বাঙ্গালি জাতি আমৃত্যু আপনার অপেক্ষায় 'প্রিয় জীবনানন্দ দাশ'
২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২১ পিএম | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫১ পিএম
'চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য'
একটি চরণ যেন ব্যাখ্যা করা যায় শত-সহস্র উপায়ে। রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য এক ইতিহাস রচনা করেছিলেন তিনি। সময় ক্ষয়িষ্ণু হলেও তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি হয়ে।
বলছি বাংলার শুদ্ধতম কবি, নীরব হতাশার কবি,ক্ষণজন্মা কবি, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কথা। প্রখ্যাত এই কবির রচনায় গভীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন কবি যা সার্বজনীনভাবে সম্পর্কিত। রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখেছেন কবি জীবনানন্দ দাশ যার প্রাসঙ্গিকতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কবির রহস্যময় মৃত্যুর ৭০ বছর পরেও নতুন প্রজন্মের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ জীবনানন্দ দাশ।
রূপসী বাংলার কবি নামে খ্যাত জীবনানন্দ দাশের লেখা অধিবিদ্যামূলক এবং জাদুবাস্তববাদী কবিতা মুগ্ধ করেছে অসংখ্য পাঠক ও শ্রোতাকে। তার লেখনীর প্রভাব বাংলার সাহিত্য থেকে সিনেমা সকল পর্যায়ে সমান ভাবে নান্দনিকতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে যুগে যুগে যা থেকে প্রভাবিত হয়েছিল ৯০ দশকের রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি থেকে শুরু করে সায়ন্তন মুখার্জির “ঝরা পালক” এবং রবিউল আলম রবির “মরিবার হলো তার স্বাদ”।
জীবনানন্দ দাশের কবিতার মধ্যে অন্যতম কবিতা হলো “বনলতা সেন”। খুরশীদ আলম এবং রুনা লায়লার সুন্দর পরিবেশিত “জিঘাংসা” চলচ্চিত্রের গান “ও অনুপমা ও নিরুপমা” “বনলতা সেন” কবিতা থেকে কেবল শব্দান্তর করা হয়েছিল। যেখানে চলচ্চিত্র তারকা ওয়াসিম এবং জবা চৌধুরী জীবনানন্দের কবিতার নিগূঢ় অর্থ পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছিলেন।
এমনকি চলচ্চিত্র নির্মানের ক্ষেত্রে তার কবিতা থেকে দারুণ প্রভাবিত ছিল স্বয়ং কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। এমনকি হুমায়ূন আহমেদের “দারুচিনি দ্বীপ” চলচ্চিত্রের শিরোনাম তাঁর কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে, যা একটি প্রাণবন্ত প্রাকৃতিক দৃশ্যে দারুচিনি দ্বীপ সম্পর্কে তাঁর লাইনগুলির চেতনাকে ধারণ করে। যেখানে অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর একজন নাবিকের চরিত্রে অভিনয় করে জীবনানন্দের কবিতার আবেগপূর্ণ আবৃত্তি করেন যা সাহিত্য এবং সিনেমাকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে।
নির্মাতা তন্ময় তানসেন পরিচালিত “পদ্ম পাতার জল” সিনেমায় জীবনানন্দ দাশের কবিতা “তোমায় আমি” একটি গানের রূপে নতুন করে ফিরে আসে। সেখানে “আমি তোমায় দেখেছি আর তুমি আমার পদ্মপাতা হয়ে গেছো” লাইনগুলি মন্ত্রমুগ্ধকর পিয়ানোর সুরে তুলে ধরা হয়েছিল যা সমৃদ্ধ করেছিল সিনেমাটিকে। সিনেমাটি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়েছিল জীবনানন্দ দাশের ভক্ত সমর্থকদের।
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী অভিনীত “একজন সঙ্গে ছিল” সিনেমায় জীবনানন্দ দাশের “ফসলের দিন” কবিতার আবৃত্তি করা হয়েছিল যা সুগন্ধি ফুলে ভরা একটি চমকপ্রদ পরিবেশে ধারণ করা হয়েছিল। যা সিনেমার রোমান্টিক আখ্যানকে আরও অনেক বেশি প্রস্ফুটিত করেছিল।
এমনকি কলকাতার চলচ্চিত্র "গয়নার বাক্স" সিনেমায় জীবনানন্দ দাশের "আবার আসিব ফিরে" কবিতার আবেগময় আবৃত্তি উপস্থাপন করা হয় যা এখনও দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে। প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যান্ড মেঘদল জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। বিশেষ করে তাদের গান "নির্বাণ" এ। "আলো নেই রোদ নেই, কিছু বিপন্ন বিস্ময়" এর মতো লাইনগুলি দাশের কাজের একই বিষণ্ণ সৌন্দর্য এবং অস্তিত্বমূলক প্রতিফলন প্রতিধ্বনিত করে।
জীবনানন্দের সাহিত্যিক অবদান বিশেষ করে তাঁর গদ্যের মধ্যে চলচ্চিত্রের অন্বেষণের জন্য বিশাল সম্ভাবনা ধারণ করে। সমালোচকরা প্রায়ই তাঁর উপন্যাসগুলির সাফল্য নিয়ে বিতর্ক করেন, তবে তাঁর গল্পগুলি মনস্তাত্ত্বিক এবং আবেগগত গভীরতায় সমৃদ্ধ মানব সম্পর্কের জটিলতায় প্রবেশ করে যা আজও শক্তিশালীভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। তাঁর কবিতাগুলি প্রেম, প্রকৃতি এবং অস্তিত্বের হতাশার থিমগুলিতে গভীরভাবে প্রবেশ করে, পাঠকদের মানব অভিজ্ঞতার জটিলতাগুলি অন্বেষণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। উদাহরণস্বরূপ, “বনলতা সেন” চিরন্তন প্রেম এবং আকাঙ্ক্ষার সারমর্মকে ধারণ করে, যা সম্পর্কের জটিলতাগুলি অনুসন্ধানকারী রোমান্টিক আখ্যানগুলির জন্য একটি সমৃদ্ধ ভিত্তি প্রদান করে।
জীবনানন্দের সাহিত্যিক ছাপগুলি চলচ্চিত্রের রূপান্তরে অন্তর্ভুক্ত করা গল্প বলার মানকে উন্নত করতে পারে, যা পরিচালকদের এবং চিত্রনাট্যকারদের তাঁর দক্ষতার সাথে নির্মিত মনস্তাত্ত্বিক এবং আবেগগত প্রেক্ষাপটে প্রবেশের সুযোগ দেয়। তাঁর আখ্যানগুলি ব্যক্তি জীবনকে সংগ্রামের মুখোমুখি করে, সামাজিক প্রত্যাশা এবং অর্থের অন্বেষণ করে।
তাঁর কবিতাকে চিত্রনাট্যের বুননে থিম্যাটিক দৃশ্যায়ন হিসেবে ব্যবহার করে চলচ্চিত্র নির্মাতারা অনন্য সব হৃদয়স্পর্শী ভিজ্যুয়াল তৈরি করতে পারেন যা কেবল জীবনানন্দ দাশকে সম্মান জানানো হবে না বরং তাঁর চিরন্তন অন্তর্দৃষ্টিগুলিকে সমসাময়িক দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে ফুঁটে উঠবে।
'আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় - হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে'
আজ ২২ শে অক্টোবর, ১৯৫৪ সালের এই দিনে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন রূপসী বাংলার এই অঘোষিত নায়ক।
'এই পৃথিবী একবার পায় তারে,পায় নাকো আর'
কবি হয়তো তার 'শঙ্খমালা' কবিতার এই চরণে নিজের প্রয়াণকে এভাবেই বিশেষায়িত করে গিয়েছিলেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলা সাহিত্য যতদিন বেঁচে থাকবে নিশ্চয়ই বাঙ্গালি জাতি আপনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে হে প্রকৃতির কবি।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিবর্ণ ফুটবলে ইউরোপা লীগেও জয়হীন ইউনাইটেড
চট্টগ্রাম টেস্টে নেই তাসকিন, এলেন খালেদ
রোহিঙ্গাদের দেশের মাটিতে পা রাখতে দিল না ইন্দোনেশিয়া
হাসিনার অবস্থান জানিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন
সুবিদ আলী ভুইয়া ও মৃণাল কান্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল চায় ইসলামী ফ্রন্ট
যশোর আদ্-দ্বীন নার্সি ইনস্টিটিউটে নবীন বরণ ও গুনিজন সংবর্ধনা
নোয়াখালীতে মাদরাসা থেকে ফেরার পথে নসিমন চাপায় ছাত্রের মৃত্যু
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে আনন্দ মিছিল
আকিজ বেকারিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ থেকে বাঁচতে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহŸান পীর সাহেব চরমোনাই’র
প্রেসিডেন্টের অপসারণ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হলো উপদেষ্টা পরিষদে
সাতকানিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলারী আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
'কেটে গেছে সকল শংকা, নিশ্চিত হয়েছে ভেন্যু, উন্মুখ দর্শক,আতিফের অপেক্ষা'
টয়লেটের কাজ সেরে সঙ্গে সঙ্গে অজু করা প্রসঙ্গে।
বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু
সাহিত্যসমাজে অবক্ষয়
যৌতুক
কবিতার বাঁক বদল এবং নতুন ধারা
মানুষের বিবর্তন