হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈলতত্ত্ব ও আমাদের সাহিত্য সমাজ
০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
আমি প্রকৃতিগতভাবেই একজন নিরীহ এবং নিভৃতচারী মানুষ। প্রয়োজন হলে কথা বলি, না হলে বলি না। কাউকে খুশি করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু বলা, বিশেষ করে প্রশংসা করা, তার সংগে ঘনঘন যাতায়াত এবং যোগাযোগ রেখে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য হাসিল করা এসব আমার ধাতে নেই। বস্তুত এই ধরণের স্বভাব এবং চরিত্রের মানুষকে আমি প্রবলভাবে ঘৃণা করি। এতে করে হয়ত আমি ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি; কিন্তু তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। সত্যিকার অর্থে এসব ক্ষয়-ক্ষতির আমি নিকুচি করি। এই হলাম আমি। এই হল আমার সত্যিকারের পরিচয়। আমার এই স্বভাবের কারণে আমি আমার চাকুরি জীবনেও বিভিন্নভাবে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এমনকি এখনো হচ্ছি। তবুও আমি এই বিষয়ে কারো সাথে আপোষ করিনি। আমি আমার স্বকীয় সত্ত্বা, আত্মমর্যাদা এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বোধ কখনও বিসর্জন দিইনি এবং কোনোদিন দেবও না।
অবশ্য আমার এইসব নিজস্ব চিন্তা এবং চেতনার আপোষহীন মনোবৃত্তির বাইরেও আমার একটা আলাদা জীবন এবং জগত আছে। আমার কিছু নিজস্ব অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, এবং মূল্যায়ন আছে। যা আমি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারি না। পারি না এজন্য যে, এতে শুধু ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত নয়; বরং সামষ্টিক স্বার্থও জড়িত আছে। আর সামষ্টিক স্বার্থ নি:সন্দেহে ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমি শৈশবকাল থেকেই লেখালেখির সাথে কম-বেশি জড়িত; তাই সাহিত্য জগত আমার কাছে জীবনের অন্যান্য অনেক অনুষঙ্গ থেকে অধিক দামি এবং গুরুত্ববহ। কারণ আমি সাহিত্যের মানুষ। সাহিত্য নিয়ে আমার নিজস্ব ভাবনা আছে। সাহিত্য নিয়ে আমার নিজস্ব ফেলোসফি আছে। আর এই কারণেই মূলত সাহিত্য সংশ্লিষ্ট কোনোকিছু এত সহজে আমার নজর এড়ায় না। এড়াইতে পারে না।
বলছিলাম, ইদানিং আমাদের সাহিত্যে সমাজের ভেতরে এবং বাইরে যেভাবে তৈলের উল্লম্ফন দানা বেঁধে উঠতে দেখছি; কোনোভাবেই আর নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলাম না। মনে মনে শপথ নিলাম, ছোটবেলায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর যে ‘তৈল’ প্রবন্ধ কয়েকবার পাঠ করে ইস্তফা দিয়েছিলাম; এখন আমাদের সাহিত্য সমাজে তৈলের যে অবস্থা তাহা জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনে সেই তৈল প্রবন্ধটি আবারও বারকয়েক পাঠ করব। তবুও হালের তৈল প্রদানকারীদের চরিত্র উন্মোচন না করে ক্ষান্ত হবো না। এ প্রসঙ্গে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’প্রবন্ধের অংশ বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘তৈল যে কি পদার্থ, তাহা সংস্কৃত কবিরা কতক বুঝিয়াছিলেন। তাঁহাদের মতে তৈলের অপর নাম স্নেহ। বাস্তবিকও স্নেহ ও তৈল একই পদার্থ। আমি তোমায় স্নেহ করি, তুমি আমায় স্নেহ কর অর্থাৎ আমরা পরস্পরকে তৈল দিয়া থাকি। স্নেহ কি? যাহা স্নিগ্ধ বা ঠান্ডা করে, তাহার নাম স্নেহ। তৈলের ন্যায় ঠা-া করিতে আর কিসে পারে?’.....বস্তুত এইকথা দিবালোকের ন্যায় সত্যি। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াইটস অ্যাপ এমনকি পত্র-পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনের পাতা খুললেই প্রতিদিনই চোখে পড়ে অসংখ্য তৈল ছোপ ছোপ পোস্ট এবং লেখা। সেইসব পোস্টে যারা লাইক, কমেন্ট করেন করছেন, তারাও নিজ নিজ সাহিত্য সামর্থ্যের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে শব্দ, বাক্য, উপমা এবং অলংকার ধার করে হলেও নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ তৈলবাজ প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। বিশেষ করে কোন আঞ্চলিক কিংবা জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা মাসিক পত্রিকার সাহিত্য পাতার কোনো কোনো সম্পাদকদের পোস্ট। এদের পোস্টে অগণিত লাইক, কমেন্ট হয় কেবলমাত্র এই উদ্দেশ্যে যে, সাহিত্য সম্পাদকের নজরে আসা এবং নজরে থাকা। যাতে করে তার বা তাদের লেখা প্রকাশ উপযোগী মানের হোক বা না হোক.... তব্ওু যেন তা প্রকাশ করা হয়। অধিকাংশ সাহিত্য সম্পাদকও যে এই তৈল মর্দনের ভাষা জানেন না বা বুঝেন না, ব্যাপারটি এমন নয়। তারাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং যা করার তা জেনে বুঝেই করেন। অবশ্য পাড়া-মহল্লার কবি-লেখকদের বেলায় এই একই তৈলতত্ত্ব প্রযোজ্য। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে সাহিত্য আড্ডা কিংবা সাহিত্য সম্মেলন... কোনোকিছুই এই তৈলের দৌরাত্মার বাইরে নয়। এটা তো গেলো প্রকাশ্য বা প্রত্যক্ষ তৈল মালিশের ব্যাপার। এছাড়া কিছু গোপন বিষয়ও আছে। যা সাধারণত তৈল দাতা এবং তৈল গ্রহীতার মধ্যেই মোটামুটি সীমিত থাকে। তবে কোনো কারণে এই অবৈধ এবং অনৈতিক সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে গেলে হাড়গোড় সমেত সম্পর্কের আসল রসায়নের চিত্র-বিচিত্র পাবলিক হয়ে পড়ে। অবশেষে এককান, দুইকান, তিনকান করতে করতে তা আমার মতন নিরীহ এবং নির্বিবাদ মানুষ পর্যন্ত জানতে পারে! এজন্যই বোধ করি, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তার তৈল প্রবন্ধে লিখেছেন, “বাস্তবিকই তৈল সর্বশক্তিমান; যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য , যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য, তাহা কেবল একমাত্র তৈল দ্বারা সিদ্ধ হইতে পারে। যে সর্বশক্তিময় তৈল ব্যবহার করিতে জানে, সে সর্বশক্তিমান। তাহার কাছে জগতের সকল কাজই সোজা। তাহার চাকরির জন্য ভাবিতে হয় না উকীলিতে পসার করিবার জন্য সময় নষ্ট করিতে হয় না , বিনা কাজে বসিয়া থাকিতে হয় না, কোন কাজেই শিক্ষানবিশ থাকিতে হয় না। যে তৈল দিতে পারিবে, তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসার হইতে পারে। আহাম্মুক হইলেও ম্যাজিষ্ট্রেট হইতে পারে, সাহস না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে এবং দুর্লভরাম হইয়াও উড়িষ্যার গভর্ণর হইতে পারে।”
আহা! তৈল মর্দনের কী বহুরূপী গুণাগুণ! আমার খুব আফসোস হয়, মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী-কে আমাদের বর্তমান সাহিত্য সমাজের তৈলচিত্র দেখে যেতে হয় নাই। অবশ্য সেই হিসাবে উনার ভাগ্য একেবারেই সুপ্রসন্ন বলতে হবে। কেননা, এই অবস্থা যদি তিনি স্বচক্ষে দেখে যেতেন; তাহলে পরলোকে গিয়েও হয়ত শান্তি পেতেন না। বাংলাদেশের সাহিত্য সমাজের এই চিত্র তাকে পীড়া দিত, কষ্ট দিত। কবি-লেখক-সম্পাদকদের নৈতিক অধ:পতন এবং স্কলন তিনি যদি জানতেন... তাহলে হয়ত রাগে, দু:খে, ক্ষোভে লেখালেখির জগৎ থেকে স্বজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিতেন। কেননা, এখন অনেক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক লেখার মানের নিকুচি করে তৈল এবং উৎকোচের বিনিময়ে লেখা প্রকাশ করে থাকেন। আমার কথা বিশ্বাস না করলে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার সাহিত্য পাতা নিয়মিত সপ্তাহ কয়েক পাঠ করে দেখুন... তাহলেই আমার কথার যথার্থতা নি:সন্দেহে প্রমাণিত হবে। দেখবেন, প্রতি সপ্তাহের সেই চেনামুখের লেখা। এরা সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যে কোনো উপায়ে সাহিত্য সম্পাদকের আশির্বাদপুষ্ট। সেইসব কথিত সম্পাদকদের প্রত্যেকের একটা শক্তিশালী নিজস্ব সার্কেল বা বলয় আছে। যা তারা সযতেœ আগলে রাখেন। আমার পরিচিত এমন কয়েকজন কবি এবং কথাসাহিত্যিক আছেন; যারা দেশের কয়েক কথিত জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় আট থেকে দশ বছর যাবত লেখা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু অতীব দু:খের বিষয় এই যে, তাদের ক্ষেত্রে আট/দশ বছরেও ধৈর্যের মেওয়া ফলেনি। অথচ তারা প্রত্যেকেই আমার চেয়ে অনেক ভালো লিখেন। এছাড়া আরও কয়েকজন আছেন, যারা লেখা পাঠাতে পাঠাতে ক্লান্ত হয়ে পাঠানো ছেড়ে দিয়েছেন। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাহিত্য সম্পাদকেরা নিজেরাও কবি এবং লেখকদের তৈল দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে দেশের প্রতিষ্ঠিত এবং প্রথিতযশা কবি, লেখক, পদস্থ আমলা কিংবা কোনো না কোনোভাবে পদক পাওয়া ব্যক্তিবর্গ অগ্রগণ্য। সুতরাং ছোটবেলায় বাই স্কোপ দেখার মতন বলতে হয়, কী চমতকার দেখা গেলো। আমি আপনাকে তৈল দিই; আপনি আবার এই তৈল আরেকজনকে দেন!
ভাবা যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যদি এইসব দেখতেন তাহলে তার মানসিক দুরাবস্থার কথা লেখার জন্য হয়ত নতুন মহাকাব্য লিখতে হতো। যদি জানতেন, এ ক্ষেত্রে একেক সাহিত্য সম্পাদক একেক পদ্ধতি গ্রহণ করেন! একেক কবি, একেক লেখক ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে, রুপ-রস-গন্ধ স্পর্শে তৈল মালিশ করেন। এই যেমন: কেউ নিজের লেখা কিংবা আরেকজনের লেখা বই, লিটলম্যাগ কিংবা সংকলন লেখককে কিনতে বাধ্য করেন। একটি কিনলে একটা লেখা প্রকাশ করেন, দুইটি কিনলে দুইটি লেখা, তিনটি কিনলে তিনটি লেখা....কী আচানক এবং চমতকার সম্পর্ক, তাই না?
সাধারণত আমরা যারা পাঠক আছি, তারা স্বাধীনভাবে নিজের ভালো লাগা এবং ভালোবাসার বই কিনে থাকি। অথবা কোনো আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের অনুরোধেও নবীন লেখকদের বই কিনে থাকি ; যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু বই বা সংকলন কেনা যখন পত্রিকার সাহিত্য পাতায় লেখা প্রকাশের বিনিময় মূল্য হয়... তখন বিষয়টি আমাকে ভাবিত করে বৈকি! আতংকিত করে বৈকি। অবশ্য বিষয়টি এখানেই শেষ নয়! শুনেছি কোনো কোনো লেখক এজন্য নগদ লেনলেনও করে থাকেন! আরও এক শ্রেণির সাহিত্য সম্পাদক আছেন, যারা পত্রিকায় সাহিত্য পাতা সম্পাদনার পাশাপাশি প্রকাশনার ব্যবসা করেন এবং সহজ-সরল নবীন লেখকদেরকে তাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করেন। আর এইসব লেনদেন হল, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল এর আধুনিক রুপ। ভাবতেও আমার লজ্জা হয়। ঘৃণা হয়। এজন্যই বোধ হয় শাস্ত্রী মহোদয় লিখেছেন, “তৈলের মহিমা অতি অপরূপ । তৈল নহিলে জগতের কোন কাজ সিদ্ধ হয় না। তৈল নহিলে কল চলে না, প্রদীপ জ্বলে না, ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয় না, চেহেরা খোলে না , হাজার গুন থাকুক তাহার পরিচয় পাওয়া যায় না, তৈল থাকিলে তাহার কিছুরই অভাব থাকে না।
এই তৈলের একটি বাস্তবিক এবং জনগুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত আমার ঝুলিতে আছে; যা সম্মানিত পাঠকদের জন্য উদগীরণ না করিলেই নয়। কবি এবং কথাসাহিত্যিক হিসাবে আমি স্বনামধন্যদের কেউ না হলেও আমারও একজন বিশেষ ভক্ত ছিল। যে আমাকে তার অমায়িক আচরণ, বিনয় এবং বিশেষ ভাবভঙ্গিতে আমার প্রশংসা করার মাধ্যমে অল্পদিনেই আমার খুব কাছের একজন মানুষ হয়ে উঠেন৷ বলা বাহুল্য, কেউ কেউ দশ বছর বা ততোধিক কাল আমার সঙ্গ লাভ করেও এতটা কাছে আসতে পারেনি। তার এই অতিভক্তি দেখে আমি কেবল মাঝে-মধ্যে বলতাম, তুমি আমার কাছে যা বল এবং যা কর তার সবকিছু আমার কাছে নকল মনে হয়। তোমার একটি আচরণও আমার কাছে আসল মনে হয়নি। সে তখন আমার কথা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিত৷ কৃত্রিম হাসির আড়ালে চাপা দিত। সেই লোক এখন তৈলের জোরে বিটিভিতেও প্রোগ্রাম করে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক যে সমস্ত সাহিত্য গ্রুপ আছে.. সেই সমস্ত গ্রুপের অনুষ্ঠানে তাকে অতিথির আসন অলংকৃত করতে দেখা যায়। যা আমার জন্য নিতান্ত কল্পনা বিলাস ব্যাতিত কিছুই নয়। এমনও হতে পারে যে, এই তৈল এবং অর্থ-প্রতিপত্তির বদান্যতায় তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদক এমনকি নোবেল পুরষ্কারও ভাগিয়ে নিতে পারেন! এজন্যই বোধ হয় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, “সর্বশক্তিময় তৈল নানারূপে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তৈলের যে মূর্তিতে আমরা গুরুজনকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম ভক্তি, যাহাতে গৃহিণীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম প্রণয়; যাহাতে প্রতিবেশীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম মৈত্রী; যাহা দ্বারা সমস্ত জগৎকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম শিষ্টাচার ও সৌজন্য “ফিলনথপি। ”যাহা দ্বারা সাহেবকে স্নিগ্ধ করি তাহার নাম লয়েলটি ;যাহা দ্বারা বড়লোককে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম নম্রতা বা মডেষ্টি। চাকর বাকর প্রভৃতিকেও আমরা তৈল দিয়া থাকি, তাহার পরিবর্তে ভক্তি বা যতœ পাই। অনেকের নিকট তৈল দিয়া তৈল বাহির করি।’
যাক। যার প্রবন্ধের আলোচনা ঘিরে আমাদের সাহিত্য সমাজের বর্তমান চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করেছি তিনি হলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বিশেষ ব্রান্ড, তিনি হলেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
তিনি ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের (বর্তমান বাংলাদেশ) খুলনা জেলার কুমিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাদের আদি নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার নৈহাটিতে। তার পারিবারিক পদবী ছিল ভট্টাচার্য। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর হরপ্রসাদ কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। কলকাতায় তিনি তার বড়দা নন্দকুমার ন্যায়চঞ্চুর বন্ধু তথা বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও প-িত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে থাকতেন। ১৮৭১ সালে হরপ্রসাদ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৩ সালে ১৯তম স্থান অধিকার করেন ফার্স্ট আর্টস পরীক্ষায়। ১৮৭৬ সালে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। বিএ পরীক্ষায় সংস্কৃতে প্রথম হওয়ায় প্রতি মাসে ৫০ টাকা ‘সংস্কৃত কলেজ স্নাতক বৃত্তি’, ৫ টাকা ‘লাহা বৃত্তি’, এবং ‘রাধাকান্ত দেব মেডেল’ লাভ করেন। ১৮৭৭ সালে সংস্কৃতে সাম্মানিক হন। পরে এম.এ. পরীক্ষায় পাস করে তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। উক্ত পরীক্ষায় হরপ্রসাদই ছিলেন প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র।
পরবর্তীকালে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য এমন একটি কাজ করেছেন, যাকে তাকে আজও অমর করে রেখেছে এবং যতদিন বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য থাকবে ততদিন অমর করে রাখবে। আর সেই অবিসংবাদিত কাজটি হলো, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ এর আবিষ্কার। চর্যাপদ অনেক প্রাচীন সাহিত্যকর্ম হলেও এটির আবিষ্কার খুব বেশিদিনের কথা নয়। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে তিনি চর্যাপদের একটি খ-িত পুঁথি উদ্ধার হয়। অবশ্য ১৮৮২ সালে রাজা রাজেন্দ্র লাল মিত্র নেপালে সংস্কৃত বৌদ্ধ সাহিত্য গ্রন্থে চর্যাপদের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। আর সেই সূত্র ধরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কারে উদ্দীপ্ত হন। তিনি ১৮৯৭ সালে বৌদ্ধ লোকাচার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রথমবার নেপাল ভ্রমণ করেন। ১৮৯৮ সালে তার দ্বিতীয়বার নেপাল ভ্রমণের সময় তিনি কিছু বৌদ্ধ ধর্মীয় পুঁথিপত্র সংগ্রহ করেন এবং ১৯০৭ খ্রি: তৃতীয়বার নেপাল ভ্রমণকালে চর্যাচর্য বিনিশ্চয় নামক একটি পুঁথি সংগ্রহ করেন। যা মূলত বৌদ্ধ ধর্মীয় সহজিয়া সঙ্গীত। এ সময় তিনি মোট ৪৬টি পূর্ণাঙ্গ ও একটি খ-িত পদ পেয়েছিলেন। যা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন হিসাবে খ্যাত আগামী ১৭ নভেম্বর মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মৃত্যু দিবস। আমি তার বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থাকারীরাই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বে
ভিভো ভি৪০ ফাইভজি, হালকা ওজনে শক্তিশালী ব্যাটারি
ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সম্প্রীতি চায় না: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
দিল্লী দিশেহারা হয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শাহীন শওকত
বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি
সামরিক আইন জারি দক্ষিণ কোরিয়ায়
হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় মশাল মিছিল
নকলায় ট্রাক চাপায় নাতি পরপারে শিশু নানী হাসপাতালে
ইফায় ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করা উচিত : হাসনাত আবদুল্লাহ
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ২ পদক
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ভারতের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে : হাজী ইয়াছিন
ভারত বাংলাদেশের ওপর যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
পার্থিব ও ওহীর জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসা শিক্ষা: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী
চাঁদপুরে কিশোরচালক মহিন হত্যা মামলার ৩ আসামী আটক
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬২৯ জন
ভারতীয় আগ্রাসী মনোভাব মোকাবেলা করবে বাংলাদেশের জনগণ: আলহাজ হাফিজ সাব্বির আহমদ
বেনাপোল পৌরসভার নাগরিকদের মাঝে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ উদ্বোধন
৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর
ভারতে বাংলাদেশ মিশনে হামলার প্রতিবাদ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের