কবি নির্মলেন্দু গুণ ও তার সাহিত্যকর্ম
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩২ এএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩২ এএম
কবি নির্মলেন্দু গুন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিদের মধ্যে একজন। তিনি ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণার বারহাট্টার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছেলেবেলা কাটে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার কাশবনে। তার পিতার নাম সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মাতা বীণাপাণি। সুখেন্দু ও বীণাপাণির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে নির্মলেন্দু ছোট। চার বছর বয়সে মাতার মৃত্যুর পর তার পিতা চারুবালাকে বিয়ে করেন। নতুন মায়ের কাছেই নির্মলেন্দুর শিক্ষা শুরু হয়।
নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত, একজন বাংলাদেশী কবি। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন ও ছবি এঁকেছেন। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম,শ্রেণী-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে।
১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের অন্তর্ভূত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তার স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য।
তাকে ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়।
প্রথমে বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউটে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান ১৯৬২ সালে মাত্র ৩ জন প্রথম বিভাগ পেয়েছিল স্কুল থেকে। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’ মেট্রিকের পর আই.এস.সি পড়তে চলে আসেন ময়মনসিংহেরআনন্দমোহন কলেজে মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপসহ পড়তে থাকেন এখানে নেত্রকোণায় ফিরে এসে নির্মলেন্দু গুণ আবার ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকা ও তাঁর কবি বন্ধুদের কাছে আসার সুযোগ পান নেত্রকোণার সুন্দর সাহিত্যিক পরিমন্ডলে তাঁর দিন ভালোই কাটতে থাকে একসময় এসে যায় আই.এস.সি পরীক্ষা ১৯৬৪ সালের জুন মাসে আই.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনিই একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের পরবর্তীতে বাবা চাইতেন ডাক্তারী পড়া কিন্তু না তিনি চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ হঠাৎ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয় ঢাকায় দাঙ্গার কারণে তিনি ফিরে আসেন গ্রামে ঢাকার অবস্থার উন্নতি হলে ফিরে গিয়ে দেখেন তাঁর নাম ভর্তি লিষ্ট থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া আর ভর্তি হওয়া হলো না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন গ্রামে আই.এস.সি-তে ভালো রেজাল্ট করায় তিনি ফার্স্ট গ্রেড স্কলারশিপ পেয়েছিলেন মাসে ৪৫ টাকা, বছর শেষে আরও ২৫০ টাকা তখনকার দিনে অনেক টাকা ১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে বি.এ. পাশ করেন তিনি, যদিও বি.এ. সার্টিফিকেটটি তিনি তোলেননি। ১৯৬৫ সালে আবার বুয়েটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে --- হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ, প্রেমাংশুর রক্ত চাই, আফ্রিকার প্রেমের কবিতা, নিরঞ্জনের পৃথিবী ইত্যাদি।
কর্মজীবন:
স্বাধীনতার পূর্বে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া সাংবাদিকতায়ও জড়িত ছিলেন।
সাহিত্য ধারা:
নির্মলেন্দু গুণের কবিতা মূলত তার যাপিত জীবন, তার আকাঙ্খা ও চেনা-পৃথিবীর গান। ফলে তার কবিতার প্রতীক ও অলঙ্কারে আকীর্ণ না হওয়ায় অতি সহজেই কাব্য পাঠককে আকৃষ্ট করে থাকে। তিনি ষাটের দশকের কবিতা রচনা করেন এবং পরের দশকে ই তরুণদের নিকট ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সত্তরের দশক থেকে তার জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি তার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশে অনেক তরুণ কবি জন্ম হয় কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি শখের বসে ছবি আঁকেন ২০০৯ সালের পাবলিক লাইব্রেরির সামনে তার ছবি প্রদর্শন হয়।
১৯৬৯-৭০ সালের উত্তাল গণআন্দোলন ও নতুন দেশের জন্মের প্রাক্কালে, যখন সব কিছু ভেঙে পড়ছে তখন যে নায়ক-চরিত্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, গুণ ঠিক সে সময়ে ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ রচনার মাধ্যমে তা পূরণ করলেন। তার প্রথম কবিতা ‘হুলিয়া’ একটি কালের নায়ক-চরিত্র নির্মাণে দারুণভাবে কাজ করল। আমাদের শৈশবে এ কাব্যের চলচ্চিত্রায়ণ সেই স্মৃতিকেই জাগিয়ে দেয়। নিজের লেখা কবিতা এবং গদ্য সম্পর্কে তার নিজের বক্তব্য হলো। অনেক সময় কবিতা লেখার চেয়ে আমি গদ্যরচনায় বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি। বিশেষ করে আমার আত্মজৈবনিক রচনা বা ভ্রমণকথা লেখার সময় আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে আমি যে গদ্যটি রচনা করতে চলেছি, তা আমার কাব্য-রচনার চেয়ে কোনো অর্থেই ঊনকর্ম নয়। কাব্যকে যদি আমি আমার কন্যা বলে ভাবি, তবে গদ্যকে পুত্রবৎ। ওরা দুজন তো আমারই সন্তান। কাব্যলক্ষ্মী কন্যা যদি, গদ্যপ্রবর পুত্রবৎ।
বহুল আবৃত্ত কবিতাসমূহের মধ্যে-হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ (১৯৭০ প্রেমাংশুর রক্ত চাই), আফ্রিকার প্রেমের কবিতা (১৯৮৬ নিরঞ্জনের পৃথিবী)-ইত্যাদি অন্যতম।
তিনি বাংলা একাডেমী (১৯৮২), স্বাধীনতা (২০১৬) ও
একুশে পদক (২০০১) লাভ করেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: মুজিব-লেনিন-ইন্দিরা, প্রেমাংশুর রক্ত চাই (১৯৭০),না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২), কবিতা, অমিমাংসিত রমণী (১৯৭৩), দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৯৭৪), চৈত্রের ভালোবাসা (১৯৭৫), ও বন্ধু আমার (১৯৭৫), আনন্দ কুসুম (১৯৭৬), বাংলার মাটি বাংলার জল (১৯৭৮), তার আগে চাই সমাজতন্ত্র (১৯৭৯), চাষাভুষার কাব্য (১৯৮১), অচল পদাবলী (১৯৮২), পৃথিবীজোড়া গান (১৯৮২), দূর হ দুঃশাসন (১৯৮৩), নির্বাচিতা (১৯৮৩), শান্তির ডিক্রি (১৯৮৪), ইসক্রা (১৯৮৪),প্রথম দিনের সূর্য (১৯৮৪), আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও (১৯৮৪), নেই কেন সেই পাখি (১৯৮৫), নিরঞ্জনের পৃথিবী (১৯৮৬), চিরকালের বাঁশি (১৯৮৬), দুঃখ করো না, বাঁচো (১৯৮৭)
১৯৮৭ (১৯৮৮), যখন আমি বুকের পাঁজর খুলে দাঁড়াই (১৯৮৯), ধাবমান হরিণের দ্যুতি (১৯৯২),
কাব্যসমগ্র, ১ম খ- (১৯৯২, সংকলন), কাব্যসমগ্র, ২য় খ- (১৯৯৩, সংকলন), অনন্ত বরফবীথি (১৯৯৩), আনন্দউদ্যান (১৯৯৫ ), পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ (১৯৯৫ ), প্রিয় নারী হারানো কবিতা (১৯৯৬),শিয়রে বাংলাদেশ, ইয়াহিয়াকাল (১৯৯৮ ),আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি (২০০০), বাৎস্যায়ন (২০০০) [৩]
গল্পগ্রন্থ:
আপন দলের মানুষ
পোড়ামাটি
ছড়ার বই: সোনার কুঠার (১৯৮৭)
আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ, আমার ছেলেবেলা
আমার কণ্ঠস্বর, আত্মকথা ১৯৭১ (২০০৮)
অনুবাদ: রক্ত আর ফুলগুলি (১৯৮৩), কবি নির্মলেন্দু
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান