আহা কী সুন্দর!
২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৪৩ পিএম
আহা কী সুন্দর! অন্য সময়ের ১০ ঘণ্টার পথ মাত্র ৫ ঘণ্টায় পাড়ি দিয়েছে গণপরিবহণগুলো। দুই ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট! এটা রাজধানীবাসীর জন্য কল্পনা হলেও গতকাল বাস্তবে ঘটেছে।
সড়কপথে রংপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সাধারণত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু যানজটের কারণে দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। অথচ গতকাল রংপুর থেকে ৫ ঘণ্টায় ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে পৌঁছে যায় বাস। বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পৌঁছাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে। অথচ গতকাল ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেছেন যাত্রীরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কিছু জায়গায় যানবাহনের ভিড় দেখা গেলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট সড়ক কার্যত ফাঁকাই ছিল।
ঈদের ছুটি শেষে অনেকেই ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীতে। ঈদের চতুর্থ দিনে জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ঈদে বাড়িতে যাওয়া মানুষদের ফিরতে দেখা গেছে। গাবতলী দিয়ে তুলনামূলক অনেক কম মানুষ ঢাকায় ফিরছেন। গত ২-৩ বছর আগের মতো চাপ নেই গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই রুটে ঢাকা ফিরছেন অনেকেই।
ফাঁকা সড়কে নির্বিঘেœ চলছে গাড়ি। উত্তরা থেকে গুলিস্তান পৌঁছানো যাচ্ছে মাত্র আধা ঘণ্টায়। সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী বলেন, বিমানবন্দরে এক আত্মীয়কে বিদায় জানানোর জন্য গুলিস্তান থেকে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম। যেতে লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট, ফিরতে ৩৫ মিনিট। গুলিস্তান থেকে উত্তরা এমন নির্বিঘœ চলাচল আগে কখনও দেখিনি। ঢাকা যদি সবসময় এরকম ফাঁকাই থাকত।
গাবতলী আসা এক যাত্রী বলেন, গাইবান্ধা থেকে গাবতলীতে পৌঁছেছি মাত্র সাড়ে ৬ ঘণ্টায়। এখান থেকে মাত্র ২১ মিনিটে খিলগাঁও পৌঁছেছি। রাস্তা এক রকম ফাঁকাই। সিগন্যালগুলোতে চাপ দেখিনি আগের মতো। আধা মিনিট থেকে এক মিনিটে সিগন্যাল পার হয়েছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, ঢাকার ব্যস্ততম সড়কের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উত্তরা। ঈদের ছুটির কারণে উত্তরায় যানজট নেই, কোলাহল নেই সড়কে। নির্বিঘেœ চলাচল করছে যানবাহন। আগামী দুই থেকে তিন দিন পর এই সড়কে ব্যস্ততা বাড়বে।
ঈদের ছুটি শেষ করে নাটোর থেকে গাবতলী এসেছেন মো. রায়হান। তিনি বলেন, আমি ঈদের ছুটির আগেই বাড়ি ফিরেছিলাম। তখন ফেরার পথে কোনো জ্যাম পাইনি। ঈদের ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরেছি। গাবতলী আসার পথে নবীনগরে আধা ঘণ্টার জ্যাম পেয়েছি। আর কোথাও কোনো জ্যাম পাইনি।
রাজশাহী থেকে গাবতলী আসা একযাত্রী বলেন, ঈদ যাত্রায় আমি সড়কে তেমন কোনো জ্যাম পাইনি। ছুটি শেষে আবার ফিরে আসলাম রাজধানীতে। রাজশাহী থেকে আসার পথে নবীনগরে একটু জ্যাম পেয়েছিলাম, আর কোথাও জ্যাম ছিল না। বিগত দিনগুলোর চেয়ে এবারের ঈদ যাত্রা ছিল অনেক স্বস্তিদায়ক।
আরিচা থেকে গাবতলী এসেছেন খালিদ। তিনি বলেন, ঈদে বাড়তি ছুটি নিয়েছিলাম বলেই আজকে ঢাকা ফিরলাম। বুধবার থেকেই কর্মস্থলে যোগ দেবো। এবারের যাত্রায় তেমন কোনো ভোগান্তি ও সড়কে জ্যাম ছিল না।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে অবস্থান করে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই দিন আগেই শেষ হয়েছে ঈদের ছুটি। তবে ঘরে ফেরা মানুষেরা এখনো সবাই আসেননি। চাপ না থাকায় এবার অনেকটা স্বস্তিতেই ফিরছেন নগরবাসী। এতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সরেজিমনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন মহাখালী বাস টার্মিনালে ফিরছেন। বাস থেকে নেমে তারা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। কেউ উঠছেন লোকাল বাসে।
মহাখালী বাস টার্মিনালের বাস চালকরা জানান, এবার রমজানে শবে কদরের পর থেকেই ছুটি শুরু হয়েছে। তাই এর আগ থেকেই যাত্রীরা গ্রামে ফিরেন। এজন্য যাত্রীর চাপ তেমন বোঝা যায়নি।
সৌখিন এক্সপ্রেসের এক চালক বলেন, এবার ঈদে টানা পাঁচ দিনের ছুটি ছিল। তাই যাত্রীরা আগেভাগেই গ্রামে চলে গেছে। ঈদের পরেও অল্প অল্প করে ঢাকায় ফিরছে লোকজন। তাই যাত্রীর চাপ অনেক কম।
এছাড়া ঈদ শেষে রাজধানীমুখী যাত্রীর চাপ নেই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে। ঘাট এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ থাকলেও সেগুলো নির্বিঘেœ ফেরি পার হতে পাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘাট এলাকায় দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের কোনো সিরিয়াল নেই। কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপও নেই চোখে পড়ার মতো। যারা আসছেন তারা নির্বিঘেœ ফেরি ও লঞ্চে পদ্মা পার হয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। এছাড়া ঘাট এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির কিছুটা চাপ রয়েছে। লঞ্চঘাট এলাকাতেও চোখে পড়ার মতো যাত্রী নেই। লোকাল যাত্রী যারা আসছেন তারা টিকিট কেটে সরাসরি লঞ্চে উঠতে পারছেন। যাত্রী সঙ্কটের কারণে লঞ্চগুলোও ছাড়তে সময় লাগছে। তবে ঘাট এলাকায় কোনো ভোগান্তি চোখে পড়েনি।
ঘাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ ঘাটের চিরচেনা সেই রূপ পাল্টে গেছে। এখন আর আগের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনো যানবাহনকে ঘাট এলাকায় আটকে থাকতে হয় না। যানবাহনগুলো সরাসরি ঘাটে এসে ফেরির নাগাল পাচ্ছে। ফলে ভোগান্তিও নেই আগের মতো।
ঢাকাগামী কয়েকজন যাত্রী জানান, সড়কে কোনো ভোগান্তি নেই। ঘাট পর্যন্ত আসতেও কোনো অসুবিধা হয়নি। ঘাটে এসেই সরাসরি ফেরির দেখা পেয়েছি। এবারের ঈদযাত্রা অনেক স্বস্তির হয়েছে। ঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমায় এখন আর ভোগান্তি নেই।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের কোনো চাপ নেই। যানবাহনগুলো এসে সরাসরি ফেরির নাগাল পাচ্ছে। দুপুরের পর থেকে চাপ একটু বাড়তে পারে। তবে চাপ বাড়লেও ঘাটে কোনো ভোগান্তি থাকবে না। এই নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য ২০টি ফেরি চলাচল করছে।
এদিকে, এবার ট্রেনে যাওয়া-আসা দুটোই স্বস্তির হয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। ঈদ শেষে বাড়ি থেকে এলাম। ট্রেনের ভেতর কোনো ভিড় ছিল না। স্বাভাবিক যাত্রী নিয়েই ট্রেন আসছে। এবারই প্রথম ঈদে বাড়ি যেতে-আসতে কোনো ভোগান্তি হয়নি। স্বস্তি নিয়েই যাতায়াত করেছি। কমিউটার ট্রেনে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসা নয়ন এভাবেই তার ট্রেনে ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। অন্য যাত্রীদেরও এবারের ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতা প্রায় একই।
ঈদুল ফিতরে যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহে ভোগান্তি কমাতে প্রথমবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিক্রি হয়েছিল ১০ দিন আগের আগাম টিকিট। প্রধান প্রধান স্টেশনগুলোতে নেয়া হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থাও।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার থেকে অফিস-আদালত শুরু হওয়ায় কর্মজীবীরা অনেকেই ঢাকায় ফিরেছেন। এর বাইরেও যাদের এক বা দু’দিন অতিরিক্ত ছুটি নেয়া আছে তারাও ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। আবার ঈদের ছুটি শেষে অনেক সহকর্মী কর্মস্থলে ফেরায় অনেকে এখন বাড়ি যাচ্ছেন। তাতে কর্মব্যস্ত থাকছে রাজধানীর প্রধান এ রেলস্টেশন।
ঢাকা থেকে যাত্রা করা তারেক বলেন, আমাদের শিফটিং ডিউটি ছিল। তাই ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। ৫ দিনের ছুটি পেয়েছি, পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বাড়িতে বাবা-মা আছেন। তাদের ছাড়া ঈদ উদযাপন করতে খারাপ লাগে। কিন্তু কর্মের তাগিদে কিছু করার থাকে না। এখন বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে কয়েকদিন কাটিয়ে আসবো। তার মতো আরও অনেকেই বাড়ি যাচ্ছেন ঈদের ৪ দিন পরেও। প্রতিটি ট্রেনে অন্তত ৫০-৬০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় লোকাল ও আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকায় আসছে। সারাদিনে ঈদ স্পেশালসহ ৫৪ জোড়া ট্রেন চলাচলের শিডিউল আছে।
###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দলকে ধ্বংসস্তুপে রেখে গেলেন হৃদয়
ড. আসিফ নজরুলের ওপর হামলার প্রতিবাদে জেগে উঠেছে আইনজীবীরা
জাকিরকেও হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগতব্যবস্থা গ্রহন করা হবে
জনস্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে : খুবি উপাচার্য
৩ দিনের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস, মানতে নারাজ শিক্ষার্থীরা
কেশবপুরে লাক্ষা (ভাইরাস) ব্যবসায়ীর গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন
ইসলামকে সর্ব যুগে একক কার্যকর সিস্টেম প্রমাণ করতে উচ্চতর গবেষণামূলক দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই
ইসলামকে সর্ব যুগে একক কার্যকর সিস্টেম প্রমাণ করতে উচ্চতর গবেষণামূলক দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই
৫২ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল শুরু
আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রন সম্ভব হচ্ছে না,
একই রানে দাঁড়িয়ে ২ উইকেটের পতন
বিগত ৩ মাসে এক টাকাও ছাপানো হয়নি : বিবি গভর্নর
কেরানীগঞ্জে হত্যা মামলার বাদী এখন স্বামী হত্যার প্রধান আসামি
ফিফটি পেরিয়ে প্রথম উইকেটের পতন
ই-কমার্সে সর্বাধিক অনলাইন লেনদেনের জন্য ‘ভিসা পেমেন্ট এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেল ফুডপ্যান্ডা
জবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সচিবালয়ের সামনে গেলেন উপদেষ্টা নাহিদ
দেশ ত্যাগের উদ্দেশ্যে বিমানবন্দর থেকে ফেরত জবির সাবেক পিএইচডি আপা
বরগুনায় তিন বছরেও চালু হয়নি ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার
"২৯ বছর পর আবার শুরু হতে যাচ্ছে 'বেগম রোকেয়া' সিনেমা"