গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণকে অব্যাহতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। গত শনিবার ঈদের দিন রাতে গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় তার সঙ্গে সাক্ষাত করে এসে একথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কী বার্তা দিয়েছেন প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তার বার্তা হচ্ছে যে, গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষ যেভাবে কাজ করছে সেই কাজ যেন তারা করেন।
তিনি বলেন, সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি আমাদের কুশল জানতে চেয়েছেন এবং বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের যেসব নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী রয়েছেন তাদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাদের যে কষ্ট সে সম্পর্কে তিনি অবহিত আছেন। দেশের হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা সেগুলো সম্পর্কেও তিনি অবহিত আছেন। এছাড়া যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, অর্থনীতির অবস্থা যে দিন দিন খারাপ হচ্ছে সেই বিষয়গুলো তিনি অবহিত আছেন এবং একই সঙ্গে আবহাওয়া যে প্রচ- তাপদাহ গেলো এ বিষয়টাও উল্লেখ করে তিনি তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৈর্শ্বিক জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে তা নিয়েও তিনি কথা বলেছেন।
প্রায় এক বছর পর দলের চেয়ারপারসনের সাথে দেখা হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন যে, উনি কারাগারে যাওয়ার পর তার সঙ্গে সাক্ষাত আমাদের অনেক সীমিত ছিলো। তিনি বাসায় আসার পরে এই ঈদের দিনগুলোতে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। আমাদের সঙ্গে আলোচনা অনেকদিন পর সেজন্য সবাই কিছুটা আবেগ আপ্লুত ছিলাম। আমরা আশা করি যে, আমরা খুব শিগগিরই তার সঙ্গে আরো ঘন ঘন সাক্ষাত করতে পারবো এবং সামনে তিনি বেরিয়ে আসবেন।
খালেদা জিয়া এখনো অসুস্থ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) এখনো বেশ অসুস্থ, এখনো তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার সাহেবরা সার্বক্ষণিক তার অসুস্থতা, শারীরিক অবস্থা মনিটরিং করছেন।
ঈদের দিনে রাত ৮টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৮ সদস্য গুলশানের ‘ফিরোজা‘য় খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করেন। এক ঘণ্টারও অধিক সময় সাক্ষাত শেষে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বাসার বাইরে এসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
মহাসচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে যান এবং তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ‘শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে’ ‘ফিরোজা’র দোতলায় দলীয় প্রধানের সাথে তারা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সর্বশেষ গত বছরের কোরবানির ঈদের দিন খালেদা জিয়ার দেখা পেয়েছিলেন এই নেতারা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।দুই বছরেও বেশি সময় কারাগারে বন্দী থাকার পর দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়া হয় বিএনপি প্রধানকে।
এরপর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৭ বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। যেখানে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক কেউই নেত্রীর সাক্ষাত পান না। ঈদের দিন সকালে খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারসহ নিকট স্বজনরা ফিরোজায় আসেন। ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি এবং তার দুই মেয়ে জাহিয়া ও জাফিয়াকে এবার ফিরোজায় ঈদ করেছেন। নাতনি, পূত্রবূধসহ ভাই-বোনদের নিয়ে দুপুরে দুপুরের খাবার খান খালেদা জিয়া।###