ইমিগ্রেশন যেন সোনার খনি ফিরতে মরিয়া অনেকেই

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১২ পিএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

 


পুলিশের কাছে সবচেয়ে পছন্দের এবং লোভনীয় জায়গা হচ্ছে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখা। এখানে পদায়ন পেতে কনস্টেবল থেকে কর্মকর্তা পর্যন্ত চলে টাকার খেলা। আর এ জন্য অন্যত্র বদলি মেনে নিতে পারছেন না পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। এ যেন এক সোনার খনি। দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার হয়রত শাহজালাল (রা:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে পুলিশের দুর্নীতি ও অনিয়মে দীর্ঘ তালিকা বহু পুরাতন। বর্তমান সময়ে সাধারন মানুষের সেবার মান কিছুটা উন্নয়ন হলেও বিগত আ’লীগ সরকারের সময়ের প্রভাবশালী ছাত্রলীগ করা কর্মকর্তারা ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। এতে করে এক দিকে যাত্রী হয়রানি বেড়ে যাবে এবং অন্যদিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিদেশে মানব পাচারকারী চক্র আবারো সক্রিয় হয়ে উঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে দীর্ঘ দশ বছর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের নানা পদে কর্মরত ছিলেন বিশেষ পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। এক সময় শাহরিয়ার আলম এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের ঘনিষ্ট কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আ’লীগ সরকারের পতন হলে প্রভাবশালী ওই কর্মকর্তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। তবে তিনি আবারো এসবিতে ফিরে আসার ব্যাপক তদ্বির করছেন। এমনকি বর্তমান সময়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে শাহরিয়ার আলম ম্যানেজ করে স্বপদে ফেরার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। যা খুবই রহস্যজনক। এসবির ইমিগ্রেশন শাখার মতো একটি স্পর্শকাতর শাখায় এ ধরনের কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনা হলে সরকারের অনেক গোপীয় তথ্য পাচার হওয়ার আশংকা থেকে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কারন এসবির ইমিগ্রেশন একটি স্পর্শকাতর শাখা। কারা বিদেশে গেলেন এবং কারা দেশে আসলেন সব তথ্য থাকে এই শাখায়। ইতিমধ্যে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ বেশ কয়েজন ব্যক্তিকে বিদেশে পালানোর সময় সহযোগিতা করেছেন বলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
এসবির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশের খপ্পর থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগকে বের করে আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রভাবশালিদের কারনে শেষ পর্যন্ত সে চেষ্টা সফল হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ে দুনীতিবাজ পুলিশি কর্মকর্তাদের চাপে আবারও ইমিগ্রেশন বিভাগ পুলিশের খপ্পরে পড়েছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সমন্বয়ে তৈরি ইমিগ্রেশন পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন বিদেশগামী যাত্রীরা। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আকাশপথের যাত্রীদের নানা অযুহাতে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল ওপের সিক্রেট। বর্তমান সময়ে ইমিগ্রেশনে সেবার মান বেড়েছে। আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব নেয়ার অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা দুটোই তাদের রয়েছে। এই অধিদপ্তরে নিয়োগের পরই এদের সেভাবে অরিয়েন্টেশন দেয়া হয়। এক মাস হাতে কলমে ট্রেনিং দেয়া হয়। পুলিশের প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের চেষ্টা থাকে এয়ারপোর্টে আসা। আগে টাকার জন্য ইমিগ্রেশনে আসার চেষ্টা করতেন অনেক কর্মকর্তা। তবে এখন ইমিগ্রেশনে চাকরি করা আমাদের কাছে সম্মানের, আমরা চাই না দুনীতিবাজরা আবার সক্রিয় হউক ইমিগ্রেশনের মতো দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়।
একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সক্রিয় রয়েছে মানব পাচারে জড়িত বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের সাথে আওয়ামীপন্থ’ী পুরাতন পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ দীর্ঘদিনের। পুরাতন কর্মকর্তারা ফিরে আসলে ওই সিন্ডিকেট আবারো সক্রিয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যা বর্তমান সরকারের সময় প্রায় বন্ধ। বিদেশগামী যাত্রীদের হয়রানির পাশাপাশি বিমানবন্দরের বিভিন্ন বিভাগের ধান্ধাবাজির অভিযোগও রয়েছে বিগত সরকারের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তারা (সাবেক আ’লীগ ক্যাডার কর্মকর্তা) আবার সক্রিয় হলে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের শত শত শহীদের আত্মা যেমন শান্তি পাবে না, তেমনি দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হবে।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক

মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক

দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম

দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম

জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে

জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে

সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে

মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে

চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল

চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল

সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক

সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক

মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’

মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’

সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ

সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে

মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে

মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার

ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্

ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্

মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫

মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫

ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান

ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান

মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু

গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন