তীব্র গরমে বিপর্যস্ত রোজাদারগণ
১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম
রাজধানীতে তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। গত কয়েকদিন ধরে বইছে তীব্র তাপদাহ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অসহনীয় গরমের তীব্রতা। এমন অবস্থায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। তবে খেটে খাওয়া কিংবা দিনমজুর মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে অনেকখানি বেশি। রোজা রেখে তীব্র গরম সহ্য করে চালিয়ে নিতে হচ্ছে জীবিকা নির্বাহের কাজ।
বৈশাখের আগে থেকেই ভয়াবহ তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কয়েক দিন ধরে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে লোডশেডিং ও পানির সঙ্কট। বৈরী আবহাওয়া ও বিদ্যুৎ, পানির সঙ্কটে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা। প্রচ- গরমে কাজ করতে না পেরে বিপাকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। গরমে পানিশূন্যতাসহ নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় পেশাজীবী, শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে রিকশা-ভ্যানচালকদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তীব্র গরমে পানিশূন্যতা কিংবা হিটস্ট্রোক হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের একটানা কাজ না করে, বিশ্রাম নিয়ে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল শনিবারও রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বৈশাখের প্রথম দিনও তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।
এদিকে, লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানির সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও পানির সঙ্কট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেল অসহনীয় গরম আর তাপপ্রবাহের মাত্রা বাড়তে থাকার সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেট ও সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমল, বিপণীবিতান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অসহ্য ভ্যাপসা গরমে কষ্ট হলেও ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন পরিবহনের চালক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ কর্মজীবী মানুষেরা গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন। বসুন্ধরা মার্কেকেট কেনাকাটা করতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, পুরো শহরে যানজট। রোদের মধ্যে কষ্ট করে মার্কেটে এসেছি। কিন্তু গরমে শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। এমন ভ্যাপসা গরম না কমলে ঈদে ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।
কমলাপুর স্টেশনের পাশের সড়কে কথা হয় রিকশাচালক সাইফুল মিয়ার সঙ্গে। মাথার ওপর ছাতা থাকার পরও গরমের চোটে হাঁপিয়ে ওঠা এই রিকশাচালক বলেন, ‘গরমে বাড়ির বাইরোত ব্যারে মনে হওছে জানটা চলি যাইবে। এতো ক্যানে গরম বাহে? ঘরোত থাকাও দায়। ফ্যানের বাতাসও গরম। শরীর থাকি খালি ঘাম ঝরোছে। রোইদোত বাইরোত গাড়ি নিয়্যা ব্যারেয়া মোর অবস্থা খারাপ। কিন্তু হামার মতো রিকশা এ্যালার কোনো উপায় নাই। গাড়ি না চালাইলে খামো কী?’
ঋতু পরিবর্তনের কারণে রাজধানীতে বেড়ে চলছে হিট স্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাপপ্রবাহে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে নিম্নআয়ের মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। সংসার চালাতে বাধ্য হয়েই কাজে যাচ্ছেন তারা। অনেকেই আবার গরম সইতে না পেরে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রচ- গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীসহ জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গরমে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এই সময় সাবধানে চলাফেরা উচিত। ইফতারির পর থেকে বেশি বেশি করে ডাবসহ তরল জাতীয় ফলমূল খাওয়া উচিত।
নগরীর এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাতে সেহরির আগে পরে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। তীব্র গরমে পরিবারের সবার ঘুমাতে ও সেহরি করতে কষ্ট হয়েছে।
মিরপুরের বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ যাচ্ছে তবে এক ঘণ্টার আগেই তা ফিরে আসছে। তীব্র গরমের কারণে কোনো কাজ করতে পারছিনা। বাহিরে তো বেরই হওয়া যায়না।এছাড়া রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, মেহেদীবাগ, মনসুরাবাদ, মোহাম্মাদিয়া হাউজিংয়ে পানির সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
উত্তর আদাবরের বাসিন্দা জানান, রাতে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে। তখন বালতি, পানির বোতল কিংবা জারে পানি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। সকালে পানির প্রয়োজন হলে অন্য এলাকা থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে।
ভ্যানচালক রফিকুল বলেন, কয়েকদিন ধরে প্রচ- গরম পড়েছে। গরমের কারণে ভ্যান চালানো যাচ্ছে না। আবার অতিরিক্ত গরমের কারণে লোকজন কম বের হচ্ছেন। ফলে কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আমাদের আয়- রোজগার কমে গেছে।
এদিকে, চলতি মৌসুমে টানা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। মৃদু থেকে শুরু হয়ে এখন তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। এতে অস্থির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান।
গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে শনিবার (১৫ এপ্রিল) পর্যন্ত একটানা ১৩ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে।
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, প্রচ- গরমে কক্সবাজারের জনজীবন অতিষ্ঠ। শুকিয়ে গেছে খাল বিল পুকুর টিউবওয়েল কুয়া। ঘরে বাইরে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টিতে পানিশূন্যতায় ক্ষেত কামার ও রবিশষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত সপ্তাহ দশদিনের তাপমাত্রা ভাবিয়ে তুলেছে উপকূলের মানুষকে। শনিবারও তাপমাত্রা ছিল ৪০ ছুঁই ছুঁই। একদিকে তাপমাত্রার এই বৈপরীত্য অপরদিকে বৈদ্যুতিক ভেলকিবাজিতে হাঁপিয়ে উঠেছে গ্রামীণ জনজীবন।
কক্সবাজার আবহাওয়া দফতরের পরিচালক আব্দুর রহমান জানান, শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর শুক্রবারে তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তিনি আরো জানান, ২০-২১ এপ্রিল তথা ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত তাপমাত্রা এভাবে অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে ঈদের পরে তাপমাত্রা কমতে পারে এবং ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে গরমে জেলার বিভিন্ন এলাকার খাল বিল পুকুর শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। একইভাবে টিউবওয়েল কুয়া শুকিয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায় মানুষের চলাফেরা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও এবং চকরিয়ার অধিকাংশ পুকুর টিউবওয়েল ও কুয়া পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। এমনকি অধিকাংশ গভীর নলকূপ অকেজু হয়ে গেছে।
টেকনাফ থেকে সমাজ সেবক মোহাম্মদ হাসান জানান, টেকনাফের অধিকাংশ মানুষ পানির কষ্টে আছে। তার জানামতে এলাকার শত শত নলকূপ পানিশূন্য এবং পুকুরগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। কক্সবাজার ফিসারী ঘাটে খবর নিয়ে জানা গেছে, এই গরমে সাগরে মাছ শিকারীদের এখন দুর্দিন। মাছ কমে যাওয়ায় জেলে সম্প্রদায়ের যেমন কষ্ট হচ্ছে একইভাবে রমজানে ভোক্তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, সাগরে মাছ কমে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। যেমন নিষিদ্ধ বিহিন্দী জাল ব্যবহার, অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ ইত্যাদি।
পরিবেশ সচেতনদের মতে গাছ ও পাহাড় নিধনের কারণে আবহাওয়ার এই বিরূপ অবস্থা। এপ্রিল মাসের প্রচ- এই গরমের অভিজ্ঞতা থেকে তারা দুর্যোগের আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে ১৯৯১ সালে এরকম পরিস্থিতিতে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। এই গরমে সাগরে বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কাও উড়য়ে দেয়া যায়না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ
ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০
গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ
আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন
শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ