আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি
৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এর ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিষদ বৈষম্যহীন, জনবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক সিভিল সার্ভিস গঠনে এক গুচ্ছ দাবি করা হয়। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' এর উল্লেখযোগ্য দাবি ও সুপারিশসমূহ হচ্ছে, উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে উপসচিব পদে নিয়োগ প্রদান, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন তথা 'ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার' এর বাস্তবায়ন, প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীভূত করে সকল ক্যাডারের মধ্যে সমতা আনয়ন, পদ সৃজন, স্কেল আপগ্রেডেশন ইত্যাদির মাধ্যমে পদোন্নতিতে সমান সুযোগ প্রদান, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এর পুনর্বিন্যাস বা সংশোধন, বিভিন্ন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার। তাছাড়া পরিষদের পক্ষ থেকে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নিকট বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে আরো যেসব দাবি/সুপারিশ পেশ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনি দায়িত্ব প্রদানে জ্যেষ্ঠতা রক্ষা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, উচ্চতর গবেষণা, শিক্ষা, শিক্ষা বৃত্তির ক্ষেত্রে সমতা আনয়ন, সুষমভাবে সরকারি বাসস্থান বরাদ্দ, পরিবহন সুবিধা, লিয়েন, ডেপুটেশন প্রদান, স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান, প্রশাসনিক পদ পুনর্বিন্যাসও পুনর্গঠন করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগের নিউক্লিয়াস হলো এর ক্যাডার সার্ভিসসমূহ। তার উপরে রয়েছে সরকারের সুপিরিয়র সার্ভিস যা উপসচিব হতে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত বিন্যস্ত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী কর্মবিভাগ নির্মাণের জন্য একটি কমিশন (পে অ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন) গঠন করা হয়। এই আইনের অধীন ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ সিনিয়র সার্ভিসেস পুল (এসএসপি) আদেশ জারি করা হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগকে প্রতিনিধিত্বমূলক এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এর গুণগত বিকাশের জন্য এই আদেশ ছিল একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ১৯৮০ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঝজঙ ২৮৬ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেস (পুনর্গঠন) আদেশ ১৯৮০ জারি করা হয়। এই আদেশে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসকে ১৪ টি সার্ভিস ক্যাডারে বিন্যস্ত করা হয় যার সংখ্যা বর্তমানে ২৬টি। এসএসপি এবং ক্যাডার সার্ভিস ছিল একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো এসএসপি আদেশ কখনোই বাস্তবায়ন করা যায়নি। সচিবালয়ে অবস্থানগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসন ক্যাডার এই সার্ভিসটিকে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। ১৯৮৯ সালে এসএসপি বাতিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১০ (দশ) বছরে একবারের জন্যও পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় নি। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৮৯ সালে এসএসপি বাতিল আদেশে (এসআরও ২৬১, ১৭ জুলাই ) উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিবর্তে বিভিন্ন ক্যাডারের জন্য প্রহসনমূলক কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১০ ফ্রেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে (১১ ফেব্রুয়ারি গেজেট নোটিফিকেশন জারি হয়) উপসচিবের পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫% কোটা রেখে অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ২৫% কোটা বরাদ্দ রাখা হয়। বৈষম্যমূলক কোটা সংরক্ষণের বিরূদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে খাদ্য ও তথ্য ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট মামলা করলে হাইকোর্ট ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে এই কোটা সংরক্ষণকে সম্পূর্ণ বেআইনি বলে রায় প্রদান করে। তবে ২৪ মে, ২০১০ তারিখ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ এর গেজেট নোটিফিকেশনটিকে বৈধ ঘোষণা করেন। কেউ কেউ মনে করেন আপিল বিভাগের আদেশের ফলে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ এবং ১৯৭৫ এর ৪ নং দফার বিধান অনুযায়ী সরকার কেবলমাত্র একটি প্রজ্ঞাপন গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমেই এই বণ্টন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারেন। কাজেই বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বৈষম্য দূর করে নতুন আদেশ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। প্রজাতন্ত্রের জনপ্রশাসন সংস্কারে এ যাবত যতগুলি কমিশন ও কমিটি হয়েছে তার প্রতিটিই প্রজাতন্ত্রের পদসমূহে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। অথচ ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর (সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৫৭ নং আইনের ৬১(১) এর (খ) এর মাধ্যমে ঝবৎারপবং ১৯৭৫ রহিত করা হয় এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ এর (৩) ধারা মোতাবেক সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদ প্রশাসন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে মেধার ভিত্তিতে পদায়নের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মেধার যথাযথ মূল্যায়ন ও বৈষম্যহীন জনবান্ধব সিভিল প্রশাসন গড়তে এসএসপি প্রথা পুনরায় চালু করে মেধার ভিত্তিতে উপসচিব পদে নিয়োগ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' পদোন্নতি বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত জনসেবা নিশ্চিত করতে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, সুপারনিউমারারি (ইনসিটু) ও ভূতাপেক্ষিক পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ, সকল ক্যাডারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডের পদ সৃজন, পদসোপান তৈরি করে পদসমূহ আপগ্রেডেশন এর দাবি/সুপারিশ তুলে ধরে।
বাংলাদেশ বেতারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ এস এম জাহিদ এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে দাবি/সুপারিশসমূহ উপস্থাপনা করেন বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা আক্তার। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, মনির হোসেন, বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের ড. আহসান হাবীব, ড. মো. মফিজুর রহমান সহ বিভিন্ন ক্যাডারের প্রতিনিধিবৃন্দ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস
শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহার দাবি নাগরিক কমিটির
আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত দাবিতে টঙ্গীতে বিক্ষোভ মিছিল
বন্দরে সাবেক কাউন্সিলর আ. লীগ নেতা সিরাজকে সমাজচ্যুত ঘোষণা
ফ্যাসিবাদের দরজা বন্ধ ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
‘নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হলে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে নেবো’
ড. ইউনূসের পাঁচ মামলা বাতিলে কোনো আইনি দুর্বলতা নেই