নির্বিঘেœ চলাচলে বাধা কম গতির যানবাহন
আর ক’দিন পরই ঈদুল ফিতর। ইতিমধ্যে ঈদকে কেন্দ্রে করে মানুষজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করায় যানবাহনের চাপ বাড়ছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে। দূর পাল্লার বাসগুলোর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের তিন চাকার যানবাহন। চালকরা বলছেন, এখনও ঈদের পুরোপুরি ছুটি শুরু না হলেও মহাসড়কে চলাচল করছে নিষিদ্ধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশাভ্যান, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যানবাহন। পুরোদমে ঈদযাত্রা শুরু হলে এসব অবৈধ কম গতির গাড়ির কারণে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, এইসব কম গতির গাড়ী মহাসড়কে চললে বাস সঠিক গতিতে চলতে পারে না। ফলে মহাসড়কে যানজটের তৈরি হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে।
চট্রগ্রাম থেকে ঢাকাগামী গ্রীন লাইন বাসের চালক ফরিদ উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কম গতির যানবাহনগুলো আশপাশের সংযোগ সড়ক থেকে হঠাৎ করেই মহাসড়কে উঠে পড়ে। এতে মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এসব ছোট যানবাহনের কারণে আমরা সঠিক গতিতে গাড়ি চালাতে পারি না। ঈদযাত্রায় এ অবস্থা চলতে থাকলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী এশিয়া লাইন পরিবহনের চালক তোফায়েল হোসেন বলেন, মহাসড়কের উপরে বাসষ্ট্যান্ড গুলোতে আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা নামা করার যানজট তৈরি হয়। ঈদযাত্রায় এ অবস্থা থাকলে মহাসড়কে যানজট প্রকট আকার ধারণ করবে।
সরেজমিনে গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর, ভবেরচর, দাউদকান্দি, শহীদনগর, গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনা, কুমিল্লা ক্যন্টারমেন্ট. আলেখারচর ও পদুয়ার বাজার বিশ^রোড এলাকায় দেখা যায়, মহাসড়কের প্রতিটি বাসষ্ট্যান্ডেই জটলা বেধে মহাসড়কের উপরে দাঁড়িয়ে আছে অংখ্য যানবাহন। তবে তিন চাকার যানবাহন বেশি চলাচল করছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্রগাম্র মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এ চাপ আরও বেড়ে যাবে। তখন মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট ও যাত্রীদের ভোগান্তি হতে পারে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল অবৈধ ও নিষেধ। অন্য সময়ে তারা মহাসড়ক ব্যবহার করলেও হয়তো মানবিক কারণে ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে আগামী মঙলবার থেকে কোনো ধরনের তিন চাকার যানবাহনকে মহাসড়কে উঠতে দেওয়া হবে না। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। তারপরও আইন অমান্য করে অনেক সময় তারা মহাসড়কে চলে থাকে। ঈদযাত্রায় তিন চাকার এসব যানবাহনকে মহাসড়কে উঠতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা না মানলে মামলা দেওয়ার পাশাপাশি এসব বাহন ধরে থানায় আটকে রাখা হবে।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা বলছেন, এবারের ঈদুল ফিতরে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীরা নিবির্ঘেœ চলাচল করতে পারবে, কোথাও কোন যানজট হবে না বলে দাবি করলেও মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহনের শ্রমিকরা বলছেন ভিন্নকথা, তারা বলছেন ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ডেবে উচু-নিচুতে পরিণতি হওয়ায় ধীরগতিতে গাড়ী চলাচল করা ছাড়াও মহাসড়কের দাউদকান্দিতে সড়কের সংস্কার কাজ চলমান থাকা এবং মহাসড়কে কম গতির ছোট ৩ চাকার সিএনজি, ব্যাটারী চালিত রিক্সা, মিশুক চলাচল করায় মহাসড়কে যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন তারা। মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলরত যাত্রীরা বলছেন, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে গাড়ির চাপ বাড়লে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এবারের ঈদেও একই শঙ্কা তাদের। স্টার লাইন পরিবহনের যাত্রী আলমগীর হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও স্বাভাবিক সময়ের মতোই এখন যাতায়াত করা যাচ্ছে। তবে ভোগান্তি ফেলছেন তিন চাকার যানবাহন। অপর যাত্রী আমির হোসেন বলেন, মহাসড়ক থেকে জরুরি ভিত্তিতে তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় দুয়েক দিনের মধ্যেই যখন বেশিসংখ্যক মানুষ ঘরমুখী হতে থাকবে, তখন অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে চরম যানজট সৃষ্টি হবে।
গ্রীন লাইন পরিবহনের যাত্রী চট্রগ্রামের ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়লে যে কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়, তার অন্যতম মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুর টোলপ্লাজা। টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে যানজট ছড়িয়ে পড়ে ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে এই মহাসড়কে সাইনবোর্ড ও মদনপুর চৌরাস্তা এলাকাতেও যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
হাইওয়ে পুলিশে বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন চলাচল করে ২০ থেকে ২২ হাজার যানবাহন। ঈদের সময়টায় যোগ হয় আরও ৮ থেকে ১০ হাজার গাড়ি। এই বিষয়টি মাথায় রেখে নানা পদক্ষেপের কথা বলছে হাইওয়ে পুলিশ। এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ ও স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে হাইওয়ে পুলিশের ২২টি থানা ও ফাঁড়ির সদস্যদের নিয়ে দুই দফায় ৬৪টি পেট্রোল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও থাকছে ৩০টি বেশি কুইক রেসপন্স টিম। ইতিমধ্যে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যানজট প্রবণ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহাসড়কের পাশে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, আনসার ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা ঈদের দিন পর্যন্ত সড়কে থাকবেন। মহাসড়কে যানজট কবলিত যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, সাইনবোর্ড, মদনপুর, সোনারগাঁও, মেঘনা, ভবেরচর, দাউদকান্দি, গৌরীপুর ওইসব এলাকায় সার্বক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এরই মধ্যে বুঝে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হচ্ছেন।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের পূর্বাঞ্চলীয় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপে যানবাহনের সংখ্যা ৮ থেকে ৯ গুণ বেড়ে যায়। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে চলতি সপ্তাহে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে পুলিশ ২৪ ঘন্টা মাহসড়কের কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এর মধ্যে ঈদ উল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ ও স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসনে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মহাসড়কের পাশের ২২টি থানা ও ফাঁড়ির সদস্যদের নিয়ে দুই দফায় ৬৪টি পেট্রোল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় শিকার যানবাহনগুলো সরিয়ে নিতে ৫টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স থাকছে দুর্ঘটনায় হতাহতের জরুরি সেবার জন্য। তিনি আরও বলেন, এছাড়া ২টি গোয়েন্দা টিম কাজ করবে। স্থাপন করা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ কন্ট্রোল রুম ও ৫টি সাব কন্ট্রোলরুম। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি বিশেষ ইউনিফর্মে হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ১০০ প্রশিক্ষিত সদস্য মহাসড়কে কাজ করবে। তিনি বলেন, এরইমধ্যে বিভিন্ন যানবাহনের মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সভা করে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও গাড়ি পার্কিং না করতে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে কোথাও কোনো সংগঠন বা কোনো চক্রকে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, এ বছর ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের অবস্থা খুবইল ভালো। এ মুহূর্তে মহাসড়কের দাউদকান্দির হাসানপুরে চট্টগ্রামমুখী লেনের সংস্কার কাজ চলছে। ঈদ উপলক্ষে খুব শিঘ্ররই সংস্কার কাজ শেষ হবে। অতীতের তুলনায় এবার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের অবস্থা অনেক ভালো, যানজটের কোন ধরনের আশঙ্কা নেই বলেও তিনি দাবী করেন।####