হাওরে ধান কাটার ধুম
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম
হাওরে চলছে বোরো ধান কাটার ধুম। ইতোমধ্যে হাওরে প্রায় ৭০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। এর মধ্যে সিলেটে ৫৫, মৌলভীবাজারে ৭০, হবিগঞ্জে ৬৭, সুনামগঞ্জে ৭৩, কিশোরগঞ্জে ৫৮, নেত্রকোনায় ৭৭ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৭ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় গতকাল তথ্য জানিয়েছে।
ভাটি অঞ্চলের ৭টি জেলার হাওরে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। আর হাওর ও হাওরের বাইরে উঁচু জমি মিলে মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে। ৪০ লাখ টন চাল এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
হাওরে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে অতিরিক্ত গরমের কারণে আগাম জাতের ধান ব্রি-২৮ এ ব্লাস্ট রোগে আক্রমণ করায় অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ব্লাস্ট রোগের কারণে ক্ষেতের ধান সব চিটা হয়ে গেছে। এটা এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ। যা ফসলকে ধ্বংস করে দেয়। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওরে এবং উত্তর বঙ্গেও অনেক জেলায় ব্রি-২৮ জাতের শত শত হেক্টর জমির ধান ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণে চিটা হয়ে গেছে। মৌলভীবাজারের খাদ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত দেশের বৃহৎ হাওর হাকালুকির বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণে অনেক কৃষক সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের চোখের সব স্বপ্ন শেষ হয়েছে। সারা বছরের খোরাকি হয় এই ধানে। এখন তারা সারা বছর কি করে চলবেন সে চিন্তায় দু’চোখে কেবল অন্ধকার দেখছেন। স্থানীয় ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বলেন, ব্লাস্ট রোগের ফলে বোরো চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকে সারা বছরের খোরাক তো দুরের কথা, ফসল ফলানোর ব্যয় মিটানোও সম্ভব হবে না। অনেক চাষি মাঠের ধান কাটছে না।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জসিম উদ্দিন ও কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা বেল্লাল হোসেন বলেন, ব্লাস্ট রোগে শুধুমাত্র ব্রি-২৮ ও কিছু কিছু ব্রি-২৯-এর বেশি ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জের তলার হাওর এবং নেত্রকোনার ডিঙ্গাপুতার হাওরেও ব্লাস্ট রোগের অনেক জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও এসব অঞ্চলের অনেক ছোটখাট হাওর ও বিলের ধান ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষেতের আলে বসে এখন শুধু কাঁদছে। ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯ এ দু’টি জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ বেশি হয়েছে। তবে ব্রি-২৮ জাতের ধানেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ জাতের ধান চাষ করে অনেক কৃষক একবারে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের স্বপ্ন-আশা সব শেষ হয়ে গেছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায়, অতিরিক্ত গরমের ফলে ধান ক্ষেতে এই ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ হয়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ বছর মার্চ মাস থেকে দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না। এপ্রিলের শুরু থেকে দেশের অনেক জেলায় মৃদু তাপদাহ শুরু হয়। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপদাহ ক্রমাগত বাড়ছে। কোথাও কোথাও ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্র ওঠে। সাধারণত ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বোরো ধানের জন্য সহণীয় ধরা হয়। ব্রি-২৮ জাতের ধান এপ্রিলের শুরুর দিকে ফুল পর্যায়ে থাকায় এ সময় গরমে জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
নেত্রকোনা সদর থানার চরপাড়া গ্রামের কৃষক সুমন মিয়া বলেন, অনেক ধারদেনা করে ৮ কাঠা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান লাগিয়ে ছিলাম। কিন্তু ক্ষেতের সব ধান চুচা (চিটা) হয়ে গেছে। আমি এখন ঋণের টাকা শোধ করব কি করে, আর সারা বছর পরিবার নিয়ে চলব কেমন করে। আল্লাহই জানেন, আমি যে অহন দুই চোহে অন্ধকার দেখতাছি।
হাওরাঞ্চল ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলায়ও ব্লাস্ট রোগে অনেক জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাইসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯ এ দু’টি জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ বেশি হয়েছে। এ জাতের ধান চাষ করে অনেক কৃষক এবার সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের স্বপ্ন-আশা সব শেষ হয়ে গেছে। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায়, অতিরিক্ত গরমের ফলে ধানক্ষেতে এই ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ হয়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বোরো ধানক্ষেতের বিভিন্ন মাঠের বোরো ব্রি-২৮ ও ৪২ জাতের ধানক্ষেতে ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছ ব্লাস্ট রোগ। বিশেষ করে এ রোগ বেশি দেখা দিয়েছে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার সীমান্তের মাঠগুলোতে। প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে এই ছত্রাকজনিত রোগ।
এ উপজেলার কোমরপুর গ্রামের কৃষক করিম জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। ধান ফুলে সেরে গেছে হঠাৎ ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ধানের শীষগুলো সাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শীষের গোড়া থেকে এ রোগ দেখা দেয়। পরে আস্তে আস্তে পুরো শীষ শুকিয়ে শীষের ধানগুলো চিটা হয়ে যায়। কৃষি বিভাগ বালাই নাশক দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি। মুন্সীগঞ্জ জেলার আড়িয়াল বিলে আধাপাকা ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক।
কিছু কৃষকের এই আহাজারির মধ্যেও হাওরাঞ্চলে চলছে ধান কাটার উৎসব। ছেলে-বুড়ো সবাই এখন পাকাধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত। এবার এখনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের কবলে পড়েনি হাওরবাসী। তাই তারা আল্লার কাছে প্রার্থনা করছেন আর সপ্তাহ খানেক সময় যেন কোনো ঝড় বা শিলা বৃষ্টি না হয়।
ঈদের আগে সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে যোগ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারলে এ বছর বোরোতে রেকর্ড উৎপাদন হবে। এবার ধান কাটায় কোনো সমস্যা হবে না। শুধু সুনামগঞ্জেই এক হাজার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা চলছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে এ বছর সারা দেশে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল ৪৮ লাখ ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২ কোটি ২ লাখ টন চাল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক