গফুর স্যার ও আমি
০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
১৯/০২/২০১৪ সন্ধ্যায় নজরুল একাডেমী মিলনায়তনে ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশন স্যারের সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করে। ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান এর সভাপতিত্বে ও মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রউফ। ক্বারী মোহাম্মদ ই্উসুফের তেলাওয়াত এবং মাহবুবুল হক এর শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন মহাপরিচালক এজেডএম সামশুল আলম, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী, কথাশিল্পী অধ্যাপিকা চেমন আরা, বিশিষ্ট কলামিস্ট মোবায়েদুর রহমান, কবি ম. মিজানুর রহমান, তমদ্দুন মজলিশের সভাপতি প্রফেসর আবদুস সামাদ, সেক্রেটারী শাহাবুদ্দিন খান, কবি আবদুল মুকিত চৌধুরী, নজরুল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান, কবি আশরাফ আল দিন, সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, ড. আ্ক্তারুজ্জামান, কবি আতিক হেলাল, অধ্যাপক আবদুল গফুরের মেয়ে ডা. সাবেরা গুলরুখ, পুত্র সাংবাদিক মোস্তফা তারিখ আল বান্না ও মোস্তফা মাসুম আল বান্না, শাহ আবদুল হালিম, কবি সাদিয়া চৌধুরী পরাগ, ওয়াহিদুজ্জামান বাচ্চু, কবি মিহির কান্তি ভৌমিক। অনুষ্ঠানের সম্বর্ধিত গুণীজন ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুরকে ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশন পুরস্কার-২০১৩ প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অর্থ মান নগদ ১০,০০০/- টাকা, একটি বোরদা (চাদর) এবং একটি সম্মাননা সনদ তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে স্ত্রী রাবেয়া খাতুন সহ তাঁর ছেলে মেয়ে ও সন্তান সন্ততি সহ আতœীয় স্বজনকে পরিচয় করিয়ে দেন অধ্যাপক আবদুল গফুর।
২০১৪ সালে প্রকাশিত স্যারের সম্বর্ধনাা স্মারকে আমার একটি লেখায় তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার কালের কথা’ যেটি প্রকাশিত হয়েছে সেটিকে প্রথম খ- ধরে এর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খ-ও আসতে পারে বলে মন্তব্য করি। তাঁর লেখাটি পাকিস্তান আমলের একটি পর্যায় পর্যন্ত হয়েছে। ভাষা আন্দোলন, তমদ্দুন মজলিশে তাঁর আজ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন, সরকারি চাকুরী জীবন, অধ্যাপনা জীবন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন জীবন, ইনকিলাব জীবন, রাষ্ট্্রীয় উত্থান-পতন ও রাষ্ট্র নীতির বিবর্তন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ইত্যাদি মিলিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত তাঁর আত্মজৈবনিক লেখা জাতির এক প্রত্যাশা। তিনি এখন লিখছেন কীনা আমি জানি না। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর শরীরের অবস্থা খুব ভাল যাচ্ছে না। বিনীতভাবে অনুরোধ রাখবো তিনি যেন তাঁর আত্ম জৈবনিক লেখার ধারা জারী রাখেন। নিজে সরাসরি না পারলেও যদি সম্ভব হয় কাউকে দিয়ে শ্রুতি লিখনের মাধ্যমে হলেও তা জারী রাখা দরকার। তাঁর লেখা কলামগুলো দিয়েও উৎকৃষ্ট মানের বই হবে; যেগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে পথ দেখাবে। এ কাজটিও দ্রুত সম্পাদিত হওয়া দরকার। আমি জানিনা স্যার এ বিষয়ে আর কতদূর কাজ করেছিলেন। তবে সে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশন ‘ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর স্মারকগ্রন্থ’ নামে অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমানের সম্পাদনায় একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করে। যাতে গফুর স্যারের পরিবারের সদস্যদের লেখা ছাড়াও অনেকের লেখা স্থান পায়। সে সংকলনে আমারও একটি লেখা স্থান পায়।
নজরুল একাডেমি মিলনায়তনে গফুর স্যারের ৯১তম জন্মদিনে আমার স্মৃতিচারণ। ১৯-২-২০২০।
গফুর স্যারের ফোন
ইনকিলাবে ২০০৪ এর দিকে লেখালেখি প্রায় বন্ধ করে দিলেও মাঝে মধ্যে পত্রিকা অফিসে যেতাম। আবদুল গফুর স্যার, এস. এ. সিদ্দিকী, মাওলানা রুহুল আমিন খান, মুন্সী আবদুল মান্নান, মোবায়েদুর রহমান, ইউসুফ শরীফ, শেখ দরবার আলম, মুন্সী ফজলুর রহমান, হাসনাইন ইমতিয়াজ, আবদুল হাই শিকদার, আতিক হেলাল, লুৎফুল খবীর, উবায়দুর রহমান খান নদভী, ফাহিম ফিরোজ, জামান সৈয়দী, কণা, মাহমুদা এদের সাথে দেখা করার জন্য কোন কোন সময় পত্রিকায় যেতাম। ইনকিলাব সহ সব পত্রিকায় এক পর্যায়ে লেখালেখি কমিয়ে দিলেও গফুর স্যার কিন্তু আমাকে ভূলেন নি। মাঝে মধ্যে বিশেষ করে ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সংখ্যায় এবং ঈদ সংখ্যা ও বিশেষ সংখ্যাগুলোতে আমার লেখা চেয়ে তিনি নিজে ফোন করতেন। খোশহাল জানার পর তিনি তাঁর কাঙ্খিত একটি লেখা কত তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে নির্দেশনা দিয়ে আমাকে অনুরোধ করতেন। গফুর স্যারের এ রিকুয়েস্টকে আমি নির্দেশের মর্যদায় প্রতিপালন করতাম। এ ধারা ২০১৮ পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো।
তমদ্দুন মজলিসে স্যারের সান্নিধ্য
স্যারের সাথে পত্রিকার অফিসের যোগাযোগের বাইরে আরেকটি সংযোগ ছিলো তমদ্দুন মজলিশের নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া, তাদের ওয়েব সাইটে নানা বিষয়ের আলোচনায় অংশ নেয়া যেগুলো ইউটিউভ আকারে বিদ্যমান। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখ নজরুল একাডেমি মিলনায়তনে তমদ্দুন মজলিস কর্তৃক অধ্যাপক আবদুল গফুরের ৯১তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমি যে বক্তব্য রাখি তা ই্উটিউভে রয়েছে ( https://www.youtube.com/watch?v=mijC58aszSo&t=19s )। এরপরও স্যারের সাথে অন লাইন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। গত ২৭-৯-২০২৪ বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে গফুর স্যার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। রাত সারে আটটায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্তানে দাফন করা হয়। তিন বহু গ্রন্থ প্রণেতা একজন লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংগঠক, ভাষা সৈনিক সহ বহু গুণের অধিকারী। দীর্ঘ ৯৫ বছরের হায়াতে তিনি ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশ আমল এবং সর্বশেষ গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভুত্থান সবকিছু দেখে গেছেন। আল্লাহপাক আমাদের জাতির অভিভাবকতুল্য অধ্যাপক আবদুল গফুরকে পরপারে শান্তিতে রাখুন। কবি কায়কোবাদের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে “ঐ মন্দাকিনী তীরে, সুরভী সুধার নীড়ে, সারস মড়ালগুলো আছে যেথা ফুটে, জীবনের পরপারে শানবান্দা ঘাটে।”ঐ খানেই যেন আবার স্যারের সাথে দেখা হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে অধ্যাপক আবদুল গফুর স্যারের জানাজা শেষে পুষ্পশ্রদ্ধা নিবেদন।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি
ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান
আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল
ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ
ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা
কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু
হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ
শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯
লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা
ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ
যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়