ঢাকা   রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১২ কার্তিক ১৪৩১

সুন্দর সমাজ গঠনের কর্মসূচি

Daily Inqilab ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৩৮ এএম

একটি পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম নিলে হালাল হবে, খাওয়া যাবে। আল্লাহর নাম না নিলে খাওয়া যাবে না, হারাম হয়ে যাবে, বিষয়টি আমাদের বুঝে আসে না। অভিনব প্রশ্নটি করেছিল আমার ঘনিষ্ট পরিচিত এক তরুণ। প্রশ্নটি শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। স্যার, আরো প্রশ্ন আছে। আমি চিন্তনে যাই। আমার মতো অনেক তরুণের মনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। চিন্তন একটি মুক্ত চিন্তার ফোরাম। আমরা মুক্ত চিন্তার চর্চা করি। ধরুন, আমি আল্লাহকে বিশ^াস করি না। রাসূলের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। পরকাল, সওয়াব, বেহেশত, দোযখ, এসব নিয়ে আমি ভাবি না। আমার ভাবনা মানুষ নিয়ে, সমাজব্যবস্থা নিয়ে, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের কর্মপন্থা নিয়ে।

খানিকটা চিন্তা করে বললাম, মানুষ, সমাজ ও মানুষের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে আমার একটি প্রস্তাবনা নিয়ে চিন্তা করে বলবেন, এর মধ্যে আপনার জন্য অনুসরণীয় কোনো উপদান আছে কি না।
একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। শিক্ষা-দীক্ষা বা সভ্যতা থেকে সম্পূর্ণ দূরে, একেবারে জংলি। এই জনগোষ্ঠীর মানুষগুলোকে যদি উন্নত স্বভাবের মানুষ বানাতে চান, একটি সুন্দর সমাজরূপে সাজাতে চান তরুণ চিন্তাশীল ও একজন সমাজকর্মী হিসেবে কী করবেন। নিশ্চয়ই আপনাকে কিছু কর্মসূচি নিতে হবে।

এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমি একটি কর্মসূচির প্রস্তাব করছি। সমাজের সব মানুষকে পবিত্রতার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবাইকে দৈনিক পাঁচবার পবিত্র চেতনা নিয়ে মসজিদ নামক একটি সামাজিক কেন্দ্রে জমায়েত হতে হবে। সেখানে সম্মিলিত প্রার্থনা হবে। পরস্পরের সাথে দিনে পাঁচবার দেখা সক্ষাত হবে। সপ্তাহান্তে একদিন বড় একটি সমাবেশ হবে সেখানে দূরদূরান্তের লোকেরাও জমায়েত হবে। একজন ধর্মীয় নেতা সমাজের নানা বিষয় নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করবেন, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। পরস্পরের মধ্যে সহযোগীতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের চর্চা হবে। ধনীরা অপেক্ষাকৃত গরীবদের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা দেবে।

বছরে একমাসের জন্য গণ কৃচ্ছসাধনার কর্মসূচি থাকবে। নিজেদের চরিত্রের পশুস্বভাব বর্জন ও সুন্দর মানবীয় স্বভাব ধারণ করার জন্য সবাই মিলে একটানা একমাস সাধনা করবে। সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভের স্মারণি হিসেবে জাতীয় উৎসবে মিলিত হবে। একজন সমাজকর্মী হিসেবে নতুন সমাজ গড়ার জন্য এমন কর্মসূচিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।

আমার এতটুকু কথায় তার চেহারায় আনন্দের পুলক ভেসে উঠল। বলল, সত্যিই তো। এভাবে তো চিন্তা করিনি। ইবাদত, সওয়াব, গোনাহের চিন্তা না করলেও সমাজ গঠনের জন্য এর চেয়ে উন্নত ফর্মুলা তো আর হতে পারে না। এদিক থেকে হজকে যদি একই বিশ^াস ও সমাজের বিশ^সম্মেলন মনে করা হয় তাও তো আরো সুন্দর ও আধুনিক হয়।

সত্যিই মানুষ ও সমাজ গড়ার, মানবজীবনে ইহকাল-পরকালের, শান্তি-সুখের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রতিটি বিধানের যৌক্তিকতা অতুলনীয়। আপনি ধর্মকর্ম বা অদৃশ্য বিষয়াদি স্বীকার না করলেও ইসলামের এই সৌন্দর্য অস্বীকার করতে পারবেন না।

নামাজের কথা চিন্তা করুন। ইন্টারনেটের সুবাদে পৃথিবীর যে কোনো জাতি বা সম্প্রদায় সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সহজ। ইসলামে নামাজের বিধান দেয়া হয়েছে : স্বেচ্ছা বন্দির মতো ডানহাতে বাম হাতের উপর কড়া লাগিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো। আল্লাহকে বিশ^াসে ও ধ্যানে সামনে এনে তার মহানত্বের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে রুকু করা, রুকুতে গিয়ে উপলব্ধি করা তিনি কেবল মহান নন, অতিশয় সূউচ্চও, তার উচ্চতা উপলব্ধি করতে হলে আমাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে হবে, নিজের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিলে তার অস্তিত্বের মহানত্ব ও উচ্চতা অনুভব করা যাবে, সেই অনুভব থেকে উচ্চারণ করতে হবে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা, অতিশয় সুউচ্চ আমার মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ।

আল্লাহর শেখানো ভাষায় তার সঙ্গে মনের ভাব বিনিময় করা হয়। ইবাদত বা পূজা অর্চনা কিংবা প্রার্থনার এমন ফর্মূলা কী পৃথিবীর কোনো ধর্ম বা জাতির মধ্যে আছে। খ্রিস্টান সমাজে সপ্তাহে একবার যে হারে মানুষ গির্জায় যায় গোটা দেশের সবাইকে একত্রিত করলে কি কোনো মুসলিম দেশের বড় কোনো মসজিদের মুসল্লির সমান হবে। লন্ডনের গির্জাগুলো পরিত্যক্ত হয়ে মসজিদে রূপান্তরিত হওয়ার যে সংবাদ আমরা পাই তা থেকেই তো আন্দাজ করা যায়।

সৃষ্টিলোকের কতক প্রাণী দ-ায়মান অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা গায়; যেমন গাছ-গাছালি। আর কতক মাথা ঝুঁকানো অবস্থায় আল্লাহর প্রতি আনুগত্য দেখায়; যেমন চুতষ্পদ জন্তু। দাঁড়ানো বা ঝুঁকে থাকা অবস্থা ব্যতিরেকে আল্লাহর দাসত্বের প্রমাণ দেয়ার সাধ্য তাদের নাই। সরিসৃপ জাতীয় প্রাণীগুলো তো গড়াগড়ি অবস্থাতেই আল্লাহর মহিমা কীর্তন করে। একমাত্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব দাঁড়ানো, মাথা নোয়ানো, বসা ও সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর গুণগান করা, দাসত্বের সাক্ষ্য দেয়া। আপন সৃষ্টিকর্তার প্রতি এভাবে প্রণতি জানানোর কোনো পদ্ধতি কী অন্য ধর্মে আছে।
একটি বাগানে ছড়িয়ে আছে ফলমূল। মালিক বলে রেখেছে, যে কেউ এখানকার ফল খেতে চাইবে মালিকের কাছে একটা ফোন দিলেই অনুমতি দেয়া হবে, বাগানের ফলমূল তার জন্য বৈধ হবে। যে মালিকের কাছে ফোন দেবে না, অনুমতি নেবে না বাগানের ফলমূল তোলা বা খাওয়া তার জন্য অবৈধ হবে। পশু জবাইর সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণের ব্যাপারটি বাগানের মালিকের কাছে ফোনে অনুমতি নেয়ার মতোই বিষয়।

সুস্থ সুন্দর কল্যাণধর্মী সমাজ গঠনে পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনাকে সেভাবে মূল্যায়ন করলে যে কোনো সমাজ চিন্তক অভিভূত হতে বাধ্য হবে। একমাত্র আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় তার নির্দেশ পালনে সারাদিন পানাহার, যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকা, রাতে তারাবির নামাজে দীর্ঘ দেড় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পবিত্রাবস্থায় নিজেদের ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও শ্রবণ, গরীবদের মাঝে জাকাত-সদকা দান, সামর্থ্যবানরা ঈদের দিন ফিতরা দিয়ে গরীবদেরও আনন্দে অংশগ্রহণের সুন্দর ব্যবস্থাপনা এবং ঈদের উৎসবে অপচয় উচ্ছৃঙ্খলা বলতে কিছু না থাকা নিশ্চয়ই ইসলামের সৌন্দর্যের এককেটি দিক। আল্লাহ তায়ালা ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে আমাদের মন ও জীবনকে রাঙিয়ে দিক।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রামগঞ্জে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধু আত্মহত্যা

রামগঞ্জে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধু আত্মহত্যা

বরিশালে ছাত্রলীগ মানেই ছিল আতঙ্ক

বরিশালে ছাত্রলীগ মানেই ছিল আতঙ্ক

১ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে কঠোর মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট শুরু হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

১ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে কঠোর মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট শুরু হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

গণ অধিকার পরিষদের উদ্যোগে স্বস্তির হাট

গণ অধিকার পরিষদের উদ্যোগে স্বস্তির হাট

সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমেদ

সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমেদ

আশুলিয়ায় হত্যা মামলায় আসামিসহ গ্রেফতার ১০

আশুলিয়ায় হত্যা মামলায় আসামিসহ গ্রেফতার ১০

রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করে নিজ শপথ ভঙ্গ করেছেন -ইসলামী আন্দোলন ঢাকা জেলা দক্ষিণ

রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করে নিজ শপথ ভঙ্গ করেছেন -ইসলামী আন্দোলন ঢাকা জেলা দক্ষিণ

এলডিপির নতুন চেয়ারম্যান সেলিম, মহাসচিব টিটু

এলডিপির নতুন চেয়ারম্যান সেলিম, মহাসচিব টিটু

মুসলমানদের জন্য ইসলামী রাজনীতি করা ফরজ -ড.সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী।

মুসলমানদের জন্য ইসলামী রাজনীতি করা ফরজ -ড.সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী।

ঝিনাইদহে ২৮ আ’লীগ নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর

ঝিনাইদহে ২৮ আ’লীগ নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর

ফ্যাসিবাদী আ.লীগ ও যুবলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে : অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন

ফ্যাসিবাদী আ.লীগ ও যুবলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে : অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন

বৃহত্তর যশোরে মাদরাসা শিক্ষার অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন মাও: আব্দুল মতিন। -ড. আলতাফ হোসেন

বৃহত্তর যশোরে মাদরাসা শিক্ষার অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন মাও: আব্দুল মতিন। -ড. আলতাফ হোসেন

খিলগাঁওয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ কর্মী গ্রেফতার

খিলগাঁওয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ কর্মী গ্রেফতার

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অবৈধ নয়, হাইকোর্টের রুল

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অবৈধ নয়, হাইকোর্টের রুল

জর্জিয়ার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ড্রিম পার্টির জয়

জর্জিয়ার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ড্রিম পার্টির জয়

ডোনেটস্কের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ সেনা

ডোনেটস্কের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ সেনা

জাতি গঠনের এমন সুযোগ নষ্ট হলে দেশ অনেক পিছিয়ে যাবে : ড. ইউনূস

জাতি গঠনের এমন সুযোগ নষ্ট হলে দেশ অনেক পিছিয়ে যাবে : ড. ইউনূস

ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ইবিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে নতুন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন

ইবিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে নতুন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন

৫ আগষ্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাতক্ষীরার সাংবাদিক অসীম বরণ চক্রবর্তী

৫ আগষ্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাতক্ষীরার সাংবাদিক অসীম বরণ চক্রবর্তী