কক্সবাজারে ট্রলারে ১০ জেলের অর্ধগলিত লাশ
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১৩ এএম
কক্সবাজার শহরতলীর নাজিরারটেক উপকূলে ডুবন্ত সেই ট্রলার থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ১০ জেলের পরিচয় জানা গেছে। নিহতরা সবাই মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা। এতে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসুল আলম ও রয়েছেন। তবে এটি হত্যাকা-, দস্যুতা না শত্রুতা এখনো অনিশ্চিত।
পুলিশের ভাষ্যমতে পূর্বশত্রুতায় হয়তো পরিকল্পিতভাবে ১০ জেলেকে হত্যা করে ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল প্রতিপক্ষ। অথবা জলদস্যুরা ট্রলারের মাছ লুট করে জেলেদের বরফ রাখার কুটির বা কক্ষে আটকে রেখে ট্রলারটি ডুবিয়ে দিয়েছিল। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে মতে বিষয়টির আরো অনুসন্ধান চলছে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে ওই বোট মালিক শামসুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমাণ গনি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষ থেকে ১০ জেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি মর্মান্তিক। এর মধ্যে তিনজনের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। কয়েকজনের শরীরে জাল প্যাঁচানো ছিল। একটি লাশের গলা থেকে মাথা ছিল বিচ্ছিন্ন। আরেকটি লাশের হাত বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। লাশগুলো ট্রলারের যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই কক্ষের ঢাকনাও পেরেক দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া ট্রলারের জাল ও ইঞ্জিন রয়ে গেছে। এ কারণে সন্দেহ হচ্ছে হত্যাকা-টি পূর্বপরিকল্পিত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গভীর সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া ট্রলারটি আরেকটি মাছ ধরার ট্রলারের জালে আটকা পড়েছিল। ওই ট্রলারের জেলেরা রশি দিয়ে ডুবন্ত ট্রলারটি টেনে মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে নিয়ে আসেন। গত রোববার বেলা দেড়টার দিকে ডুবন্ত ট্রলারটি কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক (বিমানবন্দরের পশ্চিমে) চ্যানেলে পৌঁছালে মৃত ব্যক্তিদের হাত-পা ভেসে উঠতে দেখা যায়। তাতে ভয় পেয়ে যান টেনে আনা ট্রলারের জেলেরা। ডুবন্ত ট্রলারটি রেখে পালিয়ে যায় তারা। স্থানীয় লোকজন লাশবোঝাই ডুবন্ত ট্রলার ভেসে আসার খবর জানালে বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ঘটনার পরপরই রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে পিবিআইয়ের একটি দল। পিবিআই প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাটি পর্যবেক্ষক করছেন বলে জানা গেছে। সন্ধ্যা পর পিবিআই দল নিহত ১০ জেলের প্রাথমিক পরিচয় শনাক্ত করেছে। নিহত ১০ জেলের মধ্যে ৬ জন মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ির, একজনের বাড়ি একই উপজেলার কালারমারছড়া গ্রামে এবং অপর তিনজনের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী গ্রামে। নিহত সবাই ৭ এপ্রিল একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সাগরে গিয়েছিলেন। সেখানে জেলেদের বরফ রাখার কক্ষে আটকে রেখে ট্রলারটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান চলছে।
মহেশখালীর একাধিক সূত্র বলেন, ৭ এপ্রিল রাতে তার এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলমের মালিকানাধীন একটি ট্রলার ১১ জন জেলে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নেমেছিল। ট্রলারে ছিলেন ট্রলারমালিক শামসুল আলম ও মাঝি মোহাম্মদ মুসাও। দুদিন পর তারা জানতে পারেন, ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে এলাকায় নানা কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, গভীর সাগরে মাছ আহরণকে কেন্দ্র করে অপর কয়েকটি ফিশিং বোটের সঙ্গে শামসুল আলমের বিরোধ হয়। শেষে কয়েকটি ট্রলারের জেলেরা মিলে শামসুর জেলেদের মেরে হাত-পা বেঁধে মাছ রাখার কক্ষে আটকে রেখে ট্রলারটি ডুবিয়ে দিয়েছে। আবার কেউ বলছেন, জলদস্যুরা মাছ লুটের পর ট্রলারটি ডুবিয়ে দিয়েছে। তবে ওই ট্রলারটি যে শামসুল আলমের, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে গোটা কক্সবাজার উপকূলের বোট মালিক ও জেলে সম্প্রদায়ের মাঝে নানা ধরণের শঙ্কা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন