আল্লাহর রহমতের বিশালতা
০১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৭ পিএম
মহাসাগরের একটি ঘটনা। এক মাছের আত্মোপলব্ধি হলো। স্বগোত্রীয়দের ঝাঁকে গিয়ে সে আবেগি ভাষণ দিল, ভাইয়েরা বন্ধুরা! জীবনভর শুনে আসছি পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচে না আমাদের জীবন। পানির সান্নিধ্য পেলেই সার্থক হবে জীবন ও মরণ। কিন্তু সেই পানির দেখা পেলাম না কোথাও। মাছেরা সমস্বরে বলে উঠল, তাই তো। ছোটবেলা থেকে আমরাও শুনে আসছি । কিন্তু কোনোদিন পানির পরিচয় পাইনি, জানতে পারিনি তার ঠিকানা। পরস্পর পরামর্শে একটি তথ্য উঠে এল। অমুক সাগরে একটি বৃদ্ধ গুণিমাছ আছে, তত্ত্বজ্ঞানী, জীবন জগতের রহস্য তার জানা। তার দীক্ষা পেলে হয়ত আমাদের জীবন সার্থক হবে, পানির সন্ধান তিনি দিতে পারবেন। দল বেঁধে মাছেরা রওনা দিল আরেক মহাসাগরে বৃদ্ধ মাছের উদ্দেশ্যে। পথে বিপদ আপদে শত্রুর আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হল। শেষ পর্যন্ত মাছের চৌকস দলটি তত্ত্বজ্ঞানী মাছের সম্মুখে উপনীত হল। দূরের সফরের ভোগান্তির সরুণ বর্ণনা দিয়ে তারা গুরুর কাছে বলল, জীবনভর শুনে আসছি পানি নামের কেউ আছে। তার সাথে আমাদের জীবন মরণ জড়িত। তার সাক্ষাত পেলে জীবন সার্থক হবে। কিন্তু জীবনে পানির সাক্ষাত পেলাম না। তার সন্ধান পেতে আমরা আপনার খেদমতে হাজির হয়েছি।
তত্ত্বজ্ঞানী মাছ বলল, তোমরা পানির খোঁজে সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এতদূর এসেছ। আগে আমাকে বল তো, সাগর মহাসাগরে যার মধ্যে তোমাদের বসবাস তার নাম কি। বল তো তোমাদের জীবনকে ঘিরে পানি ছাড়া আর আছে কি। বৃদ্ধ মাছের একটি কথায় সবার দিব্যদৃষ্টি খুলে গেল। হ্যাঁ, সত্যিই তো। আমরা তো পানির মধ্্েযই বসবাস করছি। আমাদের অস্তিত্ব ঘিরে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই।
হ্যাঁ, আমরা মানুষের অবস্থাও তা-ই। অস্তিত্বের মহাসাগরে আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কি আছে? যার উপর আমাদের জীবন ভাসছে, জগত চলছে তা তো আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কিছু নয়। পবিত্র কুরআনে ফেরেশতাদের জবানীতে বলা হয়েছে :
‘ওহে আমাদের প্রভু! তুমি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিবেষ্ঠন করে আছ।’ (সূরা গাফির, আয়াত-৭)
‘আমার রহমত পরিব্যপ্ত সবকিছুতে।’ (সূরা ‘আরাফ, আয়াত-১৫৬)
আমরা আল্লাহর রহমতের সাগরে ডুবে আছি শুধু কী তা-ই। সৃষ্টিজগতের এতো আয়োজন, রহমতের বিশাল শামিয়ানা, ব্যবস্থাপনা সবই তো মানুষের জন্যে, মানুষের সেবায় নিয়োজিত। মানুষের কী সাধ্য আছে এই রহমত দয়া অনুগ্রহের বর্ণনা দেবে। কুরআন মজীদের ভাষায়-
‘আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা জাসিয়া, আয়াত-১৩)
‘তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্রকে আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা নাহল, আয়াত-১২)
মহাকবি শেখ সাদী বলেন,
আবর ও বাদ ও মাহ ও খোরশীদ ও ফালাক দরকারান্দ
তাতো নানী বেকাফ আরি ওয়া বে গাফলাত নাখোরী
মেঘ-বায়ু চাঁদ সূর্য আকাশ সদা নিয়োজিত কাজে
তুমি রুটিরুজি জোগাড় কর, উদাসীন না খাও যাতে।
(শেখ সাদীর গুলিস্তানের ভূমিকা)
হে মানুষ! সৃষ্টিলোকের সবকিছু তোমার সেবায় নিয়োজিত। বিনিময়ে তিনি কী চান, তুমি যেন নিজের রুটিরুজির ব্যবস্থা কর আর আল্লাহকে ভুলে ভোগে মত্ত না হও।
একশ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত লোক বলতে চান, আল্লাহর দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। ধর্ম অধর্ম প্রভেদ মোল্লাদের আবিষ্কার। আকাশ চাঁদ সুরুজ বাতাস পানি সমান সেবা দেয় মুসলিম অমুসলিম সবার ঘরে, ক্ষেতে খামারে। সৃষ্টিলোকের অবারিত দয়াদানে তিনি ফারাক করেন না। কাজেই মুসলিম কাফেরে তারতম্যের ধারণা আল্লাহর সর্বজনীন পালনবাদের পরিপন্থী।
সরকার নতুন আবাদী, শহর বা জনপদ গড়ে তোলবে। ঘোষণা দিল বিস্তীর্ণ খাস জমিতে যে কেউ বসবাস করতে পারবে। তবে সরকারে কাছ থেকে বৈধ কাগজপত্র নিতে হবে। নামমাত্র খাজনা দিয়ে সরকারের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ দিতে হবে। লোকেরা এই সুযোগে ব্যাপকভাবে বসতি স্থাপন করল। একদল সরকারী আদেশ মেনে জমির বৈধ কাগজপত্র জোগাড় করল। আরেকদল এসবের পরওয়া করল না, সময়মত খাজনা দিল না, সরকারের অবাধ্য হল। এখন বলুন, উভয় দলের লোকেরাা কি এক সমান। সরকার যখন জমির মালিকানার তল্লাশি নিবে, অবস্থা কি হবে। অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের উচ্ছেদ হতে হবে, দুর্গতির সীমা থাকবে না। আর বৈধরা থাকবে আরামে নির্বিঘেœ। দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর অনুগত মুসলমান ও অবাধ্য কাফেরদের অবস্থা এর সাথে তুলনীয়। যদিও উভয় শ্রেণী দুনিয়াতে আল্লাহর আলো বাতাস, মেঘ, সুযোগ সুবিধা সমানভাবে ভোগ করেছিল। আলো বাতাস সমান ভোগ করে বলে কি ভালো মন্দ, সৎ-চোর ডাকু একসমান দাবি করতে পারবে কোনো বিবেকবান মানুষ।
মানব জীবনে এই আত্মউপলব্ধির জন্যই দিনে রাতে বছরের পরিক্রমায় ধর্মীয় বিধান পালনের নানা আয়োজন আছে। এ ধরনের একটি আয়োজন পবিত্র মাহে রমযান। নবীজির ভাষায় এই মাসের শুরুর ভাগে অস্তিত্বের সাগরে রহমতের ঢেউ খেলে, মধ্যভাগে থাকে ক্ষমা ও মাগফিরাতের সয়লাব আর শেষভাগ দোযখ থেকে মুক্তির ছাড়পাত্র। এগুলো বিশ^ব্যবস্থায় অনুক্ষণ বিরাজিত আল্লাহর রহমতের একেকটি ঢেউয়ের ভিন্ন ভিন্ন নাম। আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করলেই দেখতে পাব সৃষ্টিলোকের সর্বত্র আল্লাহর রহমতের অথৈ সাগর। হাদিস শরীফের ভাষ্য:‘আল্লাহ তা‘আলার একশটি রহমত আছে। সেই একশ রহমত হতে একটিমাত্র রহমত তিনি সাত আসমান ও সাত তবকা যমীনে প্রেরণ করেছেন : (অতঃপর তা আপন সৃষ্টির মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন)। এই একটি রহমতের বদৌলতে তিনি সৃষ্টিলোককে ক্ষমা করেন। তার কারণে সৃষ্টিলোকের সবাই একে অপরকে ভালোবাসে, পরস্পরে দয়া-অনুগ্রহ দেখায়। বাকী নিরানব্বইটি রহমত তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন তিনি এই একটি রহমতও নিজের কাছে ফিরিয়ে নেবেন। দেখা যাবে, তাতে কোনো অপূর্ণতা হয় নি, ত্রুটির ছোঁয়া লাগেনি। সেটি বাকী নিরানব্বইটির সাথে যোগ করবেন। যাতে একশ পূর্ণ হয়ে যায়। তখন আল্লাহর সঙ্গে শিরিককারীদের মু’মিনদের থেকে আলাদা করা হবে, আর সব রহমত দেয়া হবে মু’মিনদেরকে। (বুখারী ও মুসলিম) মু’মিনরা কাফের মুশরিকসহ এই দুনিয়ায় একশ’র মধ্যে একটি রহমত ভোগ করেছে নিজের অন্তরে, ধর্মীয়ভাবে ও পার্থিব জীবনে। বৈধ কাগজপত্র যাদের নাই তারা কাল কিয়ামতে বাদ পড়বে আর পুরো একশভাগ রহমত লাভ করবে মুমিন মুসলমান রোজাদার নামাজি আল্লহর অনুগতরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ
ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা
অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী
রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা