ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২১ কার্তিক ১৪৩১

লু বেহালা এবং আমি

Daily Inqilab রেশম লতা

০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম

লু’র জল এত বেশি যে কিছু অইতে না অইতেই খালি গরগড়ায়া পড়তে থাহে। পড়তো তো তারো। হেরলাইগা পার্থক্য বুঝি না। আসলে চোখের জলের পার্থক্য করন যায় না। টগবগে যুবক পাহাড়ি লু। খাসিয়া সম্প্রদায়। একমাত্র মুসলিম জাতি। ওর পুরো নাম মনে নাই। থাকবার কথাও না। কি সব ঘাঁইঘুঁই নাম এরচে ইংরাজিই ভালা। যদিও ইংরাজিরে তালাক দিছি। দিছিলাম তো ঝুনারেও। পাক্কা ঘাঘু। ধরবার পারি নাই। ঘাঘামু। পুরাই খেলোয়ার। মাঠের না। দাঁত, জিহ্বা, কলম আর তবলার। এইসব আঁইটা কলার গীত এহন থামাইলাম। আগে কই লুর গপ্প। পাহাড়ে যার প্রেম তার চেয়ে বেশি আমার লগে। আমি তার লগে কি পাছে হেইডা সে দেহেনা। দেখতে চায়ও না। খালি চায় আমার লগে সারা জীবন কাটাইতে। বুঝাইছি, বহুৎ। তাও বুঝে না। আমার আগেকার কাটানো দিন রাইতের সব কিছু হুনানির পরেও সে ছাড়তে চায় না। আমারে। মাওশ, সালশি, নাউতি, টগ্গি আর মান্বিজইয়ের কত ন্যাংটা কাহানিই না কইলাম তাও আমারেই চায়। বুচ্ছি ক্যান চা। বুঝি কাঁচা রক্তের বয়েস তাই এমুন। তয় লালসাহীন। ভাল্লাগে। ঝাঁপ দিতে মুঞ্চায়। দেই নির্ডরে। ওহ্হো অগভীর নেশায় আমি বেবাক আন্ধার দেহি। পুরা নেশাও আমারে কখনো কাঁত করবার পারে নাই। আর লু’র ত নাক টিপলে দুধ বায়রয়। আমারচে পাঁচ বসন্ত কম। আসিলাম জাগনা। চোখ খুইলা ঘুমাইতাম। যেইদিন চোখ আটকায়া ঘুম দিছিলাম দেখছি দুই মুখা বেউসাপের চাইড্ডা বাইচ্চা হেইদিনই ধরাডা খাইছিলাম। যাউজ্ঞা। কপালে ঝাডা দিয়া বাঁইচা উঠছি। হেরফরে আর ঘুমাই নাই। এহনো না। লু ঘুম পাড়ায়বার দায়িত্ব নিতে চায়। দায়িত্বের চুপায় লাগাইছি তালা। আগের অভ্যেসে দিছি কস্টেপ। লু চুপ। ফ্যালফ্যাল চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে। কী সব আকুতি করে। আমি বুঝি না। মাথা ভরা লম্বা চুল। ঘাড় ছাড়িয়ে পিঠে। এ নিয়া মশকরা করি। লু কয়, দেখো এ চুলে দেশ সাফ হবে। ওর কথায় সন্দেহ লাগে। ভাবি, পাহাড়িয়াদের কখনো আধ্যাত্মিক শক্তি পেতে দেখিনি ত। সামান্য যুবক। আমাকে ভালোবাসতেই যার এত কাঠখড় পুড়াইত হয় সেই তার মুখে দেশ সাফ! ওরে বাপরে বাপ। যাউজ্ঞা। বাপের দাদা নালিয়ার মুড়া। এই বুড়ায় আমার নাম দিছে তানশি, বেহালা বাজাইত। আমিও বাজাইতাম। দেশ বিদেশে কনফারেন্সে গেছি। কনসার্ট বেশি ওপার থাইকা আইত। আমি না করি নাই। যাই, দেহি, বাজাই। আহা আমার সাধের বেহালা। কতইনা চাইছি। বাজাইতে। জীবনের বেহালা। আর পারলামনা! আগেরডা বাজাইত তবলা। দারুণ তাল। রের্কড আছে ভুরিভুরি। ঘর ভর্তি সম্মাননা কাগজ। থাহুক। আর ওতে চোখজ্বলা নাই। আছিলো তহন যহন তার লগে কম্পিটিশন হইত। দুজনে সমানে সমান। তাও তার বেশিই নাম ডাক। হিংসা করি নাই। বেহালা পুড়ায়া দিছি। এহন খালি তারই রাজত্ব। থাহুক। বাজাক। আগের অভ্যেসে দিছি কস্টেপ।

আইজকাইল শহরে কী সব চলছে। আন্দোলন নাকি গণঅভ্যুত্থান। এসবের খোঁজ রাখতে ইচ্ছে করে না। লু রাজপথে। কইছি ওসবে তোমার কি লাভ!

কাঁচা রক্তের বয়েস কোনো যুক্তি মানে না। আমারেও মানে নাই যদিও আমি তারচে পাঁচ বসন্ত বড়। নীল মার্বেলের ছোট ছোট চোখ দুটো নিয়ে দিনরাত রাস্তায়। ১ মাসের জন্য ধার নিয়ে গেছে আমার ফোনের পাওয়ারব্যাংক। যাওনের আগে কইছে যদি ফিরি তবে একটা সাদা পায়রা দিব। ওর ভাঙা ভাঙা বাংলা ভাষার মিশ্রিত উচ্চারণ আমায় মুগ্ধ করে। অবাক হই। এত সাহস ওর আসলো কোত্থেকে? আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলতেই নাকি ওর ২ দুবছর লেগেছিল। আর ছোঁয়া? এখনো তো না। লু আমাকে কখনো ছোঁয়নি। ছুঁয়তে চায়নি নাকি আমিই ছুঁইতে দিইনি এই অযথা ভাবনাটা এখন আড়াল থাকুক। থেকে থেকে জীবনের উঠানামায় আমি খুব ক্লান্ত। পূর্বেকার রঙিন দিনেরা খালি উঁকি দিতে চায়। ধোঁয়ার শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। হাতরায়, চোউক বুলায়। শূণ্য। কেবল সুড়কির স্তুপ। ধূপগন্ধী জীবনটা কেমন জউলি হয়ে গেছে! আফসোস নেই। যারে পুষছি বিনিময় ছাড়াই কর্জ দিছি। ফেরত চায় না কিছু। মাফ দিলে নাকি আকাশ হয়। আমিও হই। আকাশ। লু’ র মেসেজে আৎকা চেতনা ফিরে। প্রিয় তানশি, একটু পর হতে তুমি মুক্ত। তোমাকে ছোঁয়ার সাধ আমার সাধ্যের বাইরে। একটু পর হতে তুমি মুক্ত। তোমাকে সাদা পায়রা দিয়ে গেলাম। একটু পর আকাশে উড়বে। চেয়ে দেখো। হাত বাড়িয়ো। ঠিক ডানায় এসে বসবে। চুমু খেয়ো। ভেবো আমায় দিলে। তোমারচে পাঁচ বসন্ত কম লু’র নীল মার্বেল চোখে চুমু খেলে। একটু পর হতে তুমি মুক্ত। আমার বুক এফোঁড়ওফোঁড় করে একটা গুলি চলে গেছে। এবার আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। পাহাড় তো আগেই ছেড়েছি তোমার জন্য এবার তোমাকে ছাড়ছি তোমার বেঁচে থাকার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমার রক্তে মাখা টি-শার্টটা আগলে রেখো। প্রচন্ড ভালোবাসি তানশি। আমার হলের ৩৬০ নাম্বার রুম থেকে বেহালাটা নিয়ে যেও। তোমাকে উপহার দিব বলে কিনেছিলাম।

 


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি

ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান

ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান

আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত

আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল

ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক

ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ

ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা

ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা

কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু

কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু

হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ

হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ

শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯

শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯

লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা

ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা

ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ

যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ

যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়

যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়