ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
রাজধানীতে ক্রেতা-বিক্রেতা নিরাপত্তাহীনতায় ডিএনসিসি মালিকানাধীন ১৯ মার্কেট এবং ডিএসসিসির ৪৬ স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ ইউটিলিটি লাইনে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ছে : ড. আদিল মাহমুদ খান ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি : সেলিম রেজা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে : মো. সিরাজুল ইসলাম

ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট

Daily Inqilab একলাছ হক

০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২২ পিএম

অপরিকল্পিত নগরায়নের সুযোগে রাজধানী ঢাকায় বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শত শত মার্কেট-বিপণিবিতান। রাজনীতির মূল শহর ছাড়াও অলিগলি-পাড়া-মহল্লায় এতো বেশি মার্কেট গড়ে উঠেছে যে, এর সঠিক হিসাব দুই সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কারো কাছেই নেই। তবে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ২০১৭ সালেই রাজধানীর শপিংমল ও মার্কেট পরিদর্শন করে একটি তালিকা তৈরি করে। একই বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা ওইসব মার্কেট পরিদর্শন করে সংস্থাটি জানায়, রাজধানী ঢাকায় ১ হাজার ৩০৫টি শপিংমল ও মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্থাটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী মার্কেটগুলোর ৬২২টি ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৬৭৮টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও মার্কেট-শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক বা কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

বঙ্গবাজার মার্কেট আগুনে পুড়ে গেলেও এখনো রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা হাজারেরও বেশি মার্কেট শপিংমল ও মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোতেই চলছে কেনাবেচা। দৈনিক লাখ লাখ ক্রেতা এসব মার্কেটে আসেন তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। কিন্তু এসব মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন জানেন না এসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তবে রাজধানীর যেসব মার্কেট কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি সেসব মার্কেটগুলো রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় শীর্ষে। এসব কাঠ ও টিনের মার্কেটগুলোতে যদি অসাবধানতা বসত অগ্নিকা- ঘটে তাহলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যায়।

এসব ভবন ও মার্কেটগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সতর্কতা করা হলেও কর্ণপাত করছে না কেউ। যার প্রকৃত উদাহরণ রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহানগরীর শপিংমল ও মার্কেটগুলো অনিরাপদ থাকায় যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর শপিংমল ও মার্কেট ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি না করায় বারবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি আধুনিক ভবনগুলোতে উন্নত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি স্মোক ডিটেক্টর, অটোমেটিক ফায়ার ডিটেক্টর ইত্যাদি ব্যবহার করার ব্যবস্থা রাখার কথা থাকলেও সবাই তা মানছে না। এমনকি ওসব ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যে যন্ত্র রয়েছে সেগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারি করার কথা থাকলেও তা করছে না।

রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটের চিত্র অভিন্ন। যেকোনো মুহূর্তে অগ্নিকা-ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় উপরের দিকের তালিকায় রয়েছে রাজধানী সুপার মার্কেট, ঠাঁটারিবাজার মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, খিলগাঁও বাজার, চকবাজারে একাধিক মার্কেটসহ অনেক মার্কেট। সাইন্সল্যাব মোড় থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মিরপুর রোডের পাশ ঘিরে বেশ কয়েকটি শপিংমল গড়ে উঠলেও কোনোটাতেই অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ এখানে মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। ঝুঁকি নিয়ে চলে কেনাবেচা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নিউমার্কেটও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায়। মার্কেটটি ভাঙার জন্য সিটি করপোরেশন তোড়জোড় চালালেও ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি। এ পরিসংখ্যানে রাজধানীর বেশির ভাগ শপিংমল ও মার্কেট অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে। ওই তালিকায় সিটি করপোরেশন ও বেসরকারি মালিকানা মার্কেটও রয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিস
অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-২, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আদর্শ ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স গুলিস্তান ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মহানগর, মহানগর বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, গুলশান শপিং সেন্টার, এম প্রেজ প্লাজা, জব্বার টাওয়ার, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, ভূইয়া ম্যানশন, গুলশান ভবন মার্কেট, গুলশান-২ ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বিদিশা সুপার মার্কেট, সাবেরা টাওয়ার মার্কেট, বাইশ বর সুপার মার্কেট, ল্যান্ড মার্ক শপিং সেন্টার, বনানীর গোলাম কিবরিয়া ম্যানশন, বাংলাদেশ ইউএস মৈত্রী কমপ্লেক্স, বাড্ডার ফুজি ট্রেড সেন্টার, আবেদ আলী মার্কেট, আর এ এস প্লাজা, লুৎফুন টাওয়ার, রিজভ্যালী শপিং সেন্টার, হাকিম টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, বসুন্ধরার ভাই ভাই সুপার মার্কেট, হাজী আ. লতিফ ম্যানশন, আমীর ড্রিম কমপ্লেক্স, ফরাজী টোলা কাঁচা বাজার, ভাটারার আব্দুল লতিফ মার্কেট, বারিধারার নতুন বাজার দোকান মালিক সমিতি মার্কেট, মহাখালীর জননী ভবন মার্কেট, শাহীন ম্যানশন, মহাখালী প্লাজা, জেবা টাওয়ার, কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ার, নিক্য পেপার অ্যান্ড স্টেশনারী, মগবাজারের বাটা বাজার, বেঙ্গল টাওয়ার, আড়ং প্লাজা, বিশাল সেন্টার শপিংমল, রাজ্জাক প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স, আহম্মেদ পরিবার মার্কেট, আলহাজ্ব শামছুদ্দিন ম্যানশন, সিরাজ ম্যানশন মার্কেট, তেজগাঁওয়ের- সেন্টার পয়েন্ট ও বে-এম্পোরিয়াল মার্কেটের নাম রয়েছে। সরকারি ওই সংস্থার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রয়েছে, উত্তরার কেসি টাওয়ার, টপটেন শপিংমল, ১৩ নম্বর ফার্নিচার মার্কেট, উত্তরা বাজার সুপার মার্কেট, আকতার ফার্নিচার, এ কে টাওয়ার, ওয়েসটেস লিমিটেড, ওরিয়ন ফুটওয়ার, মি এন্ড মম, ফ্যাশন প্যারাডাইজ, তেজগাঁওয়ের আহমেদ মার্কেট, তোহা মিয়া মার্কেট, শেখ প্লাজা, মগবাজার প্লাজা, সাউদিয়া সুপার মার্কেট, রহমান ম্যানশন, আয়শা মঞ্জিল, হাজী মোতালেব মার্কেট, গুলশান টাওয়ার, জব্বার টাওয়ার শপিংমল, পুলিশ প্লাজা, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, গুলশান-১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেট, কাওরান বাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেট, কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট, কাওরান বাজার কামার পট্টি, হাসিনা মার্কেট, কাব্যকস সুপার মার্কেট, ব্র্যাক আড়ং, বনানী-বারিধারা- ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেট, সাদ মুসা সিটি সেন্টার, মেহেদী মার্কেট, প্রগতি স্মরণীর হাজী জমির উদ্দিন সুপার মার্কেট, ফজিলা শপিং সেন্টার, ওয়ারীর মুক্ত বাংলা হকার্স মার্কেট, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবন-১, খন্দকার ইলেকট্রনিক মার্কেট, শাহাবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, নবাবপুরের- আ. রহিম মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার, মজনু হার্ডওয়ার মার্কেট, পল্টনের বায়তুল মোকাররম মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, সিটি ভবন, জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্স, রমনা ভবন মার্কেট, মাওলানা ভাষানী স্টেডিয়াম মার্কেট, ভলিবল মার্কেট, গুলিস্তানের-এনএক্স টাওয়ার, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, ডন প্লাজা, নবাব প্লাজা, পীর ইয়ামেনী মার্কেট, বংশালের- জাকের সুপার মার্কেট, রোজলীন ভিসতা শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুরের মিরপুর টাওয়ার নার্শি মার্কেট, ডাসুরা টাওয়ার, সিটি ক্লাব মার্কেট, ইকবাল কমপ্লেক্স, চৌরঙ্গী মার্কেট, হাজী গণি মোল্লা মার্কেট, সৈকত প্লাজা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদ কমপ্লেক্স।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর পুনর্বাসনের জন্য যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে সিটি করপোরেশন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বাসযোগ্য শহরের জলাভূমি ও ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে ৩৫ শতাংশ। ঢাকায় এখন আছে প্রায় ৯ শতাংশ। ঢাকার প্রায় ৯ শতাংশ ফাঁকা জায়গার মধ্যে জলাভূমি রয়েছে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং ফাঁকা জায়গা রয়েছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি অগ্নিকা- বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোনো এলাকায় অগ্নিকা- ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ছুটে যায়। তাদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যানজটের কারণে পৌঁছতে দেরি হয়। এরপর সঙ্কটে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সরু সড়ক, ফায়ার সার্ভিসের একাধিক গাড়ি গেলে আশপাশে রাখার জায়গা থাকে না। চলতি বছরের শুরুতে বনানী এবং মঙ্গলবার বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনার এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। মার্কেটগুলোর আশপাশের রাস্তা সরু ও দোকানপাট থাকার কারণে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।

জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটির মালিকানাধীন মার্কেটগুলোর মধ্যে একাধিক শপিংমল ও মার্কেট বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব মার্কেট ভবন তৈরির সময়কাল ও নির্মাণ, ইউটিলিটি লাইনের সংযোগ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভবন ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে ও কিছু ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মালিকানাধীন ৪৩টি মার্কেটের মধ্যে ১৯টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলোÑ খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেট, গুলশান (উ.) পাকা মার্কেট, গুলশান (উ.) কাঁচা মার্কেট, গুলশান-১ (দ.) পাকা মার্কেট, গুলশান-১ (দ.) কাঁচা মার্কেট, গাবতলীর প্রান্তিক সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজার ১ম ও ২য় তলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল মিলনায়তন কাম শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট, মোহাম্মদপুর রিং রোড টিন সেড মার্কেট, মোহাম্মদপুর রিং রোড পাকা মার্কেট, কাওরান বাজার ১নং ভবন মার্কেট, কাওরান বাজার ২ নং ভবন মার্কেট, কাওরান বাজার মুরগী সেড, কাওরান বাজার মৎস আড়ৎ, কাওরান বাজার কর্মকার সেড, কাওরান বাজার কাঁচা মার্কেট (কিচেন মার্কেট), কাওরান বাজার কাঁচা মালের আড়ৎ মার্কেট, কাওরান বাজার কাঁচা মার্কেটের চতুর দিক মার্কেট, কলমিলতা কাঁচা মার্কেট। এই ১৯টি মার্কেটের মোট চার হাজার ১৫২টি দোকান ঝুঁকিতে আছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পাঁচটি অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে রয়েছে মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার, ফুটওভারব্রিজ, বাজারসহ অন্যান্য ভবন। এর মধ্যে মার্কেট ও মার্কেট কমপ্লেক্স ১১টি। এদের মধ্যে কিছু মার্কেট ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে ও কিছু স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ সম্বলিত লাল সাইনবোর্ড দৃশ্যমান স্থানে লাগানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হকার্স মার্কেট, ঢাকেশ্বরী মার্কেট, নিমতলী মার্কেট, কাপ্তান বাজার রোড সাইড মার্কেট ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে ও ২ নং পলাশী মার্কেটেরর ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মার্কেটের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

অন্যদিকে সিদ্ধেশ্বরীর নিউ সার্কুলার রোডের লিলি প্লাজা মার্কেট ভবন, আজিমপুর কবরস্থান মার্কেট, আজিমপুর এতিমখানা মার্কেট, নিমতলী মার্কেট, দয়াগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ড রোডসাইড মার্কেট, ঠাটারি বাজার মার্কেট ও নওয়াব ইউসুফ মার্কেট কমপ্লেক্সে দৃশ্যমান স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ সম্বলিত লাল সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর মার্কেটগুলো সার্ভে করার উদ্যোগ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। গত বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিস, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদফতরের (জিজিএফআই) একটি সমন্বিত দল গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শনে যায়। সেখানে গিয়ে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়ে ওই দলটির। পরিদর্শন শেষে সমন্বিত দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানী সুপারমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, চকবাজার, ঠাঁটারিবাজারের কয়েকটি মার্কেটসহ প্রায় সবকটি মার্কেটই অগ্নিকা-ের ঝুকিতে আছে।

পরিদর্শক দলের প্রধান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা সদর জোন-১-এর উপসহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ বলেন, ঢাকা শহরে অনেক মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ আছে। এর মধ্যে ঠাঁটারিবাজারের একটা মার্কেট আছে, রাজধানী সুপারমার্কেট, নিউমার্কেট, চকবাজারে মার্কেটসহ অনেক মার্কেট আছে। এ মার্কেটগুলো ফায়ার সার্ভিসের চাহিদা ফুলফিল করতে পারেনি। ঢাকার বেশিরভাগ মার্কেটই আমাদের চোখে ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা অনুরোধ করব, এই মার্কেটগুলো যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। তিনি বলেন, গাউছিয়া মার্কেটে ছয়টা সিঁড়ি আছে। সিঁড়ির কার্নিশে দোকান রয়েছে। এ সিঁড়িগুলো সরাতে হবে। ২০২০ সালের শেষের দিকে আমরা এখানে একটা মহড়া করেছিলাম। এ মার্কেটে ফায়ার এক্সটিংগুইশার আছে। ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া যা যা থাকা দরকার, তা নেই। অন্যান্য ফায়ার নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার জন্য আমরা সুপারিশ আকারে দেব।

গাউছিয়া মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ কামরুল হাসান বাবু বলেন, দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিস যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা পরিপূর্ণ করেছি। আমাদের ফায়ার সার্টিফিকেট আছে। এ ছাড়া সব ভবনেই কিছু ত্রুটি থাকে, আমাদের এখানে আউটডোরসহ যে ত্রুটি আছে, তা দু-একদিনের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করব।

সিঁড়ির মধ্যে দোকান নিয়ে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এসব দোকান বসাতে সমিতির কোনো দায় নেই। কর্তৃপক্ষ যাদের দোকান বরাদ্দ দিয়েছে, তারা জানেন এ বিষয়ে। সমিতির সভাপতি হিসেবে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কাজ আমার না। এরপরও ফায়ার সার্ভিস এসব দোকান সরাতে বলছে। আমরা কমিটির সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেব।

দোকানিরা জানান, মার্কেট যখন নির্মাণ করা হয়েছে তখন থেকেই সিঁড়িতে দোকান রাখা হয়েছে। সিঁড়ির দোকানগুলোর জন্য ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাড়া গুনতে হয়। এ ছাড়া অ্যাডভান্স দিতে হয় পাঁচ লাখ।
রাজধানী সুপার মার্কেটের এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের মার্কেটে আগেও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এই মার্কেট ঝুকিপূর্ণ শোনতে পেরেছি কিন্তু কি করবো আমরা তো এখানেই ব্যবসা করবো। এই মার্কেটের দোকানে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছি। জীবনের ও টাকা-পয়সার ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করতে এসেছি।

জাকের সুপার মার্কেটের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ বলেন, ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আমাদের মার্কেট পরিদর্শনে আসে। এরপর তারা নোটিশ পাঠিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেয়। সে অনুযায়ী আমরা ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটের তিনটি ইউনিটেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসিয়েছি। নিচতলা থেকে ছাদ পর্যন্ত আলাদা পানির লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ৩০ হাজার লিটারের আলাদা পানির টাংকি ছাড়াও প্রতিটি ফ্লোরেই নেয়া হয়েছে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সেলিম রেজা বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে এগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তারা আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এসব ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তারাই বিভিন্ন ভবন অ্যাসেস করে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা নির্ধারণ করেন ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। ঢাকায় যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে সেগুলো যেমন ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে আছে, তেমনি আগুন লাগার ঝুঁকিতেও রয়েছে।

ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান বলেন, প্রতিটি বিল্ডিং বানানোর সময় সেখানে অগ্নিনির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুধু ফায়ার হাইড্রেন্ট না, ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকতে হবে। আমাদের শহরের রাস্তাঘাট যেহেতু পুরনো তাই শহরের মধ্যে ফায়ার হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা নাই।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মাহমুদ খান বলেন, একটি ভবন যেসব কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয় তার মধ্যে রয়েছে ভবন অনেক পুরাতন হয়ে যাওয়া, আগুন লাগলে ভবন থেকে বের হতে না পারা বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনে সহজে ঢুকতে না পারা, বিভিন্ন ইউটিলিটি লাইন ত্রুটিপূর্ণ হওয়া এবং অগ্নিনির্বাপণের উপযুক্ত ব্যবস্থা বা ফায়ার হাইড্রেন্ট না থাকা ইত্যাদি। এছাড়াও ভবনগুলোতে অন্তত ৩ মাস পরপর সুয়ারেজ লাইন চেক করা উচিত; কিন্তু তা আমাদের দেশে করা হয় না, ফলে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের ঝুঁকিতেও থাকে অনেক ভবন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার