ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩০ পৌষ ১৪৩১
গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আটটি প্রতিষ্ঠানে তালা

সম্পর্ক না থাকলেও গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজনই ভবন জবরদখলে এসেছে : ড. ইউনূস

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৯ এএম

কোনো ধরনের এখতিয়ায় বা সম্পর্ক না থাকলেও গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজনই গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আটটি প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে জবরদখল করছে বলে দাবি করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের তার নিজস্ব সংঘবিধি আছে। আইনকানুন আছে। সেসব তো পালিয়ে যায়নি। আইন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে যদি কারো কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আইন-আদালত আছে। সেখানে পরিষ্কার হবে। কিন্তু জবরদখল কেন? এখানে যদি জালিয়াতির বিষয় থাকে তাহলে নিষ্পত্তির সুযোগ আছে আদালতে। তিনি বলেন, কেউ যদি আমার ঘরে তালা দিয়ে যায়, সেটা তো ঠিক নয়। আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে অনেক মামলা হয়েছে। আরেকটা না হয় হতো, অসুবিধে কী? এগুলো নিয়েই আছি সব সময়।

এই ভবন জবরদখলকারী কারা? পরিষ্কার করে জানানোর জন্য বলা হলে ড. ইউনূস বলেন, যারা এসেছে সবাই গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসেছে। সামরিক বাহিনীর লোকও ছিল। তারা অবসরপ্রাপ্ত। কনসালটেন্সি ফার্মে কাজ করেন। জবরদখলকারীর সংখ্যা ২০ থেকে ২২ জন। তাদের জবরদখলকারী বাহিনীর মতো চলাফেরা, মেজাজ, কাজকর্ম। কথা থাকতেই পারে, আলোচনা হতে হয়। এসময় পাশ থেকে গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মইনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি একজনকে চিনি। যার সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে কাজ করেছি। তিনি কর্নেল জাহাঙ্গীর। তিনি বলেছেন, আরেকজন ছিলেন তার নাম মেজর মঈন। যিনি একসময় মিলিটারিতে ছিলেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণ কৃষি, গ্রামীণ মৎস্য, গ্রামীণ উদ্যোগ নামক প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে জবরদখল করা হয়েছে। আপনার আয়ের উৎস কী? কীভাবে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন? এসব নিয়ে প্রশ্ন আছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, এটা আমি ব্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জন করে এটা করেছি। এটা গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় করিনি। একটা টাকাও গ্রামীণ ব্যাংকের নেই।

পুলিশ যদি মামলা না নেয় বা আইনি সহায়তা না করে তাহলে আপনারা আদালতে যাবেন কি না? জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, আবার যেতে হবে। যেতে হবে। যদি না যাই তাহলে করবোটা কী? আমরা পুলিশের কাছে হার মেনেছি। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেনি। যদিও তাদের সহযোগিতা করার কথা। এখন আমরা আইন-আদালতে যাবো। আদালত যদি দেখে।

গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো টাকা এসব প্রতিষ্ঠানে নেই, দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই, তাদের একটি টাকাও এখানে নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের যে সমস্ত দাবি-দাওয়া সেগুলো এখানে নেই। আমাদের আইন-বিধি পরিষ্কার। আইন মেনে বুঝে বুঝে সব কিছু করা হয়েছে। এমন একটা জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ করতে হয়, আইন ভঙ্গ করলে আমাদের বিপদের চাইতে মহাবিপদের মধ্যে পড়তে হয়। সেজন্য আমরা সব কিছু আইন মেনেই করেছি। এখন যদি তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থেকে থাকে সেটা তাদের ব্যাপার।

পদ্মা সেতুর বিরোধিতা কি আইন মেনে করেছিলেন? জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছি এটা কী প্রমাণিত? সব জায়গায় সব কিছু যদি প্রমাণিতই হয়, তাহলে তো কথা শেষ! তাহলে কিছু করা বা বলাও যাবে না। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কী হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যুদ্ধ। মামলার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে সর্বস্বান্ত করা হবে। এগুলো একটাও কাজ করতে পারবে না। এগুলোই মুশকিল ব্যাপার।

গ্রামীণ টেলিকম ভবনের বাইরে ঝাড়ু মিছিল হয়েছে। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, আপনি এক লাখ টাকা তার কাছ থেকে নিয়েছেন, এক বছর আগে। আর গ্রামীণ ফোনে কথা বললে টাকা কাটে বেশি, কল রেট বেশি। আরেকজন বলেছেন, দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। সেই টাকাও সুদ বেশি। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. ইউনূস হেসে বলেন, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি, ওনাদের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। আমরা একদল। দুই দল না। আমি তো বলেছিলাম ওদের থাকতে, যারা ঝাড়ু মিছিল করছিল, আমি ওদের সঙ্গে ছবি-সেলফি তুলতে চেয়েছিলাম।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গও যেমন দেশবাসীর ওপর ছেড়ে দিয়েছি, তেমনি এ ব্যাপারটিও দেশবাসীর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গে যেসব অভিযোগ প্রশ্ন উঠেছিল সেগুলোর সঙ্গে এর কোনো যোগসাজশ রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা তো বুদ্ধিমান, খুঁজেন, খুঁজে দেখেন, খুঁজে বের করেন কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না। আমরা তো পরিষ্কার বললাম।

‘সম্পর্ক না থাকলেও গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজনই গ্রামীণ টেলিকম ভবন জবরদখলে এসেছে’ —ড. ইউনুস কর্তৃক উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সশরীরে মিরপুর গ্রামীণ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা কর্মীদের মাধ্যমে জানানো হয়েছে পরবর্তী সময়ে তারা এবিষয়ে কথা বলবেন।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুমকিতে নিষিদ্ধ পলিথিনসহ আটক ১

দুমকিতে নিষিদ্ধ পলিথিনসহ আটক ১

দাবানলে সব ঘরবাড়ি পুড়লেও অলৌকিকভাবে অক্ষত একটি বাড়ি!

দাবানলে সব ঘরবাড়ি পুড়লেও অলৌকিকভাবে অক্ষত একটি বাড়ি!

নিজ দলের দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করার দাবি আওয়ামীলীগ নেতার

নিজ দলের দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করার দাবি আওয়ামীলীগ নেতার

রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে দাউদকান্দিতে ধানের চারা রোপন কর্মসূচি

রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে দাউদকান্দিতে ধানের চারা রোপন কর্মসূচি

ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের মতবিনিময় সভায় চরমোনাই পীর

ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের মতবিনিময় সভায় চরমোনাই পীর

ধামরাইয়ে যুবকের  লাশ উদ্ধার

ধামরাইয়ে যুবকের  লাশ উদ্ধার

ফেনীতে বন্যায় ব্রিজ ভেঙে খালে ৪ মাসেও সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ চরমে

ফেনীতে বন্যায় ব্রিজ ভেঙে খালে ৪ মাসেও সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ চরমে

সউদী আরব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও বিক্রির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে

সউদী আরব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও বিক্রির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে

মুজিবনগর সেচ প্রকল্পে দুদকের অভিযান ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

মুজিবনগর সেচ প্রকল্পে দুদকের অভিযান ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

শীত আসতেই রাজনগরে শুরু হয়েছে নাচ-গান আর জুয়ার আসর

শীত আসতেই রাজনগরে শুরু হয়েছে নাচ-গান আর জুয়ার আসর

বিজিবি দিনাজপুর সেক্টরের উদ্যোগে শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ

বিজিবি দিনাজপুর সেক্টরের উদ্যোগে শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ

বুড়িচংয়ে  কাকদী নদীর পাড় কাটায়  বাধঁ ভাঙ্গার আশঙ্কা বিরাজমান

বুড়িচংয়ে  কাকদী নদীর পাড় কাটায়  বাধঁ ভাঙ্গার আশঙ্কা বিরাজমান

বীজ সরবরাহে প্রতারণা উপরে সুন্দর গাছে আলু ফলন নেই

বীজ সরবরাহে প্রতারণা উপরে সুন্দর গাছে আলু ফলন নেই

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন বাবর

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন বাবর

ভারতের মহাকুম্ভ মেলায় পবিত্র নদীতে স্নানের মহোৎসব , আধ্যাত্মিকতার মহাযজ্ঞ

ভারতের মহাকুম্ভ মেলায় পবিত্র নদীতে স্নানের মহোৎসব , আধ্যাত্মিকতার মহাযজ্ঞ

কলাপাড়ায় বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদকের বাসায় চুরি

কলাপাড়ায় বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদকের বাসায় চুরি

কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় মানুষের ঢল

কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় মানুষের ঢল

রাজউক উত্তরা জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজউক উত্তরা জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিষিদ্ধ সংগঠন  সহ-সভাপতি সজল ১ দিনের রিমান্ডে

নিষিদ্ধ সংগঠন  সহ-সভাপতি সজল ১ দিনের রিমান্ডে

কুলাউড়ায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

কুলাউড়ায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন