বিমানবন্দর সড়ক: ফুটওভারব্রিজ যেন মরণফাঁদ
৩০ মার্চ ২০২৩, ১০:২৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:০০ এএম
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এলাকায় পথচারী ও বয়স্ক মানুষের কথা বিবেচনা করে সড়কে ফুটওভারব্রিজ ও ব্রিজে চলন্ত সিড়ি স্থাপন করেছে সড়ক ও জনপদ এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সময় বাঁচাতে গিয়ে পথচারীরা সড়কের মাঝখান দিয়ে এলোপাতাড়ি চলাচল করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের অঙ্গহানীসহ অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে অহরহ।
সড়কের এ ধরণের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নগরীর জনবহুল এলাকায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, বীমা কোম্পানিসহ বিভিন্ন অফিসগামী লোকজন, বড় বড় বহুতল মার্কেট ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ফুটওভারব্রিজ স্থাপন করেছেন সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা সিটি করপোরেশন। এছাড়াও এলাকার অসুস্থ রোগী ও বয়স্ক পথচারীদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে ফুটওভারব্রিজে চলন্ত সিড়ি ও স্থাপন করেছেন।
উত্তরা বিমানবন্দর এলাকার অসুস্থ ও বয়স্কো লোকদের চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন হযরত শাহ্ জালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চৌরাস্তায় ফুটওভারব্রিজের দুই পাশে চলন্ত সিঁড়ি (এক্সেলেটর) স্থাপন করেছে। তবে এই সিঁড়ি দুইটি মাসের পর মাস অচল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পথচারীরা জানান, বিমানবন্দর সড়কের এই চলন্ত সিঁড়িটি বেশিরভাগ সময়ই নষ্ট থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারী, সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি ও কাস্টমস হাউজের শত শত বয়স্ক নারী-পুরুষকে এই ফুটওভারব্রিজ ও চলন্ত সিড়ি ব্যবহার করে রাস্তা পারাপার হতে হয় । দীর্ঘদিন যাবত এই ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিড়িটি নষ্ট, এটিকে মেরামত করার কোন উদ্যোগ নিতে কাউকে দেখা যায় না। এ সড়কে চলাচলকারী পথচারীরা আরো জানান, গণমানুষের সেবায় সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ করে এই চলন্ত সিঁড়িটি লাগানো হয়েছে, কিন্তুু এটিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কাদের উপর এটা আমাদের জানা নেই । তারা আরো বলেন, হঠাৎ এটি ১০ /১৫ দিন চলে আবার ২/৩ মাস চলে না।
এবিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের উপ-সহকারী সুজা উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, তারা উত্তরা আজমপুর ও বিএনএস সেন্টারের সামনে ফুটওভারব্রিজের কাজ শুরু করেছেন। এটি শেষ হলে রাজলক্ষী এলাকার ব্রিজের কাজ শুরু করবে। তবে তারা খুব দ্রæত বিমানবন্দর মহাসড়কের ফুটওভারব্রিজগুলো সংস্কার করে এখানকার জনদুর্ভোগ কমাবে। বিমানবন্দর গোল চক্কর এলাকার চলন্ত সিড়ি মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের রাস্তা পারাপারের নিরাপদ মাধ্যম এখানকার ফুটওভারব্রিজ সংলগ্ন এলাকা গুলোতে কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উত্তরখান, দক্ষিণখান, আসকোনা, কাওলা ও সেক্টরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বিমানবন্দর সড়ক রাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম পাশে আশা যাওয়ার নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বর্তমানে ৩টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি চওড়া হওয়ার কারণে আজমপুর ফুটওভারব্রিজ, রাজলক্ষী ফুটওভারব্রিজ ও জসিমউদ্দীন ব্রিজগুলো ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পেটের ভিতর ডুকে গিয়াছে। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় সাধারণ জনগণকে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে।
পথচারীরা জানান, সড়কের পেটে ঢুকে পরা ব্রিজের সংস্কার না করে গত ১ মাস যাবৎ কোন ধরনের নোটিশ এবং ঘোষণা ছাড়াই সড়কের ওপর নির্মিত ব্রিজের দুইপাশের লেন খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বেশি যাত্রীর আশায় গণপরিবহন চালকরা মূল সড়ক ব্যবহার না করে নতুন লেনে চলাচল শুরু করে দিয়েছেন। শত শত গাড়ি নতুন লেনে বেপরোয়া গতিতে চলাচল শুরু করায়, চাকরিজীবী সাধারণ জনগণ, উত্তরার বিভিন্ন স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটওভারব্রিজ পার হয়ে তাদের কর্মস্থলে যেতে হয়। এছাড়াও নিকটস্থ উত্তরা ৬ নং সেক্টর কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল ও উত্তরা ১নং সেক্টরের জসিমউদ্দীন মহিলা মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গরীব অসহায় রুগীদেরকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারা পার হতে হয়। পথচারীরা জানায়, বাস র্য্যাপিড ট্রানজিট বিআরটি প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলার কারণে কয়েক বছর যাবৎ তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। নগরীর ব্যস্ততম এ সড়কে বর্তমানে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা গুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় পথচারী ও শিক্ষার্থীরা জানান, ব্রিজ এলাকায় নিরাপত্তার অভাবে যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এছাড়াও তারা আরো জানায়,গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি বড় হওয়া এসড়কে যানজট কমবে। সাথে সাথে এখানকার ফুটওভারব্রিজগুলো দ্রæত সংস্কার করতে হবে।
উত্তরা জসিম উদ্দিন এলাকায় দায়িত্বরত টি আই খান আরাফাত বলেন, এই ফুটওভারব্রিজটি নিয়ে তারা নিজেরাও আতঙ্কে রয়েছে। ব্রিজের দুই পাশের সড়কে গাড়ি চলাচলের কারণে কখন কি ঘটনা ঘটে যায় এটা ভেবে প্রতিনিয়ন তারা ভয়ে অস্থির থাকেন। এখানে সিটি করপোরেশনের কোন লোক জন নিরাপত্তার দায়িত্বে না থাকলেও তিনি তার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে মহিলা মেডিকেলে আগত অসুস্থ রোগী, শিশু ও বয়স্ক লোকজন এবং স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরকে রাস্তা পারাপারের সহায়তা করছেন। তিনি আরও বলেন, জসিমউদ্দিন এলাকার এ ফুটওভার ব্রিজটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা এ সেবাটি অব্যাহত রাখবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আব্দুল্লাহপুর সড়কে বি আর টি প্রকল্পের চলমান কাজকে সামনে রেখে রাস্তা বর্ধিতকরে যানবাহন চলাচলের জন্য দুটি লেন বাড়ানোর ফলে জসিমউদ্দীন, রাজলক্ষী ও আজমপুর ফুটওভারব্রিজ ৩টি সড়কের পেটের ভিতরে ডুকে গেছে। বর্তমানে পথচারীদের ব্রিজে উঠার আগেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলা যানবাহনের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে হয়। এঘটনায় সড়কের পথচারীদের মাঝে দিন দিন ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কামাল ইনকিলাবকে বলেন,তারা এক প্রকার জিম্মি, তাদের কিছুই করার নাই, এ ভাবেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়ে ব্রিজে উঠতে হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে তারা মুক্তি চায়।
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী ইফফাত জেরিন বলেন,এ সড়কে প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের, পথচারী ও শিক্ষার্থীদের দূর্দশার শেষ নাই, ভোগান্তি কমাতে এই ফুটওভার ব্রিজটি দ্রæত সংস্কার করা প্রয়োজন। উত্তরা ইউনাইটেড কলেজের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রিয়াজ বলেন, উত্তরা মডেল টাউনের গুরুত্বপূর্ন এসড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে, তার উপর ফুটওভার ব্রিজ গুলো ব্যবহার করে রাস্তা পারাপারে নেই কোন নিরাপত্তা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। এখানকার পথচারীরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।এসকল সমস্যা দ্রæত সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি। সড়কের যানজট নিরসন ও পথচারীদের চলাচলে দেখভালে আজমপুর এলাকায় দায়িত্বরত টি আই মাসুম বলেন, রোজার আগে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেস পরে এখানে পথচারীদের চলাচলে সহায়তা করতে দেখা গিয়াছে। রোজায় এখন আর তাদেরকে দেখা যায় না, তবে বর্তমানে তিনি তার সার্জেন্ট সদস্যদের নিয়ে এই ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় যানজট নিরসন ও পথচারী পারাপারে সহায়তা করছেন। তিনি আরো বলেন, পথচারীদের চলাচল নিরাপদ ও নির্ভীগ করতে বিমানবন্দর মহাসড়কের ফুটওভারব্রিজ গুলো খুব দ্রæত স¤প্রসারণ করা দরকার।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে ভারত
নারীকে যৌন নিপীড়ন: খোদ মহারাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসী জুতাপেটা
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস
অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু
বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার
নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত
কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০
রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার
উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন
কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা
ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক
সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা
শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ