ছাত্র জনতার উপর হামলাকারীদের বিচার দাবিতে ঢাবিতে মানববন্ধন

Daily Inqilab বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম

সাম্প্রতিক ছাত্র জনতার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের উপর স্বৈরাচার হাসিনার দোসরদের হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও গণসংযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে এ মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। "ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য" ব্যানারে এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাবিতে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার দাবি ও দেশের সব স্তরে স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি প্রদান করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন হয়েছে। গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রশাসন থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনে তাদের লোকজন বসিয়েছে। ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট সরকার হাসিনা পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা থেকে গেছে। জুলাই বিপ্লবে বিরোধিতাকারী চিহ্নিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। এ সময় তারা জুলাই বিপ্লবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নিরীহ সাধারণ মানুষের উপর হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের যথাযথ বিচারের দাবি জানান।

সংগঠনের আহ্বায়ক মুহতাসিম ভূইয়া রাফিদ বলেন, দেশ এখনো ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার এমপি মন্ত্রীসহ যাদেরকে মানুষ চেহারায় চিনে তাদেরকে পালাতে দেখেছি। আমরা এখনো দেখছি দেশের প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের ভূত আটকে আছে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি দেশের ৫৬ টি জেলায় যাদেরকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের বেনিফিট প্রাপ্ত। তাদেরকে নিয়োগের পর যে তারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ কায়েম করবে না তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। আমাদেরকে বলা হয়েছিল পুলিশকে জনগণের বন্ধু বানানো হবে। কিন্তু যখন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনকে অপসারণ করা হলো তখনই পুলিশ সংস্কার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমাদের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরো অবনতি হচ্ছে। খুনি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার যে গ্রাফিদি আমরা দেয়ালে অঙ্কন করেছিলাম ৫ আগস্টের পর তা মুছে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে 'খুনিটা' রাখা হলো 'হাসিনা' মুছে দেওয়া হল। আমাদেরকে নামানো হলো ওয়াল আর্ট এবং ক্যালিগ্রাফির যুদ্ধে। কেন? আমাদের গ্রাফিদি থাকলে সমস্যা কি? আমরা তো গ্রাফিদিতে লিখেছি খুনি হাসিনা। ৫ আগস্টের পর আমাদের গ্রাফিদিগুলো মুছে দিয়ে সেখানে সুন্দর সুন্দর ওয়াল আর্ট করা হলো। এটা কেন করা হলো সেই প্রশ্নের উত্তর আমরা চাই।

রাফিদ বলেন, আমরা বারবার বলছি ফ্যাসিস্ট পালিয়ে গেছে কিন্তু ফ্যাসিজম পালায় নায়। আমরা এখন একটা কালচার ওয়ারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমাদের এখন নজর দেওয়া উচিত বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার যে কাঠামো তৈরি করেছে তার সংস্কার সাধনে। আমরা যখনই ভাববো ফ্যাসিস্ট চলে গেছে তখনই অন্য একটা ফ্যাসিজমের মধ্যে আমরা নিমজ্জিত হব। আমরা দেখছি আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা আবার দানা বেঁধে উঠছে। ৫ আগস্ট এর পূর্বে যেখানে আমরা দল-মত নির্বিশেষে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দাবিতে ময়দানে নেমেছিলাম ৫ আগস্ট এর পর এমন কি হলো যে সবাই সবার বিরুদ্ধে চলে গেল! আমরা দেখছি হঠাৎ করে সবগুলো রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্রেডিট নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে। আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত বিভক্তি তৈরি করা হচ্ছে। যখন আমাদের হিন্দু ভাইদের উপর আক্রমণের খবর পাই তখন তা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার অন্যদিকে হিন্দু ভাইদের উপর কোন ধরনের হামলা আসলে সেটাকে হাজার গুনে বড় করে দেখানো হচ্ছে। আমরা দেখছি আমাদের তিন দিকে জড়িয়ে থাকা তথাকথিত বন্ধু দেশ প্রতিনিয়ত আমাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে। সেসবের প্রতিবাদ করার কেউ নাই, কারণ আমরা কালচারাল ওয়ারে বিজি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হামলার বিচার চেয়ে রাফিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়েছে অথচ আমরা দেখছি তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশে যত হামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার আমরা চাই। আমরা চাই আমাদের ভাইয়েরা যেন সুবিচার পায়। অতি দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্ত কমিটির কাজ হবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যতগুলো হামলা হয়েছে প্রত্যেকটা হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা। আমাদেরকে দেখতে হবে প্রতিটা হামলার জন্য যেন একটা করে মামলা হয়।

তিনি আরো বলেন, আজকে বাক স্বাধীনতার নামে আওয়ামী লীগের দোসর শিক্ষকদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ করা কি কোন অন্যায়! তাহলে বলব আপনি কি জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীকে সমর্থন করবেন? নিশ্চয় তা করবেন না! তাহলে এদের ক্ষেত্রে কেন এত সুশীল হচ্ছি আমরা? আওয়ামী লীগ যখন মানুষের উপর অত্যাচার করে তখন তারা আওয়ামী লীগ। আর যখন তাদের শাস্তির কথা আসে তখন তারা শিল্পী, গুণী, বুদ্ধিজীবী। ফ্যাসিবাদের পক্ষে যত বিশ্ববিদ্যালয়ের যতগুলো শিক্ষক ছিল প্রত্যেকের নিয়োগ প্রক্রিয়া তদন্ত করে দেখতে হবে। জুলাই বিপ্লব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুরাল স্থাপন করতে হবে।

এ সময় ছাত্রলীগের মধ্যে ছাত্রশিবির লুকিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, "আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্রশিবির কেন লুকিয়েছে। আরে ভাই শিবির কেন লুকাবে না বলেন? যখন শিবির ব্লেম দিয়ে কাউকে পেটানো হয়, যখন শিবির করার অপরাধে কাউকে মেরে ফেলা হয় তখন তো কেউ কিছু বলেন না! যখন তাদেরকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয় তখন আমরা বলি হায়হায় বিষয়টা খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলে না!"

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালাউদ্দীন বলেন, আন্দোলনে অনেকেই শহীদ হয়েছে। তারমধ্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েরও অনেক শিক্ষার্থী ছিল। আমরা চাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শহীদ হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা করা হোক।

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিম আসরাফ অর্নব বলেন, আন্দোলনের সময় একজন মহিলা যিনি আমাদেরকে ডেকে ডেকে পানি খাওয়াচ্ছিলেন; তার তো কোনো উদ্দেশ্য ছিল না সেখানে! তাহলে আজ কেন আমরা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছি? এই যে মানুষগুলো, এদের কন্ঠস্বর আমাদের হারাতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এই আন্দোলনে ৪, ৫ কিংবা ৬ বছরের যে শিশুরা মারা গেছে তাদের কি কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে? তারা তো জন্মই নিয়েছে একটা ফ্যাসিবাদী কাঠামোর মধ্যে! সুতরাং তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আন্দোলনে কারো বাবা মারা গেছে, কারো ভাই মারা গেছে, কারো বোন। তাদের সবার তালিকা উঠে আসুক। সকলের সম্মিলিত কন্ঠস্বর হয়ে উঠুক ফ্যাসিবাদী বিরোধী কন্ঠস্বর। জুলাই বিপ্লবকে আমরা আমাদের জনজীবন থেকে হারিয়ে দিতে চাই না।

ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী বিহন আন্দোলনে নিজের আহত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রীক ছিল না, তার একটা বড় প্রমাণ হচ্ছে ফরিদপুর। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন হামলা হয় আমরা তার প্রতিবাদে ১৬ তারিখে আমাদের কলেজে প্রতিবাদ সমাবেশ করি। তখন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মদদে ছাত্রলীগের গুন্ডারা আমাদের উপর হামলা করে। প্রতিবাদে অল্প সময়ের মধ্যে পুরো ফরিদপুর উত্তাল হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, ৪ আগস্ট যখন সারাদেশ থেকে মানুষ বানের জলের মতো ভেসে উঠে তখন ফরিদপুরের মানুষও জেগে উঠে এবং আমরাও ফরিদপুরকে আওয়ামী লীগমুক্ত করি। ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার দোসররা গা ঢাকা দেয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমাদের উপর যারা হামলা করছে তাদের কারো ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম একটা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু এখনো আমাদের আশার প্রদীপ নিভে আছে। আমাদের প্রশ্ন - আমাদের আর কত সময় লাগবে এই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে?


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক

মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক

দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম

দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম

জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে

জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে

সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে

মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে

চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল

চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল

সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক

সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক

মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’

মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’

সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ

সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে

মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে

মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার

ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্

ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্

মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫

মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫

ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান

ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান

মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু

গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন