেন। ঢেড়া পিটিয়ে এনামও ঘোষণা করা হল। তবুও কোন জাদুকরের খবর পাওয়া গেল না। জাদুকরেরা জাদু দিয়ে লুকিয়ে রয়েছে। কেউবা জাদু জানলেও স্বীকার করছে না, অনেকে পেশাও বদল করেছে।

কেরালার সাপের মগজ আর আগ্রার বানরের মাংস প্রস্তুত। শুধু চাই মায়া হরিণের চোখের মণি। হরিণের মাংস খাবেন রাজা মশাই আর চোখ দিয়ে তৈরি হবে অমরত্ব লাভের সুধা! হা, হা, হা,,,,,,!

শর্ত হচ্ছে ১৯১ দিনের মধ্যেই তৈরি করতে হবে হালুয়া। না হলে বানরের মাংস, শূকরের তেল আর সাপের মগজ নষ্ট হয়ে যাবে! দেখতে দেখতে ৪০ দিন পেরিয়ে গেল তবুও জাদুকরের সন্ধ্যান মিলল না। রাজা নবুচন্দ্র মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন। এদিকে সেই ভেড়া যতœ করে বন্দী করে রাখা হয়েছে জাদুকরের জন্য।
রাজ্যময় সাধারণ মানুষও চিন্তায় পড়ে গেল। কেউ কেউ গোপনে হাসাহাসি করতে লাগলো। জোরে আলোচনা করলে কোতোয়াল গর্দান নেবে।
হরিণ না খুজে রাজা নবুচন্দ্র জাদুকরের খোঁজ করে! হরিণ তো তার সভাসদ বর্গ শিকার করেই শেষ করে দিয়েছেন। যদিও রাজ্যব্যাপী পশুশিকার নিষিদ্ধ ছিল। তব্ওু রক্ষক হয়েছে ভক্ষক। এখন বিচার করবে কে? সভাসদবর্গ প্রমোদ ভ্রমণে হরিণ শিকার করেছেন, তা প্রকাশ্যেই করেছেন; বাচ্চা হরিণকেও ছাড় দেননি। রাজামশাইয়ের অগোচরে বিষয়টি ঘটেছে, একথা সাধারণ প্রজারা মানতে নারাজ।
: অবশিষ্ট কিছু হরিণের বিচরণ সুন্দরবনে দেখা যায় বলে শুনেছি। কিন্ত, সেটা তো অন্য রাজ্য।
: রাজামশাই চাইলে বন্দোবস্ত করতেই পারেন।
: তা সভাসদবর্গ আয়োজন করছে না কেন?
: ছাড় তো ভাই, এসব বড় মাথার চিন্তারে।
: যে চিন্তা আমাদের মাথায় ধরে; তা বড় মাথার লোকেরা কি করে! বড় মাথা হল কি করে?
: ধুর ছাই বাদ দে। মাথায় পচন ধরেছে!
: যাই বলিস শুধু জাদুকরের খোঁজ নিলে সময় চলে যাবে কাজ হবে না।
: হরিণ খূঁজলে হরিণ পাওয়া যাবে। রাজামশাইকে ওরা ভুল বোঝাচ্ছে; তিনি বুঝে যাচ্ছেন!
: কেউ ঘোল খেয়ে রাজামশাইকে ঘোল খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন! খা তোরা এক টেবিলেই খা!
: সুন্দরবনে হরিণ মিলবে বটে, কিন্তু, সেটা তো পুরী রাজ্যর পাশেই!
: হ্যাঁ ; পুরী আমাদের হরিণ দেবে না।
: নাজির সাহেব; আপনি কথা বলে দেখবেন?
: উজির হুজুর গত বছর আমরা পুরীর সাথে যা করেছি ভুলে গেছেন!
: একমাত্র রাজা নবুচন্দ্র বলতে পারেন।
: কি রাজজোতিষী আপনি কি বলেন?
বেশ কিছু সময় চুপ থেকে মুখ খুললেন।
: দূর্যোগের ঘনঘটা! বলেই আবার চুপ।
: কোতোয়াল জানে না হরিণ নেই? আর, কোথায় পাওয়া যেতে পারে।
: কোতোয়াল জানে যুদ্ধ করতে। সবাই যদি সব কিছু জানতো!
: কোতোয়াল জাদুকর খুঁজে সময় নষ্ট করছে।
: রাজা নবুচন্দ্রকে গিয়ে বলুন উজির হুজুর।
: চুপ থাকেন সভাষদবর্গ। রাজা মশাই শুনে ফেললে গর্দান যাবে! এসব আলোচনা এখানে আর নয়। আজ উঠুন সবাই। উজির সাহেব স্থান ত্যাগ করলেন। য্যবার সময় পেছন ফিরে শুধু বললেন, চন্ডীগড়ের গুপ্তঘাতকদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নেই। আর, নাজাফগড়ের রাজপুত্র সে তো হুমকি দিয়েই রেখেছে।
: আর আসলেই এই চিকিৎসা পদ্ধতি কতটা ফলপ্রসূ! কে বলতে পারবেন। যোগ করলেন একজন বয়স্ক বিজ্ঞানের শিক্ষক।
এক দিন হন্তদন্ত হয়ে কোতোয়াল এক ব্যক্তিকে বন্দী করে রাজামশাইয়ের কাছে নিয়ে এল। বন্দী ব্যক্তিকে জাদুকর বলে সবার কাছে তুলে ধরা হল।
: মহারাজ সমস্যা হচ্ছে ব্যাটা ধুরন্ধর। কিছুতেই স্বীকার করতে চাইছে না সে জাদুকর! দেখাচ্ছি মজা।
: একটু সহযোগিতা কর ভাই। ভেড়াকে হরিণ বানিয়ে দাও।

: রাজামহাশয় আমি জাদ-টাদু জানিনে। শুধু মানুষকে খুশি করার জন্য মাঝে মাঝে ভেল্কি খেলা দেকাই। আমারে ভুল করে ধরে নিয়ে এয়েচে। আপনি আমারে বাচান হুজুর।

: দেখেছেন সভাসদবর্গ কত বড় চতুর! রাজামশাই আপনি বলুন এর শাস্তি কি হতে পারে?
সবাই একে অন্যর মুখপানে চেয়ে রইলো। রাজামশাই সভা ত্যাগ করলেন।

নিরপরাধ ভেল্কিবাজ ব্যক্তিকে ফাঁসি দেবার পর থেকে রাজামশাই অন্য মনস্ক থাকেন। তার অমরত্ব লাভের চিকিৎসা গ্রহণের সময় প্রায় শেষ। কোতোয়ালের পরামর্শ মোতাবেক রাজ্যময় নতুন করে আসল জাদুকর খোঁজার কাজ শুরু হল। এদিকে রাজামশাইয়ের রাজ্য চালানোয় মন নেই, শুধু হরিণের চিন্তা। উজির সাহেবের নেতৃত্বে এক দল হরিণ খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অন্য দল কোতোয়ালের সাথে জাদুকরের পেছনে পড়ে রইলো। রাজামশাইয়ের বিদেশ পরামর্শক কূটনীতিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন যেন অন্য রাজ্য থেকে হরিণ আনা যায়।

আগ্রার সম্রাটের সেনাপতির তলোয়ারের কোপে মিরাটের রাজপুত্র চৌহানের মস্তক দ্বিখ-িত! ঘুম ভেংগে গেলে রাজামশাই মিলিয়ে নিলেন মোঘল সম্রাট রয়েছে, তবে তার আগের জৌলুস আর নেই। কাজের চিন্তাগ্রস্ত হবার কারণ না থাকলেও অন্যান্য ছোট রাজ্য রয়েছে বিদ্রোহী হবার মতো। সেসব রাজনৈতিক বিষয়ে পরে ভাবা যাবে। এখন শুধু রাজা নবুচন্দ্র অমরত্ব লাভের চিকিৎসার কথা ভাবতে লাগলেন। রাজামহাশয়ের শরীর দিন দিন খারাপ হতে লাগলো। আর, চিকিৎসার সময়ও ফুরিয়ে আসলো।

(বি: দ্র: কল্পনাপ্রসূত গল্প। কারো সাথে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত।)


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কবিতা
নষ্ট সময়
সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ : বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগের কারিগর
কবিতা
বাসের টিকিট ও মফিজের ভাবনা
আরও
X

আরও পড়ুন

রামুতে সা,কা চৌধুরীর বিরোদ্ধে মানবতা বিরোধী সাজানো মামলায় স্বাক্ষ্যদানকারী আটক

রামুতে সা,কা চৌধুরীর বিরোদ্ধে মানবতা বিরোধী সাজানো মামলায় স্বাক্ষ্যদানকারী আটক

রাজবাড়ীতে ছেলে-পুত্রবধূর নির্যাতন ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে মায়ের আত্মহননের চেষ্টা

রাজবাড়ীতে ছেলে-পুত্রবধূর নির্যাতন ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে মায়ের আত্মহননের চেষ্টা

পাঁচবিবিতে ১লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা

পাঁচবিবিতে ১লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা

দাউদকান্দিতে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে নিহত ২

দাউদকান্দিতে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে নিহত ২

ড. ইউনূস এর অনুরোধেই কি ট্রাম্প ৯০ দিন পেছালো শুল্ক আরোপ!

ড. ইউনূস এর অনুরোধেই কি ট্রাম্প ৯০ দিন পেছালো শুল্ক আরোপ!

মেঘবালিকা'য় দর্শক মুগ্ধ,ভিউ সাড়ে ছয় মিলিয়ন

মেঘবালিকা'য় দর্শক মুগ্ধ,ভিউ সাড়ে ছয় মিলিয়ন

রায়পুরে দু'গ্রুপের সংঘর্ষ-হত্যার ঘটনায় মামলা, বিএনপির ১৫ নেতাকর্মী বহিষ্কার

রায়পুরে দু'গ্রুপের সংঘর্ষ-হত্যার ঘটনায় মামলা, বিএনপির ১৫ নেতাকর্মী বহিষ্কার

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় ৮শ' জনকে আসামী করে মামলা

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় ৮শ' জনকে আসামী করে মামলা

সারা দেশের ন্যায় কলাপাড়ায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

সারা দেশের ন্যায় কলাপাড়ায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

ভারতের মত অন্য কোনও দেশ বাংলাদেশের এতটা মঙ্গল চায় না : জয়শঙ্কর

ভারতের মত অন্য কোনও দেশ বাংলাদেশের এতটা মঙ্গল চায় না : জয়শঙ্কর

সাভারে চাঁদা না পেয়ে গুলি ছুড়ে খেয়া ঘাটের নৌকা লুট, অস্ত্র হাতে ভিডিও ভাইরাল

সাভারে চাঁদা না পেয়ে গুলি ছুড়ে খেয়া ঘাটের নৌকা লুট, অস্ত্র হাতে ভিডিও ভাইরাল

আনোয়ারায় এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৫ হাজার ৩শ পরীক্ষার্থী

আনোয়ারায় এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৫ হাজার ৩শ পরীক্ষার্থী

কিশোরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতায় এসএসসি পরীক্ষায় বসতে পারেনি ১০ শিক্ষার্থী

কিশোরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতায় এসএসসি পরীক্ষায় বসতে পারেনি ১০ শিক্ষার্থী

ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ, বন্ধ ইন্টারনেট

ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ, বন্ধ ইন্টারনেট

সউদীতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

সউদীতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্ক করল চীন

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্ক করল চীন

‘খুব ভালো চুক্তি’র ভবিষ্যদ্বাণী, চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

‘খুব ভালো চুক্তি’র ভবিষ্যদ্বাণী, চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

নাইটক্লাবের ছাদ ধসে মারা গেলেন গায়ক রুবিও, নিহত বেড়ে ১৮৪

নাইটক্লাবের ছাদ ধসে মারা গেলেন গায়ক রুবিও, নিহত বেড়ে ১৮৪

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি দূতাবাস অভিমুখে মার্চ ফর প্যালেস্টাইনে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি দূতাবাস অভিমুখে মার্চ ফর প্যালেস্টাইনে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

সড়কে ছিল না যানজট, পরীক্ষার্থীদের মুখে ছিল স্বস্তির হাসি

সড়কে ছিল না যানজট, পরীক্ষার্থীদের মুখে ছিল স্বস্তির হাসি