মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

বিদেশিরা এসে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪৯ এএম

বিএনপির চরিত্র বাইরে নালিশ আর কান্নাকাটি করা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাইরে গিয়ে নালিশ করা; কান্নাকাটি করা এটাই তাদের চরিত্র। তারা মনে করে বিদেশ থেকে এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। বাংলার মানুষ এখন অনেক সজাগ, অনেক সচেতন। গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আমি জানি, অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি আছে, বাংলাদেশে এই ধারাবাহিক গণতন্ত্র তাদের পছন্দ হয় না। আর আমাদের কিছু আঁতেল আছে, তাদের তো (ধারাবাহিক গণতন্ত্র) পছন্দই না। তারা মনে করে, একটা অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কদর বাড়ে। কারণ যারা অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে, তাদের কিছু লোক হাতের লাঠি লাগে বা খুঁটি লাগে। সেই লাঠি হতে পারছে না বলেই তাদের মনে খুব দুঃখ।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা হয়। সেই অবৈধ ক্ষমতা দখল মূলত লেবাস পরে ক্ষমতায় উত্তরণ। রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে তারপর আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনৈতিক হয়ে যাওয়া আর ক্ষমতা উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করা কালচারটাই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। আজ সেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দলখকারীদের হাতে তৈরি করা যে সংগঠন তারা নাকি গণতন্ত্র চায়! যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি; হয়েছে অবৈধ দখলের মধ্য দিয়ে মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র দেয়নি, তারা গণতন্ত্র দেবে? আর গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে? তোদেরকে জিজ্ঞাস করতে হয় তোদের জন্মটা কোথায়? আর অবৈধ দখলদারি এটা তো আমাদের শুধু কথা না এটা উচ্চ আদালতই বলে দিয়েছেন যে জিয়া, এরশাদ এদের সকলের ক্ষমতা দখল ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপরেও তারা নাকি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামও করে; লড়াইও করে!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যদি তুলনা করি, দেখা যায় জিয়াউর রহমানের আমল, এরশাদের আমল, খালেদা জিয়ার আমল। তারা নালিশ করে বেড়ায় তাদের ওপর নাকি খুব অত্যাচার করা হয়েছে। আরে অত্যাচার তো আমরা করিই নাই। অত্যাচার করেছে তো ওই বিএনপি-জামায়াত জোট, জিয়াউর রহমান এসে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার থেকে শুরু করে কয়েক হাজার মানুষকে, বিমানবাহিনীর অফিসারদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। তাদের পরিবারগুলো তাদের লাশও পায়নি। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অগণিত নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে। জিয়ার আমলে ছিল সাদা মাইক্রবাস, সেটিতে যে উঠছে সে আর কোনো দিন মায়ের কোলে ফিরে আসেনি। এই ভাবে তুলে নিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তারা আর কোনো লাশও খুঁজে পায়নি। এভাবে অগণিত মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, কত নাম বলবো?

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা তো তাদের মিছিল-মিটিং করতে দিচ্ছি। আওয়ামী লীগকে তো কোনোদিন মাঠেই নামতে দেয়নি। হাত কেটেছে, পা কেটেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বাড়ি-ঘর দখল করে সেখানে রাতারাতি পুকুর কেটেছে। সারা বাংলাদেশে তারা তা-ব করে বেড়িয়েছে। আর তারা আসে গণতন্ত্রের ছবক দিতে? তাদের ওপর নাকি অত্যাচার হয়? ওরা যা আমাদের সাথে করেছে তার যদি এক ভাগও আমরা করি তাহলে ওদের তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা তো সে পথে যাইনি, আমরা তো আর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। ওরা যে অন্যায়গুলো করেছে আমরা মানুষের জন্য সেই ন্যায় বিচারগুলো করেছি, ন্যায়ের কাজ করে যাচ্ছি।

মানবাধিকারের দাবির প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে পার্লামেন্টে বসিয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এরশাদ তাদের দল গঠন করার সুযোগ দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে দিয়েছে কর্নেল ফারুককে। রশিদ আর হুদাকে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করে তাদেরকে সংসদে এনে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসিয়েছে। তাদের বিচার করা যাবে না? মানবাধিকারের কথা বলে আমরা যারা ১৫ আগস্টে আপনজন হারিয়েছি আমাদের কি মানবাধিকারের কোনো সুযোগ নাই? আমি বিচার চাইতে পারিনি আমার বাবা মার হত্যার। তারা আজ এতো কথা কোথা থেকে বলে? তিনি আরো বলেন, দশের ভেতরে না, বাইরে গিয়ে নালিশ করা; কান্নাকাটি করা এটাই তাদের (বিএনপি) চরিত্র। তারা মনে করে বিদেশ থেকে এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। বাংলার মানুষ এখন অনেক সজাগ, অনেক সচেতন। জাতির যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আমরা ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসি তখন আমরা অনেকগুলো কাজ করে বাংলাদেশকে একটা মর্যাদায় নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে আমরা সরকারের আসতে পারিনি। কেন পারিনি? বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করতে যদি আমি রাজি হতাম; আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধাই হতো না। কিন্তু দেশের মানুষের সম্পদ বেঁচে দিয়ে, আর দেশের মানুষের মুখ কালো করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে ক্ষমতায় যাবে ওই রাজনীতি আমি করি না।

দেশের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া এটাই আমাদের অঙ্গীকার, আমরা এটা করছি। আওয়ামী লীগ যেটা বলে সেটা করে। স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে ২৯ বছর ছিল বাংলাদেশের কালো অধ্যায়। সেই কালো যুগ কেটে আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন সূর্যের আলো নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে, আলোর পথের যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ সেই পথেই চলে যাবে। দেশের মানুষকে বলবো আওয়ামী লীগের প্রতি যে আশা ও বিশ্বাস নিয়ে চলেছে; সেই আশা ও বিশ্বাস নিয়ে যেন এগিয়ে যায়, কারও মিথ্যা কথায় যেন বিভ্রান্ত না হয়। তিনি বলেন, আমি জানি অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি আছে, যাদের এ ধারাবাহিক গণতন্ত্র পছন্দ হয় না। আর আমাদের কিছু আতেল আছে তাদের তো পছন্দই না। এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। যে অবৈধ শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছিল- তাদের কোনো প্রেতাত্মা যেন আবার বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে না পারে, আবার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি করতে না পারে- সে জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং দেশের জনগণ অতন্দ্র প্রহরীর মতো, সকলকে সজাগ থেকে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছি, আবার ২০১৪ তে ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আছি বলে ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে; ধারাবাহিক উন্নয়ন রয়েছে। তাই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধ একটি জনযুদ্ধ ছিল। যারা ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসেছে, দেশের মানুষকে তৈরি করেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দিয়েছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত শুধু তা নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও মাঠে নেমে গিয়েছিল। যে যেভাবে পেরেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। তিনি আরো বলেন, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটা গেরিলা যুদ্ধ। তাই গেরিলা যোদ্ধারা দেশে ঢুকলে মা-বোনেরা রান্না করে খাওয়ার দেওয়া, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের তথ্য দেওয়া; সেই কাজগুলো করেছে। একটা জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এদেশে স্বাধীনতার বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মৃণাল কান্তি দাস, মোহাম্মদ জমির প্রমুখ। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নাটোরের গুরুদাসপুরে হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু

নাটোরের গুরুদাসপুরে হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু

অবশেষে ‘বিদায়’ বললেন মার্তা

অবশেষে ‘বিদায়’ বললেন মার্তা

ভারত-পাকিস্তান রোমাঞ্চের অপেক্ষায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দূত যুবরাজ

ভারত-পাকিস্তান রোমাঞ্চের অপেক্ষায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দূত যুবরাজ

২০১৬ সাল থেকে স্বপ্ন ছিল চেন্নাইয়ে খেলার: মুস্তাফিজ

২০১৬ সাল থেকে স্বপ্ন ছিল চেন্নাইয়ে খেলার: মুস্তাফিজ

সোসিয়াদাদকে হারিয়ে শিরোপার হাতছোঁয়া দূরত্বে রিয়াল

সোসিয়াদাদকে হারিয়ে শিরোপার হাতছোঁয়া দূরত্বে রিয়াল

বেয়ারোস্টের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে রান তাড়ার অবিশ্বাস্য রেকর্ড পাঞ্জাবের

বেয়ারোস্টের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে রান তাড়ার অবিশ্বাস্য রেকর্ড পাঞ্জাবের

বিশ্ব বাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম

বিশ্ব বাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম

বুশরা বিবির খাবারে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানোর অভিযোগ

বুশরা বিবির খাবারে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানোর অভিযোগ

মোদির হিন্দুত্বের তাস দক্ষিণ ভারতে ব্যর্থ

মোদির হিন্দুত্বের তাস দক্ষিণ ভারতে ব্যর্থ

মন্দিরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তভিত্তিক বিচারের দাবি

মন্দিরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তভিত্তিক বিচারের দাবি

কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকের মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকের মৃত্যু

ফতুল্লায় ৫ যুবক আটক, ‘ডাকাতির প্রস্তুতি’র অভিযোগ

ফতুল্লায় ৫ যুবক আটক, ‘ডাকাতির প্রস্তুতি’র অভিযোগ

তীব্র তাপদহে বৈরী আবহাওয়া, ভোরে কুয়াশা, মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোওয়া অনুষ্ঠিত

তীব্র তাপদহে বৈরী আবহাওয়া, ভোরে কুয়াশা, মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোওয়া অনুষ্ঠিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ

গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ

মোদির গোলামির জিঞ্জিরে দেশকে আবদ্ধ করেছে সরকার -মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম

মোদির গোলামির জিঞ্জিরে দেশকে আবদ্ধ করেছে সরকার -মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম

ফরিদগঞ্জে বিয়ে না দেওয়ায় মাকে গলা কেটে হত্যা

ফরিদগঞ্জে বিয়ে না দেওয়ায় মাকে গলা কেটে হত্যা

মির্জাপুরে রাজশাহী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ১০ যাত্রী আহত

মির্জাপুরে রাজশাহী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ১০ যাত্রী আহত

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

দু’সহোদর হাফেজ শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে -মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ

দু’সহোদর হাফেজ শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে -মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন অসাধু কর কর্মকর্তারা : সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন অসাধু কর কর্মকর্তারা : সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে