পুলিশ অফিসার যে কোনো অসিলায় আমাকে জেল থেকে বের করে মেরে ফেলবে
১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৯ এএম
খুন যে হবেন, আগে থেকেই জানতেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদের ভাই আশরাফ। বন্দি অবস্থাতেই সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে আশরাফের সেই ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ মেলেনি। তবে তাকে খুন হতে হলো আরো বছর খানেক পর। ২০২২ সালের ২৮ মার্চ বন্দি আশরাফ সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে জানিয়েছিলেন, আর দু’সপ্তাহের মধ্যেই তাকে মেরে ফেলা হবে। কোনো এক পুলিশ অফিসার তাকে সেই হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন বলে জানান আশরাফ। তিনি এ-ও দাবি করেন, তার মৃত্যুর পর বন্ধ খামে চিঠি যাবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং রাজ্যের প্রধান বিচারপতির কাছে।
বছরখানেক আগে আশরাফের সেই দাবি নতুন করে প্রকাশ্যে এসেছে তার হত্যার পর। শনিবার রাতে তাকে এবং তার ভাই আতিক আহমেদকে যখন হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, ওই সময় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে দু’জনকে খুন করা হয়। পুলিশের চোখের সামনেই চলে হত্যাকা-। আশরাফ বছরখানেক আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি সেই পুলিশ অফিসারের নাম নিতে পারব না। তিনি আমাকে বলেছেন, কোনো না কোনো অসিলায় দু’সপ্তাহ পর আমাকে জেল থেকে বের করা হবে এবং মেরে ফেলা হবে। আমার পরিবারের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র চলছে। আমাকে খুন করার পর একটি বন্ধ খাম পৌঁছে যাবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং রাজ্যের প্রধান বিচারপতির কাছে।’ আশরাফ আরো বলেছিলেন, ‘আমাকে দেখে কি আপনাদের মাফিয়া বলে মনে হয়? আমি এক সময় বিধায়ক ছিলাম। তিন বছর ধরে জেল খাটছি। জেলের মধ্যে থেকে কিভাবে আমি ষড়যন্ত্র করতে পারি?’
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এলাহাবাদের (প্রয়াগরাজ) সাবেক বিধায়ক আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফের হত্যার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে। গতকাল সোমবার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ মহাপরিচালক আর কে বিশ্বকর্মার জারি করা একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে পুলিশের বিশেষ মহাপরিচালক (আইন শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার বলেছেন, প্রয়াগরাজের পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে এসআইটি গঠন করা হয়েছে। গুণগত তদন্ত ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তিন সদস্যের সুপারভাইজারদের একটি দলও গঠন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রয়াগরাজের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। অন্য দুই সদস্য হলেন প্রয়াগরাজের পুলিশ কমিশনার এবং লখনউয়ের ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির পরিচালক।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে উমেশ পালকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আতিক ও আশরাফকে শনিবার গভীর রাতে প্রয়াগরাজে সাংবাদিকের সাজে থাকা তিন ব্যক্তি গুলি করে হত্যা করে যখন পুলিশ এস্কর্টে তার ভাইবোনেরা একটি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
অপরদিকে অপহরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য আতিক আহমেদ ও তার ভাইকে শনিবার লাইভ টিভিতে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি বর্ষণের পরপরই তিন হামলাকারী নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দ্রুত আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। খুনিদের দাবি, অপরাধের দুনিয়ায় বিখ্যাত হওয়ার জন্যই এ হামলা। পুলিশের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিন খুনি স্বীকার করেছে, তারা আতিক ও তার ভাই আশরাফকে অনেক আগেই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। হামলার জন্য তিনজন ভুয়া প্রেস কার্ড তৈরি করে। শনিবার হাতে বুম ও ক্যামেরা নিয়ে অন্যান্য সাংবাদিকদের ভিড়ে যোগ দেন তারা। সকাল থেকেই আতিক ও আশরাফের সঙ্গে ছিলেন হিটম্যান লাভলেশ তিওয়ারি, সানি ও অরুণ মৌর্য। তারা আগেই জানতেন, আতিক ও তার ভাই, যারা রোববার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন, তাদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য প্রয়াগরাজের মতিলাল নেহরু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল থেকেই আতিকের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল তারা। তারা পুলিশকে জানায়, আতিককে হত্যা করে তারা অপরাধ জগতে বিখ্যাত হতে চেয়েছিল।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রয়াগরাজের বেশ কয়েকটি জায়গায় এখনও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে। রাজ্য প্রশাসন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে আতিককে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। রাত ১০টার পর স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার ওপর হামলা চালানো হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাংবাদিক পরিচয়ে পুলিশের সামনেই আতিক ও তার ভাই আশরাফকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ঘাতকরা। তারা সেøাগানও দেয়। দৃশ্যটি একাধিক টিভির লাইভ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ঘটনার সময় আতিকের আইনজীবী বিজয় হাসপাতালের সামনে ছিলেন। তিনি জানান, পুলিশ তাদের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গাড়ি থেকে নামিয়ে আনছিল। তারা হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করে গুলির শব্দ শুনতে পান। বিধায়ক ও তার ভাইকে গুলি করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশের আইনশৃংখলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো। রাজ্যের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী ও অখিলেশ সিং যাদবও এর নিন্দা করেছেন। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে উমেশ পাল হত্যা মামলার আসামি আতিকের ছেলে আসাদ পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে মারা যান। সূত্র : এবিপি, পিটিআই ও এনডিটিভি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আবারও বাজারে এলো নোভারটিসের স্যানডোক্যাল
উত্তরাঞ্চলের ১১ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণে সহায়তা দেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-টিএমএসএস
ঈদের আগেই পরীক্ষার বিল চান ইবি শিক্ষকরা
বিএনপি নেতা ইশরাকের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল
বিএসটিআই'কে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে : শিল্পমন্ত্রী
রাইসির মৃত্যুতে সোশাল মিডিয়ায় শোকের ছায়া
রাইসির মৃত্যুতে ইরানে ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
বিকাশ-বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এবছরের বই পড়া কর্মসূচির উদ্বোধন বরিশালে
ইরানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানি
এয়ারলাইন এবং শিপিং ইন্ডাস্ট্রির সাথে পার্টনারশিপ উদ্যাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক
নীতি সহায়তার অভাবে বিকশিত হচ্ছে না কসমেটিকস শিল্প
রাইসির নিহত হওয়ার খবরে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
গণতন্ত্রকামীরা কারাগারে আর ঋণখেলাপী-পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য চরমে: রিজভী
পিকে হালদারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে দুদক
ক্যাপিটাল গেইনে কর আরোপ না করার অনুরোধ ডিএসইর
৩০ মে ময়মনসিংহ নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে দোয়া-মাহফিল করবে বিএনপি
অটোরিকশাচালকদের ওপর সরকার স্টিম রোলার চালাচ্ছে: রিজভী
আঞ্চলিক কেন্দ্রসমূহে আইসিটি ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত
বিএনপি নেতা ইশরাকের মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ