দিলের আগুন তো নেভেনি
১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৭ পিএম
বঙ্গবাজারে এসআর টেডার্স নামে তিনটি শাড়ির দোকানের মালিক ছিলেন ব্যবসায়ী হিরা। প্রতিটি দোকনেই ছিলো ভারতীয় শাড়ি। ঈদকে সামনে রেখে কোটি টাকারও বেশি শাড়ি তুলেছিলেন তিনি। গতকাল রোববার বঙ্গবাজার মার্কেটের ধ্বংসস্ত‚পে নিজেদের দোকান দেখতে আসেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যবসায়ী হিরাও। ধ্বংসস্ত‚প দেখে অনেকে ব্যবসায়ী হা-হুতাশ করছিলেন। মার্কেটে আগুন জ্বলার বিষয়ে জানতে চাইলে হিরা বলেন, ‘মার্কেটের আগুন নিভছে কি না জানি না, তবে দিলের আগুন নেভেনি’। ঈদের আগে অনেক শাড়ি উঠিয়েছিলাম। আগুনে পুড়ে কোটি টাকার মালামাল শেষ হয়ে গেছে। তাই মার্কেটের দুয়েক জায়গায় ছোট আগুন দেখলেও এখন আর গায়ে লাগে না। মার্কেটের আগুন দিয়ে কী করব, দিলের আগুন তো নিভছে না। বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজার মার্কেট, এনেক্সো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট পুড়ে গেছে। আগুনে ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে বঙ্গবাজার মার্কেট। ঘটনার সূত্রপাতের তিন দিন পর গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। তবে এখনো আগুন জ্বলছে বঙ্গবাজার মার্কেটে। আগুনের পাশাপাশি বঙ্গবাজার মার্কেটে প্রচÐ ধোঁয়াও দেখা গেছে। ওই ধোঁয়া ও আগুনের কারণে কাজ করতে প্রচÐ বেগ পেতে হচ্ছে ধ্বংসস্ত‚প পরিষ্কারে কাজ করা কর্মীদের।
গতকাল রোববার ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ধ্বংসস্ত‚প সরাতে কাজ করছেন ১০-১৫ জন শ্রমিক। তারা ধ্বংসস্ত‚প থেকে লোহা ও টিন কেটে কেটে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। ভেতর থেকে লোহা ও টিন কেটে উপরে তোলার পর নিচে থেকে আগুন জ্বলে উঠছে। এ আগুন জ্বলছে ধ্বংসস্ত‚পের ভেতরে থাকা বিভিন্ন কাপড়ের টুকরায়। এছাড়া স্থানে প্রচÐ ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। আগুন ও ধোঁয়ার কারণে শ্রমিকদের বারবার পিছিয়ে আসতে হয়। আগুন নেভানোর পর ধোঁয়া কমে গেলে তারা আবার কাজ শুরু করছেন। এ আগুন ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে শ্রমিক ছাড়া কাউকে কাজ করতে দেখা যায়নি। পরে এসব ধ্বংসস্ত‚প পরিষ্কার করে ট্রাকে করে অন্যত্র নেয়া হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অনুমতিক্রমে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি ৪০ লাখ টাকায় ধ্বংসস্ত‚পের মালামাল মেসার্স বুশরা টেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয় গত শুক্রবার।
কর্মরত অবস্থায় বুশরা ট্রেডার্সের ধ্বংসস্ত‚প পরিষ্কার করা কর্মী রবিউল বলেন, বারবার গলা শুকিয়ে আসছে ময়লা পরিষ্কার করতে করতে। ভেতরে প্রচুর তাপ, যা বলার বাইরে। ওপর থেকে আমরা যতবার লোহা কেটে বের করছি, ততবারই ভেতরের ধ্বংসস্ত‚প থেকে আগুন জ্বলে উঠছে। আগুনের তাপে ঠিক মতো কাজ করা যাচ্ছে না। এছাড়া ৭-৮ জায়গায় ধোঁয়া উড়ছে, এর কারণে আমাদের কাজ করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। মো. সিয়াম নামে আরেক কর্মী বলেন, দিনের বেলাই তো কিছু দেখা যায় না। রাতে দেখা যায় এখানে কত আগুন ও ধোঁয়া আছে। হাতেপায়ে মোজা পরেও তাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। হাত-পা ঝলসে যাওয়ার উপক্রম।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের মিডিয়া সেল কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেট এলাকায় এখন ধ্বংসস্ত‚প ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। ফলে ভেতর থেকে মাঝেমধ্যে ছোট আগুন ও ধোঁয়া বের হয়ে আসছে। তবে এটা কোনো সমস্যা না। আর শ্রমিকরা যদি সমস্যা মনে করে তাদের আমরা জানাতে বলেছি। তারা জানালে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে এসব বিষয় সমাধান করব।
একদিকে বঙ্গবাজারজুড়ে স্বপ্ন পোড়া ধ্বংসস্ত‚প, আরেকদিকে আবার নতুন করে উঁকি দিচ্ছে আশার আলো। আবারও ভালো দিনের স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। বঙ্গবাজার মার্কেটের দক্ষিণ পাশে অস্থায়ীভাবে দোকান বসিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান নিয়ে বসলেও বেচা-কেনা হচ্ছে নামমাত্র। তারপরও শূন্যের মাঝে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
বঙ্গবাজার মার্কেটের দক্ষিণ পাশের রাস্তায় অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসা মো. নাহিদ বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেটে আমার ব্যাগ বাজার নামে একটি দোকান ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এখন তো আর কিছু করার নেই, তাই রাস্তায় দোকান নিয়ে বসেছি জীবনের তাগিদে। দোকানে প্রতি দিন ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত দুই দিন ধরে রাস্তায় বসেছি, বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা। এ টাকা তো আমার কর্মচারীদের খরচও না।
রাস্তায় অস্থায়ী কাপড়ের দোকান নিয়ে বসেছেন বঙ্গ বাজারের ব্যবসায়ী মো. নরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি আজ থেকে রাস্তায় বসছি। সারা দিনে এখন পর্যন্ত বিক্রি ৫শ’ টাকা। ভেতরে যখন দোকান ছিল তখন দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যেত ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি। কী আর করার, তারপরও তো ঘুরে দাঁড়াতে হবে। না হলে তো পুরো পরিবার নিয়েই রাস্তায় নামতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর গত শুক্রবার সকালে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এরই মধ্যে বঙ্গবাজার এলাকার মোট সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে
রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন