ঈদের বাজারে কত সওয়াব
১০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫২ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
এক লোক মুরিদ হয়েছে পীরের কাছে। নতুন বাড়ি করার পর পীর ছাহেবকে দাওয়াত দিলো দোয়া নিতে। পীর ছাহেব চাইলেন নতুন মুরিদের পরীক্ষা নেবেন। প্রশ্ন করলেন বাড়ির দেয়ালে যে গবাক্ষ, এগুলো কেন? আগেকার নির্মাণ শিল্পে জানালার রেওয়াজ ছিল না। আলো বা বায়ুর চলাচলের পথ ছিল দেয়ালগাত্রের ছিদ, গবাক্ষ। মুরিদ ভাবল, আমার হুজুর কত সরল, সহজ, দুনিয়ার খবর রাখেন না। আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়েই চিন্তায় থাকেন। পীরকে দুনিয়াদারির জ্ঞান দিতে গিয়ে বলল, হুজুর! এই গবাক্ষ না হলে তো দেয়াল ভেদ করে আলো প্রবেশ করবে না। বায়ুর অভাবে দম বন্ধ হয়ে যাবে। পীর ছাহেব ছোট্ট একটি কথা বললেন, ‘আলো বায়ু তো বাড়তি পাওনা। আসল উদ্দেশ্য আজান শোনা।’ মসনবী রূমীর ভাষায় পীর বললেন, গোফত অন ফারআস্ত ইন বায়দ নায়াজ
তা আজীন রাহ বেশনাভী বাঙ্গে নামাজ
তা তো পরের ব্যাপার উদ্দেশ্য হওয়া চাই-
এ পথে যেন নামাজের আজান শুনতে পাই।
পীরের একটুখানি কথায় মুরিদের দিলের চোখ খুলে গেল। বাড়ির দেয়ালগাত্রে ছিদ্র দিয়ে মসজিদের আজান ভেসে আসুক যদি এমন নিয়ত থাকে তাহলে সওয়াবও হবে, সঙ্গে আলো বাতাসও পাওয়া যাবে। নিয়তের কারণে নিছক দুনিয়াবী কাজটি দ্বীনের কাজে পরিণত হবে। বুখারি শরীফের প্রথম হাদিসে বলা হয়েছে: ‘ইন্নামাল আমালু বিন নিয়াত’ ‘সকল কাজের মূল্যায়ন হবে নিয়তের ভিত্তিতে’।
সকাল-সন্ধ্যা, জীবন-জীবিকার পেছনে মানুষের হুঁশ নাই। কিন্তু মুমিন বান্দার জীবন সংগ্রাম ব্যতিক্রম। দুনিয়াদারির ভেতরও তার নিয়ত থাকে দীনদারি। চাকুরি করে, ব্যবসা করে, শ্রম দেয়, অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু মনে থাকে, পরিবারের ভরণ-পোষণের, ছেলে-মেয়েদের মানুষ করার যে দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ হতে আমার ওপর অর্পিত সে দায়িত্ব পালন করছি। তখন তার শ্রম, জীবিকার সংগ্রাম, জীবনযুদ্ধ ইবাদতে পরিণত হয়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, গরীব মিসকিনকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করলে সাদকা হিসেবে গণ্য হবে। হয়ত জানি না, পরিবারের জন্য অর্থ ব্যয় করলে তাতে সাদকার সওয়াব হবে। কুরআন মজীদে বিষয়টি এভাবে এসেছে : ‘স্বামীর ওপর কর্তব্য হলো সন্তানের মায়ের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী’। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৩৩)
‘বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী (পরিবারের জন্য) ব্যয় করবে এবং যার জীবিকার সামর্থ্য সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে’। Ñ(সূরা তালাক, আয়াত-৭)
রমজানের শেষভাগে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয় প্রতিটি মানুষ। রোজার কৃচ্ছসাধনায় মন ও আত্মা পরিশুদ্ধ সুন্দর হয়। তার ছাপ পড়ে বাইরের আবরণে পোশাক-পরিচ্ছদে। তাই ঈদে নতুন পোশাকে সাজতে হবে। এই সাজের কেনাকাটায় যদি নিয়ত থাকে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন, পরিবারের প্রয়োজন মেটানো তাহলে মা-বাবা ছেলে-মেয়ে আত্মীয় স্বজনের জন্য কাপড়-চোপড় কেনাতে সওয়াবও আসবে অনিবার্যভাবে। হাদিস শরিফে বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে বিবৃত হয়েছে : আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, তুমি একটি দিনার আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছ। আরেকটি দিনার ব্যয় করেছ গোলাম আজাদ করার জন্য। একটি দিনার দান করেছ দরিদ্রকে। আর একটি দিনার তুমি তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ। এর মধ্যে যে দিনার তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ সওয়াবের দিক দিয়ে সেটিই বড়। Ñ(মুসলিম, মিশকাত-১৮৩৫)
নিয়ত শুদ্ধ হলে পরিবার পরিজনের জন্য আবশ্যক খরচপাতিতে সওয়াব বরাদ্দের ব্যপারে কারো মনে সন্দেহ থাকা উচিত নয়। তবে এই ব্যয় হতে হবে একান্ত প্রয়োজন মেটানোর জন্য। ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, পরিবারের বিলাসিতার জন্য ব্যয় এর মধ্যে শামিল হবে না, বরং অপচয় হিসেবে গণ্য হবে। পরিবারের আবশ্যক খরচ বা অভাব দুর করাটাই মুখ্য বিষয়।
সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি তো সম্পদশালী লোক। আমার একমাত্র কন্যা ছাড়া কোনো ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দান করে দেব। হযরত বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে কি অর্ধেক সম্পদ দান করে দেব। বললেন, না। বললাম, তাহলে কি এক তৃতীয়াংশ দান করতে পারব। হযরত বললেন, এক তৃতীয়াংশও অনেক বেশি। তুমি তোমার ওয়ারিশদেরকে অমুখাপেক্ষী রেখে যাওয়াটা তাদেরকে মানুষের কাছে হাতপাততে হয় এমন অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। (বুখারি, মুসলিম)
আত্মীয়-স্বজনকে দানের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, ‘গরীবদের যদি সাদকা কর তাতে সাধারণ সাদকার সওয়াব পাবে। আর যদি (গরীব) আত্মীয়কে দান কর তাতে সাদকাও হবে আত্মীয়তা রক্ষারও সওয়াব পাবে । Ñ(মিশকাত-১৮৪৩)
জাকাত আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সম্পদের পুরোপুরি হিসেব-নিকাশ করে জাকাত দিতে হবে। হিসেব ছাড়া যত বেশিই দান করুক জাকাত থেকে দায়মুক্তি হবে না। জাকাতে তামলিক বা যাকে দেয়া হবে তার মালিকানায় পুরোপুরি ন্যস্ত করা শর্ত। ট্রাস্ট ফান্ড বা অন্য কোনো খাতে জাকাতের টাকা স্থানান্তর করে রাখলে হকদারের মালিকানায় ন্যস্ত না করা পর্যন্ত জাকাত আদায় হবে না। অনেক পেশাদার ভিক্ষুকের জাকাতযোগ্য জমানো টাকা থাকে। এদেরকে জাকাত দিলে আদায় হবে না। নিরাপদ হলো, চেনা-জানা, আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশিদের মাঝে হকদার দেখে জাকাত দেয়া। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের জমানো টাকা নেই, সংসার চলে টানাপড়েনে। তাদেরকে জাকাত দেয়া যাবে। আপনাকে জাকাত দিচ্ছি-এমন কথা মুখে বলার প্রয়োজন নেই। ঈদের খরচ বা হাদিয়া ইত্যাদি বলে সম্মানের সাথে পৌঁছে দিলে দ্বিগুণ সওয়াব হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কুলাউড়ায় পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাই
রোববার থেকে নগর ভবনে দাপ্তরিক কাজ করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
গণহত্যার টপ কমান্ডারদের বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ হবে: চিফ প্রসিকিউটর
কনস্টাস কাণ্ডে কোহলির দোষ দেখছেন অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড প্রধান
চরমোনাই মাদরাসা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প: মাসুম বিল্লাহ
বগুড়ায় বালু ব্যবসায়ী হত্যা, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ
মাগুরার শ্রীপুরে জোড়া শিশুর জন্ম
রিক্সা ভ্যানে চলন্ত ট্রাকের ধাক্কায় বাবা মেয়ে সহ নিহত ৩
পদ্মা নদীর ভয়ঙ্কর আগ্রাসনে হুমকির মুখে কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়ক
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: চালকসহ গ্রেপ্তার ২
গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেডের আরএমও জেল -হাজতে
বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা
সাংবাদিক আনিসুর রহমানের মৃত্যু
নিউজিল্যান্ডের কাছে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য পরাজয়
রাশিয়ার উপর আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিতের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত
ফিরে দেখা ২০২৪: সংস্কারের বছরে মাঠের ক্রিকেটে হতাশা
মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : হাজী ইয়াছিন
সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে
সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন
ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর