মধ্যরাতে মদসহ এক নারীকে আটকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

Daily Inqilab সোশাল মিডিয়া ডেস্ক

০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

গাড়িতে বসে মদ পান আর বহনের অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে এক নারীকে আটক করা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। যৌথবাহিনীর অব্যাহত এসব মাদকবিরোধী অভিযানের অনেকেই প্রশংসা করলেও ছোটখাটো অপরাধ দমনে গুরুত্ব দেওয়ায় দাগী অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে অনেকে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন।

শনিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাতের ওই অভিযান অখ্যাত কয়েকটি পোর্টালের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। যেখানে ‘মধ্যেরাতে যে কারণে সেনাবাহিনীর হাতে আ:টক সুন্দরী তরুণী!’- এমন চটকদার শিরোনামে লাইভ দেখানো হয়। ফলে দ্রুতই তা ভাইরাল হয়। অভিযুক্ত একজন নারীকে নিয়ে কথিত ওই সাংবাদিকের অপেশাদ্বার আচরণ নিয়েও সমালোচনা করেছেন নেটিজেনরা। এতে ওই নারী অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্য হয়েছেন বলে মনে করেন তারা।

উল্লেখ্য, মাদক আর মদ এক জিনিস নয়, বাংলাদেশের আইনে খুব স্পষ্টই মাদক এবং মদকে আলাদা করে দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে মিডিয়া সস্তা পাবলিসিটির জন্য মদকে মাদক বানিয়ে এবং সুন্দরী নারীর কথা উল্লেখ করে সম্পূর্ণ অপেশাদারি ভূমিকার পরিচয় দিয়েছে।

জানা যায়, শনিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে নগরীর খিলক্ষেত এলাকায় উত্তরা আর্মি ক্যাম্প, ট্র্যাফিক পুলিশ ও ক্ষিলখেত থানা পুলিশের যৌথ অভিযান চালানো হয়।

পুলিশ জানায়, ওই নারীর গাড়িতে চালক ছাড়াও আরও দুইজন ছিলেন। তবে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন তারা। পরে গাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২ ক্যান বিদেশি বিয়ার, একটি কাচের বোতলে ২০০ গ্রাম বিদেশি মদ, মদ পানের স্বচ্ছ গ্লাস ও মদকবহনকারী প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়।

ভিডিওতে ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কি মদ বেচি যে আমার ছবি তুলছেন।যারা মদ বেচে তাদের ছবি তোলেন।’ এসময় তার মদ পানের লাইসেন্স আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আছে। কেন ধরছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে বাস করি ধরবেই তো।’

উত্তেজিত হয়ে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি কর্মজীবী মহিলা। আমি দুই বাচ্চার মা। আমি রিফ্রেসমেন্টের জন্য যায়তেই পারি। সেজন্য এভাবে হাঙ্গামা করে টাকা ইনকাম করবেন এটা আমাদের কাছে কোনো বিষয়ই না। কারণ আমরা দেশের বাইরে থাকি।’

এদিকে, এসব ছোটখাটো অপরাধ নিয়ে যৌথবাহিনী ব্যস্ত থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সচেতন নেটিজেনদের একাংশ। তারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও আত্মগোপনে চলে যায় ছাত্র-জনতার চিহ্নিত খুনি ও পতিত স্বৈরাচারের দোসররা। এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেফতারে তেমন কোন সফলতা নেই। অথচ ছোটখাটো অপরাধী ধরতে সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রাখা হয়েছে।

৫ই আগস্ট পরবর্তী থানার লুণ্ঠনকৃত অস্ত্রগুলো এখনো সিকি ভাগ উদ্ধার হয়নি অথচ ছোটখাটো অভিযানে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর মত সুসংগঠিত শক্তিশালী বৃহৎ প্রশিক্ষিত বাহিনীকে লাগানো একটি ব্যাপক রাষ্ট্রীয় অপচয় মনে করছেন অনেকে।এছাড়াও ব্যাংকলুটেরা এবং খাদ্যপণ্য সিন্ডিকেট মাফিয়া ও অনেক কুশিলবেরা এখনো প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও তাদের ব্যাপারে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী যদি এক্ষেত্রে মনোনিবেশ করে খুব দ্রুতই এ ধরনের মাফিয়ারা আইনের আওতায় চলে আসবে। এতে সেনাবাহিনীর মর্যাদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের প্রত্যক্ষ উপকার হবে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোঃ ইব্রাহিম লিখেছেন, সে যেহেতু বলছে যে তার লাইসেন্স আছে তাহলে তাকে কেন হেনস্থা করা হচ্ছে। তবে সে যদি ওপেনে মদ পান করে থাকলে বা মদপান অবস্থায় গাড়ি চালালে সেটা অন্যায়, তার জন্য যৌথবাহিনী ব্যবস্থা নিয়ে থাকলে ভালো। কিন্তু সেটা প্রমাণিত হওয়ার আগে সরাসরি সম্প্রচার করে কি তাকে হেনস্থা করা হলো না? এইসব সস্তা সাংবাদিকতা পরিহার করা জরুরি।

সুমন নামে একজন লিখেছেন, উনি ড্রিঙ্কস করছে তাতে কি হয়েছে ওরা তো কাউকে ক্ষতি করতেছে না। উনি ওনার টাকাতে ড্রিঙ্কস করছে এবং সে যথেষ্ট নিরাপদ জায়গায় ড্রিঙ্কস করতেছে। আমি এতে দোষের কিছু দেখছি না। তার লাইসেন্স আছে। এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে। পারলে ফ্যাসিবাদের দোসর, জুলাই-আগস্টের খুনি ও ব্যাংক লুটেরাদের গ্রেফতার করে দেখান।

সাব্বির হোসাইন লিখেছেন, মহিলার কথায় যুক্তি আছে মদের দোকান লাইসেন্স কেন দেন। আর যদি দেন ক্রেতা না পেলে দোকানদার কার কাছে বিক্রি করবে। আর মহিলাটি তো বলতেছে তার কাছে লাইসেন্স আছে তা হলে এরে তো আটকের মানে হয় না।

ইমরান হোসেন লিখেছেন, এগুলো করে কতটুকু সুফল আসবে? ছাত্র-জনতার গণহত্যাকারীদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী ও ব্যাংকলুটেরা এখনও বহাল তবিয়তে আছে সেখানো নিছক এসব অভিযানে সেনাবাহিনীর মতো সুসংগঠিত একটি বাহিনী নিয়োজিত রাখা হয়েছে তা বুঝে আসে না!!

এতে সাধারণ মানুষের কোন উপকার হবে না। খুনি-লুটেরাদের গ্রেফতার করুন। অযৌক্তিক বাসা ভাড়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অতিরিক্ত বাসভাড়া, কথায় কথায় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া, এরকম জনকল্যাণমূলক কাজ করতে পারলে তবেই তাতে জনগণের কল্যাণ হবে।

গোলাম কিবরিয়া লিখেছেন, বড় বড় জায়গায় হাত দেন। যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করে বাগানবাড়ি বানিয়েছে সেই সব জব্দ করে এবং নিলাম করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগান। আর সাংবাদিকদেল বলবো, আমাদের সমাজে এটা বড় ধরনের অপরাধ না এর থেকে বড় বড় অপরাধ বাংলাদেশে হইতেছে সেগুলো নিয়ে নিউজ করূন।

অন্যদিকে, বাবুল সরকার সেনাবাহিনীর প্রশংসায় লিখেছেন, ধন্যবাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরা দেশ-জাতি, সমাজের বিষাক্ত পয়জন এদের মত পয়জন সমাজ থেকে মুছে দিতে না পারলে এদেশে সভ্য সমাজ গড়া অসম্ভব। ঝালটা একটু বেশি একে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।

মোঃ শাহিন লিখেছেন, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সত্যিই মহান কাজ করে চলেছেন। পুলিশের পক্ষে যা সম্ভব ছিল না তারা তা করে দেখাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সাহসিকতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করছেন। সেনাবাহিনী ছিল বলেই আজ আমরা শান্তিতে ঘুমোতে পারছি। ধন্যবাদ প্রাণের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

 


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
খতমে নবুওয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স
ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও
ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা
আরও

আরও পড়ুন

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক

বিচ্ছেদ হতে না হতেই আবারও একসাথে তারকা জুটি বেন-লোপেজ

বিচ্ছেদ হতে না হতেই আবারও একসাথে তারকা জুটি বেন-লোপেজ

হাইতির হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত তিনজন

হাইতির হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত তিনজন

ছাত্রদলের কমিটি : ঢাকা কলেজের সামনে ৭টি ককটেল বিস্ফোরণ

ছাত্রদলের কমিটি : ঢাকা কলেজের সামনে ৭টি ককটেল বিস্ফোরণ

আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ১৫

আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ১৫

গুম হন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খালেদ হাসান

গুম হন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খালেদ হাসান

বিদেশি ভুল তথ্য ঠেকানোর মার্কিন সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ

বিদেশি ভুল তথ্য ঠেকানোর মার্কিন সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ

চাঁদপুরে জাহাজে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় মামলা

চাঁদপুরে জাহাজে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় মামলা

গাজায় বড়দিনে শান্তির জন্য প্রার্থনা, নিহতের সংখ্যা ছাড়লো ৪৫ হাজার

গাজায় বড়দিনে শান্তির জন্য প্রার্থনা, নিহতের সংখ্যা ছাড়লো ৪৫ হাজার

স্ত্রী-সন্তানসহ শাহরিয়ার আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্ত্রী-সন্তানসহ শাহরিয়ার আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের ৩শ' ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর

মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের ৩শ' ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া