বন্যা দুর্গত এলাকায় সেনা বাহিনীর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্গত এলাকা থেকে ২০ হাজারের অধিক আক্রান্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার এবং ১৩টি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে দুই হাজারের বেশি অসুস্থ্য ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। তিনজন সন্তান সম্ভাবনাসহ ২২ জন অতি অসুস্থ রোগীকে হেলিকপ্টারের মাধম্যে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার করা একজন সন্তানসম্ভাবনা মা কুমিল্লা সিএমএইচ এ একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই পর্যন্ত শুকনো খাবারের ৩০ হাজারের বেশি প্যাকেট বিতরণ ছাড়াও ছয় হাজার অধিক মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এই মোট ৪৮টি হেলিমিশন পরিচালনা করা হয়েছে। বন্যার পরবর্তী কার্যক্রমেও সেনাবাহিনী তাদের কাজের ধারা অব্যাহত রাখবে। গতকাল রোববার এসব তথ্য জানান মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: নাজিম-উদ- দৌলা।
তিনি বলেন, প্রথম দুই দিন তীব্র স্রোত ও প্রতিকূলতার কারণে উদ্ধারের কাজ কিছুটা ব্যহত হলেও তৃতীয় দিন থেকে আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে চলমান রয়েছে। উদ্ধার কাজের অংশ হিসাবে দূর-দূরান্ত থেকে পানি বন্ধি রোগী, গর্ভবতী মা, বয়োজষ্ঠ ও শিশুদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রদানের জন্য হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সিএমএইচ ও অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সামগ্রীক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে ডাক্তার ও মেডিকেল টিম নিরলসভাবে এসব এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কসহ সার্বিক সড়ক ব্যবস্থা সচল রাখা এবং বাঁধ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছে। যানজটকে উপেক্ষা করে ত্রাণ কার্যক্রমে মিলিটারি পুলিশও কাজ করছে।
একই সঙ্গে ভেঙে পড়া মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর সিগনাল কোড, বিআরটিএ ও মোবাইল কোম্পানীর অপারেটরদের আমরা সাহায্য করছি। যার ফলে কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যে মোবাইল যোগাযোগ সচল হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রধানও বন্যাদুর্গত এলাকায় পরিদর্শণ করেছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোবাবিলায় সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টা রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও চিফ অব জেনারেল স্টাফ সংশ্লিষ্ট জিওসিবৃন্দসহ ঊর্ধবতন সামরিক কর্মকর্তারা এসব এলাকায় পরিদর্শন করে তদারকি করছেন। এই মহাকর্মযজ্ঞ সম্পাদনে নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, ছাত্র ও অন্যান্য সংস্থাসমূহ সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে।
ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: নাজিম-উদ- দৌলা বলেন, গত ২১ আগস্ট থেকে অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিশেষত ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম এবং খাগড়াছড়ি জেলার বেশ কিছু অংশ ভয়াবহ বন্যার সম্মুখিন হয়েছে। এছাড়াও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জ ও মৌলবীবাজার জেলাও বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। দেশের এই বন্যার পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। অসামরিক বাহিনীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ২১ আগস্ট সেনাবাহিনীর ১৭, ২৪ ও ৩৩ ডিবিশনের পদাতিক সেনা সদস্যবৃন্দ বন্যাদুর্গত এলাকায় মোতায়েন করা হয়। স্রোতের তীব্রতা এবং আবহাওয়া অত্যান্ত প্রতিকূল হওয়া সত্ত্বেও মোতায়েনকৃত সেনা সদস্যরা বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ প্রদানের কার্যক্রমে সর্বাত্তকভাবে আত্মনিয়োগ করে। এ সকল কাজের জন্য সেনাবাহিনীর সকল হেলিকপ্টার এবং প্রয়োজনীর জলযানের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। বন্যা এলাকার সকল সড়ক ডুবে যাওয়ায় সামরিক হেলিকপ্টার ও জলযান ছাড়াও স্থানীয় নৌকা ও বাহনসমূহকে ব্যবহার করে প্রত্যান্ত অঞ্চল হতে পানি বন্ধি মানুষদের উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দুর্গত অঞ্চলে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য আর্মি এ্যাভিয়েশনের উল্লেখযোগ্য হেলিকপ্টার কুমিল্লা সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে যে সকল সেনা মোতায়েন ছিল অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার লক্ষ্যে সেই কার্যক্রমও পুরোদমে চলমান রয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার কাজে যদি অসামরিক প্রশাসন সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইলে সাহায্য করবে। প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পানি বন্ধি হয়েছে। যত দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে আমাদের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকবে। হেলিকপ্টার নামার মতো জায়গা না পাওয়ায় অনেককে সঠিক সময়ে উদ্ধার করা যায়নি। তবে গত দুই দিন ধরে পানি নামতে শুরু করেছে। যাতায়াতের পথ শুকনো হলে ত্রাণের কাজ আরও গতিশীল হবে। আমাদের আন্তরিকতার কমতি নেই কিন্তু সকল জায়গায় যেতে না পারায় সেবা দিতে পারছি না। এই মূহুর্তে আর্মি এভিয়েশনের আটটি হেলিকপ্টার কাজ করছে। এলাকা ভিত্তির সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।