জেগে থাকো পূর্ণিমা : সমাজ বাস্তবতার আখ্যান
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম
লেখালেখির সাথে মুহাম্মদ শামীম রেজার সম্পর্ক প্রায় দুই যুগের। ছড়া দিয়ে লেখালেখি শুরু হলেও মূলত গল্পই তার আরাধ্য। গল্পের গঠনশৈলী, উপস্থাপন ভঙ্গি, সমকালীন ভাষা ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে নিরিক্ষন করছেন বহুদিন ধরে। প্রায় বিশ বছরের ফসল তার ‘জেগে থাকো পূর্ণিমা’ বইটি পড়লে এ বিষয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। তাঁর গল্পগুলো বাস্তব থেকে নেয়া। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা বা আশেপাশের মানুষদের জীবন চিত্র তিনি চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কলমের আঁচড়ে। পাঠক ধরে রাখার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তাঁর গল্পে, আছে টানটান উত্তেজনা। আছে রহস্য, যুক্তি দিয়ে রহস্য উদঘাটন। গল্পের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে চমৎকার সব উপমা আর চিত্রকল্পের ব্যবহার। কখনো কখনো গল্পের ছলে কিছু শিক্ষণীয় উপদেশ দিয়ে গেছেন লেখক, পাঠকের কাছে যেগুলো খুবই গুরুত্ব পাবে বলে আশারাখি।
জেগে থাকো পূর্ণিমা বইয়ের প্রথম গল্প বাঁশি। গল্পের কাহিনী অনেকটা এরকম। ফয়সালের বাঁশির সুর শুনে পাগল হয়ে মধ্যরাতে চেয়ারম্যানের মেয়ে পড়শী নদী পার হয়ে চলে আসে। ফয়সাল তাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। পরী মনে করে। পড়শী ফয়সালকে বাঁশি বাজাতে বলে। পড়শীর বাবা আতর আলী গ্রামের মানুষদের সমস্যার সমাধান করে, বিচার সালিশের সঠিক বিচার করে। তিনি গ্রামবাসী ছেলে মেয়েদের গোপন প্রেমের ব্যাপারে সুষ্ঠ সমাধান করেন। কিন্তু নিজের মেয়ের প্রেমের খবর জানতে পেরে মেয়ের প্রেমিক ফয়সালকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। ফয়সালকে শক্ত করে বেধে মদের বোতলে গরম পানি ভরে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে চেয়ারম্যানের চাকরেরা। ফয়সালের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা, তার চিৎকার বাহিরের কেউ শুনতে পায়না। তিনজন চাকর মারতে মারতে ক্লান্ত হলে চেয়ারম্যানের বউ মারতে এসে মাথায় বোতল দিয়ে আঘাত করে। অমানবিক নির্যাতনে মৃত্যু মুখে পতিত হওয়া ফয়সালকে চেয়ারম্যানের চামচা আনুমিয়া গরু চোর বলে চালানোর কৌশল করে। ফয়সালের কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে মনিবের বিপদ বোঝাতে চাইলে চেয়ারম্যান কুকুরটিকে গুলি করে মেরে ফেলে। পরদিন গ্রামের লোকেরা ফয়সালকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। গ্রামের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান এর নিষ্ঠুরতার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পটিতে।
উপস্থাপন ভঙ্গির ফলে শামীম রেজার গল্প বলায় একটি নিজস্বতা আছে। গল্পের একটি কাহিনীকে তিনি গল্পে থাকা তিনটি বা চারটি চরিত্রের সগোক্তিক বর্ণনার মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। এতে একই কাহিনী একেকজনের দৃষ্টিতে একেক রকম হয়ে ধরা পড়ে। এই পদ্ধতি একান্তই তার নিজস্ব সৃষ্টি।
এই পদ্ধতির সুবিধা হল গল্পটি অনেক রহস্যময় ও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে, আর অসুবিধা হলো গল্পটি হয়ে যায় মেদবহুল এবং কখনো কখনো দুর্বোধ্য।
মোহিনী রায় নামে একজন এনজিওকর্মীর প্রেমে পড়েছে দুজন ছেলে। তারা মোহিনীকে পাওয়ার জন্য নানা রকম পরিকল্পনা করছে। কিন্তু মোহিনী কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ সে তার প্রাক্তন প্রেমিকের স্মৃতি বুকে নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায়। তেমনি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত গল্প ‘মোহ’। গল্পকার গল্পের প্রধান তিনটি চরিত্রের সগোক্তিক বর্ণনার মাধ্যমে নির্মাণ করেছেন গল্পটি।
‘বেগমজান অথবা সরল আখ্যান’ গল্পটিতে উঠে এসেছে গ্রামীণ জীবনের অন্যরকম এক চিত্র। বেগমজানে বিয়ে হয় হেলাল মিয়ার সাথে। হেলালের একটি বড় ছেলে আছে। ছেলের নাম আমজাদ। আমজাদকে দেখাশোনা করার জন্যই মূলত হেলাল মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আমজাদ বড় হয়। শহরে চাকরি করে। একদিন বাড়ি ফেরার বেলায় ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় আমজাদের। মায়ের জন্য কেনা শাড়ি, বোনের ফ্রক,ভাইয়ের জিন্স প্যান্ট রাস্তায় গড়াগড়ি খায়। এ গল্প পড়ে পাঠকের বুকফেটে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে, আসবেই।
গল্পকারকে বলব গল্প উপস্থাপনের আরেকটু সচেতন হতে। গল্পে ব্যবহৃত উক্তিগুলো কখনো কখনো কোনটি কার উক্তি, সেটা বোঝা যায় না। একই লাইনে দুজন বা তিন জনের উক্তি একসাথে লিখে দেওয়াতে এই সমস্যাটি পেয়েছি বেশ কয়েকবার। এমন একটি বা দুটি সমস্যার ফলে পুরো গল্পটিকেই অদ্ভুত মনে হয়েছে কখনো। আর বানান শুদ্ধির ব্যাপারে অবশ্যই তীক্ষè নজর দিতে হবে।
নাহিদ একজন তরুণ কবি, ছড়াকার, গল্পকার ও সদাহাস্য মানুষ। খুব মিশুক। নাহিদের ব্যক্তিত্ব দেখে তাকে ভাল লাগে প্রীতির। সেই নাহিদ একদিন প্রীতিকে জানালো কেয়া নামের এক সুদর্শনাকে ভালোবাসে সে। কেয়া আবার প্রীতিরই ছোট বোনের মত। এক বিয়েতে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। বরের পাশে শরবতে চিনির বদলে লবণ দেওয়া নিয়ে মজা চলছিল। এদিকে কাকতালীয়ভাবে কেয়াও ভালবাসে ফেলে নাহিদকে। একটা সাংকেতিক চিরকুটের মাধ্যমে তাদের পরস্পরের প্রেম নিবেদন হয়। গল্পের নাম ‘লাজুক’। উপস্থাপনের দুর্বোধ্যতার জন্য গল্পটি মূলভাব উদঘাটন কিছুটা কঠিন হয়ে গেছে।
বইটির শিরোনাম গল্প ‘জেগে থাকো পূর্ণিমা’। এ গল্পের নায়ক সৌরভ, নায়িকা কেয়া। হাওর এলাকায় মধ্য রাতে চাঁদের আলো গায়ে মাখতে মাখতে সৌরভ কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়। কেয়াই কৌশলে কুকুর লেলিয়ে দিয়ে ছিল। পরবর্তীতে সৌরভের প্রতি তার মায়া হয়। এদিকে সৌরভ স্কলার্শিপ পেয়ে লন্ডন চলে যাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। যাবার আগে চাঁদনী রাতে কেয়ার সাথে দেখা করতে যায়। জানতে চায় তাকে ভালবাসে কি না। কেয়ার কাছ থেকে হ্যা সূচক জবাব পেয়ে আবেগাপ্লুত সৌরভ। অনেক বাঁকবদল এবং উপমা আছে গল্পটিতে। উপভোগ করতে হলে পড়তে হবে বইটি।
ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়। ঐতিহাসিক কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক ও সিনেমা। মোহাম্মদ শামীম রেজার গল্পগুলো অনেক মায়াময়। বিবেককে তারণা দেয়, শুদ্ধ হতে শিক্ষা দেয়।
জেগে থাকো পূর্ণিমা বইটিতে মোট গল্প আছে ১৩টি। রুদ্রছায়া প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ১৮০ টাকা। প্রিয় পাঠক, বই হোক অবসরের সবচেয়ে কাছের অনুসঙ্গ।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান