রাজধানীর উত্তরায় পেশাদার ছিনতাইকারী,কিশোর গ্যাং অজ্ঞান পার্টি, টানা পার্টি, মলমপার্টি, মাদক ব্যবসায়ী,ভুমিদস্যু ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান ও গ্রেফতার কার্যক্রম চলছে । এখানকার সেক্টর সড়ক ও পাড়া মহল্লায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেফতার কার্যক্রম ও পুলিশি তৎপরতা বাড়ার ফলে স্থানীয় পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে।
গত ১৩ই জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখ "উত্তরায় ছিনতাই আতংক" শিরোনামে পাঠক প্রিয় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর পর উত্তরার পুলিশ প্রশাসনের কর্মতৎপরতা বেড়েছে দ্বিগুণ। জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে থানা পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সংবাদ প্রকাশের পর থেকে প্রশাসনের উপর মহলের নির্দেশে অপরাধ হটস্পট গুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বেড়েছে। পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছে পেশাদার ছিনতাইকারী,চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং ও শীর্ষ সন্রাসীরা।
উত্তরার পুলিশ প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, নামে বেনামে প্রকাশিত এ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। গতকাল ২৭শে জানুয়ারি রাত ২.০৫ মিনিটের সময় উত্তরা ১২-১৩ সেক্টর মোড় গাউসুল আজম এভিনিউ ইউসিবি ব্যাংকের সামনের পাকা রাস্তার উপর চেকপোস্ট পরিচালনা করেন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
এ সময় তারা ১৩ বোতল মদ উদ্ধারসহ মাদক ব্যবসায়ী ৪ কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করেন।এরা হলো ইমরান সানি সিকদার @ কন্ডম সানি (৩০) পিতা: আব্দুল কুদ্দুস, মেহেদী সাদী পিতা :নুরুল হক, মোঃ ওয়ারিশ(৩৬)পিতা লিয়াকত, আক্তারুজ্জামান মমিন (৪০)পিতা ফজলুল করিম। তাদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন-৩৬(১) এর ২৪(ক) রুজু পূর্বক গ্রেফতার কৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন থানা পুলিশ।
২৬শে জানুয়ারি রাত্রি ২৩.৫৫ ঘটিকায় উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৯ নং সেক্টরের ঝিলপাড় সাপরা মসজিদের উত্তর পাশে ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের উপরে অভিযান পরিচালনা করেন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। এ সময় ডাকাতি প্রস্তুত কালে একটি ধারালো লোহার চাপাতি, দুইটি ধারালো ছোড়া দুইটি লোহার রড উদ্ধারসহ সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। জানা যায়, গ্রেফতারকৃতদের নামে উত্তরার বিভিন্ন থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার কৃতরা হলো মোঃ রুবেল, মোঃ মুসা মৃধা, মোঃ রাজন, জুয়েল, মো: কাশেম, টুটুল আলী, মোঃ সুজন, শাওন হাওলাদার, মোঃ রিপন, ওমর ফারুক, শাকিল ও নাজমুল। গ্রেফতার কৃতদের নামে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়। মামলা নং-৬৩।
তুরাগ থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গতকাল ২৬ শে জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখ উত্তরা ১৫ নং সেক্টর পাসপোর্ট অফিসের পশ্চিম পাশে সুমনের কম্পিউটার দোকানে ২০০০০/- বিশহাজার টাকা চাঁদা দাবি করায় আসলাম আলম ওরফে স্বাধীন পিতা মৃত খোরশেদ আলমসহ ৭ জন ও অজ্ঞাত ৪/৫ জনের নামে দোকানদার মোঃ সুমন বাদি হয়ে তুরাগ থানায় মামলা করেন।মামলার পর পর
তুরাগ থানা পুলিশ আসলাম আলম ওরফে স্বাধীনকে গতকাল গ্রেফতার করেন।
গত ১৪ই জানুয়ারি উত্তরা এক্সপ্রেস মল গেষ্ট হাউজ মলের মেইন গেইট ভাংচুর করে ২য় তলার রিসিপসনে প্রবেশ করে ম্যানেজারের নিকট চাঁদাবাজির সময় ১০ জনকে আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। আটককৃতদের আদালতে চালান করেন। অপর দিকে গত ১৫ই জানুয়ারি ২০২৫ইং তারিখ উত্তরা ১০ নং সেক্টর সুইচ গেইট মোড়ে অটোরিকশায় চাঁদাবাজির অভিযোগে সুমন চৌধুরী নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
গত ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার ভোরে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ফ্লাইওভার সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮ সক্রিয় ছিনতাইকারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন নুরুল আমিন (২২), শাকিব হোসেন (২১), পারভেজ আহমেদ জুয়েল (৩৮), কবির হোসেন (২৪), মোরশেদ আলম (৩০), আকাশ মোল্লা (২৬), রাকিব (১৯) ও মো. জিয়া (২০)।
এছাড়াও উত্তরা কামাড়পাড়া এলাকা থেকে গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে দেশীয় অস্ত্রসহ পাঁচজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় কৌশলে আরো কয়েকজন ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়।ওই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়।
গত ১৬ই জানুয়ারি উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে পুলিশের তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্রাসী ইমরান হোসেন ওরফে সুলতান ও তার সহযোগী মোঃ সাজু মিয়াকে ১৮ নং সেক্টর পঞ্চবটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে তুরাগ থানা পুলিশ।সুলতান তুরাগ থানা চান্দুরা এলাকার মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে। জানা যায়, ২০১৬ সালের দিকে সে কিশোর গ্যাং সৃষ্টির মধ্যদিয়ে সন্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,সুলতান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তুরাগ এলাকায় মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন সন্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সুলতান ফ্যাসিস আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায়।
গত ২০/০১/২০২৫ ইং তারিখ অভিযান চালিয়ে তুরাগ থানার পুলিশ ৯ মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি কুখ্যাত ছিনতাইকারী মাদক ব্যবসায়ী জামালকে গ্রেফতার করে। তাকে ২০শে জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ ঘটিকার সময় তুরাগ থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আহালিয়া উত্তরপাড়া জনৈক কাশেম মিয়ার রিক্সার গ্যারেজের পিছন থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে তুরাগ ও উত্তরা পশ্চিম থানায় ৯টি মামলা রয়েছে।
গতকাল ২৬ জানুয়ারি রাত ১২:০৫ ঘটিকায় সক্রিয় ছিনতাইকারী মোঃ মোবারক (২৫)কে গ্রেফতার করেন উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া। মোবারক নন্নী (বাজুপাড়া) থানা নালিতাবাড়ী,শেরপুর জেলার মোঃ রেজাউল করিমের ছেলে। সে বর্তমানে উত্তরখান মাষ্টারপাড়ায় বসবাস করে। তার বিরুদ্ধে ৩৯২ পেনাল কোড-এ গত ১৩/০১/২০২৫ ইং তারিখ উত্তরখান থানায় মামলা হয় যাহার নং-০৭।
ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার প্রসঙ্গে উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মোক্তাদির (পিপিএম) বলেন, ছিনতাইকারী,কিশোর গ্যাং ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ছিনতাইকারী গ্রেফতার হচ্ছে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছেন। বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ তাসলিমা আক্তার বলেন,তারা অজ্ঞান পাটি, টানা পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। গ্রেফতার কৃতদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিল্ডিং ঠিকাদার জহিরুল ইসলাম বলেন,একটা সময় উত্তরায় ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় জনমনে ভয়াবহ আতংক সৃষ্টি হলেও বর্তমানে পুলিশের অভিযান বাড়ার কারণে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরছে।
উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর সড়ক এলাকার পথচারী, চাকুরী জীবী নারী- পুরুষ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা কর্মস্থলে আসা যাওয়ার পথে সব সময় আতংকে থাকি। পুলিশ ছাড়া কেউ তাদেরকে থামাতে পারবে না।তারা আরো বলেন, পুলিশই আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে, ছিনতাই প্রতিরোধ থানা পুলিশের কোন বিকল্প নেই। এসব নিয়ন্ত্রণে র্যাব বাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো খুব জরুরি।