সংখ্যালঘু নিপীড়নের মিথ্যা সংখ্যালঘু নিপীড়নের মিথ্যা প্রোপাগা-া চালানো হচ্ছেমতবিনিময় সভায় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৪৪ পিএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৪৪ পিএম

 

দীর্ঘ দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার পর স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতন হলেও পরাজিত শক্তি এখনো দেশে শান্তি বিনষ্ট করতে মরিয়া হয়ে আছে। এমতাবস্থায় দেশের সকল নাগরিককে স্ব-স্ব জায়গায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আলেমসমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। আজ বুধবার ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি হলে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুফতী রেজাউল করীম আবরারের সঞ্চালনায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকার : কেমন বাংলাদেশ চাই শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার এরশাদ এর পতন ও সর্বশেষ ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার স্বৈরাচার বিরোধি গণঅভ্যূত্থানÑ সর্বক্ষেত্রেই গণমানুষের ক্ষোভ, অপ্রাপ্তি ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মূল আকুতি ছিলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের। তাই দেশের আইন, বিচার, সংসদ, প্রশাসন, অর্থ, শিক্ষা, শিল্প ও দেশপরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা সাম্য ও ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ চাই।
উপস্থিত আলেমগণ বলেন, এদেশ হাজার বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিসহ সকলে মিলেমিশে থাকি। এমনকি জাতীয় সঙ্কটে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়ানোর যে নজীর আমরা স্থাপন করেছি, তা পৃথিবীতে খুব বিরল। কিন্তু অতীতে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়েছে আমাদের সেই ঐতিহ্য। আজও দেশকে অস্থিতিশীল করতে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকেই হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকার এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান করেন তারা। কবি মূসা আল-হাফিজ বলেন, দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে মিথ্যা প্রোপাগা-া ছড়ানো হচ্ছে, এমতাবস্থায় আমরা আন্তর্জাতিক পরিম-লে রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিবাদ দাবি করছি।মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী, ড. মাওলানা ওবায়দুল কাদের নদভী, মাওলানা ফখরুদ্দীন, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাসউদ, মাওলানা আবদুল আখির, মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দীক কুয়াকাটা, সৈয়দ মো. হাসান আজহারী, কবি মূসা আল-হাফিজ, শিক্ষাবিদ সাংবাদিক জোবায়ের হোসেন, লেখক রুহুল আমীন সা‘দী, মাওলানা মোস্তফা রাহিম আজহারী, মাওলানা আবদুল হাই মো. সাইফুল্লাহ, মাওলানা লুৎফুর রহমান ফরায়েজী।আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ড. মোখতার হোসেন, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মুফতি মোহাম্মদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতী হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শামসুদ্দোহা আশরাফী, হাফেজ মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ, মুফতি রফিকুন্নাবী হক্কানী, মুফতী আব্দুল আজিজ কাসেমী, মাওলানা শাহজাহান আল হাবিবী, মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, মুফতী জোবায়ের আব্দুল্লাহ কাসেমী।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যূত্থান পরবর্তী গঠিত অন্তর্র্বথীকালীন সরকারের নিকট দেশের সর্বঘরানার ওলামায়ে কেরামের পক্ষে কতিপয় প্রস্তাব পেশ করা হয়।  প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে, অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপন্থা নির্ধারণ দীর্ঘ স্বৈরশাসন পরবর্তী নবগঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি এদেশের মানুষেল প্রত্যার শেষ নেই। এমতাবস্থায় দেশে পূর্ণ শৃঙ্খলা ফেরাতে ও সামগ্রিক সংস্কারের স্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেইজড কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে, বাংলাদেশের মানুষের মনস্তত্ব পাঠ পূর্বক সিদ্ধান্তগ্রহণ এদেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠি স্ব-স্ব ধর্মের ব্যাপারে অনেকটা রক্ষণশীল ও পরম ধর্মপ্রাণ। অতীতের সরকারগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বর্জনে উক্ত বিষয়কে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে জনমনে ক্ষোভ তো দেখা দিয়েছেই, সেইসাথে সরকারগুলো পর্যায়ক্রমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারাও মানুষের ভাষা বুঝতে সক্ষম হয়নি, মানুষও তাদের ভাষা বোঝেনি। তাই দেশের মানুষের চিন্তা ও মননের সঙ্গে সঙ্গতির্পণূ সিদ্ধান্তই দেশকে স্থিতিশীল একটা পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। আদ-দীনু ওয়াল-মুলকু তাওয়ামানহাদীসে এসেছে, দীন এবং রাষ্ট্র পরস্পর এক অপরের সাথে সম্পৃক্ত। তাই কোন মুসলমান ধর্মহীন চরিত্রে রাষ্ট্রকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। যেহেতু এদেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠি মুসলমান এবং ধর্মে-কর্মে ক্ষেত্রবিশেষ গাফিল হলেও ধর্মীয় আবেগ খুব প্রকট, তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেয়ে উভয়ের সমান্তরাল প্রবাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্রগঠন সম্ভব। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার এরশাদ এর পতন ও সর্বশেষ ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার স্বৈরাচার বিরোধি গণঅভ্যুত্থানÑ সর্বক্ষেত্রেই গণমানুষের মূল ক্ষোভ অপ্রাপ্তি ও প্রত্যাশার জায়গা ছিলো উক্ত শ্লোগাণকে ঘিরেই। তাই দেশের আইন, বিচার, প্রশাসন, অর্থ, শিক্ষা, শিল্প ও দেশপরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিশ্চিত হোক সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।সর্বোপরি এমন একটি রাষ্ট্রের প্রত্যাশা, যেখানে মানুষ মানবিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক বোঝাপড়া, সত্যবাদিতা ও দায়িত্ববোধে পরিপূর্ণ হবে। অপরকে ঠকিয়ে জেতার মানসিকতা, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া, ভয় দেখিয়ে বধ করে রাখা, লোভে পড়া সততা বিকিয়ে দেয়ার মতো কোন পরিবেশ গড়ে উঠবে না। সকলে মিলে উন্নতি ও কল্যাণের দিকে অগসর হওয়া যাবে। 


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

ভূমিকম্পের শঙ্কা : প্রস্তুতি নিতে হবে মোকাবিলার

ভূমিকম্পের শঙ্কা : প্রস্তুতি নিতে হবে মোকাবিলার

ধর্মীয় সম্প্রীতির এদেশ : যার মূলে আছে ইসলামের আদর্শ

ধর্মীয় সম্প্রীতির এদেশ : যার মূলে আছে ইসলামের আদর্শ

গণস্বার্থে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে

গণস্বার্থে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে

কুষ্টিয়ায়  স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

২ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, কারখানা সিলগালা

২ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, কারখানা সিলগালা